প্রশ্নঃ (১৪৯) তাকদীরের তৃতীয় স্তর তথা ‘আল্লাহ্ স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী তাকদীর নির্ধারণ করেন’’ এর দলীল কী?

উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَمَا تَشَاءُونَ إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ

‘‘তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন’’। (সূরা দাহরঃ ৩০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَلا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا * إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ

‘‘কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো নাঃ আমি ওটা আগামীকাল করব। এটা না বলে যে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে’। (সূরা কাহফঃ ২৩-২৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ

مَنْ يَشَأِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَنْ يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

‘‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের সরল-সহজ পথের সন্ধান দেন’’। (সূরা আনআমঃ ৩৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً

‘‘আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন’’। (সূরা নাহলঃ ৯৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ

‘‘আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতনা; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لانْتَصَرَ مِنْهُمْ)

‘‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নিতেন’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ৪) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ

‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বুরুজঃ ১৬) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

‘‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন ওকে বলেনঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

‘‘আমি কোন কিছু ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে আমার কথা শুধু এই যে, আমি বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা নাহলঃ ৪০) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ

فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا

‘‘অতএব আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তকরণ খুলে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’’। (সূরা আন-আমঃ ১২৫) এ ছাড়াও আরো অগণিত আয়াত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ)

‘‘নিশ্চয়ই বনী আদমের অন্তরসমূহ দয়াময় আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝখানে মাত্র একটি অন্তরের ন্যায়। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই উলট-পালট করেন।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِنَّ اللَّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَكُمْ حِينَ شَاءَ وَرَدَّهَا عَلَيْكُمْ حِينَ شَاءَ)

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের রূহসমূহ যখন ইচ্ছা কবজ করে নেন এবং যখন ইচ্ছা তোমাদের নিকট তা ফেরত দেন।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

( اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا وَيَقْضِي اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ)

‘‘তোমরা সুপারিশ কর। এতে তোমরা বিনিময় প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ্ তার রাসূলের জবানের মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই ফয়সালা করেন।[3] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ তোমরা একথা বলো নাঃ আল্লাহ্ যা চান এবং অমুক যা চান; বরং তোমরা বলঃ একমাত্র আল্লাহ্ যা চান।[4] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

( مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ)

‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’’।[5] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ رَحْمَةَ أُمَّةٍ مِنْ عِبَادِهِ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ)

‘‘আল্লাহ্ তাআলা যখন কোন জাতির উপর রহমত নাযিল করতে চান, তখন সেই উম্মতে‎র নবীকে আগেই মৃত্যু দেন। আর যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চান তখন তাদের নবী জীবিত থাকাবস্থাই তাদেরকে শাস্তি দেন।[6] আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন- এ ব্যাপারে আরো অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

[1] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।

[3] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।

[4] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছন নং-১৩৭।

[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।

[6] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফাযায়েল।