প্রত্যেকের ভাগ্য লেখা আছে ‘লাওহে মাহফুজ’- এ। সেটাই হল মুল ভাগ্যলিপি। মহান আল্লাহ বলেন,
“পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে, আমার তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে, নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ। (হাদিদঃ২২)
কিন্তু জীবনের তফসীলী ভাগ্য লেখা হয় মায়ের পেটে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের জন্য এক জন্যের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন যাবত বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপ ভাবে চল্লিশ দিনে জমাটবদ্ধ রক্তপিণ্ডের রূপ নেয়। পুনরায় তদ্রূপ চল্লিশ দিনে মাংসের টুকরায় রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর তার নিকট ফিরিশতা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে রূহ স্থাপন করা হয় চারটি কথা লেখার আদেশ দেয়া হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ঠ না পূর্ণবান হবে, তা লেখা হয়। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! (জন্মের পর) তোমাদের এক ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের মত কাজ কর্ম করতে থাকে এবং তার ও জান্নাতের মাঝে এক হাত মত তফাত থেকে যায়। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে; ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে এক হাত মত তফাত থাকে। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জান্নাতিদের মত ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করে; পরিণতিতে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” (বুখারি-মুসলিম)
কিন্তু লিখা হয় কোথায়? সে কথা অন্য বর্ণনায় পরিষ্কার করা হয়েছে। মহানবী (সঃ) বলেছেন,
“আল্লাহ যখন কোন মানব প্রাণ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, তখন মাতৃগর্ভে নিযুক্ত ফিরিশতা আরজ করেন, “হে প্রভু ! দুর্ভাগ্যবান, না সৌভাগ্যবান?’ সুতরাং আল্লাহ নিজ ফয়সালা বহাল করেন। অতঃপর তার দুই চোখের মাঝখানে তা লিখে দেন, যার সে সম্মুখীন হবে, এমনকি সেই মুসীবতও লিখে দেওয়া হয়, যা তাকে ক্লিষ্ট করবে।” (ইবনে হিব্বান ৬১৭৮, আবু য়্যা’লা ৫৭৭৫ নং, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৭/ ১১২)
বলা বাহুল্য, দুই চোখের মাঝখানে বা কপালে ভাগ্য লেখার কথা হাদিসে রয়েছে। তাই ‘কপালে ছিল’, ‘কপালের লেখা’ বা ‘কপাল খারাপ’ ইত্যাদি বলা দূষণীয় নয়। তবে ভাগ্য বা কপালকে গালি দেওয়া বৈধ নয়। যেমন ‘পোড়া কপাল’, ‘নিষ্ঠুর নিয়তি’ ইত্যাদি বলা বৈধ নয়।