প্রশ্নঃ (১১৪) হাদীছ শরীফে হাশরের কি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে?

উত্তরঃ হাদীছ শরীফে হাশরের পদ্ধতি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا)

‘‘মানুষকে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় তিনভাবে একত্রিত করা হবে। দু’জন একটি উটের উপর, তিনজন একটি উটের উপর, চারজন একটি উটের উপর এবং দশজন একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের স্থানে উপস্থিত হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে।[1] বুখারী ও মুসলিম শরীফে আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,

(أَنََّ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَة؟ِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟)

‘‘জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে হাঁটানো হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ দুনিয়াতে যিনি তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে সক্ষম ছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে সক্ষম নন?[2]

ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ)

‘‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ

‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে।[3] আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো বর্ণনা করেন যে,

(يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالَ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَهمهم ذلك)

‘‘কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে।[4]

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর।

[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।

[4] - বুখারী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু রিকাক।