মক্কায় যে নিয়মে কুরবানী দেওয়া হয়, একই নিয়মে স্বগৃহে অবস্থান কালেও কুরবানী দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, মক্কায় যেমন একটি গরুতে সাতজন শরীক হতে পারে, তেমনি বাড়িতে বসে কুরবানী দিলেও সাত ব্যক্তি বা পরিবার শরীক হতে পারবে। ইবেন আব্বাস বলেন, “ আমরা এক সফরে ছিলাম। অতঃপর কুরবানী এল। সুতরাং আমরা গাভীতে সাতজন এবং উটে দশজন শরীক হলাম।” ৪৫৫ (তিরমিযী ৯০৫, ইবনে মাজাহ ৩১৩১ নং)
অনেকে এই হাদীস থেকে মনে করতে পারেন যে, ভাগাভাগির ব্যাপারটা কেবল সফরের। কিন্তু উক্ত হাদীসে ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, কোন শর্ত বর্ণনা করা হয়নি। তাছাড়া ইবনে আব্বাসের ঐ ঘটনা কোন আম সফরের ছিল না, বরং তা ছিল হজ্জ সফরের, অর্থাৎ মক্কায় কুরবানীর। যেহেতু ইবনে আব্বাস মহানবী (সঃ) এর সাথে কুরবানী সফরে ছিলেন কেবল বিদায়ী হজ্জে। ইতিপূর্বে তিনি নিজ পিতার সঙ্গে মক্কা বিজয় পর্যন্ত বসবাস করেছেন, অতঃপর তিনি কোন যুদ্ধেও নবী (সঃ) এর সঙ্গে বের হন নি। কারণ, তিনি সাবালক ছিলেন না। ৪৫৬ (মুখতাসার ফাতাওয়া মিসরিয়্যাহ ইবনে তাইমিয়্যাহ ১/৫২১) সুতরাং ঐ হাদীসে সফরের কথা কোন সাধারণ সফর বা মুসাফিরের কথা নয়। ঐ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হজ্জ সফরে কুরবানীর বিধান। আর ঐ বিধানই গৃহবাসীরও।
ইবেন হাযম বলছেন, “লাইষ সফরে কুরবানীতে ভাগাভাগি বৈধ বলেছেন। অথচ এ নির্দিষ্টকরণের কোন অর্থ হয় না।” ৪৫৭ (আল-মুহাল্লা ৭/৩৮১)
স্বগৃহে বাস করে সাধারণ কুরবানীতে ভাগাভাগির দলীল দিয়ে আলী (রঃ) অথবা হাসান বিন আলী (রঃ) এর হাদীস উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, (কুরবানীর দিনে) আমরা যেন যথাসাধ্য সবচেয়ে ভাল সুগন্ধি ব্যবহার করি, যথাসাধ্য সবচেয়ে মোটাতাজা কুরবানী দিই---গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং উট দশজনের পক্ষ থেকে। আর আমরা যেন ‘তকবীর’ সশব্দে বলি এবং প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখি।”
হাদীসটির ব্যাপারে হাকেম ও যাহাবী বলেছেন, “বর্ণনাকারী ইসহাক বিন বাযরাজ অজ্ঞাত পরিচয় না হলে হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলে সাব্যস্ত করতাম।”
আল্লামা আলবানী বলেন, “(উক্ত বর্ণনাকারী অজ্ঞাত পরিচয় নয়। যেহেতু) আযদী তার পরিচয় দিয়ে তাকে ‘দুর্বল’ বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান তাকে ‘সিক্বাতুত তাবেঈন’ (১/২৪) এ উল্লেখ করেছেন।” ৪৫৯ (তামামুল নিন্নাহ ৩৪৬ পৃঃ)
কুরবানী ঘরে থাকা অবস্থায় দিলেও একটি গরু কুরবানীতে সাত ব্যক্তি অংশ নিতে পারবে, অনুরূপ সফরে বা হজ্জে থাকলেও ভাগাভাগি করা চলবে। অবশ্য এক সপ্তমাংস ভাগ থেকে কম দেওয়া চলবে না। তবে এক সপ্তমাংস ভাগের বেশি দিতে হবে। যেমন একটি গরুতে দুই, তিন, চার, পাঁচ বা ছয় জনও সমানভাবে অথবা কমবেশি ভাগ নিয়ে অংশ গ্রহণ করতে পারে। তবে কারো ভাগ যেন এক সপ্তমাংস থেকে কম না হয়। সুতরাং কেউ অর্ধেক, কেউ এক তৃতীয়াংশ ও কেউ এক ষষ্ঠাংশ ভাগ কুরবানী ভাগ দিতে পারে।
একটি গরুতে যদি সাতজনকে শরীক হওয়া বৈধ হয়, তাহলে তার থেকে আরও কম জনের শরীফ হওয়া অধিকরূপে বৈধ হবে। আর যেটুকু বেশি দেবে, সেটুকু তাদের তরফ থেকে নফল হবে। যেমন যার একটি ছাগল দিলে চলত, সে যদি একটি গরু অথবা উট দেয়, তাহলে তার তরফ থেকে তা নফল গণ্য হবে।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেছেন, “শরীকরা যদি সাতজন অপেক্ষা কম হয়, তাহলেও তা যথেষ্ট। অতিরিক্ত ভাগ দিয়ে তারা নফল করে। যেমন যাকে ছাগল দিতে হবে, সে যদি উট দেয়, তাহলে তাও যথেষ্ট হবে। আর ছাগল থেকে যা বেশি, তা হবে নফল।” ৪৬০ (কিতাবুল উম্ম ২/২৪৪)
কাসানী বলেন, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, গরু কিংবা উট সাতজনের কম ব্যক্তির তরফ থেকেও কুরবানী বৈধ। যেমন একটি গরু বা উটে ২, ৩, ৪, ৫ বা ৬ জন শরিক হতে পারে। যেহেতু যখন সাত ভাগের এক ভাগ কুরবানী বৈধ, তখন তার বেশি অধিকরূপে বৈধ। চাহে তাদের সকলের অংশ একই রকম হোক অথবা ভিন্ন রকম। যেমন কারো অর্ধেক, কারো তিন ভাগের এক ভাগ এবং কারো ছয় ভাগের এক ভাগ; অবশ্য সাত ভাগের এক ভাগ থেকে কম যেন কারো না হয়।” ৪৬১ (বাদাইয়ুস স্বানায়ি ৫/১৭)
প্রত্যেকের নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। যার কুরবানীর নিয়ত আছে, তার কুরবানী সঠিক হয়ে যাবে। ৪৬২ (মাজাল্লাতুল বুহূষিল ইসলামিয়্যাহ ৬২/৩৬৬)
কুরবানীর সাথে একটি ভাগ আকীকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যথেষ্ট নয়। যেমন যথেষ্ট নয় একটি পশু কুরবানী ও আকীকার নিয়তে যবেহ করা। কুরবানী আকীকার জন্য পৃথক পৃথক পশু হতে হবে। অবশ্য যদি কোন শিশুর আকীকার দিন কুরবানীর দিনেই পড়ে এবং আকীকা যবেহ করে, তাহলে আর কুরবানী না দিলেও চলে। যেমন, দুটি গোসলের কারণ উপস্থিত হলে একটি গোসল করলেই যথেষ্ট, জুমআর দিনে ঈদের নামায পড়লে আর জুমআহ না পড়লেও চলে, বিদায়ের সময় হজ্জের তওয়াফ না করলেও চলে, যোহরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে যোহরের সুন্নত পড়লে পৃথক করে আর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়তে হয় না এবং তামাত্তু হজ্জের কুরবানী দিলে আর পৃথকভাবে কুরবানী না দিলেও চলে। ৪৬৩ (মানারুস সাবীল ১/ ৩৬৬)
আকীকার বিধান কুরবানী মতো হলেও আকীকার পশুতে ভাগাভাগি যথেষ্ট নয়। সুতরাং একটি উট বা গরু ২, ৩, ৪, ৫, ৬ বা ৭ টি শিশুর তরফ থেকে আকীকা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু প্রথমতঃ কুরবানীর মতো আকীকার বিধানে ভাগাভাগি বর্ণিত হয়নি। অথচ ইবাদতসমূহ প্রমাণসাপেক্ষ। দ্বিতীয়তঃ আকীকা হল জানের ফিদয়া স্বরূপ। আর ফীদয়াতে ভাগাভাগি হয় না। যেহেতু একটি জানের বিনিময়ে একটি জানই প্রয়োজন। ৪৬৪ (ইবনে উষাইমীন)