নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা পেশ করা হল, যেগুলো মানুষের মুখে মুখে খুবই প্রচলিত। অথচ তা যঈফ ও জাল বর্ণনা। এ সমস্ত বর্ণনা প্রচার করা উচিৎ নয়।
(أ) عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ.
(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, ‘এই হাদীছ মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য’।[2]
(ب) عَنْ عِيْسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
(খ) ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে তখন সে যেন পুরুষাঙ্গ তিনবার ঝেড়ে নেয়।[3]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে যাম‘আহ ইবনু ছালেহ আল-জুনদী ও ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ নামক দুইজন দুর্বল রাবী আছে।[4] উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার মধ্যে অনেকে পেশাব করার পর নাচানাচির দলীল খুঁজেন, যা মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।
(ج) عَنْ أَّبِىْ رَافِعٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهَِ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ وُضُوْءَ الصَّلاَةِ حَرَّكَ خَاتَمَهُ فِىْ إِصْبَعِهِ.
(গ) আবু রাফে‘ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন।[5]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মা‘মার ও তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে দুইজন দুর্বল রাবী আছে।[6]
(د) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وَجِّهُوْا هَذِهِ الْبُيُوْتَ عَنِ الْمَسْجِدِ فَإِنِّىْ لَا أُحِلُّ الْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلَا جُنُبٍ.
(ঘ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই সকল ঘরের দরজা মসজিদের দিক হতে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না।[7]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে জাসরা বিনতে দিজাজা নামক একজন বর্ণনাকারী আছে। সে অত্যধিক ত্রুটিপূর্ণ।[8]
(ه) عَنْ عَلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ لاَ تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ صُوْرَةٌ وَلَا كَلْبٌ وَلَا جُنُبٌ.
(ঙ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, (রহমতের) ঐ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যাতে কোন ছবি রয়েছে অথবা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি রয়েছে।[9]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[10] তবে হাদীছের প্রথমাংশ ছহীহ। কারণ যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকে এবং কুকুর থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে।[11]
(و) عَنْ عَلِيٍّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ فَقَالَ إِنِّىْ اغْتَسَلْتُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَصَلَّيْتُ الْفَجْرَ ثُمَّ أَصْبَحْتُ فَرَأَيْتُ قَدْرَ مَوْضِعِ الظُّفْرِ لَمْ يُصِبْهُ الْمَاءُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَوْ كُنْتَ مَسَحْتَ عَلَيْهِ بِيَدِكَ أَجْزَأَكَ.
(চ) আলী (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি নাপাকীর গোসল করেছি ও ফজরের ছালাত পড়েছি। অতঃপর দেখি এক নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌঁছেনি, রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি তখন তুমি উহার উপর তোমার (ভিজা) হাত মুছে দিতে, তবে তোমার পক্ষে যথেষ্ট হত।[12]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে।[13]
[2]. যঈফ আবুদাঊদ হা/১৯ هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ- ।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/৩২৬, পৃঃ ২৮; বুলূগুল মারাম হা/৯০।
[4]. তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/১৯০৭৬; যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬২১।
[5]. দারাকুৎনী ১/৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; মিশকাত হা/৪২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৯৫।
[6]. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; যঈফুল জামে‘ হা/৪৩৬১।
[7]. আবুদাঊদ হা/২৩২; মিশকাত হা/৪৬২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৩, ২/১০৮ পৃঃ।
[8]. إسناده ضعيف من أجل جسرة بنت دجاجة قال البخاري عندها عجائب وقد ضعف الحديث جماعة كما قال الخطابي ومن هؤلاء: البيهقي وابن حزم، فقال هذا باطل وأبو محمد عبد الحق فقال لا يثبت. -যঈফ আবুদাঊদ হা/২৩২; ইরওয়াউল গালীল হা/১২৪, ১৯৩, ৯৬৮।
[9]. আবুদাঊদ হা/২২৭, ৪১৫২; নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৪, ২/১০৮।
[10]. যঈফ আবুদাঊদ হা/২২৭; মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ হা/১১২, ১/৬৩ পৃঃ।
[11]. ছহীহ বুখারী হা/৩২২৭, ৩২২৪, ৩২২৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৫৮, ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৪৪৮৯, পৃঃ ৩৮৫।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪; মিশকাত হা/৪৪৯।
[13]. মিছবাহুয যুজাজাহ ১/৮৫ পৃঃ।