প্রশ্নঃ (১৫৩) বান্দারা যে সমস্ত কাজ করে থাকে, তাতে কি তাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, বান্দারা তাদের কর্ম সম্পাদনে ক্ষমতাবান এবং তাদের কর্ম তাদের ইচ্ছা অনুপাতেই সম্পাদিত হয়ে থাকে। তাদের কাজগুলো প্রকৃতপক্ষেই তাদের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের কাজ করার ক্ষমতা ও ইচ্ছা আছে বলেই তাদেরকে শরীয়তের হুকুম-আহকাম বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেচ্ছায় কাজ করা বা না করার ক্ষমতা রাখে বলেই তাদেরকে ছাওয়াব ও শাস্তি প্রদান করা হয়। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর সাধ্যের বাইরে কোন কাজ চাপিয়ে দেন নি। কুরআন ও সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত যে, বান্দার ইচ্ছা ও আমল করা বা না করার স্বাধীনতা রয়েছে। শুধু তাই নয়; বরং বান্দার কর্মকে বান্দার দিকেই সম্পর্কিত করা হয়েছে। তবে আল্লাহ্ তাকে যে কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে কেবল সেটিই করতে পারে। তারা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোন ইচ্ছা পোষণ করতে পারে না। তাদেরকে আল্লাহ্ যে কাজ করার ক্ষমতাবান করেছেন, তা ব্যতীত তারা অন্য কিছু করতে পারে না। যেমনটি ইতিপূর্বে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে বর্ণিত দলীলসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। বান্দারা যেহেতু নিজেরা নিজেদেরকে সৃষ্টি করতে পারে নি, তেমনি তাদের কর্মসমূহকেও সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং বান্দার ক্ষমতা, ইচ্ছা ও কর্মসমূহ আল্লাহর কুদরত, কর্ম ও ইচ্ছার অনুগামী। কেননা তিনিই মানুষের স্রষ্টা এবং তাদের ক্ষমতা, ইচ্ছা ও কর্মেরও স্রষ্টা। তবে তাদের ইচ্ছা, শক্তি ও কর্ম হুবহু আল্লাহর ইচ্ছা, শক্তি ও কর্ম নয়। যেমন তারা আল্লাহ নয়। আল্লাহ্ এধরণের কথার অনেক উর্ধে। বান্দার কর্মসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, বান্দার মাধ্যমে তা সম্পাদিত, তাদের সাথেই তা প্রতিষ্ঠিত এবং বাস্তবেই তাদের সাথেই সম্বন্ধযুক্ত। বান্দার কর্মসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কর্মসমূহেরই প্রভাব, তিনিই তা বাস্তবায়ন করেন এবং তার দিকেই সম্বন্ধযুক্ত। সুতরাং প্রকৃত সৃষ্টিকারী হলেন আল্লাহ, প্রকৃত বাস্তবায়নকারী হল বান্দা, আল্লাহ্ হেদায়াতকারী, বান্দা হেদায়াতপ্রাপ্ত। একারণেই উভয় ক্রিয়াকে কর্তার দিকে সম্বোধিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَنْ يُضْلِلْ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

‘‘আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করেন সেই সঠিক হেদায়াত প্রাপ্ত হয়। আর যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে’’। (সূরা আরাফঃ ১৭৮) সুতরাং প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর দিকে হেদায়াতকে সম্বোধিত করা হয়েছে এবং প্রকৃত পক্ষেই হেদায়াতপ্রাপ্ত হওয়াকে বান্দার দিকে সম্বোধিত করা হয়েছে। হেদায়াতকারী এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি এক নয়। এমনিভাবে হেদায়াত করা এবং হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়া এক বস্ত্ত নয়। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ যাকে চান প্রকৃতভাবেই তাকে গোমরাহ করেন। ফলে বান্দা প্রকৃতভাবেই পথভ্রষ্ট হয়। আল্লাহর সমস্ত বান্দাদের মধ্যে তাঁর ব্যবস্থাপনা একই রকম। যে ব্যক্তি কর্ম সৃষ্টি করা এবং কর্ম সম্পাদন করা- উভয়টিকে বান্দার দিকে সম্বোধিত করল সে কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি উভয়টিকে আল্লাহর দিকে সম্বোধিত করল, সেও কফুরী করল। যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করল যে, আল্লাহ বান্দার কর্মের প্রকৃত সৃষ্টিকারী এবং বান্দা প্রকৃতপক্ষেই তা বাস্তবায়নকারী সে প্রকৃত মুমিন।