بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৮৯/ আল-ফাজর | Al-Fajr | سورة الفجر আয়াতঃ ৩০ মাক্কী
৮৯:১ وَ الۡفَجۡرِ ۙ﴿۱﴾
و الفجر ﴿۱﴾

কসম ভোরবেলার। আল-বায়ান

ঊষার শপথ, তাইসিরুল

শপথ ঊষার, মুজিবুর রহমান

By the dawn Sahih International

১. শপথ ফজরের(১),

(১) শপথের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে ফজর অর্থাৎ সোবহে-সাদেকের সময়, যা ঊষা নামে খ্যাত। এখানে কোন ‘ফজর’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে। এক. প্রত্যেক দিনের প্রভাতকাল উদ্দেশ্য। কারণ, প্রভাতকাল বিশ্বে এক মহাবিপ্লব আনয়ন করে এবং আল্লাহ্ তা'আলার অপার কুদরতের দিকে পথ প্রদর্শন করে। দুই. এখানে বিশেষ দিনের প্রভাতকাল বোঝানো হয়েছে। সে হিসেবে কারো কারো মতে এর দ্বারা মহররম মাসের প্রথম তারিখের প্রভাতকাল উদ্দেশ্য; কারণ এ দিনটি ইসলামী চন্দ্র বছরের সূচনা। কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, যিলহজ্জ মাসের দশম তারিখের প্রভাতকাল। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

১। শপথ ফজরের। [1]

[1] এর দ্বারা সাধারণ ফজর বোঝান হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট দিনের ফজর উদ্দেশ্য নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:২ وَ لَیَالٍ عَشۡرٍ ۙ﴿۲﴾
و لیال عشر ﴿۲﴾

কসম দশ রাতের। আল-বায়ান

(জিলহাজ্জ মাসের প্রথম) দশ রাতের শপথ, তাইসিরুল

শপথ দশ রাতের, মুজিবুর রহমান

And [by] ten nights Sahih International

২. শপথ দশ রাতের(১),

(১) শপথের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে দশ রাত্রি। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, কাতাদা ও মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীরবিদদের মতে এতে যিলহজের দশ দিন বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] যা সর্বোত্তম দিন বলে বিভিন্ন হাদীসে স্বীকৃত। হাদীসে এসেছে, “এদিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন নেক আমল করা আল্লাহ্‌র নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জ্বিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি”। [বুখারী: ৯৬৯, আবু দাউদ: ২৩৪৮, তিরমিযী: ৭৫৭, ইবনে মাজাহ: ১৭২৭, মুসনাদে আহমাদ: ১/২২৪]

তাছাড়া এই দশ দিনের তাফসীরে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় দশ হচ্ছে কোরবানীর মাসের দশদিন, বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন আর জোড় হচ্ছে কোরবানীর দিন।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩২৭, মুস্তাদরাকে হাকিম: ৪/২২০, আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী: ৪০৮৬, ১১৬০৭, ১১৬০৮] সুতরাং এখানে দশ রাত্রি বলে যিলহজের দশ দিন বোঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ মুসা আলাইহিস সালাম-এর কাহিনীতে (وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ) বলে এই দশ রাত্রিকেই বোঝানো হয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেন, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীস থেকে জানা গেল যে, যিলহজ্বের দশ দিন সর্বোত্তম দিন এবং এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, মূসা আলাইহিস সালাম এর জন্যেও এ দশ দিনই নির্ধারিত করা হয়েছিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

২। শপথ দশ রাত্রির। [1]

[1] অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বলেন, ‘দশ রাত্রি’ বলতে যুলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাত্রিকে বোঝানো হয়েছে। যার গুরুত্ব হাদীসসমূহে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যুলহজ্জের প্রথম দশ দিনের কৃত আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আর কোন আমল নেই। (সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে এমন ব্যক্তির (আমল) যে নিজের জান-মালসহ বের হয় এবং তারপর কিছুও সাথে নিয়ে সে ফিরে আসে না। (বুখারী আইয়্যামে তাশরীক দিনের আমলের ফযীলত পরিচ্ছেদ,আবু দাউদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৩ وَّ الشَّفۡعِ وَ الۡوَتۡرِ ۙ﴿۳﴾
و الشفع و الوتر ﴿۳﴾

কসম জোড় ও বিজোড়ের। আল-বায়ান

জোড় ও বেজোড়ের শপথ, তাইসিরুল

শপথ জোড় ও বেজোড়ের, মুজিবুর রহমান

And [by] the even [number] and the odd Sahih International

৩. শপথ জোড় ও বেজোড়ের(১)

(১) এ দুটি শব্দের আভিধানিক অর্থ যথাক্রমে ‘জোড়’ ও ‘বিজোড়'। এই জোড় ও বিজোড় বলে আসলে কি বোঝানো হয়েছে, আয়াত থেকে নির্দিষ্টভাবে তা জানা যায় না। তাই এ ব্যাপারে তাফসীরকারগণের উক্তি অসংখ্য। কিন্তু জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বেজোড় এর অর্থ আরাফা দিবস (যিলহজ্বের নবম তারিখ) এবং জোড় এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (যিলহজ্বের দশম তারিখ)”। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩২৭] কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, জোড় বলে যাবতীয় সালাত আর বেজোড় বলে বিতর ও মাগরিবের সালাত বোঝানো হয়েছে। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, জোড় বলে সমগ্র সৃষ্টজগৎ বোঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, (وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا) অর্থাৎ আমি সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। [সূরা আন-নাবা: ৮] যথা: কুফর ও ঈমান, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য, আলো ও অন্ধকার, রাত্রি ও দিন, শীত-গ্ৰীষ্ম, আকাশ ও পৃথিবী, জিন ও মানব এবং নর ও নারী। এগুলোর বিপরীতে বিজোড় একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার সত্তা। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] তবে যেহেতু জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণিত হাদীসে এর একটি তাফসীর এসেছে সেহেতু সে তাফসীরটি বেশী অগ্রগণ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩। শপথ জোড় ও বেজোড়ের। [1]

[1] এর দ্বারা জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা অথবা জোড় এবং বিজোড় সংখ্যক বস্তুকে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, আসলে এটা সৃষ্টির কসম। এই জন্য যে, সৃষ্টি জোড় অথবা বিজোড় হয়; অন্য কিছু নয়। (আয়সারুত তাফাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৪ وَ الَّیۡلِ اِذَا یَسۡرِ ۚ﴿۴﴾
و الیل اذا یسر ﴿۴﴾

কসম রাতের, যখন তা বিদায় নেয়। আল-বায়ান

আর রাতের শপথ যখন তা গত হতে থাকে, তাইসিরুল

এবং শপথ রাতের, যখন ওটা গত হতে থাকে। মুজিবুর রহমান

And [by] the night when it passes, Sahih International

৪. শপথ রাতের যখন তা গত হয়ে থাকে-(১)—

(১) يسري অর্থ রাত্রিতে চলা। অর্থাৎ রাত্রির শপথ, যখন সে চলতে থাকে তথা খতম হতে থাকে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৪। এবং শপথ রাত্রির, যখন তা গত হতে থাকে। [1]

[1] অর্থাৎ, রাত যখন আগত হয় এবং যখন বিদায় নেয়। কেননা, سَير (চলা) শব্দটি আসা যাওয়া উভয় অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৫ هَلۡ فِیۡ ذٰلِكَ قَسَمٌ لِّذِیۡ حِجۡرٍ ؕ﴿۵﴾
هل فی ذلك قسم لذی حجر ﴿۵﴾

এর মধ্যে কি বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য কসম আছে? আল-বায়ান

অবশ্যই এতে জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য শপথ আছে। তাইসিরুল

জ্ঞানবান ব্যক্তি জন্য কি এর মধ্যে কসম করার উপাদান নেই? মুজিবুর রহমান

Is there [not] in [all] that an oath [sufficient] for one of perception? Sahih International

৫. নিশ্চয়ই এর মধ্যে শপথ রয়েছে বোধসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য।(১)

(১) উপরোক্ত পাঁচটি শপথ উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা'আলা গাফেল মানুষকে চিন্তাভাবনা করার জন্যে বলেছেন, “এতে কি বিবেকবানরা শপথ নেয়ার মত গুরুত্ব খুঁজে পায়? মূলত: حِجْر এর শাব্দিক অৰ্থ বাধা দেয়া। মানুষের বিবেক মানুষকে মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়াদি থেকে বাধাদান করে। তাই حِجْر এর অর্থ বিবেকও হয়ে থাকে। এখানে তাই বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] আয়াতের অর্থ এই যে, বিবেকবানের জন্যে এসব শপথও যথেষ্ট কিনা? এই প্রশ্ন প্রকৃতপক্ষে মানুষকে গাফিলত থেকে জাগ্রত করার একটি কৌশল। পরবর্তী আয়াতসমূহে কাফেরদের ওপর আযাব আসার কথা বর্ণনা করেও এ কথা ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কুফর ও গোনাহের শাস্তি আখেরাতে হওয়া তো স্থিরীকৃত বিষয়ই। মাঝে মাঝে দুনিয়াতেও তাদের প্রতি আযাব প্রেরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে তিনটি জাতির আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে-(এক) আদ বংশ, (দুই) সামূদ গোত্র এবং (তিন) ফিরআউন সম্প্রদায়।

তাফসীরে জাকারিয়া

৫। নিশ্চয়ই এর মধ্যে শপথ রয়েছে জ্ঞানবান ব্যক্তির জন্যে। [1]

[1] ذلك (এর) বলে উল্লিখিত যে সকল বস্তুর কসম খাওয়া হয়েছে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই সমস্ত বস্তুর কসম বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীদের জন্য যথেষ্ট নয় কি? حِجر শব্দের অর্থ হল বাধা দেওয়া, মানা করা। যেহেতু মানুষের জ্ঞান মানুষকে অশ্লীল কর্ম থেকে বাধা প্রদান করে। এই জন্য আকল (জ্ঞান)-কেও হিজর বলা হয়। যেমন একই অর্থের দিকে খেয়াল রেখে জ্ঞানকে نُهية ও বলা হয়। কসমের জওয়াব অথবা যার উপর কসম খাওয়া হয়েছে তার জওয়াব হল لَتُبعَثُن (অর্থাৎ, অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে)। কেননা, মক্কী সূরাসমূহে আকীদা সংশুদ্ধির প্রতি অধিকাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, কসমের জওয়াব হল কয়েক আয়াতের পর এই বাক্য; ‘‘নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’’ আগে প্রমাণস্বরূপ কিছু সংখ্যক জাতির কথা উল্লেখ করলেন; যারা মিথ্যারোপ ও ঔদ্ধত্য করার কারণে ধ্বংস হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হল মক্কাবাসীকে সতর্ক করা যে, যদি তোমরাও রসূল (সাঃ) এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা থেকে ফিরে না এস, তাহলে তোমাদের পরিণামও ঐরূপ হবে; যেমন পূর্বেকার লোকেদের হয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৬ اَلَمۡ تَرَ كَیۡفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ ۪ۙ﴿۶﴾
الم تر كیف فعل ربك بعاد ﴿۶﴾

তুমি কি দেখনি তোমার রব কিরূপ আচরণ করেছেন ‘আদ জাতির সাথে? আল-বায়ান

তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক ‘আদ জাতির সঙ্গে কী ব্যবহার করেছিলেন? তাইসিরুল

তুমি কি দেখনি তোমার রাব্ব কি করেছিলেন ‘আদ বংশের – মুজিবুর রহমান

Have you not considered how your Lord dealt with 'Aad - Sahih International

৬. আপনি দেখেননি আপনার রব কি (আচরণ) করেছিলেন আদ বংশের—

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৬। তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক আ’দ জাতির সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন; [1]

[1] তাদের প্রতি হূদ (আঃ)-কে নবী বানিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা তাঁকে মিথ্যা ভাবল, অবশেষে প্রচন্ড ঝড়ো-হাওয়ার কঠিন আযাব তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলল। নিরবচ্ছিন্নভাবে সাত রাত এবং আট দিন পর্যন্ত এই আযাব তাদের উপর অটল ছিল। (সূরা হাক্কাহ ৬-৮ আয়াত) যা তাদেরকে তছনছ করে ফেলেছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৭ اِرَمَ ذَاتِ الۡعِمَادِ ۪ۙ﴿۷﴾
ارم ذات العماد ﴿۷﴾

ইরাম গোত্রের সাথে, যারা ছিল সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী? আল-বায়ান

উচ্চ স্তম্ভ নির্মাণকারী ইরাম গোত্রের প্রতি? তাইসিরুল

ইরাম গোত্রের প্রতি, যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের? মুজিবুর রহমান

[With] Iram - who had lofty pillars, Sahih International

৭. ইরাম গোত্রের প্রতি(১)—যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের?—

(১) ‘আদ ও সামুদ জাতিদ্বয়ের বংশলতিকা উপরের দিকে ইরামে গিয়ে এক হয়ে যায়। তাই আয়াতে বর্ণিত ইরাম শব্দটি ‘আদ ও সামূদ উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য। এখানে ইরাম শব্দ ব্যবহার করে আদ-গোত্রের পূর্ববর্তী বংশধর তথা প্রথম ‘আদকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তারা দ্বিতীয় আদের তুলনায় আদের পূর্বপুরুষ ইরামের নিকটতম বিধায় তাদেরকে عاد إرام ‘আদে-ইরাম’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সূরা আন-নাজমে (وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ) শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

এখানে তাদের বিশেষণে বলা হয়েছে ذَاتِ الْعِمَاد মূলত عِمَاد শব্দের অর্থ স্তম্ভ। তারা অত্যন্ত দীর্ঘকায় জাতি ছিল বিধায় তাদের (ذَاتِ الْعِمَادِ) বলা হয়েছে। অপর কারো কারো মতে তারা যেহেতু অট্টালিকায় বাস করত সেহেতু তাদেরকে (ذَاتِ الْعِمَادِ) বলা হয়েছে। কারণ অট্টালিকা নির্মাণ করতে স্তম্ভ নির্মানের প্রয়োজন হয়। তারা সর্বপ্রথম এ জাতীয় অট্টালিকা নির্মাণ করে। দুনিয়ায় তারাই সর্বপ্রথম উঁচু উঁচু স্তম্ভের ওপর ইমারত নির্মাণ করার কাজ শুরু করে। কুরআন মজীদের অন্য জায়গায় তাদের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে: হূদ আলাইহিস সালাম তাদেরকে বললেন, “তোমাদের এ কেমন অবস্থা, প্রত্যেক উচু জায়গায় অনৰ্থক একটি স্মৃতিগৃহ তৈরি করছে এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছে, যেন তোমনা চিরকাল এখানে থাকবে।” [সূরা আশ শু'আরা: ১২৮–১২৯] অন্য আয়াতে আছে, (وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ) “আর তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত নিরাপদ বাসের জন্য। [সূরা আল-হিজর: ৮২]

তাফসীরে জাকারিয়া

৭। সুদীর্ঘ দেহের অধিকারী ইরাম গোত্রের সাথে? [1]

[1] إِرَم শব্দটি عاد শব্দের (আরবী ব্যাকরণে বিবরণব্যঞ্জক) আত্ফে বায়ান অথবা বদল। ইরাম আদ জাতির পিতামহের (দাদার) নাম ছিল। তাদের বংশতালিকা এইরূপ ছিল ‘আদ বিন আউস বিন ইরাম বিন সাম বিন নূহ।(ফাতহুল ক্বাদীর) এর উদ্দেশ্য এ কথা স্পষ্ট করা যে, এ ছিল প্রথম আদ (হূদ জাতি)। ذات العماد (স্তম্ভ-ওয়ালা) বলে তাদের ক্ষমতা, শক্তিমত্তা ও দৈহিক দীর্ঘতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তারা অট্টালিকা নির্মাণ কর্মেও পটু ছিল। তারা মজবুত ভিত্তি করে বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করত। ذات العماد এ উক্ত উভয় অর্থই শামিল হতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৮ الَّتِیۡ لَمۡ یُخۡلَقۡ مِثۡلُهَا فِی الۡبِلَادِ ۪ۙ﴿۸﴾
التی لم یخلق مثلها فی البلاد ﴿۸﴾

যার সমতুল্য কোন দেশে সৃষ্টি করা হয়নি। আল-বায়ান

যার সমতুল্য অন্য কোন দেশে নির্মিত হয়নি। তাইসিরুল

যার সমতুল্য অন্য কোন নগর নির্মিত হয়নি? মুজিবুর রহমান

The likes of whom had never been created in the land? Sahih International

৮. যার সমতুল্য কোন দেশে সৃষ্টি করা হয়নি(১);

(১) অর্থাৎ আদ জাতি দৈহিক গঠন ও শক্তি-সাহসে অন্য সব জাতি থেকে স্বতন্ত্র ছিল। কুরআনের অন্যান্য স্থানে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে তোমাদের অবয়বকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছেন।” [সূরা আল আরাফঃ ৬৯] আল্লাহ অন্যত্র আরো বলেছেন, “আর তাদের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, তারা কোন অধিকার ছাড়াই পৃথিবীর বুকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করেছে। তারা বলেছে, কে আছে আমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী? [সূরা হা-মীম আস সাজদাহঃ ১৫] আরও বলেছেন, “আর তোমরা যখন কারো ওপর হাত উঠিয়েছে প্ৰবল পরাক্রান্ত হয়েই উঠিয়েছো।” [সূরা আশ শু'আরাঃ ১৩০]

তাফসীরে জাকারিয়া

৮। যার সমতুল্য জাতি অন্য কোন দেশে সৃষ্টি হয়নি। [1]

[1] অর্থাৎ, এমন সুদীর্ঘ দেহী, বলবান ও শক্তিশালী আর কোন জাতি সৃষ্টি হয়নি। এই জাতি গর্ব করে বলত যে, ‘আমাদের থেকে অধিক শক্তিশালী আর কারা আছে।’ (সূরা হা -মীম সাজদাহ ১৫ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:৯ وَ ثَمُوۡدَ الَّذِیۡنَ جَابُوا الصَّخۡرَ بِالۡوَادِ ۪ۙ﴿۹﴾
و ثمود الذین جابوا الصخر بالواد ﴿۹﴾

আর সামূদ সম্প্রদায়, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছিল? আল-বায়ান

এবং সামূদের প্রতি যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? তাইসিরুল

এবং ছামূদের প্রতি, যারা উপত্যকার পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? মুজিবুর রহমান

And [with] Thamud, who carved out the rocks in the valley? Sahih International

৯. এবং সামূদের প্রতি? –যারা উপত্যকায়(১) পাথর কেটে ঘর নির্মাণ করেছিল;

(১) উপত্যকা বলতে ‘আলকুরা’ উপত্যকা বুঝানো হয়েছে। সামূদ জাতির লোকেরা সেখানে পাথর কেটে কেটে তার মধ্যে এভাবে ইমারত নির্মাণের রীতি প্রচলন করেছিল। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৯। এবং সামূদ জাতির সাথে? যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? [1]

[1] এরা স্বালেহ (আঃ)-এর জাতি ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাথর খোদাই কাজের বিশেষ দক্ষতা ও ক্ষমতা দান করেছিলেন। এমনকি তারা পাহাড়কে কেটে নিজেদের বাসস্থান নির্মাণ করত। যেমন কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘‘তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ।’’ (সূরা শুআরা ১৪৯ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮৯:১০ وَ فِرۡعَوۡنَ ذِی الۡاَوۡتَادِ ﴿۪ۙ۱۰﴾
و فرعون ذی الاوتاد ﴿۱۰﴾

আর ফির‘আউন, সেনাছাউনীর অধিপতি? আল-বায়ান

এবং (সেনা ছাউনী স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত) কীলক-এর অধিপতি ফেরাউনের প্রতি? তাইসিরুল

এবং বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতি ফির‘আউনের প্রতি – মুজিবুর রহমান

And [with] Pharaoh, owner of the stakes? - Sahih International

১০. এবং কীলকওয়ালা ফিরআউনের প্রতি?(১)

(১) أوْتَاد শব্দটি وتد এর বহুবচন। এর অর্থ কীলক। ফিরআউনের জন্য ‘যুল আউতাদ’। (কীলকধারী) শব্দ এর আগে সূরা সাদের ১২ আয়াতেও ব্যবহার করা হয়েছে। ফিরআউনকে কীলকওয়ালা বলার বিভিন্ন কারণ তাফসীরবিদগণ বর্ণনা করেছেন। কারও কারও মতে এর দ্বারা যুলুম নিপীড়ন বোঝানোই উদ্দেশ্য। কারণ, ফিরআউন যার উপর ক্রোধান্বিত হত, তার হাত-পা চারটি পেরেকে বেঁধে অথবা চার হাত পায়ে পেরেক মেরে রৌদ্ৰে শুইয়ে রাখত। বা কোন গাছের সাথে পেরেক মেরে রাখত। অথবা পেরেক মেরে দেহের উপর সাপ-বিচ্ছু ছেড়ে দিত। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেন, এখানে তার সেনাবাহিনীকেই কীলকের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং সেই অর্থে কীলকধারী মানে সেনাবাহিনীর অধিকারী। কারণ তাদেরই বদৌলতে তার রাজত্ব এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যেমন কীলকের সাহায্যে তাবু মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাছাড়া এর অর্থ সেনা দলের সংখ্যাধিক্যও হতে পারে। এক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, তার সেনাদল যেখানে গিয়ে তাবু গাড়তো সেখানেই চারদিকে শুধু তাবুর কীলকই পোঁতা দেখা যেতো। কারও কারও মতে, এর দ্বারা ফিরআউনের প্ৰাসাদ-অট্টালিকা বোঝানো হয়েছে। এসবের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। ফিরআউন মূলত: এসবেরই অধিকারী ছিল। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

১০। এবং বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতি ফিরাউনের সাথে? [1]

[1] ذي الأوتاد এর আসল অর্থঃ গোঁজ বা কীলক-ওয়ালা। এর মর্মার্থ এই যে, ফিরআউন বিশাল সংখ্যক সেনাবাহিনীর অধিপতি ছিল। যার ছিল অনেক অনেক শিবির বা তাঁবু; যা মাটিতে কীলক গেড়ে টাঙ্গানো হত। অথবা এর দ্বারা তার অত্যাচার ও যুলুমবাজির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু সে কীলক বা পেরেক দ্বারা মানুষকে শাস্তি দিত। (ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »