প্রশ্নঃ (১৫৫) দ্বীনে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তরঃ যেসমস্ত উপকরণ মানুষকে কল্যাণ অর্জনে সহায়তা করে এবং অকল্যাণ হতে ফিরিয়ে রাখে তার প্রতি ঈমান আনয়ন যেমন ইসলামী জীবনকে সুশৃংখল করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন বান্দার তাওহীদকে নিয়ন্ত্রন করে। তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শরীয়তকে বাস্তবায়ন করা ব্যতীত বান্দার দ্বীনি কার্যকলাপ মজবুত ও সুশৃংখল হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁর কথা শুনে যখন বললঃ তাহলে আমরা আমল ছেড়ে দিয়ে তাকদীরের উপর ভরসা করে বসে থাকব না? তিনি তখন বললেনঃ তোমরা আমল করতে থাক। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তাই সহজ করে দেয়া হবে।[1]

তাকদীরকে শরীয়তের বিরোধী মনে করে যে তা অস্বীকার করল, সে আল্লাহর ইল্ম ও কুদরতকে বাতিল করে দিল এবং বান্দাকে স্বীয় কর্মের সৃষ্টিকারী মনে করল। সুতরাং সে আল্লাহর সাথে আরো একজন স্রষ্টা নির্ধারণ করল। শুধু তাই নয়, সে সকল মানুষকেই সৃষ্টিকর্তা মনে করল।

আর যে ব্যক্তি তাকদীরের দ্বারা শরীয়তের বিরুদ্ধে দলীল গ্রহণ করে এবং শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করে এবং বান্দাকে আল্লাহ্ যে ক্ষমতা ও ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রদান করেছেন, যার উপর ভিত্তি করে বান্দাকে শরীয়তের দায়িত্বভার দিয়েছেন, তা এই ভেবে অস্বীকার করে যে, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে সাধ্যাতীত দায়িত্ব দিয়েছেন, যেমন অন্ধকে কুরআন মজীদে নুকতা লাগানোর আদেশ দেয়া, সে আল্লাহকে যালেম হিসাবে সাব্যস্ত করল। এব্যাপারে তার ইমাম হচ্ছে অভিশপ্ত ইবলীস। কেননা সে বলেছেঃ

فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لأََقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ

‘‘আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে আপনার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকব’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৬)

প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই, যারা তাকদীরের ভালমন্দের উপর ঈমান আনয়ন করে। তারা বিশ্বাস করে যে, এসব কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ্। তারা শরীয়তের আদেশ ও নিষেধকে মাথা পেতে মেনে নেয়। তাদের জীবনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বিষয়ে শরীয়তকে বাস্তবায়ন করে। তারা বিশ্বাস করে যে, হেদায়াত ও গোমরাহী আল্লাহর হাতেই। তিনি স্বীয় অনুগ্রহে যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করেন এবং যাকে ইচ্ছা স্বীয় ইনসাফ দ্বারাই গোমরাহ করেন। কার প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং কার প্রতি ইনসাফ করবেন তা তিনি অবগত আছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ اهْتَدَى

‘‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথের উপর রয়েছে’’। (সূরা নাজ্ম ৩০) এতে তাঁর রয়েছে পরিপূর্ণ হিকমত ও অকাট্য দলীল। পুরস্কার ও শাস্তি শরীয়তের হুকুম বাস্তবায়ন বা বর্জন করার উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। তাকদীরের লিখন অনুযায়ী নয়। মুসীবতের সময় তাকদীরের দ্বারা দলীল গ্রহণ করে তারা নিজেদেরকে শান্তনা দেয়। মুমিনগণ যখন সৎকাজ করার তাওফীক প্রাপ্ত হন, তখন তারা আল্লাহর শুকরীয়া আদায় করে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلاَ أَنْ هَدَانَا اللَّهُ

‘‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে এর পথ প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ্ আমাদের হেদায়াত না করলে আমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হতাম না’’। (সূরা আ’রাফঃ ৪৩) তারা সেই ফাসেকের (কারুনের) ন্যায় কথা বলেন না, যেমন সে বলেছিলঃ

إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَى عِلْمٍ عِنْدِي

‘‘আমি এই সম্পদ প্রাপ্ত হয়েছি স্বীয় জ্ঞান বলে’’। (সূরা কাসাসঃ ৭৮)

মুমিনগণ যখন কোন পাপ কাজ করে ফেলেন, তখন তারা আমাদের পিতা ও মাতা আদম ও হাওয়ার ন্যায় বলেনঃ

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়ব’’। (সূরা আ’রাফঃ ২৩) অভিশপ্ত ইবলীসের ন্যায় কথা বলেন নি। কেননা সে বলেছেঃ

فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لأََقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ

‘‘আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে আপনার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকব’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৬) মুমিনগণ মুসীবতে পড়লে তারা বলে থাকেনঃ

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

‘‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয়ই আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’’। (সূরা বাকারাঃ ১৫৬) তারা তাদের মত বলেন না, যারা বলেছিলঃ

وَقَالُوا لإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي الأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَوْ كَانُوا عِنْدَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

‘‘আর তাদের ভাইগণ যখন পৃথিবীতে বিচরণ করে অথবা যুদ্ধে বের হয় তখন তারা বলেঃ ওরা যদি আমাদের নিকট থাকত, তাহলে তারা মৃত্যু বরণ করত না এবং নিহত হত না। এটি এ জন্যে, যাতে আল্লাহ্ তাদের অন্তরে অনুতাপ সঞ্চার করে দেন। আল্লাহই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ্ তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৫৬)

[1] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।