কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা ও মুশরিকরা, তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ না আসা পর্যন্ত (নিজদের অবিশ্বাসে) অটল থাকবে। আল-বায়ান
কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফির ছিল তারা আর মুশরিকরা (তাদের ভ্রান্ত মত ও পথ হতে) সরে আসত না যতক্ষণ না তাদের কাছে আসত সুস্পষ্ট প্রমাণ। তাইসিরুল
কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল এবং মুশরিকরা আপন মতে অবিচল ছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমান না আসা পর্যন্ত। মুজিবুর রহমান
Those who disbelieved among the People of the Scripture and the polytheists were not to be parted [from misbelief] until there came to them clear evidence - Sahih International
১. আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং মুশরিকরণ(১), তারা নিবৃত্ত হবে না যতক্ষন না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসবে(২)—
(১) আহলে কিতাব ও মুশরিক উভয় দলই কুফরী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেও দু’দলকে দুটি পৃথক নাম দেয়া হয়েছে। যাদের কাছে আগের নবীদের আনা কোন আসমানী কিতাব ছিল, তা যত বিকৃত আকারেই থাক না কেন, তারা তা মেনে চলতো, তাদেরকে বলা হয় আহলি কিতাব; আর তারা হল ইয়াহুদী ও নাসারীগণ। আর যারা মূর্তি-পূজারী বা অগ্নি-পূজারী, তারা-ই মুশরিক। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ তারা তাদের কুফরী থেকে নিবৃত্ত হবে না যতক্ষণ না একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে তাদেরকে কুফরীর প্রতিটি গলদ ও সত্য বিরোধী বিষয় বুঝাবে এবং যুক্তিপ্রমাণের সাহায্যে সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে সত্য সঠিক পথ তাদের সামনে পেশ করবে, এর মাধ্যমে তারা কুফরী থেকে বের হতে পারবে। এর মানে এ নয় যে, এই সুস্পষ্ট প্রমাণটি এসে যাবার পর তারা সাবাই কুফরী পরিত্যাগ করবে। তবে তার আসার পরও তাদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের কুফরীর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়। এরপর তারা আল্লাহর কাছে অভিযোগ করতে পারবে না যে, আপনি আমাদের হেদায়াতের কোন ব্যবস্থা করেননি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের কথা আগে আমি আপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল, যাদের কথা আপনাকে বলিনি এবং মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাত কথা বলেছিলেন। এই রাসূলদেরকে সুসংবাদদানকারী ও সতর্ককারী করা হয়েছে যাতে রাসূলদের পর লোকদের জন্য আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন যুক্তি না থাকে।” [সূরা আন-নিসা: ১৬৪–১৬৫]
আরও বলেন, “হে আহলে কিতাব! রাসূলদের সিলসিলা দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর প্রকৃত সত্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছে। যাতে তোমরা বলতে না পারো আমাদের কাছে না কোন সুসংবাদদানকারী এসেছিল, না এসেছিল কোন সতর্ককারী। কাজেই নাও, এখন তোমাদের কাছে সুসংবাদদানকারী এসে গেছে এবং সতর্ককারীও।” [সূরা আল-মায়িদাহ: ১৯]
তাফসীরে জাকারিয়া১। আহলে কিতাব[1] ও মুশরিকদের[2] মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তারা আপন মতে অবিচলিত ছিল, যতক্ষণ না এল তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ;
[1] এ থেকে উদ্দেশ্য ইয়াহুদী ও নাসারা (খ্রিষ্টান)।
[2] ‘মুশরিক’ (অংশীবাদী) বলে আরব এবং অনারবের ঐ সমস্ত লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা অগ্নি ও মূর্তি পূজা করত। مُنفَكِّين মানে বিরত বা বিচলিত। البَيِّنة (দলীল বা সুস্পষ্ট প্রমাণ) বলে নবী (সাঃ)-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ইয়াহুদী ও নাসারা, আরব এবং অনারবের মুশরিক বা অংশীবাদীরা নিজেদের কুফর ও শিরক থেকে ফিরে আসার নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না মুহাম্মাদ (সাঃ) তাদের নিকট পবিত্র কুরআনসহ এসে উপস্থিত হয়েছেন এবং তাদের অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা ব্যক্ত করে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহর পক্ষ থেকে এক রাসূল পবিত্র কিতাবসমূহ তিলাওয়াত করে। আল-বায়ান
(অর্থাৎ) আল্লাহর নিকট হতে একজন রসূল, যে পাঠ করে পবিত্র গ্রন্থ। তাইসিরুল
আল্লাহর নিকট হতে এক রাসূল, যে আবৃত্তি করে পবিত্র গ্রন্থ, মুজিবুর রহমান
A Messenger from Allah, reciting purified scriptures Sahih International
২. আল্লাহর কাছ থেকে এক রাসূল, যিনি তেলাওয়াত করেন পবিত্র পত্ৰসমূহ(১),
(১) صحف শব্দটি صحيفة এর বহুবচন। আভিধানিক অর্থে ‘সহীফা’ বলা হয় লেখার জন্য প্রস্তুত, কিংবা লিখিত পাতাকে, এখানে পবিত্র সহীফা মানে হচ্ছে এমন সব সহীফা যার মধ্যে কোন প্রকার বাতিল, কোন ধরনের গোমরাহী ও ভ্ৰষ্টতা নেই এবং শয়তান যার নিকটে আসে না। এখানে পবিত্র সহীফা তেলাওয়াত করে শুনানো অর্থ তিনি সেসব বিধান শুনাতেন, যা পরে সহীফার মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়। কেননা, প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সহীফা থেকে নয় স্মৃতি থেকে পাঠ করে শুনাতেন। [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ ٭ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ ٭ بِأَيْدِي سَفَرَةٍ ٭ كِرَامٍ بَرَرَةٍ) “ওটা আছে মর্যাদা সম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র, মহান, পূত-চরিত্র লেখকের হাতে লিখিত।” [সূরা আবাসাঃ ১৩–১৬]
তাফসীরে জাকারিয়া২। আল্লাহর নিকট হতে এক রসূল; [1] যে আবৃত্তি করে পবিত্র গ্রন্থ।[2]
[1] ‘রসূল’ থেকে উদ্দেশ্য হল নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)।
[2] অর্থাৎ, কুরআন মাজীদ যা ‘লাওহে মাহ্ফূয’-এ পবিত্র পাতায় লিপিবদ্ধ আছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাতে রয়েছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান। আল-বায়ান
যাতে আছে সঠিক বিধান। তাইসিরুল
যাতে সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাসমূহ রয়েছে। মুজিবুর রহমান
Within which are correct writings. Sahih International
৩. যাতে আছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান।(১)
(১) বলা হয়েছে যে, সে সমস্ত লিখিত লিপিসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, তা সত্য, ইনসাফপূর্ণ ও সরল-সহজ। এ বিধি-বিধানই মানুষকে সরল পথের সন্ধান দেয়। এ প্রমাণ থাকলেই প্রমাণিত হয় কে প্রকৃত সত্যসন্ধানী। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। যাতে আছে সঠিক-সরল বিধান। [1]
[1] এখানে كُتُب থেকে দ্বীনের হুকুম-আহকাম বা বিধান অর্থ নেওয়া হয়েছে। قَيِّمَة অর্থ হল মধ্যমপন্থী বা সরল-সঠিক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর কিতাবীরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই কেবল মতভেদ করেছে। আল-বায়ান
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর। তাইসিরুল
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারাতো বিভক্ত হল তাদের নিকট সু-স্পষ্ট প্রমাণ আসার পর। মুজিবুর রহমান
Nor did those who were given the Scripture become divided until after there had come to them clear evidence. Sahih International
৪. আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা তো বিভক্ত হল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্ৰমাণ আসার পর।(১)
(১) আহলে-কিতাবদের নিকটেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলী, পরিচিতি ইত্যাদি জ্ঞান ছিল, তাই আয়াতে তাদের কথাই বলা হয়েছে- মুশরেকদের উল্লেখ করা হয়নি। আহলে কিতাবরা সত্যকে জানার পরও অনেকে তা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু প্ৰথম ব্যাপারে উভয় দলই শরীক ছিল, তাই প্রথম আয়াতে উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে (لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ) বলা হয়েছে। [আদওাউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা তো বিভক্ত হল তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও।[1]
[1] অর্থাৎ, আহলে কিতাব নবী (সাঃ)-এর আগমনের পূর্বেই তারা একতাবদ্ধ ছিল। পরিশেষে তাঁর আগমন ঘটল, অতঃপর তারা দলে দলে বিভক্ত হল। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক ঈমান আনল। কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান হতে বঞ্চিত থেকে গেল। নবী (সাঃ)-এর আগমন এবং রিসালাতকে দলীল বা সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে অভিহিত করার রহস্য এই যে, তাঁর সত্যতা সুস্পষ্ট ছিল; যা অস্বীকার করার কোন অবকাশ ছিল না। কিন্তু তারা (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা) নবী (সাঃ)-কে কেবল হিংসা ও হঠকারিতা বশে মিথ্যাজ্ঞান করেছিল। এই কারণেই দলে দলে যারা বিভক্ত হয়েছিল, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ‘আহলে কিতাবে’র নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অন্যান্যরাও এ কাজে পতিত হয়েছিল। যেহেতু এরা ছিল শিক্ষিত লোক এবং নবী (সাঃ)-এর আগমন ও গুণাবলীর উল্লেখ তাদের কিতাবেও বিদ্যমান ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন। আল-বায়ান
তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে আর যাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন। তাইসিরুল
তারাতো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে; এটাই সু-প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। মুজিবুর রহমান
And they were not commanded except to worship Allah, [being] sincere to Him in religion, inclining to truth, and to establish prayer and to give zakah. And that is the correct religion. Sahih International
৫. আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্ৰদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।(১)
(১) অর্থাৎ আহলে-কিতাবদেরকে তাদের কিতাবে আদেশ করা হয়েছিল খাঁটি মনে ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে, সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। এরপর বলা হয়েছে, এ নির্দেশটি শুধুমাত্র বর্তমান আহলে কিতাবদের জন্য নয়; বরং সঠিক মিল্লাতের অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের তরীকাও তাই। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল[1] আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে[2] তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। [3]
[1] অর্থাৎ, তাদের কিতাবে তাদেরকে তো আদেশ করা হয়েছিল ---।
[2] حَنِيف শব্দের অর্থ হল ঝুঁকে যাওয়া, কোন একটির প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া। حُنَفَاء তারই বহুবচন শব্দ। অর্থাৎ, তারা শিরক থেকে তাওহীদের প্রতি এবং সমস্ত দ্বীন-ধর্ম হতে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবলমাত্র দ্বীনে ইসলামের প্রতি ঝুঁকে ও একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত --- করতে আদিষ্ট হয়েছিল; যেমন ইবরাহীম (সাঃ) করেছিলেন।
[3] القَيِّمَة শব্দটি উহ্য মাউসূফের সিফাত (বিশেষ্যের বিশেষণ)। আসল হল, دِينُ المِلَّة القَيِّمَة أو الأمَّة القَيِّمَة অর্থাৎ, এটাই সঠিক ও সরল বা মধ্যপন্থী মিল্লত বা উম্মতের ধর্ম। অধিকাংশ উলামাগণ এই আয়াত থেকে প্রমাণ করেছেন যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আল-বায়ান
কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফুরী করে তারা আর মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। এরাই সৃষ্টির অধম। তাইসিরুল
কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম। মুজিবুর রহমান
Indeed, they who disbelieved among the People of the Scripture and the polytheists will be in the fire of Hell, abiding eternally therein. Those are the worst of creatures. Sahih International
৬. নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধ্যম।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি আর নেই। এমন কি তারা পশুরও অধম। কারণ পশুর বুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা ও কর্মশক্তি নেই। কিন্তু এরা বুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা ও কর্মশক্তি সত্বেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। নিশ্চয় আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, তারা দোযখের আগুনের মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম। [1]
[1] এ হল আল্লাহর রসূল এবং তাঁর গ্রন্থসমূহকে অস্বীকারকারীদের পরিণাম। শুধু তাই নয়, বরং তারা হল সৃষ্টির মধ্যে সবার থেকে অধম ও নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। আল-বায়ান
যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তারা সৃষ্টির উত্তম। তাইসিরুল
যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। মুজিবুর রহমান
Indeed, they who have believed and done righteous deeds - those are the best of creatures. Sahih International
৭. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই সৃষ্টির শ্ৰেষ্ঠ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৭। নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। [1]
[1] অর্থাৎ, যারা আন্তরিকভাবে ঈমান আনে এবং যারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা আমল করে, তারাই সৃষ্টির মধ্যে সবার থেকে উত্তম ও উৎকৃষ্টতম সৃষ্টি। যে সকল উলামাগণ মনে করেন যে, মু’মিন বান্দাগণ মান ও মর্যাদায় ফিরিশতা হতে শ্রেষ্ঠতর, তাঁদের সমর্থনে এই আয়াতটি একটি দলীল। البَرِيَّة শব্দটি بَرَأَ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এ থেকেই আল্লাহর একটি গুণ ‘আল-বারী’ হয়েছে। بَرية এর আসল রূপ بَريئة । এর ء কে ي দ্বারা পরিবর্তন করে অপর ي তে সন্ধি করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে। আল-বায়ান
তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান আছে স্থায়ী জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এ সব কিছু তার জন্য যে তার প্রতিপালককে ভয় করে। তাইসিরুল
তাদের রবের নিকট আছে তাদের পুরস্কার স্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের উপর প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট; ইহা এ জন্য যে, তারা তাদের রাব্বকে ভয় করে। মুজিবুর রহমান
Their reward with Allah will be gardens of perpetual residence beneath which rivers flow, wherein they will abide forever, Allah being pleased with them and they with Him. That is for whoever has feared his Lord. Sahih International
৮. তাদের রবের কাছে আছে তাদের পুরস্কার : স্থায়ী জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট(১) এবং তারাও তার প্রতি সস্তুষ্ট। এটি তার জন্য, যে তার রবকে ভয় করে।(২)
(১) এ আয়াতে জান্নাতীদের প্রতি সর্ববৃহৎ নেয়ামত আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা জান্নাতীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তখন তারা জওয়াব দেবে, হে আমাদের রব! আমরা উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যের জন্যে প্রস্তুত। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা জওয়াব দেবে, হে আমাদের রব! এখনও সন্তুষ্ট না হওয়ার কি সম্ভাবনা? আপনি তো আমাদেরকে এত সব দিয়েছেন, যা অন্য কোন সৃষ্টি পায়নি। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে আরও উত্তম নেয়ামত দিচ্ছি। আমি তোমাদের প্রতি আমার সস্তুষ্টি নাযিল করছি। অতঃপর কখনও তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না।” [বুখারী: ৬৫৪৯, ৭৫১৮, মুসলিম: ২৮২৯]
(২) অন্যকথায় যে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে নির্ভীক এবং তাঁর মোকাবিলায় দুঃসাহসী ও বেপরোয়া হয়ে জীবন যাপন করে না। বরং দুনিয়ায় প্রতি পদে পদে আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করে; তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তাকওয়া অবলম্বন করে। তার জন্যই আল্লাহর কাছে রয়েছে এই প্রতিদান ও পুরস্কার। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে তাদের পুরস্কার স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট[1] এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট; [2] এ (প্রতিদান) তার জন্য, যে তার প্রতিপালককে ভয় করে। [3]
[1] অর্থাৎ, তাদের ঈমান, আনুগত্য এবং সৎকর্মের কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হল সব থেকে বড় জিনিস। মহান আল্লাহ বলেন, (وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ أَكبَر) (সূরা তাওবাহ ৭২আয়াত)
[2] এ জন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে এমন সব নিয়ামতের অধিকারী বানিয়েছেন; যার মধ্যে তাদের আত্মা ও দেহ উভয়ের সুখ বিদ্যমান।
[3] অর্থাৎ, উত্তম প্রতিদান ও সন্তুষ্টি ঐ সকল লোকদের জন্য, যারা পৃথিবীতে আল্লাহকে ভয় করে চলে। আর সেই ভয়ের কারণে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করা হতে দূরে থাকে। যদি কোন সময় মানব মনের প্রবণতায় পাপ হয়েই যায়, তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়। পরিশেষে তাদের মৃত্যু এই অনুগত থাকা অবস্থাতেই হয়; অবাধ্য থাকা অবস্থায় নয়। এর ফলকথা এই যে, আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষ তাঁর অবাধ্যাচরণে অবিচল থাকতে পারে না। পক্ষান্তরে যে এরূপ করে, আসলে তার হৃদয় আল্লাহর ভয় থেকে শূন্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান