(৩) মাগরিবের পর ছালাতুল আউয়াবীন পড়া :

মাগরিবের পর ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ পড়ার প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা পাওয়া যায়, তার সবই জাল বা মিথ্যা।

(أ) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيْمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوْءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً.

(ক) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর ৬ রাক‘আত ছালাত পড়বে কিন্তু মাঝে কোন ত্রুটিপূর্ণ কথা বলবে না, তার জন্য উহা ১২ বছরের ইবাদতের সমান হবে’।[1]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম তিরমিযী বলেন,

حَدِيْثُ أَبِىْ هُرَيْرَةَ حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيْثِ زَيْدِ بْنِ الْحُبَابِ عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِىْ خَثْعَمٍ قَالَ وَسَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَعِيْلَ يَقُوْلُ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِىْ خَثْعَمٍ مُنْكَرُ الْحَدِيْثِ وَضَعَّفَهُ جِدًّا.

আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছটি গরীব। আমরা ওমর ইবনে আবী খাছ‘আম কর্তৃক বর্ণিত যায়েদ ইবনু হুবাবের হাদীছ ছাড়া আর কিছু জানি না। ইমাম বুখারীকে ওমর ইবনে আব্দুল্লাহ আবী খাছ‘আম সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, সে অস্বীকৃত রাবী। তিনি তাকে নিতান্তই যঈফ বলেছেন’।[2]

(ب) عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ.

(খ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ২০ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।[3]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে ইয়াকূব ইবনু ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[4]

(ج) عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى مَا بَيْنَ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ إِلَى صَلاَةِ الْعِشَاءِ فَإِنَّهَا صَلاَةُ الْأَوَّابِيْنَ.

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ছালাত আদায় করবে সেটা তার জন্য ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ হবে।[5]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ছাখর নামে যঈফ রাবী আছে। সে মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির-এর যুগ পায়নি।[6]

জ্ঞাতব্য : মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান বলেন, ‘মাগরিবের পরে ছয় রাকআত, একে আওয়াবীনও বলা হয়।... আওয়াবীন নামাযের সর্বাধিক রাকআত সংখ্যা বিশ। দু’ কিংবা চার রাকআতও জায়েয। নবী (সা.) আওয়াবীনের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন’।[7] ‘নবীজীর নামায’ শীর্ষক বইয়ে ড. ইলিয়াস ফায়সাল মাগরিবের পর অতিরিক্ত ছালাত আদায় করার দাবী করেছেন। তার প্রমাণে একটি উদ্ভট বর্ণনা পেশ করেছেন।[8] এটা বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। অবশ্য মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী (রহঃ) লিখেছেন, ‘মাগরিবের পরের ছয় রাকআতের নাম ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বলিয়া কোন হাদীসে উল্লেখ নাই’।[9]

[1]. তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১১৬৭; মিশকাত হা/১১৭৩, পঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৫, ৩/৯৫ পৃঃ।

[2]. যঈফ তিরমিযী হা/৬৬, পৃঃ ৪৮-৪৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৬৬১।

[3]. তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ; মিশকাত হা/১১৭৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৬, ৩/৯৫ পৃঃ।

[4]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৪-এর টীকা দ্রঃ।

[5]. ইবনু মুবারক, কিতাবুয যুহদ, পৃঃ ১৪; ইবনু নছর, কিতাবুল কিয়াম, পৃঃ ৪৪।

[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬১৭।

[7]. তালীমুস্-সালাত, পৃঃ ১৭৬-১৭৭।

[8]. ঐ, পৃঃ ২৮২।

[9]. বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৫৫।