শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-
(ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।
(খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
(গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
(ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।
অমুসলিমদের জবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া বৈধ নয়। তবে তাদের মধ্যে আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টান) দের জবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল, যদি জানা যায় যে, তারা আল্লাহর নাম নিয়ে ছুরি দ্বারা যথানিয়মে জবেহ করে। পক্ষান্তরে যদি জানা যায় যে, তারা জবেহর সময় আল্লাহর নাম নেয় না, অথবা কারেন্টের শক দিয়ে হত্যা করে, অথবা গুলি মেরে হত্যা করে, অথবা গরম পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে, যাতে মাংসের ভিতরে রক্ত জমা থেকে তার ওজন বেশি হয় এবং দেখতেও লোভনীয় ভাল মাংস হয়, তাহলে ওই মাংস খাওয়া হালাল নয়। (ইবনে জিবরীন )
প্রকাশ থাকে যে, ‘মুসলিম’ নামধারী কোন নাস্তিক, কাফের বা মুশরিকের জবেহ করা পশু হালাল নয়। মাজার, কবূরী এবং মতান্তরে কোন বেনামাজির হাতে জবেহ করা পশুর মাংস হালাল নয়। বৈধ নয় কোন ছোট শিশু, নেশাগ্রস্ত বা পাগলা ব্যক্তির জবেহ।
যদি প্রবল ধারনায় জানা যায় যে, জবেহকারী ঠিকমত জবেহ করেছে, তাহলে জিজ্ঞাসা করা বিধেয় নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) ইয়াহুদিদের জবেহ করা ছাগলের মাংস খেয়েছেন এবং জিজ্ঞাসাও করেননি যে, তা ঠিকভাবে জবেহ করা হয়েছে কি না? (বুখারি ২৬১৭, ২০৬৯, ২৫০৮, মুসলিম ২১৯০ নং)
একদা একদল লোক নবী (সঃ) কে জিজ্ঞেসা করল, ‘এক নও মুসলিম সম্প্রদায় আমাদের নিকট মাংস নিয়ে আসে। আমরা জানি না যে, তার জবেহকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে কি না।’ তিনি বললেন, “তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তা ভক্ষণ কর।” (বুখারি ২০৫৭, ৫৫০৭ নং)
উক্ত হাদিসে নবী (সঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে সন্দেহ দূরীভূত করতে নির্দেশ দেননি। এমন নির্দেশ হলে নিশ্চয় মানুষ বড় সমস্যায় পতিত হতো। (ইবনে উসাইমিন)
দাঁড়িয়ে পানাহার করা হারাম। যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গিয়ে পান করে থাকলে সে যেন তা বমি করে ফেলে।” (মুসলিম ২০২৬ )
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) নিষেধ করেছেন যে, কোন লোক যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ আনাস (রাঃ) কে দাঁড়িয়ে খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আরও খারাপ ও আরও নোংরা।’ (মুসলিম ২০২৪ নং)
হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে নবী (ﷺ) ধমক দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, “(তুমি দাঁড়িয়ে পান করলে) তোমার সাথে শয়তান পান করেছে।”
অবশ্য দাঁড়িয়ে পান বৈধ হওয়ার ব্যাপারেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি ১৬৩৭, ৫৬১৫, মুসলিম ২০২৭, ইবনে মাজাহ ৩৩০১ নং প্রমুখ) সুতরাং বসার জায়গা না থাকলে অথবা অন্য কোন অসুবিধায় বা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানাহার করা হারাম নয়। (আলবানি, সিঃ সহিহাহ ১৭৫ নং)
মহানবী (সঃ) তিনটি আঙ্গুল যোগে খেতেন। কিন্তু চামচ লাগিয়ে খাওয়া অবৈধ নয়। যেহেতু তা শরই ব্যাপার নয়, বরং তা পার্থিব ব্যবহারিক ব্যাপার। যেমন আধুনিক মাধ্যম বাস-ট্রেন, সাইকেল-গাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা আবৈধ নয়। (আলবানী )
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত হালাল।” (আহমাদ, সুনান আরবাআহ প্রমুখ, সিলসিলাহ সহিহাহ ৪৮০ নং) এই হাদিস থেকে এই কথা বুঝা যায় যে, মাছ মারা গিয়ে পানির উপর ভেসে উঠলেও তা হালাল। পক্ষান্তরে মাছ মরে গিয়ে পানির উপর ভেসে উঠলে তা খাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে হাদিস সহিহ নয়। (সিলসিলাহ সহিহাহ ১/৮৬৪) বরং পাঁইটে ভাসা আম্বর মাছ সাহাবাদের খাওয়ার ব্যাপারে ঘটনা হাদিসে প্রসিদ্ধ। আর তারা নিরুপায় ছিলেন বলেই নয়, যেহেতু মহানবী (সঃ) ও সেই মাছের কিছু অংশ খেয়েছিলেন।
অনেকে বলছেন, যোগ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলা উত্তম। কিন্তু মহানবী (সঃ) এর সুন্নতই সবচেয়ে উত্তম। তিনি কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ বলারই নির্দেশ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন আহার করবে, সে যেন শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। যদি শুরুতে তা ভুলে যায়, তাহলে সে যেন ‘বিসমিল্লাহি আওয়াল্লাহু অ আখেরাহ।” (তিরমিজি ১৮৫৭ নং) (আলবানী)
সহিহ হাদিসের মতে ঘোড়ার মাংস হালাল। হানাফি মাজহাবের বড় ইমামগণও হালাল বলছেন। আবু জাফর ত্বাহাবি হালাল হওয়ার কথাই প্রাধান্য দিয়েছেন। যেহেতু হারাম হওয়ার দলিলে হাদিস সহিহ নয়। (আলবানী)
ডান দিক থেকেই শুরু করতে হবে। অবশ্য বুজুর্গ বা যে চেয়ে খেতে চাইবে তাকে আগে দিতে হবে। (আলবানী, সিসিঃ ১৭৭১ নং)
কোন কাফেরের দাওয়াতে হালাল খাদ্য খাওয়া অবৈধ না। আল্লাহর ওয়াস্তে তার মনকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য খাওয়া যায়। আমাদের আদর্শ নবী কাফেরদের দাওয়াতে তাদের তৈরি হালাল খাদ্য খেয়েছেন। অবশ্য তাদের পূজা (তদনুরূপ মাজারিদের উরস) উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, মূর্তি বা মাজারে উৎসর্গকৃত খাদ্য, ঠাকুরের প্রসাদ, মাজারের তবরুক ইত্যাদি খাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তাতে শিরকে মৌন সম্মতি ও সমর্থন প্রকাশ পায়।
(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্য্যাহ ২৬/১০৯,২৮/৮২, ৮৪)