ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে[1] এবং ‘পবিত্রতা ছালাতের চাবি’ বলেও ঘোষণা করেছে।[2] তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে ছালাতের ওযূর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কারণ ওযূ না হলে ছালাত হবে না।[3] সুতরাং ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সেগুলো আমাদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে।
(১) মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ :
শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।
(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ تَفْضُلُ الصَّلاَةُ الَّتِىْ يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلاَةِ الَّتِى لاَ يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِيْنَ ضِعْفًا.
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই ছালাতে মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়।[4]
তাহক্বীক্ব : ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,
وَقَدْ رَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ يَحْيَى الصَّدَفِىُّ عَنِ الزُّهْرِىِّ وَلَيْسَ بِالْقَوِىِّ وَرُوِىَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَمِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَكِلاَهُمَا ضَعِيْفٌ وَفِىْ طَرِيْقِ الْوَجْهِ الْآخِرِ عَنْ عُرْوَةَ الْعَاقِدِىِّ وَ هُوَ كَذَّابٌ.
মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথ্যুক।[5]
(ب) رَكْعَتَانِ بِسِوَاكٍ أَفْضَلُ مِنْ سَبْعِيْنَ رَكْعَةً بِغَيْرِ سِوَاكٍ.
(খ) মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান।[6] উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথ্যুক।[8]
(ج) عَنْ زَيْدِ بنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخْرُجُ مِنْ ِشَيْءٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَسْتَاكَ.
(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না।[9]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[10]
(د) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فِى السِّوَاكِ عَشْرُ خِصَالٍ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ تَعَالَى وَمَسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَمَفْرَحَةٌ لِلْمَلاَئِكَةِ جَيِّدٌ لِلَّثَةِ وَيُذْهِبُ بِالْحَفْرِ وَيَجْلُو الْبَصَرَ وَيُطَيِّبُ الْفَمَ وَيُقَلِّلُ الْبَلْغَمَ وَهُوَ مِنَ السُّنَّةِ وَيَزِيْدُ فِى الْحَسَنَاتِ.
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূর করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ হরাস করে (৯) এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে।[11]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী।[12]
(ه) عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ وَمَجْلاَةٌ ِللْبَصَرِ.
(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়।[13]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি।[14]
(و) عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ تَسَوَّكُوْا فَإِنَّ السِّوَاكَ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ مَا جَاءَنِىْ جِبْرِيْلُ إِلَّا أَوْصَانِىْ بِالسِّوَاكِ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيَّ وَعَلَى أُمَّتِىْ وَلَوْلاَ أَنِّىْ أَخَافُ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِىْ لَفَرَضْتُهُ لَهُمْ وَإِنِّىْ لَأَسْتَاكُ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ أُحْفِيَ مَقَادِمَ فَمِىْ.
(চ) আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন। এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না। আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম। আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব।[15]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের একজন রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন।[16]
(ز) عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِيْنَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ.
(ছ) আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা।[17]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর‘আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন।[18]
[2]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩, ১/৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৩১২, পৃঃ ৪০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ২/৫১ পৃঃ।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১, ১/১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯, পৃঃ ৩২; মিশকাত হা/৪০৪, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০, ২/৮২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[4]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ৬১-৬২; হাকেম হা/৫১৫; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৮৯, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯, ২/৭৬ পৃঃ।
[5]. আলবানী, মিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ, ১/১২৪ পৃঃ।
[6]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩; মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ।
[7]. ঐ, মুন্তাখাব হাদীস, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘আদ (ঢাকা : দারুল কুতুব, দ্বিতীয় প্রকাশ : আগস্ট ২০১০), পৃঃ ২৯৯।
[8].لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃ; যঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭।
[9]. ত্বাবারাণী হা/৫২৬১; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
[10]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩।
[11]. দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল (বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃঃ ৬৮-৬৯।
[12]. مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ -দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।
[13]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬।
[14]. لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم -আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬।
[15]. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯, পৃঃ ২৫; আহমাদ হা/২২৩২৩; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৭৯৬; মিশকাত হা/৩৮৬, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬, ২/৭৫ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৮।
[16]. علي بن زيد أبو عبد الملك الألهاني الدمشقي قال فيه البخاري منكر الحديث، وقال ابن حاتم الرازي ضعيف الحديث، أحاديثه منكرة، মুগাল্লাত্বঈ, শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব : মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায, ১৪১৯ হিঃ), ১/৬২ পৃঃ।
[17]. যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০, ১/২০৬; মিশকাত হা/৩৮২, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২, ২/৭৪ পৃঃ, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।
[18]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫/১৯৮৫), হা/৭৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৭।
যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
(أ) عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ نِعْمَ السِّوَاكُ الزَّيْتُوْنُ مِنْ شَجَرةٍ مُبارَكَةٍ يُطَيِّبُ الْفَمَ ويُذْهِبُ الحَفْرَ وَهُوَ سِوَاكِىْ وسِوَاكُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِىْ.
(ক) মু‘আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে ও দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন।[2] ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে। সে চরম মিথ্যাবাদী।[3]
(ب) عَنْ أَبِىْ خَيْرَةَ الصَّبَّاحِىِّ قَالَ كُنْتُ فِى الْوَفْدِ الَّذِيْنَ أَتَوْا رَسُوْلَ اللهِ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوَّدَنَا الأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ عِنْدَنَا الْجَرِيْدُ وَلَكِنَّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيَّتَكَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوْا طَائِعِيْنَ غَيْرَ مُكْرَهِيْنَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِىْ لَمْ يُسْلِمُوْا إِلاَّ خَزَايَا مَوْتُوْرِيْنَ.
(খ) আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তা দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি।[4]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাঊদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুক্বাতিল বিন হুমামও অপরিচিত।[5]
[2]. আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৯/৩৭১ পৃঃ।
[3]. فيه محمد بن محصن العكاشي وهو كذاب সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০।
[4]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৮৩৫৯; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
[5]. ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ।
মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট, একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَجْزِئ مِنَ السِّوَاكِ الْأَصَابِعُ.
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। তাছাড়া আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে।[2]
[2]. اتفقوا على تضعيفه ، بل اتهمه الدارقطني بالوضع সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১; ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯; যঈফুল জামে হা/৬৪১৫।
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে।[1]
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাআতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বলা হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের এহতেমাম করার মধ্যে সত্তরটি উপকার রয়েছে। তার মধ্যে একটি মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদত নসীব হয়।[2] উক্ত দাবী উদ্ভট ও ভিত্তিহীন। এভাবে শরী‘আতকে হেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
মিসওয়াক সম্পর্কে ছহীহ হাদীছ :
عَنْ عَائِشَةَ عَن النَّبِيِّ قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ’।[3]
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ أَمَرَ بِالسِّوَاكِ وَقَالَ قَالَ النَّبِيُّ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا تَسَوَّكَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَامَ الْمَلَكُ خَلْفَهُ فَتَسَمَّعَ لِقِرَاءَتِهِ فَيَدْنُو مِنْهُ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيْهِ فَمَا يَخْرُجُ مِنْ فِيْهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ إِلاَّ صَارَ فِىْ جَوْفِ الْمَلَكِ فَطَهِّرُوْا أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ.
আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ’।[4] উল্লেখ্য, মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
[2]. ফাযায়েলে নামায অংশ, ৬৯ পৃঃ।
[3]. ছহীহ নাসাঈ হা/৫, ১/৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৮১, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ হা/৩৫১, ২/৭৪ পৃঃ; ইরওয়া হা/৬৬।
[4]. আবুবকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ।
পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় মাথায় টুপি দেওয়া বা মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রথা সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِىُّ إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ غَطَّى رَأْسَهُ وَإِذَا أَتَى أَهْلَهُ غَطَّى رَأْسَهُ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর মাথা ঢেকে নিতেন এবং যখন স্ত্রী সহবাস করতেন, তখনও মাথা ঢাকতেন।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কাদীমী নামক রাবী রয়েছে। সে এই হাদীছ জাল করেছে। এছাড়া তার শিক্ষক আলী ইবনু হাইয়ান আল-মাখযূমীকে ইবনু হাজার আসক্বালানী মাতরূক বলেছেন। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছও এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।[2]
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯২।
পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে। তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না। কুলুখ নেওয়ার পর পানি নেওয়া সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণনা করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِىْ أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ فَسَأَلَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَقَالُوْا نَتَّبِعُ الْحِجَارَةَ الْمَاءَ.
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘এতে এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসে। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন’ (তওবা ১০৮)। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, (আমরা ইস্তিঞ্জা করার সময়) ঢিল নেওয়ার পর পানি নিই।
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। এই বর্ণনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না।[1] ইমাম বাযযার এটি বর্ণনা করে বলেন, ‘যুহরী থেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযীয ছাড়া অন্য কেউ একে বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। আর সে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছে।[2] ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিঃ) বলেন,
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيْزِ ضَعَّفَهُ أَبُوْ حَاتِمٍ فَقَالَ لَيْسَ لَهُ وَلَا لِأَخَوَيْهِ عِمْرَانَ وَعَبْدِ اللهِ حَدِيْثٌ مُسْتَقِيْمٌ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ شَبِيْبٍ ضَعِيْفٌ أَيْضًا.
মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আযীযকে আবু হাতেম যঈফ বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তার ও তার দুই ভাই ইমরান ও আব্দুল্লাহ কারো একটি হাদীছও সঠিক নয়। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীবও দুর্বল।[3]
উক্ত বর্ণনার বিরোধী ছহীহ হাদীছ :
উক্ত হাদীছ যে জাল তার বাস্তব প্রমাণ হল নিম্নের ছহীহ হাদীছ, যেখানে ঢিলের কথাই নেই।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا قَالَ كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيْهِمْ هَذِهِ الآيَةُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এই আয়াতটি কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘এতে এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসে’ (তওবা ১০৮)। তিনি বলেন, তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত।[4] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ إِنَّ اللهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِى الطُّهُوْرِ فَمَا طُهُوْرُكُمْ قَالُوْا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ وَنَغْتَسِلُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِىْ بِالْمَاءِ قَالَ فَهُوَ ذَاكَ فَعَلَيْكُمُوْهُ.
আবু আইয়ূব আনছারী, জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়- ‘তথায় (কুবায়) এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা লাভ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন কর? তারা বলল, আমরা ছালাতের জন্য ওযূ করে থাকি, অপবিত্রতা হতে গোসল করে থাকি এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটাই তার কারণ। সুতরাং তোমরা সর্বদা এটা করতে থাকবে।[5]
মূল কথা হল, অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরা শুধু ঢিল দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত। কিন্তু কুবাবাসীরা অন্যদের তুলনায় শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। সে জন্যই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।
আরেকটি জাল হাদীছ :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَتَّبِعُوْا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ مِنْ أَثَرِ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ فَإِنِّيْ أَسْتَحْيِيْهِمْ وَإِنَّ النَّبِيَّ كاَنَ يَفْعَلُهُ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বামীদেরকে বলে দাও, তারা যেন পেশাব-পায়খানার সময় ঢিল নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। কারণ রাসূল (ছাঃ) এটা করেন।[6]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এ শব্দে কোন বর্ণনা নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।[7] উক্ত বর্ণনার বিরোধী সরাসরি ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কুলুখ নেওয়ার কথা নেই; বরং শুধু পানি নেওয়ার কথা রয়েছে। যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَسْتَطِيْبُوْا بِالْمَاءِ فَإِنِّىْ أَسْتَحْيِيْهِمْ فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَفْعَلُهُ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও, তারা যেন পানি দ্বারা পবিত্রতা হাছিল করে। কারণ আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করে থাকেন।[8]
অতএব সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উক্ত মিথ্যা প্রথাকে অবশ্যই উচ্ছেদ করতে হবে। পানি থাকা সত্ত্বেও যেন কোন স্থানে কুলুখের স্তূপ সৃষ্টি না হয়। কারণ প্রকৃত ফযীলত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার মধ্যেই রয়েছে।
[2]. لا نعلم أحدا رواه عن الزهري الا محمد بن عبد العزيز ولا عنه الا ابنه- তালখীছ, পৃঃ ৪১, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
[3]. ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ফী আহাদীছির রাফইল কাবীর হা/১৫১; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/৪৪, ১/৭ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-২৩, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৬৭৩।
[5]. ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৫৫, পৃঃ ২৯-এর শেষ হাদীছ, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৬৯, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৪১, ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ; আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১, ৩/১১৩ পৃঃ।
[6]. ইরওয়াউল গালীল হা/৪২।
[7]. ইরওয়াউল গালীল ১/৮২ পৃঃ।
[8]. ছহীহ তিরমিযী হা/১৯, ১/১১ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৬, ১/৮ পৃঃ।
কুলুখ নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটা, কাশি দেওয়া, নাচানাচি করা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, টয়লেটে কুলুখের আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা সবই নব্য মূর্খতা। ইসলামে এরূপ বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা মানুষকে এত নীচে নামিয়েছে। উল্লেখ্য যে, পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের পেশাবে অপবিত্রতার মাত্রা বেশী।[1] অথচ তাদের ব্যাপারে এ ধরনের চরম ফতোয়া দেয়া হয় না। অনুরূপভাবে একই ব্যক্তি যখন টয়লেট থেকে বের হয় তখন কিন্তু হাঁটাহাঁটি করে না, কুলুখও ধরে না। এগুলো তামাশা মাত্র। এই অভ্যাস ইসলামের বিশ্বজনীন মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। ইসলাম সৌন্দর্য মন্ডিত জীবন বিধান। যাবতীয় নোংরামী এখানে নিষিদ্ধ। শরী‘আতে পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। তাই বলে এর নামে নতুন আরেকটি বিদ‘আত তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকায় ইসলাম তার জন্য সুন্দর বিধান দিয়েছে। আর তা হল, ওযূ করার পর হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেওয়া। যেমন-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا بَالَ يَتَوَضَّأُ وَيَنْتَضِحُ.
