মুসলিম দেশে মানব রচিত আইন দ্বারা পরিচালিত মুসলিম শাসককে সরিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে কায়েম হবে?

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে মুসলিম জনজাগরণে মাধ্যমে। মুসলিমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, আকিদাহ পরিশুদ্ধ করবে, নিজের পরিবার পরিবর্গকে সঠিক ইসলামী তরবিয়ত দেবে, তবেই ইসলাম কায়েম হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।” (রা’দঃ ১১)

উলামাগন বলেন, ‘তোমরা তোমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে ইসলাম কায়েম কর, তোমাদের রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে।’ অন্যথা সন্ত্রাস, পশ্চিমী গনতন্ত্র ইত্যাদি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার শরয়ী পদ্ধতি নয়।

আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে কি কোন মুসলিম শাসককে ‘কাফের’ বলা যাবে?

আল্লাহর বিধানকে যারা নিজেদের জীবন সংবিধান বলে মেনে নেয় না, তাদের মনে মগজে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সেই কারণ অনুসারে নির্ণীত হবে তাদের মন।

যে ধারনা করে যে, ইসলামী বিধান এ যুগে অচল এবং মানব রচিত বিধানই বর্তমান মানব সভ্যতার জন্য অধিক উপযোগী ও উত্তম, এর ফলে সে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে ইসলাম পরিপন্থী আইন প্রণয়ন করে, সে কাফের।

যে ধারনা করে যে, ইসলামী বিধানই সর্বযুগের জন্য উত্তম ও উপযোগী। কিন্তু সেচ্ছাচারিতাবসে স্বরচিত আইন প্রয়োগ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে, সে যালেম।

আর যে শাসক ধারনা করে যে, ইসলামী বিধানই সর্বযুগের জন্য উত্তম ও উপযোগী। কিন্তু কোন চাপে সে তা প্রয়োগ করতে পারে না অথবা গদি টিকিয়ে রাখার জন্য সে তা প্রয়োগ করতে চায় না, সে ফাসেক।

মহান আল্লাহ বলেন,

“ সুতরাং তোমারা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াত নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফের।’ (মায়িদাহঃ ৪৪)

আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই অত্যাচারী। (মায়িদাহঃ ৪৪)

ইঞ্জিল ওয়ালাদের উচিৎ, আল্লাহ ওতে (ইঞ্জিলে) যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেওয়া। আর যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয় না, তারাইপাপাচারী। (মায়িদাহঃ ৪৭)

সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত বিচার না করে কাউকে কোন অপবাদ দেওয়া এবং সেই অনুসারে কারো বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালানো সাধারণ মানুষের কাজ নয়।

মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কিভাবে করা যাবে?

কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ হবে অস্ত্র শস্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ হবে ইলম ও বয়ানের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ বলেন, “হে নবী! তুমি কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা। (তাওবাহঃ ৭৩, তাহরীমঃ ৯)

মহানবী (সঃ) মুনাফিকদের জানা চেনা স্বত্বেও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রয়োগ করেননি। কারণ তা করা হলে কাফেররা বলতো যে, মুহাম্মাদ নিজের সঙ্গী সাথীদের হত্যা করেছে।

মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “অতঃপর নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হলে অংশীবাদীদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে বন্দি কর, অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওত পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামাজ পরে ও জাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (তওবাহঃ ৫) “ আর যেখানে পাও, তাদেরকে হত্যা কর এবং যেখান থেকে তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে, তোমরা সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার কর।” (বাকারাহঃ ১৯১) এ সবের মানে কি কুরআন আমাদেরকে অমুসলিমদেরকে হত্যা করতে বলেছে?

না, তার মানে এই নয় যে, মুসলিমরা সুযোগ পেলেই অমুসলিমদের যেখানে পাবে, সেখানেই হত্যা করবে। বরং উক্ত নির্দেশগুলি সাময়িক ভাবে দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ আদেশ সকল সময়ের জন্য নয়। মহান আল্লাহ পূর্বাপর উক্তি একটু ভালভাবে লক্ষ করলে বুঝা যাবে যে, তা সাময়িক ছিল। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন “যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তবে বাড়াবাড়ি (সীমালঙ্ঘন) করো না, নিশ্চয় আল্লাহ বাড়াবাড়ি কারীদেরকে পছন্দ করে না।” (বাকারাহঃ১৯০) “ যদি তারা তোমাদের নিকট হতে পৃথক না হয় (যুদ্ধ না করে) , তোমাদের নিকট সন্ধি প্রার্থনা না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে, তাহলে তাদেরকে যেখানে পাও, সেখানেই গ্রেফতার করে হত্যা কর। আর এই সকল লোকের বিরুদ্ধেই আমি তোমাদেরকে স্পষ্ট আধিপত্য দান করছি।” (নিশা ৯১)

তা যদি না হত, তাহলে পৃথিবীতে অমুসলিম নিধন করা হত এবং যে দেশে মুসলিম আধিপত্য পরিপূর্ণ ছিল, সে দেশে কোন অমুসলিমকে জীবিত রাখা হত না।

তাছাড়া জানতে হবে যে, মহান সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য কাফের নিধন নয়, উদ্দেশ্য হল তাদের হিদায়াত। এ জন্য অংশীবাদীদের ব্যাপারেই পরবর্তী নির্দেশে বলা হয়েছে,

“আর অংশীবাদীদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর বানী শুনতে পায়। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও। তা এ জন্য যে তারা অজ্ঞ লোক।” (তওবাহঃ ৬)

বলা বাহুল্য, মুসলিম বিদ্বেষীরা যেভাবে কুরআন বুঝে, সেভাবে মুসলিমরা বুঝে না । আর তার জন্যই মুসলিম জাতি ও তাদের কুরআনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে প্রয়াস পায় এবং সেই সাথে নিজেদের বেওকুফির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

দ্বীনের কোন কোন দাঈ দ্বীন মানতে ও মানাতে আবেগের সাথে কঠোরতা ও অতিরঞ্জন প্রদর্শন করে। এ ব্যাপারে দ্বীনের নির্দেশ কি?

দ্বীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন করা বৈধ নয়। আবেগ থাকা ভাল, তবে শরিয়তের লাগাম থাকা জরুরী। নচেৎ তার গতিবেগ তুফান তুলে সর্বনাশ ও সন্ত্রাস আনায়ন করতে পারে। এ জন্যই মহান আল্লাহ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।

“হে গ্রন্থধারিগন! তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া মিথ্যা বলো না।” (সুরা নিসাঃ১৭১)

“বল, ‘হে ঐশী গ্রন্থধারিগন! তোমরা তোমাদের ধর্ম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করো না এবং যে সম্প্রদায় ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও অনেকে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না।’ (সুরা মাইদাহঃ ৭৭ আয়াত)

অনুরূপ তিনি দ্বীন দুনিয়ার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করতেও নিষেধ করেছেন। তিনি তার নবী (সঃ) ও মুমিন বান্দাগণকে আদেশ দিয়ে বলেছেন,

“অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ, সেইভাবে সুদৃঢ় থাক এবং সেই লোকেরাও যারা (কুফরি হতে) তওবা করে তোমার সাথে রয়েছে, আর সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করেন। (সুরা হুদ ১১২ আয়াত)

মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন করা থেকে দুরে থাকো। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের ধ্বংস করেছে।।” (আহমাদঃ ১৮৫৪, ইবনে মাজাহ ৩০২৯ নং, হাকেম প্রমুখ)

মহানবী (সঃ) দ্বীনের দাঈদেরকে বলেছেন, “তোমরা সহজ কর, কঠিন কর না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না। পরস্পর মেনে মানিয়ে চল, মতবিরোধ করো না।” (বুখারি ৩০৩৮, মুসলিমঃ ৪৫২৬ নং)

“নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।” (বুখারি)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে