প্রশ্নঃ (১৭৪) যাদু ও যাদুকরের হুকুম কী?

উত্তরঃ বাস্তবে যাদুর অস্তিত্ব রয়েছে। তাকদীরে কাওনীয়া ও ইরাদায়ে কাউনীয়া অনুসারে তার প্রভাবও রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর রাজ্যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোন কিছুই সংঘটিত হয় না। যাদুও তার অন্তর্ভূক্ত।[1] যাদুর হুকুম হচ্ছে, তা শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া এবং যাদুকরের কাছে যাওয়া হারাম। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ

‘‘সুতরাং তারা হারুত ও মারুতের নিকট হতে এমন জিনিস শিক্ষা করত, যার মাধ্যমে তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তারা যাদুর মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না’’। (সূরা বাকারাঃ ১০২) একাধিক সহীহ হাদীছের মাধ্যমে যাদুর প্রভাব সত্য বলে প্রমাণিত।[2]

যাদুকর যদি শয়তান থেকে যাদু শিক্ষা করে থাকে, যা সূরা বাকারায় উল্লেখিত হয়েছে, তাহলে সে কাফের। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنْ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ

‘‘আর সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলাইমান কুফরী করেন নি, কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত এবং যা বাবেল শহরে হারুত-মারুত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিত। আর কাউকেই ওটা শিক্ষা দিত না, যে পর্যন্ত তারা না বলত যে, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি। সুতরাং তুমি কুফরী করো না। অতএব, তারা হারুত ও মারুতের নিকট হতে এমন জিনিস শিক্ষা করত, যার মাধ্যমে তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তারা যাদুর মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা এমন বিষয় শিক্ষা করত, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর ছিল এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হত না। নিশ্চয়ই তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, পরকালে তার কোন অংশ নেই। (সূরা বাকারাঃ ১০২)

[1] - সুতরাং যাদু এবং তার প্রভাবও আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তবে কোন জিনিষ আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞাতসারে সংঘটিত হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তিনি তা পছন্দ করেন ও ভালবাসেন। এ কথাটি আমরা তাকদীরের মাসআলায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যাদু আছে বলেই তার আশ্রয় নেয়া যাবে, এ ধরণের যুক্তি ঠিক নয়। এটি অন্যান্য পাপ কাজের মতই। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করতে চান, কে তাঁর নিষেধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আর কে তা অমান্য করে তাতে লিপ্ত হয়। শুকর আছে বলেই শুকরের গোশত খাওয়া হালাল নয়, মদ আছে বলেই তা পান করা বৈধ নয় এবং গান-বাজনা আছে বলেই তা শ্রবণ করা জায়েয হওয়ার যুক্তি সঠিক নয়। মোটকথা আল্লাহ্ তাআলা কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই সৃষ্টি করেছেন এবং কল্যাণের পথে চলার আদেশ দিয়েছেন। বান্দাকে তিনি এমন স্বাধীনতা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সে কল্যাণ বা অকল্যাণের যে কোন একটি পথ গ্রহণ করতে পারে। এরই উপর ভিত্তি করে পুরস্কার প্রদান ও শাস্তি দান আল্লাহর জন্যে ইনসাফপূর্ণ হয়।

[2] - কাফের ও নাস্তিক ব্যতীত কেউ এর প্রভাব অস্বীকার করতে পারে না। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও বনী আদমের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যাদু করা হয়েছিল। বনী যুরাইক গোত্রের লাবীদ বিন আ’সাম তাঁকে যাদু করেছিল। ছয়মাস পর্যন্ত তিনি যাদুগ্রস্ত ছিলেন। ইমাম বুখারী আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, বনী যুরাইক গোত্রের এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যাদু করেছিল। তার নাম লাবীদ বিন আ’সাম। এতে তার প্রভাব এমন হয়েছিল যে, তিনি স্ত্রীদের কাছে না গিয়েও মনে করতেন যে, তাদের কাছে গিয়েছেন। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিব্ব)