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন পেশাব করতেন, তখন ওযূ করতেন এবং পানি ছিটিয়ে দিতেন’।[2] অতএব প্রচলিত বেহায়াপনার আশ্রয় নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নারী-পুরুষ সকলকে এ ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
[2]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৬৬ ও ৬৭, ১/২২ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৫১৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১; মিশকাত হা/৩৬৬ পৃঃ ৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৩৮, ২/৬৮ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/১৬৮; মিশকাত হা/৩৬১, পৃঃ ৪৩; বঙ্গনুবাদ মিশকাত হা/৩৩৪, ২/৬৭ পৃঃ।
উক্ত বিশ্বাস সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বরং তাঁরা যে পাত্রে ওযূ করতেন সে পাত্রের পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জাও সম্পন্ন করতেন।[1] উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদ ও নাসাঈতে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূল (ছাঃ) যে পাত্রের পানিতে ইস্তিঞ্জা করেন, তার বিপরীত পাত্রে ওযূ করেন।[2] মূলতঃ পাত্রের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলেই অন্য পাত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। মুহাদ্দিছগণ এমনটিই বলেছেন।[3]
[2]. আবুদাঊদ হা/৪৫, ১/৭ পৃঃ; নাসাঈ হা/৯৪; মিশকাত হা/৩৬০, পৃঃ ৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৩৩, ২/৬৬ পৃঃ, ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ।
[3]. ليس المعنى أنه لا يجوز التوضىء بالماء الباقي من الاستنجاء أو بالإناء الذي استنجى به وإنما أتى بإناء آخر لأنه لم يبق من الأول شيء أو بقي قليل والإتيان بالإناء الآخر اتفاقي كان فيه الماء فأتى به -আল্লামা মুহাম্মাদ শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ শরহে সুনানে আবী দাঊদ (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ, ১৪১৫ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৫।
টয়লেট সারার পর বলবে, ‘গুফরা-নাকা’, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।[1] ‘আল-হামদুলিল্লা-হিললাযি.. মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ إِذَا خَرَجَ مِنْ الْخَلَاءِ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِىْ.
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন, ঐ আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা, যিনি আমার কষ্ট দূর করেছেন ও আমাকে সুস্থ করেছেন।[2]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনার সনদে ইসমাঈল ইবনু মুসলিম নামে একজন রাবী আছে, সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ।[3]
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৩০১, পৃঃ ২৬; মিশকাত হা/৩৭৪, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৪৫, ২/৭০ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ সুনানু ইবনে মাজাহ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় সংস্করণ : ডিসেম্বর ২০০৫), হা/৩০১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯-১৫০।
[3]. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩০১।
মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান। অতএব তা পরিত্যাগ করে মনে মনে নিয়ত করতে হবে।[1] উল্লেখ্য যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর নামে প্রকাশিত ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও যরূরী মাসআলা মাসায়েল’ নামক বইয়ে বলা হয়েছে যে, ক্বিবলার দিকে মুখ করে উঁচু স্থানে বসে ওযূ করতে হবে।[2] অথচ উক্ত কথার প্রমাণে কোন দলীল পেশ করা হয়নি। উক্ত দাবী ভিত্তিহীন।
[2]. হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ), ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়- মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা : মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯), পৃঃ ৪২; উল্লেখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের ছালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে চালু আছে। কোন্টি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহই ভাল জানেন।