কসম কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত বাতাসের, আল-বায়ান
পর পর পাঠানো বাতাসের শপথ যা উপকার সাধন করে, তাইসিরুল
শপথ কল্যাণ স্বরূপ প্রেরিত বায়ুর; মুজিবুর রহমান
By those [winds] sent forth in gusts Sahih International
১. শপথ কল্যাণস্বরূপ প্রেরিত বায়ুর,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১) শপথ কল্যাণ স্বরূপ প্রেরিত অবিরাম বায়ুর। [1]
[1] এই অর্থের দিক দিয়ে عُرْفًا এর মানে হবে অবিরাম। কেউ কেউ مُرْسَلاَتٌ থেকে ফিরিশতা অথবা আম্বিয়া অর্থ নিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে عُرْفًا এর অর্থ হবে আল্লাহর অহী বা শরীয়তের বিধি-বিধান। আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী এটা হল ‘মাফউল লাহু’ অর্থাৎ, لأَجْلِ الْعُرْفِ অথবা ‘যের’ দানকারী হরফকে বাদ দেওয়ার কারণে তাতে ‘যবর’ হয়েছে; আসলে ছিল بِالْعُرْفِ
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত ঝঞ্ঝার। আল-বায়ান
অতঃপর তা প্রচন্ড ঝড়ের বেগে বইতে থাকে, তাইসিরুল
আর প্রলয়ঙ্করী ঝটিকার; মুজিবুর রহমান
And the winds that blow violently Sahih International
২. অতঃপর প্রলয়ংকরী ঝটিকার,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) আর প্রলয়ঙ্করী ঝটিকার, [1]
[1] অথবা সেই ফিরিশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদেরকে কোন কোন সময় ঝড়ের আযাবের সাথে প্রেরণ করা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানকসম মেঘমালা ও বৃষ্টি বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর, আল-বায়ান
শপথ সেই বায়ুর যা (মেঘমালাকে) ছড়িয়ে দেয় দূর দূরান্তে, তাইসিরুল
শপথ সঞ্চালনকারী বায়ুর; মুজিবুর রহমান
And [by] the winds that spread [clouds] Sahih International
৩. শপথ প্রচণ্ড সঞ্চালনকারীর,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) শপথ মেঘমালা-সঞ্চালনকারী বায়ুর। [1]
[1] অথবা সেই ফিরিশতাদের শপথ! যারা মেঘমালা বিস্তৃত করে কিংবা যারা মহাশূন্যে নিজেদের ডানা প্রসারিত করে। তবে ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) এবং ইমাম ত্বাবারী (রঃ) (المرسَلات، العاصِفَات، الناشِرات) এই তিন শব্দ থেকে হাওয়া অর্থ নেওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তরজমাতেও এই অর্থই করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর সুস্পষ্টরূপে পার্থক্যকারীর (আল-কুরআনের আয়াতের)। আল-বায়ান
আর বিচ্ছিন্নকারী বাতাসের শপথ যা (মেঘমালাকে) বিচ্ছিন্ন করে, তাইসিরুল
আর মেঘপুঞ্জ বিচ্ছিন্নকারী বায়ুর। মুজিবুর রহমান
And those [angels] who bring criterion Sahih International
৪. অতঃপর সুস্পষ্টরূপে পার্থক্যকারীর,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) শপথ মেঘমালা-বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর, [1]
[1] অথবা সেই ফিরিশতাদের কসম! যারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যসূচক যাবতীয় বিধি-বিধান নিয়ে অবতরণ করে। অথবা উদ্দেশ্য কুরআনের আয়াতসমূহ; যার দ্বারা সত্য ও মিথ্যা এবং হালাল ও হারামের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়। কিংবা রসূল (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে, যিনি আল্লাহর অহীর মাধ্যমে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর কসম, উপদেশগ্রন্থ আনয়নকারী (ফেরেশতাদের), আল-বায়ান
অতঃপর (মানুষের অন্তরে) পৌঁছে দেয় (আল্লাহর) স্মরণ, তাইসিরুল
এবং তার, যে মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেয় উপদেশ – মুজিবুর রহমান
And those [angels] who deliver a message Sahih International
৫. অতঃপর তাদের, যারা মানুষের অন্তরে পৌছে দেয় উপদেশ—(১)
(১) এই সূরার প্রথমে আল্লাহ্ তা'আলা পাঁচটি বস্তুর শপথ করে কেয়ামতের নিশ্চিত আগমনের কথা ব্যক্ত করেছেন। যে পাঁচটি জিনিসের শপথ করা হয়েছে কুরআনুল কারাম সেগুলোকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেনি, বরং সেগুলোর নামের পরিবর্তে পাঁচটি বিশেষণ উল্লেখ করেছে। যেমন বলা হয়েছে, (এক) একের পর এক প্রেরিত বা কল্যাণ হিসেবে প্রেরিত, (দুই) অত্যন্ত দ্রুত এবং প্রচন্ডবেগে প্রবাহিত, (তিন) ভালভাবে বিক্ষিপ্তকারী, (চার) ভালভাবে বিচ্ছিন্নকারী এবং (পাঁচ) স্মরণকে জাগ্রতকারী। লক্ষণীয় যে, এগুলো কোন প্ৰাণী বা বস্তুর বিশেষণ, নাম নয়। কিন্তু এগুলো কার বিশেষণ তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট করা হয় নি। তাই এ সম্পর্কে বিভিন্নরূপে তাফসীর বর্ণিত আছে। এক দল বলেন, প্রথম তিনটি দ্বারা বাতাস এবং পরের দুটি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর] অপর এক দল বলেন, প্রথম দুটি দ্বারা বাতাস এবং পরের তিনটি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [মুয়াস্সার]
তৃতীয় এক দল বলেন, প্রথম তিনটি বিশেষণ দ্বারা বাতাস, চতুর্থটি দ্বারা কুরআন এবং পঞ্চমটি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [জালালাইন, আয়সারুত তাফসীর] কেউ কেউ বলেন যে প্রতিটি বিশেষণ দ্বারা ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত ফেরেশতাগণের বিভিন্ন দল এসব বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত। [দেখুন: কুরতুবী] তবে ইমাম তাবারী বলেন, প্রথম আয়াত দ্বারা ফেরেশতা বা বাতাস- দুটিই উদ্দেশ্য হতে পারে। দ্বিতীয় আয়তটি দ্বারা প্রবাহিত বাতাস, আর তৃতীয় আয়াতটির মাধ্যমে বাতাস, বৃষ্টি বা ফেরেশতা সবই উদ্দেশ্য হতে পারে। চতুর্থটি দ্বারা যেকোনো সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী উদ্দেশ্য হতে পারে, চাই তা ফেরেশতা হোক বা কুরআন হোক, বা অন্য কিছু হোক। আর পঞ্চমটির মাধ্যমে ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) শপথ তাদের যারা (মানুষের অন্তরে) উপদেশ পৌঁছিয়ে দেয়।[1]
[1] যাঁরা আল্লাহর কালাম পয়গম্বরদের কাছে পৌঁছান অথবা রসূল যিনি আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত অহী তাঁর উম্মতের কাছে পৌঁছিয়ে দেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅজুহাত দূরকারী ও সতর্ককারী। আল-বায়ান
(বিশ্বাসী লোকদেরকে) ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য আর (কাফিরদেরকে) সতর্ক করার জন্য। তাইসিরুল
অনুশোচনা স্বরূপ অথবা সতর্কতা স্বরূপ। মুজিবুর রহমান
As justification or warning, Sahih International
৬. ওযর-আপত্তি রহিতকরণ ও সতর্ক করার জন্য(১),
(১) এ আয়াতটি আগের আয়াতের সাথে সম্পূক্ত। বলা হয়েছে, যে ফেরেশতারা যে উপদেশ ও ওহী নিয়ে আসে তার মাধ্যমে সৃষ্টির পক্ষ থেকে ওজর পেশ করার সুযোগ বন্ধ করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাবের ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থাকে। ফাররা বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে উপদেশ-বাণী বা ওহী আসে তা মুমিনদের জন্যে ওযর-আপত্তি রহিত করার কারণ হয় এবং কাফেরদের জন্যে সতর্ককারী হয়ে যায়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) যা অনুশোচনা স্বরূপ বা সতর্কতা স্বরূপ। [1]
[1] উভয় শব্দই ‘মাফউল লাহু’ (কারণসূচক পদ) لأَجْلِ الإعْذَار والإِنْذارِ অর্থাৎ, ফিরিশতাগণ অহী নিয়ে আসেন যাতে লোকদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে যায় এবং তারা যেন এই ওজর-আপত্তি করতে না পারে যে, আমাদের কাছে তো কেউ আল্লাহর বার্তা নিয়ে আসেনি। অথবা উদ্দেশ্য তাদেরকে ভয় দেখানো, যারা অস্বীকারকারী ও কাফের। অথবা অর্থ হল, মু’মিনদের জন্য সুসংবাদ, আর কাফেরদের জন্য সতর্ক। ইমাম শওকানী (রঃ) বলেন, مُرْسِلاَتٌ، عَاصِفَاتٌ এবং نَاشِرَاتٌ এর অর্থ বাতাস। আর فَارِقَاتٌ وَمُلْقِيَاتٌ এর অর্থ ফিরিশতা। এটাই প্রাধান্য প্রাপ্ত কথা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। আল-বায়ান
তোমাদেরকে যার ও‘য়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী। মুজিবুর রহমান
Indeed, what you are promised is to occur. Sahih International
৭. নিশ্চয় তোমাদেরকে যে প্ৰতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) নিশ্চয়ই তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা অবশ্যম্ভাবী। [1]
[1] শপথ গ্রহণ করার অর্থ হল যে কথার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয় সে কথার গুরুত্বকে শ্রোতাদের কাছে স্পষ্ট করা এবং তার সত্যতাকে প্রকাশ করা। এখানে যে কথার জন্য শপথ করা হয়েছে সে কথা (অথবা কসমের জওয়াব) হল, তোমাদের সাথে কিয়ামতের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এতে সন্দেহ করার কিছু নেই, বরং এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে। এই কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে পরের আয়াতগুলোতে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযখন তারকারাজি আলোহীন হবে, আল-বায়ান
যখন নক্ষত্ররাজির আলো বিলুপ্ত হবে, তাইসিরুল
যখন নক্ষত্ররাজির আলো নির্বাপিত হবে, মুজিবুর রহমান
So when the stars are obliterated Sahih International
৮. যখন নক্ষত্ররাজির আলো নির্বাপিত করা হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) যখন নক্ষত্ররাজির আলো নির্বাপিত হবে। [1]
[1] طَمْسٌ এর অর্থ, মিটে যাওয়া এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, যখন তারকার জ্যোতি নিঃশেষ হয়ে যাবে; এমন কি তার কোন চিহ্ন পর্যন্ত থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আকাশ বিদীর্ণ হবে, আল-বায়ান
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, তাইসিরুল
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, মুজিবুর রহমান
And when the heaven is opened Sahih International
৯. আর যখন আকাশ বিদীর্ণ করা হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আল-বায়ান
যখন পবর্তমালা ধুনিত হবে। তাইসিরুল
এবং যখন পর্বতমালা উম্মুলিত ও বিক্ষিপ্ত হবে, মুজিবুর রহমান
And when the mountains are blown away Sahih International
১০. আর যখন পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ করা হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) যখন পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে উড়িয়ে দেওয়া হবে। [1]
[1] অর্থাৎ, সেগুলোকে যমীন থেকে উপড়িয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে এবং তা একেবারে পরিষ্কার ও সমতল হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান