بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৫৪/ আল-কামার | Al-Qamar | سورة القمر আয়াতঃ ৫৫ মাক্কী
৫৪:১ اِقۡتَرَبَتِ السَّاعَۃُ وَ انۡشَقَّ الۡقَمَرُ ﴿۱﴾
اقتربت الساعۃ و انشق القمر ﴿۱﴾

কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে। আল-বায়ান

ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র খন্ডিত হয়েছে, তাইসিরুল

কিয়ামাত আসন্ন, চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে, মুজিবুর রহমান

The Hour has come near, and the moon has split [in two]. Sahih International

১. কিয়ামত কাছাকাছি হয়েছে(১), আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে(২),

(১) পূর্ববর্তী সুরা আন-নাজমে (أَزِفَتِ الْآزِفَةُ) বলে সমাপ্ত করা হয়েছে, যাতে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। আলোচ্য সূরাকে এই বিষয়বস্তু দ্বারাই অর্থাৎ (اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ) বলে শুরু করা হয়েছে। [কুরতুবী] কিয়ামতের বিপুলসংখ্যক আলামতের মধ্যে সর্ববৃহৎ আলামত হচ্ছে খোদ শেষনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] এক হাদীসে তিনি বলেন, আমার আগমন ও কেয়ামত হাতের দুই অঙ্গুলির ন্যায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ [বুখারী: ৪৯৩৬, ৬৫০৩, মুসলিম: ২৯৫০, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৩৮] আরও কতিপয় হাদীসে এই নৈকট্যের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে।

(২) এখানে কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি দলীল চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মু'জিযায় আলোচিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মু'জিযা হিসাবে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া কেয়ামতের একটি বড় আলামত। এছাড়াও এই মু'জিযাটি আরও এক দিক দিয়ে কেয়ামতের আলামত। তা এই যে, চন্দ্র যেমন আল্লাহর কুদরাতে দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, তেমনিভাবে কেয়ামতে সমস্ত গ্ৰহ উপগ্রহের খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়া কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে তার রেসালাতের সপক্ষে কোন নিদর্শন চাইলে আল্লাহ তা'আলা তার সত্যতার প্রমাণ হিসেবে চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মু'জিযা প্রকাশ করেন।

এই মু'জিযার প্রমাণ কুরআন পাকের এই আয়াতে আছে এবং অনেক সহীহ হাদীসেও আছে। এসব হাদীস সাহাবায়ে কেরামের একটি বিরাট দলের রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণিত আছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, জুবায়ের ইবনে মুতইম, ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ কথাও বর্ণনা করেন। যে, তিনি তখন অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং মু'জিযা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। ইমাম তাহাতী ও ইবনে কাসীর এই মু'জিযা সম্পর্কিত সকল রেওয়ায়েতকে ‘মুতাওয়াতির’ বলেছেন। তাই এই মু'জিযার বাস্তবতা অকাট্য রূপে প্রমাণিত। যা অস্বীকার করা সুস্পষ্ট কুফরী। [দেখুন: ইবন কাসীর; কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

ঘটনার সার-সংক্ষেপ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছিলেন। তখন মুশরিকরা তার কাছে নবুওয়াতের নিদর্শন চাইল। তখন ছিল চন্দ্রোজ্জ্বল রাত্রি। আল্লাহ তা'আলা এই সুস্পষ্ট অলৌকিক ঘটনা দেখিয়ে দিলেন যে, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে একখণ্ড পুর্বদিকে ও অপরখণ্ড পশ্চিমদিকে চলে গেল এবং উভয় খণ্ডের মাঝখানে পাহাড় অন্তরাল হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত সবাইকে বললেনঃ দেখ এবং সাক্ষ্য দাও। সবাই যখন পরিষ্কাররূপে এই মু'জিযা দেখে নিল, তখন চন্দ্রের উভয় খণ্ড পুনরায় একত্রিত হয়ে গেল। কোন চক্ষুষ্মান ব্যক্তির পক্ষে এই সুস্পষ্ট মু'জিযা অস্বীকার করা সম্ভবপর ছিল না, কিন্তু মুশরিকরা বলতে লাগলঃ মুহাম্মদ সারা বিশ্বের মানুষকে জাদু করতে পারবে না। অতএব, বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকদের জন্য অপেক্ষা কর। তারা কি বলে শুনে নাও। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে আগন্তুক মুশরিকদেরকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করল। তারা সবাই চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখেছে বলে স্বীকার করল। নিম্নে এতদসংক্রান্ত বর্ণনাসমূহের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

* আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দুই খণ্ড হয়ে গেল। সবাই এই ঘটনা অবলোকন করল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সাক্ষ্য দাও। [বুখারী: ৩৮৬৯, মুসলিম: ২৮০০, তিরমিযী: ৩২৮৫, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৭৭]

* আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, মক্কায় (অবস্থানকালে) চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দুই খণ্ড হয়ে যায়। কোরাইশ কাফেররা বলতে থাকে, এটা জাদু, মুহাম্মদ তোমাদেরকে জাদু করেছে। অতএব, তোমরা বহির্দেশ থেকে আগমনকারী মুসাফিরদের অপেক্ষা কর। যদি তারাও চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখে থাকে, তবে মুহাম্মদের দাবি সত্য। পক্ষান্তরে তারা এরূপ দেখে না থাকলে এটা জাদু ব্যতীত কিছু নয়। এরপর বহির্দেশ থেকে আগত মুসাফিরদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তারা সবাই চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত অবস্থায় দেখেছে বলে স্বীকার করে। [আবু দাউদ তায়ালেসী: ১/৩৮, হাদীস নং ২৯৫, বাইহাকী: দালায়েল ২/২৬৬]

* জুবাইর ইবন মুতইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলের যুগে চাঁদ ফেটে গিয়ে দুভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এর এক অংশ ছিল এ পাহাড়ের উপর অপর অংশ অন্য পাহাড়ের উপর। তখন মুশরিকরা বলল, মুহাম্মাদ আমাদেরকে জাদু করেছে। তারপর তারা আবার বলল, যদি তারা আমাদেরকে জাদু করে থাকে তবে সে তো আর দুনিয়াসুদ্ধ সবাইকে জাদু করতে পারবে না। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/৮১–৮২]

* আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনঃ মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নবুওয়তের কোন নিদর্শন দেখতে চাইলে আল্লাহ তা'আলা চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় দেখিয়ে দিলেন। তারা হেরা পর্বতকে উভয় খণ্ডের মাঝখানে দেখতে পেল। [বুখারী: ৩৮৬৮, মুসলিম: ২৮০২]

* আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াতের তাফসীর করার সময় বলেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ঘটেছিল। চাঁদ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একভাগ পাহাড়ের সামনে অপর ভাগ পাহাড়ের পিছনে ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। [মুসলিম: ২১৫৯, তিরমিযী: ৩২৮৮]

* আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে চাঁদ ফেটেছিল ৷ [বুখারী: ৪৮৬৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) কিয়ামত আসন্ন,[1] চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। [2]

[1] প্রথমতঃ এ কথা বিশ্বসৃষ্টির বিগত কাল অনুপাতে। কারণ, যা অতিবাহিত হয়ে গেছে তার তুলনায় যা অবশিষ্ট আছে, তা অল্প। দ্বিতীয়তঃ আগামী প্রত্যেকটি জিনিসই নিকটবর্তী হয়। তাই নবী করীম (সাঃ) তাঁর নিজের ব্যাপারে বলেছেন যে, আমার আগমন কাল কিয়ামত সংলগ্নে। অর্থাৎ, আমার ও কিয়ামতের মধ্যে আর কোন নবী আসবেন না।

[2] এটি সেই মু’জেযা, যা মক্কাবাসীদের দাবী অনুযায়ী দেখানো হয়েছিল। চাঁদ দু’ টুকরো হয়ে গিয়েছিল। এমনকি লোকেরা তার (দু’খন্ড চাঁদের) মাঝ দিয়ে হিরা পাহাড়কে দেখতে পায়। অর্থাৎ, চাঁদের এক টুকরো পাহাড়ের একদিকে এবং দ্বিতীয় টুকরো পাহাড়ের অপর দিকে চলে যায়। (বুখারীঃ আনসারদের ফযীলত অধ্যায়, মুসলিমঃ কিয়ামতের বর্ণনা অধ্যায়) পূর্বের প্রায় সকল সালাফে সালেহীনের এটাই মত। (ফাতহুল ক্বাদীর) ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) লিখছেন যে, ‘উলামাগণ সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, চাঁদ নবী করীম (সাঃ)-এর যুগে দ্বিখন্ডিত হয় এবং এটা তাঁর সুস্পষ্ট মু’জিযাসমূহের অন্যতম। বিশুদ্ধসূত্রে সাব্যস্ত বহুবিধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসগুলোও তা প্রমাণ করে।’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:২ وَ اِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَ یَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ ﴿۲﴾
و ان یروا ایۃ یعرضوا و یقولوا سحر مستمر ﴿۲﴾

আর তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, ‘চলমান যাদু’। আল-বায়ান

কিন্তু তারা যখন কোন নিদর্শন দেখে তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় আর বলে- ‘এটা তো সেই আগের থেকে চলে আসা যাদু।’ তাইসিরুল

তারা কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলেঃ এটাতো চিরাচরিত যাদু। মুজিবুর রহমান

And if they see a miracle, they turn away and say, "Passing magic." Sahih International

২. আর তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত জাদু।(১)

(১) مُسْتَمِرٌّ শব্দের প্রচলিত অর্থ দীর্ঘস্থায়ী। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতদিন একের পর এক যে জাদু চালিয়ে যাচ্ছেন, নাউযুবিল্লাহ-এটিও তার একটি। দুই, এটা পাকা জাদু। অত্যন্ত নিপুণভাবে এটি দেখানো হয়েছে। তিন, অন্য সব জাদু যেভাবে অতীত হয়ে গিয়েছে এটিও সেভাবে অতীত হয়ে যাবে, এর দীর্ঘস্থায়ী কোন প্রভাব পড়বে। না। এটা স্বল্পক্ষণস্থায়ী জাদুর প্রতিক্রিয়া, যা আপনাআপনি নিঃশেষ হয়ে যাবে। [বাগভী, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত যাদু।[1]

[1] অর্থাৎ, কুরাইশরা ঈমান আনার পরিবর্তে তা যাদু বলে আখ্যায়িত করে নিজেদের বিমুখতার আচরণ বহাল রাখে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৩ وَ كَذَّبُوۡا وَ اتَّبَعُوۡۤا اَهۡوَآءَهُمۡ وَ كُلُّ اَمۡرٍ مُّسۡتَقِرٌّ ﴿۳﴾
و كذبوا و اتبعوا اهوآءهم و كل امر مستقر ﴿۳﴾

আর তারা অস্বীকার করে এবং নিজ নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ প্রতিটি বিষয় (শেষ সীমায়) স্থির হবে। আল-বায়ান

তারা সত্যকে অস্বীকার করে, আর নিজেদের কামনা বাসনার অনুসরণ করে। প্রতিটি বিষয়েরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে (সময় আসলেই বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে)। তাইসিরুল

তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, আর প্রত্যেক ব্যাপারই যথাসময়ে লক্ষ্যে পৌঁছবে। মুজিবুর রহমান

And they denied and followed their inclinations. But for every matter is a [time of] settlement. Sahih International

৩. আর তারা মিথ্যারোপ করে এবং নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, অথচ প্রতিটি বিষয়ই শেষ লক্ষ্যে পৌছবে।(১)

(১) استقرار এর শাব্দিক অর্থ স্থির হওয়া। অর্থাৎ যারা ন্যায় ও সত্যপন্থী, তারা ন্যায় ও সত্যপন্থা অনুসরণের এবং যারা বাতিল পন্থী, তারা বাতিল পন্থা অনুসরণের ফল একদিন অবশ্যই লাভ করবে। তাছাড়া যে সমস্ত নির্দেশ সংঘটিত হবার তা অবশ্যই ঘটবে এটাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না। যারা আল্লাহর নির্দেশ মানবে তারা জান্নাতে যাওয়া যেমন অবশ্যম্ভাবী তেমনি যারা মিথ্যাচার করবে এবং অমান্য করবে: তাদের শাস্তিও অবধারিত। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) তারা মিথ্যা মনে করে এবং নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, আর প্রত্যেক কাজের জন্য একটি স্থিরীকৃত সময় রয়েছে। [1]

[1] এটা মক্কার কাফেরদের মিথ্যা ভাবার ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করার কথা খন্ডন ও বাতিল করার জন্য বলা হচ্ছে যে, প্রতিটি কাজের একটি শেষ পরিণতি আছে। তাতে সে কাজ ভাল হোক বা মন্দ। অর্থাৎ, পরিশেষে তার একটি ফল বের হবে। ভাল কাজের ফল ভাল হবে এবং মন্দ কাজের ফল মন্দ হবে। সেই ফলের বিকাশ দুনিয়াতেও হতে পারে; যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়। অন্যথা পরকালে তো অবশ্যই হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৪ وَ لَقَدۡ جَآءَهُمۡ مِّنَ الۡاَنۡۢبَآءِ مَا فِیۡهِ مُزۡدَجَرٌ ۙ﴿۴﴾
و لقد جآءهم من الانبآء ما فیه مزدجر ﴿۴﴾

আর তাদের কাছে তো সংবাদসমূহ এসেছে, যাতে রয়েছে উপদেশবাণী, আল-বায়ান

এই লোকেদের কাছে তো (অতীতের জাতিগুলোর) সংবাদ এসেছে যাতে আছে সাবধান বাণী। তাইসিরুল

তাদের নিকট এসেছে সুসংবাদ, যাতে আছে সাবধান বাণী। মুজিবুর রহমান

And there has already come to them of information that in which there is deterrence - Sahih International

৪. আর তাদের কাছে এসেছে সংবাদসমূহ, যাতে আছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) তাদের নিকট এসেছে সংবাদ,[1] যাতে আছে ধমক। [2]

[1] অর্থাৎ, পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের সংবাদ, যখন তারা মিথ্যাজ্ঞান করেছিল।

[2] অর্থাৎ, যাতে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের দিক রয়েছে। কেউ যদি তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিরক ও পাপ থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে সে বাঁচতে পারে। مُزْدَجَرٌ আসলে مُزْتَجَرٌ ছিল। এটা زَجْرٌ থেকে ক্রিয়াবিশেষ্য (মাসদার)।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৫ حِكۡمَۃٌۢ بَالِغَۃٌ فَمَا تُغۡنِ النُّذُرُ ۙ﴿۵﴾
حكمۃ بالغۃ فما تغن النذر ﴿۵﴾

পরিপূর্ণ হিকমাত। তবে সতর্কবাণী তাদের কোন উপকারে আসেনি। আল-বায়ান

তা (হল) সুদূর প্রসারী জ্ঞান, কিন্তু সেই সতর্কবাণী কোন কাজে আসেনি। তাইসিরুল

এটা পরিপূর্ণ জ্ঞান, তবে এই সতর্ক বাণী তাদের কোন উপকারে আসেনি। মুজিবুর রহমান

Extensive wisdom - but warning does not avail [them]. Sahih International

৫. এটা পরিপূর্ণ হিকমত, কিন্তু ভীতিপ্ৰদৰ্শন তাদের কোন কাজে লাগেনি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) এটা পরিপূর্ণ জ্ঞানগর্ভ বাণী,[1] তবে এই সতর্কবাণীসমূহ তাদের কোন উপকারে আসেনি। [2]

[1] অর্থাৎ, এমন বাণী, যা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাকারী। অথবা এই কুরআন সম্পূর্ণ বিজ্ঞানময়। তাতে কোন খুঁত বা ত্রুটি নেই। অথবা মহান আল্লাহ যাকে চান, হিদায়াত দেন এবং যাকে চান, পথভ্রষ্ট করেন, তাতেও যে বড় কৌশল নিহিত আছে সে কথা কেবল তিনিই জানেন।

[2] অর্থাৎ, যার জন্য আল্লাহ পাক দুর্ভাগ্য লিখে দিয়েছেন এবং যার অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন নবীদের ভীতিপ্রদর্শন আর কি তার উপকারে আসতে পারে? তার জন্য তো {سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُم} কথাই প্রযোজ্য। নিম্নের আয়াতটিও প্রায় অনুরূপ অর্থেরইঃ {قُلْ فَلِلّٰهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ فَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ} (তুমি বলে দাও! অতঃপর চূড়ান্ত প্রমাণ তো আল্লাহরই। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে পথ প্রদর্শন করতেন। (সূরা আনআম ১৪৯ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৬ فَتَوَلَّ عَنۡهُمۡ ۘ یَوۡمَ یَدۡعُ الدَّاعِ اِلٰی شَیۡءٍ نُّكُرٍ ۙ﴿۶﴾
فتول عنهم یوم یدع الداع الی شیء نكر ﴿۶﴾

অতএব তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, সেদিন আহবানকারী আহবান করবে এক বিভীষিকাময় বিষয়ের দিকে, আল-বায়ান

কাজেই (হে নবী) তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও (আর অপেক্ষা কর সে দিনের) যেদিন এক আহবানকারী (তাদেরকে) আহবান করবে এক ভয়াবহ বিষয়ের দিকে। তাইসিরুল

অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। যেদিন আহবানকারী আহবান করবে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে। মুজিবুর রহমান

So leave them, [O Muhammad]. The Day the Caller calls to something forbidding, Sahih International

৬. অতএব, আপনি তাদের উপেক্ষা করুন। (স্মরণ করুন) যেদিন আহ্বানকারী আহবান করবে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। (সেদিনকে স্মরণ কর,) যেদিন আহবানকারী (ইস্রাফীল) আহবান করবে এক অপ্রিয় বিষয়ের দিকে।[1]

[1] يَوْمَ এর পূর্বে اُذْكُرْ ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, স্মরণ কর সেই দিনকে, যেদিন---। نُكُرٌ (অপ্রিয়)এর অর্থ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ। এ থেকে হাশর প্রান্তরের ও হিসাবের ময়দানের ভয়াবহতা এবং পরীক্ষাকে বুঝানো হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৭ خُشَّعًا اَبۡصَارُهُمۡ یَخۡرُجُوۡنَ مِنَ الۡاَجۡدَاثِ كَاَنَّهُمۡ جَرَادٌ مُّنۡتَشِرٌ ۙ﴿۷﴾
خشعا ابصارهم یخرجون من الاجداث كانهم جراد منتشر ﴿۷﴾

তারা তাদের দৃষ্টি অবনত অবস্থায় কবর থেকে বের হয়ে আসবে। মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল। আল-বায়ান

ভীত-শংকিত চোখে তারা তাদের কবর থেকে বের হয়ে আসবে- যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল। তাইসিরুল

অপমানে অবনমিত নেত্রে সেই দিন তারা কাবর হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। মুজিবুর রহমান

Their eyes humbled, they will emerge from the graves as if they were locusts spreading, Sahih International

৭. অপমানে অবনমিত নেত্ৰে।(১) সেদিন তারা কবর হতে বের হবে, মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল,

(১) অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি অবনতে থাকবে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. ভীতি ও আতঙ্ক তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। দুই. তাদের মধ্যে লজ্জা ও অপমানবোধ জাগ্রত হবে এবং চেহারায় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। তিন. তারা হতবুদ্ধি হয়ে তাদের চোখের সামনে বিদ্যমান সে ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে থাকবে। তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার হাঁশও তাদের থাকবে না। [দেখুন: কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) অপমানে অবনমিত নেত্রে কবর হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। [1]

[1] অর্থাৎ কবর থেকে বের হয়ে তারা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং হিসাবের মাঠের দিকে অতি দ্রুততার সাথে এমনভাবে দৌড়বে যে, যেন তারা সেই পঙ্গপালের দল, যা কখনো কখনো শূন্যে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় উড়তে দেখা যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৮ مُّهۡطِعِیۡنَ اِلَی الدَّاعِ ؕ یَقُوۡلُ الۡكٰفِرُوۡنَ هٰذَا یَوۡمٌ عَسِرٌ ﴿۸﴾
مهطعین الی الداع یقول الكفرون هذا یوم عسر ﴿۸﴾

তারা আহবানকারীর দিকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছুটে আসবে। কাফিররা বলবে, ‘এটি বড়ই কঠিন দিন’। আল-বায়ান

ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে। কাফিররা বলবে- ‘‘কঠিন এ দিন’’। তাইসিরুল

তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহবল হয়ে। কাফিরেরা বলবেঃ কঠিন এই দিন। মুজিবুর রহমান

Racing ahead toward the Caller. The disbelievers will say, "This is a difficult Day." Sahih International

৮. তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহ্বল হয়ে।(১) কাফিররা বলবে, বড়ই কঠিন এ দিন।

(১) مهطع এর শাব্দিক অর্থ মাথা তোলা, আরেক অর্থ, দ্রুতগতিতে ছুটা। আয়াতের অর্থ এই যে, আহবানকারীর প্রতি তাকিয়ে হাশরের ময়দানের দিকে দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকবে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহ্বল হয়ে।[1] অবিশ্বাসীরা বলবে, ‘এ তো কঠিন দিন।’

[1] مُهْطِعِيْنَ অর্থ  مُسْرِعِيْنَ দৌড়াবে, পিছনে থাকবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:৯ كَذَّبَتۡ قَبۡلَهُمۡ قَوۡمُ نُوۡحٍ فَكَذَّبُوۡا عَبۡدَنَا وَ قَالُوۡا مَجۡنُوۡنٌ وَّ ازۡدُجِرَ ﴿۹﴾
كذبت قبلهم قوم نوح فكذبوا عبدنا و قالوا مجنون و ازدجر ﴿۹﴾

তাদের পূর্বে নূহের কওমও অস্বীকার করেছিল। তারা আমার বান্দাকে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, ‘পাগল’। আর তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। আল-বায়ান

তাদের আগে নূহের জাতিও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা আমার বান্দাহকে অস্বীকার করেছিল আর বলেছিল- ‘‘একটা পাগল’’; আর তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল। তাইসিরুল

এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যা আরোপ করেছিল আমার বান্দার প্রতি এবং বলেছিলঃ এতো এক পাগল। আর তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। মুজিবুর রহমান

The people of Noah denied before them, and they denied Our servant and said, "A madman," and he was repelled. Sahih International

৯. এদের আগে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যারোপ করেছিল— সুতরাং তারা আমাদের বান্দার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল আর বলেছিল, ‘পাগল’, আর তাকে ভীতি প্ৰদৰ্শন করা হয়েছিল।(১)

(১) وَازْدُجِرَ শব্দটির অর্থ, হুমকি প্রদর্শন করা হল। উদ্দেশ্য এই যে, তারা নূহ আলাইহিস সালাম-কে পাগলও বলল এবং তাকে হুমকি প্রদর্শন করে রেসালতের কর্তব্য পালন থেকে বিরতও রাখতে চাইল। [ফাতহুল কাদীর] অন্য এক আয়াতে আছে যে, তারা নূহ আলাইহিস সালাম-কে হুমকি প্রদর্শন করে বললঃ যদি আপনি প্রচার ও দাওয়াতের কাজ থেকে বিরত না হন, তবে আমরা আপনাকে প্রস্তর বর্ষণ করে মেরে ফেলব। [সূরা আস-শু'আরা: ১১৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যা মনে করেছিল; তারা মিথ্যাবাদী মনে করেছিল আমার দাসকে এবং বলেছিল, ‘এ তো এক পাগল।’ আর তাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। [1]

[1] وَازْدُجِرَ এর প্রকৃতরূপ হল وَازْتُجِرَ অর্থাৎ, নূহ (আঃ)-এর জাতি নূহ (আঃ)-কে শুধু মিথ্যাবাদীই ভাবেনি, বরং তারা তাঁকে ভয় দেখিয়েছিল, ধমক দিয়েছিল এবং হুমকিও দেখিয়েছিল। যেমন অন্যত্র বলেন, {لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَا نُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ} হে নূহ! তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে তোমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হবে। (সূরা শুআরা ১১৬ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪:১০ فَدَعَا رَبَّهٗۤ اَنِّیۡ مَغۡلُوۡبٌ فَانۡتَصِرۡ ﴿۱۰﴾
فدعا ربهٗ انی مغلوب فانتصر ﴿۱۰﴾

অতঃপর সে তার রবকে আহবান করল যে, ‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। আল-বায়ান

তখন সে তার প্রতিপালককে ডেকেছিল- ‘‘আমি পরাস্ত হয়েছি, কাজেই তুমি এর প্রতিবিধান কর।’’ তাইসিরুল

তখন সে তার রাব্বকে আহবান করে বলেছিলঃ আমিতো অসহায়; অতএব তুমি আমার প্রতিবিধান কর। মুজিবুর রহমান

So he invoked his Lord, "Indeed, I am overpowered, so help." Sahih International

১০. তখন তিনি তাঁর রবকে আহবান করে বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি অসহায়, অতএব আপনি প্ৰতিবিধান করুন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) তখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, ‘আমি তো অসহায়, অতএব তুমি আমার প্রতিশোধ নাও।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »