৬৮ : ১
نٓ وَ الۡقَلَمِ وَ مَا یَسۡطُرُوۡنَ ۙ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. নূন—শপথ কলমের(১) এবং তারা যা লিপিবদ্ধ করে তাঁর,
(১) মুজাহিদ বলেন, কলম মানে যে কলম দিয়ে যিকর অর্থাৎ কুরআন মজীদ লেখা হচ্ছিলো। [কুরতুবী] কলম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা কলম সৃষ্টি করে তাকে লেখার আদেশ করেন। কলম বলল, কী লিখব? তখন আল্লাহ বললেন, যা হয়েছে এবং যা হবে তা সবই লিখ। কলম আদেশ অনুযায়ী অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল ঘটনা ও অবস্থা লিখে দিল।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩১৭] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা সমগ্র সৃষ্টির তাকদীর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখে দিয়েছিলেন।” [মুসলিম: ২৬৫৩, তিরমিযী: ২১৫৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৬৯] কুরআনের অন্যত্রও এ কলমের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “তিনি (আল্লাহ) কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন”। [সূরা আল-আলাক: ৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) নূন,[1] শপথ কলমের[2] এবং ওরা (ফিরিশতাগণ) যা লিপিবদ্ধ করে তার।[3]
[1] نَ অক্ষরটি ঐ শ্রেণীর বিচ্ছিন্ন অক্ষরমালার অন্তর্ভুক্ত যা পূর্বে বহু সূরায় অতিবাহিত হয়েছে। যেমন, ص، ق (স্বাদ, ক্বাফ) ইত্যাদি।
[2] আল্লাহ তাআলা কলমের কসম খেয়েছেন। আর কলমের একটি গুরুত্ব এই কারণে রয়েছে যে, তার দ্বারা বর্ণনা ও মনের ভাবপ্রকাশের কাজ সম্পাদিত হয়। কেউ কেউ বলেন, এ থেকে সেই নির্দিষ্ট কলমকে বুঝানো হয়েছে, যেটাকে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে ভাগ্য লেখার আদেশ করেছিলেন এবং সে শেষ পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, তা সবই লিখেছিল। (তিরমিযী, তাফসীর সূরা নূন)
[3] يَسْطُرُوْنَ ক্রিয়ার কর্তা হল সেই কলমওলারা, যা কলম শব্দ দ্বারা প্রমাণিত হয়। কেননা, লেখনীর উল্লেখ স্বাভাবিকভাবে লেখকের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। অর্থ হল, তারও শপথ যা লেখকরা লিখে। অথবা ঐ ক্রিয়ার কর্তা হলেন ফিরিশতাগণ, যেমন অনুবাদে ফুটে উঠেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ২
مَاۤ اَنۡتَ بِنِعۡمَۃِ رَبِّكَ بِمَجۡنُوۡنٍ ۚ﴿۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি উন্মাদ নন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে পাগল নও। [1]
[1] এটা হল কসমের জওয়াব। এতে কাফেরদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে পাগল বলত। {يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ} অর্থাৎ, (তারা বলল,) হে ঐ ব্যক্তি! যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে, তুমি তো একটা পাগল। (সূরা হিজর ৬ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৩
وَ اِنَّ لَكَ لَاَجۡرًا غَیۡرَ مَمۡنُوۡنٍ ۚ﴿۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর নিশ্চয় আপনার জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তোমার জন্য অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। [1]
[1] নবুঅতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যত কষ্ট তুমি সহ্য করেছ এবং শত্রুদের (ব্যথাদায়ক) যত কথা তুমি শুনেছ, সে সবের বিনিময়ে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে অশেষ প্রতিদান তুমি লাভ করবে। مَنٌّ এর অর্থ বিচ্ছিন্ন করা। غَير مَمنُون অর্থঃ নিরবচ্ছিন্ন, অশেষ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৪
وَ اِنَّكَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।(১)
(১) আয়াতে উল্লেখিত, “মহৎ চরিত্র” এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত বর্ণিত আছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বীন। কেননা, আল্লাহ তা'আলার কাছে ইসলাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দ্বীন নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, স্বয়ং কুরআন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “মহৎ চরিত্র”। অর্থাৎ কুরআন পাক যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “মহৎ চরিত্র” বলে কুরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কুরআন শিক্ষা দিয়েছে। [কুরতুবী]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিল তার চরিত্র। [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৯১] আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেছেন, “আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোন কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? [বুখারী: ৬০৩৮, মুসলিম: ২৩০৯] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তায় আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬৭০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। [1]
[1] خُلُقٍ عَظِيْمٍ থেকে ইসলাম, দ্বীন অথবা কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ হল, তুমি ঐ মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যার আদেশ মহান আল্লাহ তোমাকে কুরআনে অথবা ইসলামে দিয়েছেন। অথবা এর অর্থ হল, এমন শিষ্টাচার, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিশ্বস্ততা, সততা, সহিষ্ণুতা এবং দানশীলতা ইত্যাদি সহ অন্য যাবতীয় চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলী যার অধিকারী তিনি নবুঅতের পূর্বেও ছিলেন এবং নবুঅতের পর যা আরো উন্নত হয় ও সৌন্দর্য-সমৃদ্ধ হয়। আর এই কারণেই যখন আয়েশা (রাঃ) কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, كَانَ خُلُقُهُ القُرْآنَ অর্থাৎ, তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন। (মুসলিমঃ মুসাফিরীন অধ্যায়) মা আয়েশার এই উত্তর خُلُقٍ عَظِيْمٍ এর উল্লিখিত উভয় অর্থেই শামিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৫
فَسَتُبۡصِرُ وَ یُبۡصِرُوۡنَ ۙ﴿۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. অতঃপর অচিরেই আপনি দেখবেন এবং তারাও দেখবে—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) শীঘ্রই তুমি দেখবে এবং তারাও দেখবে। [1]
[1] অর্থাৎ, যখন সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবে এবং কোন কিছুই গোপন থাকবে না। আর এটা হবে কিয়ামতের দিন। কেউ কেউ বলেছেন, এ কথার সম্পর্ক বদর যুদ্ধের সাথে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৬
بِاَىیِّكُمُ الۡمَفۡتُوۡنُ ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্ৰস্ত(১)।
(১) مَفْتُون শব্দের অর্থ এস্থলে বিকারগ্রস্ত পাগল। [বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৭
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِهٖ ۪ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ ﴿۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. নিশ্চয় আপনার রব সম্যক অবগত আছেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি সম্যক জানেন তাদেরকে, যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অধিক অবগত আছেন যে, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি অধিক জানেন, কারা সৎপথপ্রাপ্ত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৮
فَلَا تُطِعِ الۡمُكَذِّبِیۡنَ ﴿۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. কাজেই আপনি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের আনুগত্য করো না। [1]
[1] এখানে আনুগত্যের অর্থ এমন নমনীয়তা, যার প্রকাশ মানুষ তার বিবেক না চাইলেও করে থাকে। অর্থাৎ, মুশরিকদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া ও নমনীয়তা প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ৯
وَدُّوۡا لَوۡ تُدۡهِنُ فَیُدۡهِنُوۡنَ ﴿۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. তারা কামনা করে যে, আপনি আপোষকামী হোন, তাহলে তারাও আপোষকামী হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও। তাহলে তারাও নমনীয় হবে।[1]
[1] অর্থাৎ, তারা তো এটাই চায় যে, তুমি তাদের উপাস্যগুলোর ব্যাপারে একটু নম্র ভাব প্রকাশ কর, তাহলে তারাও তোমার ব্যাপারে নম্র ভাব অবলম্বন করবে। কিন্তু বাতিলের ব্যাপারে শিথিলতার ফল এই হবে যে, বাতিল পন্থীরা তাদের বাতিলের পূজা ছাড়তে ঢিলেমি করবে। কাজেই সত্যের ব্যাপারে শিথিলতা (দ্বীন) প্রচারের কৌশল এবং নবুঅতের দায়িত্ব পালনের কাজের জন্য বড়ই ক্ষতিকর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৬৮ : ১০
وَ لَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِیۡنٍ ﴿ۙ۱۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর আপনি আনুগত্য করবেন না প্ৰত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক শপথকারী, লাঞ্ছিত,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) এবং অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান