কোন ব্যথা-বেদনা বা জালা-জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার মানসে ঝাড়ফুঁক করা বা করানো কি বৈধ?

ঝাড়ফুঁক করা অ করানো বৈধ। তবে তা কুরআনের আয়াত অথবা সহিহ হাদিসের দুয়া দ্বারা হতে হবে। সেই সাথে এ বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে যে, আরোগ্যদাতা কেবল মহান আল্লাহ।

নবী (সঃ) আপন পরিবারের কোন রোগী দর্শন করার সময় নিজের ডান হাত তার ব্যথার স্থানে ফিরাতেন এবং এ দুয়াটি পরতেন, “আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।” অর্থাৎ, হয়ে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দুর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তোমারই আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। তুমি এমন ভাবে রোগ নিরাময় কর, যে তা রোগকে নির্মূল করে দেয়। (বুখারি ও মুসলিম)

উসমান ইবনে আবুল আ’স (রঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট ঐ ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি তার দেহে অনুভব করছিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেন, “তুমি তোমার দেহের ব্যথিত স্থানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ এবং সাতবার ‘আউযু বিইযযাতিল্লাহি অকদরাতিহি মিন সাররি মা আজিদু অউহাযিরু’ বল।” অর্থাৎ আল্লাহর ইজ্জত এবং কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি, সেই মন্দ থেকে যা আমি পাচ্ছি এবং যা থেকে আমি ভয় করছি। (মুসলিম)

উক্ত হাদিস দ্বয় থেকে বুঝা যায় যে, ব্যথার স্থানে হাত রেখে ঝাড়ফুঁক করা বিধেয়। তবে সতর্কতার বিষয় যে, যে মহিলাকে স্পর্শ করা বৈধ নয়, সে মহিলার ব্যথার জায়গায় হাত রাখাও বৈধ নয়।

কোন মুশরিক বা অমুসলিম এর কাছে ঝাড়ফুঁক করানো বৈধ কি?

না কারণ মহানবী (সঃ) সাহাবা গণকে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র গুলি আমার নিকট পেশ কর। ঝাড়ফুঁক করায় দোষ নেই, যতক্ষণ তাতে শিরক না থাকে।” (মুসলিম)

আর মুশরিক আর অমুসলিমরাতো শিরকী মন্ত্র পরেই ঝাড়ফুঁক করে।

পানি পড়া বৈধ কি না? পানি পাত্রে ফুঁক দিতে হাদিসে নিষেধ আছে, তাহলে পানি পড়তে ফুঁক দেওয়া কিভাবে বৈধ হতে পারে?

পানি পড়া বৈধ। যেহেতু কুরআন পড়ার বরকত মিশ্রিত ফুঁক ও থুথু, সেহেতু তাতে আরোগ্য লাভের আশা করা যায় এবং তা আপত্তিকর নয়।

বৈধ। আবু সাইদ খুদরী ল বলেন, নবী (সঃ) এর কিছু সাহাবা আরবের কোন এক বসতিতে এলেন। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা তাঁদেরকে মেহমান রূপে বরন করল না (এবং কোন খাদ্যও পেশ করল না)। অতঃপর তারা সেখানে থাকা অবস্থায় তাঁদের সর্দারকে (বিচ্ছুতে) দংশন করল। তারা বলল, ‘তোমাদের কাছে কি কোন ঔষধ অথবা ঝাড়ফুঁক কারী (ওঝা) আছে?’ তারা বললেন, ‘তোমরা আমাদেরকে মেহমান রূপে বরন করেলে না। সুতরাং আমরাও পারিশ্রমিক ছাড়া (ঝাড়ফুঁক) করব না।’ ফলে তারা এক পাল ছাগল পারিশ্রমিক নির্ধারিত করল। একজন সাহাবি উম্মুল কুরআন (সুরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন থুথু জমা করে (দংশনর জায়গায়) দিতে লাগলেন। সর্দার সুস্থ হয়ে উঠল। তারা ছাগলের পাল হাজির করল। তারা বললেন, ‘আমরা নবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা না করে গ্রহণ করব না।’ সুতরাং তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি হেসে বললেন, “তোমাকে কিসে জানালো যে, ওটি ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র?” ! ছাগলগুলি গ্রহণ কর এবং আমার জন্য একটি ভাগ রেখো। “ (বুখারিঃ ৫৭৩৬ নং)

কোন বালা মুসীবত বা জিনভুতের কবল থেকে বাঁচার জন্য তাবিয ব্যবহার করা বৈধ কি?

তাবীয কবচ তিন প্রকারঃ (১) গায়রুল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে লেখা তাবীয, ফিরিশতা, জিন, নবী, অলি প্রভৃতির নাম লিখে তৈরি তাবীয, বিভিন্ন সংখ্যা বা হিজিবিজি লিখে তৈরি তাবীয। (২) কোন ধাতু, মাটি, গাছের ছাল বা শিকড়, পশুর লোম বা পাখির পালক, হাড়, কড়ি, কাপড় বা সুতো ইত্যাদি মাদুলিতে ভরে তৈরি তাবীয। এই দুই শ্রেণির তাবীয ব্যবহার শিরক।

কারণ ইবনে মাসউদ (রঃ) এর পত্নী জয়নাব (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক বুড়ি আমাদের বাড়ি আসা যাওয়া করত এবং সে বাতবিসর্প - রোগে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমাদের ছিল লম্বা খুরো বিশিষ্ট খাট। (স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মসউদ যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন গলা সাড়া বা কোন আওয়াজ দিতেন। একদিন তিনি বাড়িতে এলেন। (এবং অভ্যাস মত বাড়ি প্রবেশের সময় গলা সাড়া দিলেন।) বুড়ি তার আওয়াজ শোনামাত্র লুকিয়ে গেল। এরপর তিনি আমার পাশে এসে বসলেন । তিনি আমার দেহ স্পর্শ করলে (গলায় ঝুলানো মন্ত্র পড়া) সুতো তার হাতে পড়ল। তিনি বলে উঠলেন, ‘এটা কি?’ আমি বললাম, ‘সুতা পড়া, বাতবিসর্প রোগের জন্য ওতে মন্ত্র পড়া হয়েছে।’ একথা শুনে তিনি তা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘ইবনে মসউদের বংশধর তো শিরক থেকে মুক্ত।’ আমি রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় মন্ত্র তন্ত্র, তাবীয কবচ এবং যোগ যাদু ব্যবহার করা শিরক।”

জয়নাব (রঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘কিন্তু একদা আমি বাইরে বের হলাম। হটাৎ করেই আমাকে অমুক লোক দেখে নিল। অতঃপর আমার যে চোখটা ঐ লোকের দিকে ছিল সেই চোখটায় পানি ঝরতে লাগলো। এর পর যখনই আমি ঐ চোখে মন্ত্র পড়াই, তখনই পানি ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। আর যখনই না পড়াই, তখনই পানি ঝরতে শুরু করে। (অতএব বুঝা গেল যে, মন্ত্রের প্রভাব আছে।)’

ইবনে মসউদ (রঃ) বললেন, “ওটা তো শয়তানের কারসাজি। যখন তুমি ( মন্ত্র পড়িয়ে ) ওর অনুগত্য কর, তখন সে ছেড়ে দেয়। (এবং তোমার চোখে পানি আসে না)। আর যখনই তুমি তার অনুগত্য কর না, তখনই সে নিজ আঙ্গুল দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা মারে ( এবং তার ফলে তাতে পানি আসে, যাতে তুমি মন্ত্রকে বিশ্বাস কর এবং শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়)। তবে যদি তুমি সেই কাজ করতে, যা আল্লাহর রাসুল (সঃ) করেছেন, তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম ও মঙ্গল হতো এবং অধিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে। আর তা এক যে, চোখে পানি ছিটাতে এবং বলতে,

“আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।” (ইবনে মাজাহ ৩৫৩১ নং, সিলসিলাহ সহিহাহ ৩৩১ নং)

“আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর নিকট (বাইয়াত করার উদ্দেশ্য) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ‘হয়ে আল্লাহর রাসুল! আপনি ন’জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, “ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই।” অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইয়াত নিলেন এবং বললেন, “যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে।” ( আহমাদ, হাকেম, সিলসিলাহ সহিহাহ ৪৯২ নং)

(৩) কুরআনের আয়াত বা হাদিসের দুয়া লিখে বানানো তাবীয। এই শ্রেণীর তাবীয শিরক না হলেও ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ (ক) মহানবী (সঃ) ব্যাপকার্থ বোধক ভাষায় বলেছেন, ‘তাবীয শিরক।’ (খ) এর বৈধতা ও ব্যবহার প্রচলিত হলে শিরকী তাবীযের চোরা পথ খোলা যাবে। (গ) এই তাবীযের মাধ্যমে কুরআন ও আল্লাহর নামের অসম্মান হবে। যেহেতু ব্যবহারকারী তা দেহে রেখেই প্রস্রাব পায়খানা ও সঙ্গম করবে এবং মহিলারা মাসিক অবস্থায় তা বেঁধেই রাখবে। (লাজনাহ দায়েমাহ)

উত্তরঃ ইসলামে যা হারাম, তার ব্যবসা করা এবং তার বিনিময়ে পয়সা খাওয়া হারাম। ইসলামে মদ হারাম, তা বিক্রি করাও হারাম। আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেছেন, “মদ পানকারীকে, মদ পরিবেশনকারীকে, তার ক্রেতা ও বিক্রেতাকে, তার প্রস্তুতকারককে, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে ,তার বাহককে ও যার জন্য বহন করা হয় তাকে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।” (আবু দাউদ ৩৬৭৪, ইবনে মাজাহ ৩৩৮০ নং) (আবু দাউদ ৩৬৭৪, ইবনে মাজাহ ৩৩৮০ নং)

ইবনে মাজার বর্ণনায় আছে, “তা মূল্য ভক্ষণকারী ও (অভিশপ্ত)।”(সহিহুল জা’মে ৫০৯১ নং)

কুরআনের আয়াত পাত্রে জাফরান দিয়ে লিখে তা পান করার মাধ্যমে আরোগ্যের আশা করা বৈধ কি?

উলামাগন এই শ্রেণির অনুমতি দিয়েছেন। দ্রষ্টব্যঃ জাদুল মাআদ। (লাজনাহে দায়েমাহ)
অনুরূপ কাগজে লিখে পানিতে চুবিয়ে তা পান করার অনুমতিও। (সাফা)

না। আগুন দিয়ে চেহারা ইত্যাদি পুড়িয়ে চিকিৎসা বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “আগুন দিয়ে জ্বালানোর শাস্তি কেবল আল্লাহই দেন।” (বুখারি)

যিনি ঝাড়ফুঁক করবেন, তার কি আলেম, ইমাম বা হুজুর হওয়া জরুরী?

না। আলেম হওয়া জরুরী নয়। যিনি কুরআন ও দুয়া জানেন তিনিই ঝাড়ফুঁক করতে পারেন। পরহেজগার মানুষের ঝাড়ফুঁক তাসির আছে।

থুথু দিয়ে মাটি ঘুলে ফোঁড়া বা ব্যথা ইত্যাদিতে লাগিয়ে চিকিৎসা বৈধ কি?

এই চিকিৎসা মহানবী (সঃ) করেছেন। অনেকে বলেছেন, তা তার থুথু ও মদিনার মাটির সাথে সম্পৃক্ত। অনেকে বলেছেন, সবারই থুথু ও সব জায়গার মাটি দ্বারা ঐ চিকিৎসা হতে পারে। তবে তা ঔষধরূপে, তাবাররক স্বরূপ নয়। (ইবনে উসাইমিন)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »