আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদেরকে গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তার নিআমতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও। আল-বায়ান
আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাত্থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, পাহাড়-পর্বতে তোমাদের আত্মগোপনের জায়গা বানিয়েছেন। তিনি তোমাদের জন্য পোশাক দিয়েছেন যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে। আর দিয়েছেন এমন পোশাক যা তোমাদেরকে সংঘাতের সময় রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের জন্য তাঁর নি‘মাতসমূহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ কর। তাইসিরুল
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে; এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। মুজিবুর রহমান
And Allah has made for you, from that which He has created, shadows and has made for you from the mountains, shelters and has made for you garments which protect you from the heat and garments which protect you from your [enemy in] battle. Thus does He complete His favor upon you that you might submit [to Him]. Sahih International
৮১. আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে(১) তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে(২) এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন(৩) যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
(১) এ আয়াতে আরও কিছু নেয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে তাঁবুবাসীদের বর্ণনা চলে গেছে। কিন্তু এমনও রয়েছে যাদের কোন তাবু নেই। তাদের পাকা ঘরের ব্যবস্থাও নেই, যার ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারে, দারিদ্রতা কিংবা অন্য কোন কারণে। তখন তাকে কোন গাছ বা দেয়াল অথবা আকাশের মেঘের ছায়ায় বা অনুরূপ জানিয়ে বলছেন যে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন।” কাতাদা বলেন, এর অর্থ গাছ। [ইবন কাসীর]
তবে পূর্বে উল্লেখিত সবগুলোর ছায়াই এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] তারপর মুসাফিরকে যেহেতু কখনও কখনও এমন কোন কিছুর আশ্রয় নিতে হয়, যেখানে সে অবস্থান করবে, আবার তার কাছে এমন কিছুও থাকতে হয় যা দ্বারা সে প্রচণ্ড তাপ ও খরা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ বলেন, “আর তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন”। [ফাতহুল কাদীর] পাহাড়ে তারা কিল্লা ও দূর্গ বানায় [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে সেখানে তাদের জন্য রয়েছে গিরিগুহাসমূহ যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। বিপদাপদ ও লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] আর তিনি “তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য এমন কিছু যা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। যেমন বর্ম ও লোহার অন্যান্য যুদ্ধের কাপড়। [ইবন কাসীর]
(২) ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাবার কথা না বলার কারণ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ সূরার শুরুতে (لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ) বলে পোষাকের সাহায্যে শীত থেকে আত্মরক্ষা এবং উত্তাপ হাসিল করার কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল। তাই এখানে শুধু উত্তাপ প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে। অথবা একটির কথা বলায় অপরটি এমনিতেই এসে যাবে এজন্য ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অথবা, কুরআনুল কারীম আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। সর্বপ্রথম এতে আরবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এতে আরবদের অভ্যাস ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বক্তব্য রাখা হয়েছে। আরব হলো গ্রীষ্মপ্রদান দেশ। সেখানে বরফ জমা ও শীতের কল্পনা করা কঠিন। তাই শুধু গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
কাতাদাহ বলেন, এ সূরাকে সূরাতুন নি’আম বা নেয়ামতের সূরা বলা হয়। আতা আল-খুরাসানী বলেন, কুরআন আরবদের জ্ঞান অনুসারে নাযিল হয়েছে। তুমি কি দেখনা আল্লাহ তা'আলার বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন” অথচ সমতল ভূমিতে আরও বড় ও বেশী ব্যবস্থাপনা আল্লাহ করে রেখেছেন কিন্তু সেটা উল্লেখ করেন নি। কেননা, তারা ছিল পাহাড়ী জাতি। অনুরূপভাবে তুমি দেখ না আল্লাহর বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর (ব্যবস্থা করেছেন) তাদের পশম, লোম ও চুল থেকে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ” অথচ এর বাইরে আরও যে সমস্ত সামগ্রী তিনি মানুষের জন্য রেখেছেন তা অনেক বেশী কিন্তু তারা ছিল মেষপালক, পশমের বাড়িতে অবস্থানকারী গোষ্ঠী।
তদ্রুপ তুমি কি দেখ না আল্লাহর বাণীর প্রতি, যেখানে তিনি বলেছেন, “আকাশে অবস্থিত মেঘের পাহাড়ের মধ্যস্থিত শিলাস্তুপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা।” [সূরা আন-নূর: ৪৩] কারণ, তারা এটা নিয়ে আশ্চর্যবোধ করে। অথচ আল্লাহ যে বরফ নাযিল করেন তা আরও বড় ব্যাপারে ও অধিকহারেই। কিন্তু তারা সেটা জানত না। সেরকমই তুমি দেখবে আল্লাহর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করলে, যেখানে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে” অথচ ঠাণ্ডার ব্যাপারে তার ব্যবস্থাপনা আরও বড় ও বেশী। কিন্তু তারা যেহেতু গরম এলাকার লোক, তাই তাদের কাছে গরমটাই উল্লেখ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]
(৩) নিয়ামত পূর্ণ বা সম্পূর্ণ করার মানে হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি সম্পূর্ণ তার রহমতের কারণে এখানে সেখানে মানুষের উপর তার নেয়ামত দিয়েই যাচ্ছেন। এভাবে তিনি তার দয়া ও অনুগ্রহে দুনিয়া ও আখেরাতে বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করবেন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮১) আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন[1] এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; যা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে।[2] এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
[1] অর্থাৎ, গাছ সৃষ্টি করেছেন; যার থেকে ছায়া পাওয়া যায়।
[2] অর্থাৎ, উল ও সুতোর পোশাক যা সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয় এবং লোহার বর্ম, শিরস্ত্রাণ; যা যুদ্ধে পরা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসুতরাং যদি তারা পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করে, তবে তোমার দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। আল-বায়ান
এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে (জোরপূর্বক তাদেরকে সঠিক পথে আনা তোমার দায়িত্ব নয়) তোমার দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া। তাইসিরুল
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমার কর্তব্যতো শুধু স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া। মুজিবুর রহমান
But if they turn away, [O Muhammad] - then only upon you is [responsibility for] clear notification. Sahih International
৮২. অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনার কর্তব্য তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌছে দেয়া
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮২) অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমার কর্তব্য তো শুধু স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা আল্লাহর নিআমত চিনে, তারপরও তারা তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই কাফির। আল-বায়ান
তারা আল্লাহর নি‘মাতকে চিনতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেগুলো অগ্রাহ্য করে, তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ। তাইসিরুল
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির। মুজিবুর রহমান
They recognize the favor of Allah; then they deny it. And most of them are disbelievers. Sahih International
৮৩. তারা আল্লাহর নি'আমত চিনতে পারে; তারপরও সেগুলো তারা অস্বীকার করে(১) এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।(২)
(১) মক্কার কাফেররা একথা অস্বীকার করতো না যে, এ সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহ তাদের প্রতি করেছেন। কিন্তু তাদের আকীদা ছিল, তাদের বুযর্গ ও দেবতাদের হস্তক্ষেপের ফলে তাদের প্রতি এসব অনুগ্রহ করা হয়েছে। আর একারণেই তারা এসব অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সময় ঐসব বুযর্গ ও দেবতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো বরং তাদের প্রতি কিছুটা বেশী করেই প্রকাশ করতো। একাজটিকেই আল্লাহ নেয়ামতর অস্বীকৃতি এবং অকৃতজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই কাফের। এখানে অধিকাংশ বলে সকলকেই বোঝানো হয়েছে। অথবা অধিকাংশ লোক বলে তাদের মধ্যকার বয়স্ক লোকদের বোঝানো হয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে শিশু সন্তানরাও রয়েছে। অথবা এর অর্থ, তাদের অধিকাংশই সাধারণ লোক, তারা তাদের বিবেক খরচ করে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে গবেষণা করতে শিখেনি। তারা যদি সত্যিকারভাবে নেয়ামতসমূহ উপলব্ধি করতে পারত তাহলে বুঝতে পারত যে, যিনি নেয়ামত দিয়েছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত অন্য কারও নয়। ফলে তারা নেয়ামতের শুকরিয়া না করে কাফির হয়েছে। আর বাকী মুশরিকরা যারা নেতৃত্বে আছে তারা জেনে-বুঝে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করছে। [ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৩) তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে নেয়, অতঃপর তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।[1]
[1] অর্থাৎ, তারা এ কথা জানে ও বুঝে যে, এই সকল নিয়ামতের সৃষ্টিকর্তা ও তা ব্যবহারযোগ্য করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ, তবুও তারা তাঁকে অস্বীকার করে আর অধিকাংশ অকৃতজ্ঞতা করে, অর্থাৎ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে সাক্ষী উত্থিত করব। তারপর যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে (ওযর পেশের) অনুমতি দেয়া হবে না এবং (আল্লাহকে) সন্তুষ্ট করতেও তাদেরকে বলা হবে না। আল-বায়ান
(সেদিন কী অবস্থা হবে) যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব আর কাফিরদেরকে (কোন অযুহাত পেশ করার) অনুমতি দেয়া হবে না, আর ক্ষমা প্রার্থনা করারও সুযোগ দেয়া হবে না। তাইসিরুল
যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেয়া হবেনা এবং তাদেরকে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবেনা। মুজিবুর রহমান
And [mention] the Day when We will resurrect from every nation a witness. Then it will not be permitted to the disbelievers [to apologize or make excuses], nor will they be asked to appease [Allah]. Sahih International
৮৪. আর যেদিন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব(১) তারপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে না ওযর পেশের অনুমতি দেয়া হবে(২), আর না তাদেরকে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে।
(১) অর্থাৎ সেই উম্মতের নবী। [ইবন কাসীর] তিনি তাদের পক্ষে ঈমান ও সত্যায়ণের সাক্ষী হবেন। আর তাদের বিপক্ষে কুফরি ও মিথ্যারোপের সাক্ষী হবেন। [ফাতহুল কাদীর] তিনি সাক্ষ্য দিবেন যে, তিনি তাদেরকে তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাদেরকে শির্ক ও মুশরিকী চিন্তা-ভাবনা, ভ্রষ্টাচার ও কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং কিয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করার ব্যাপারে সজাগ করে দিয়েছিলেন। তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তিনি তাদের কাছে সত্যের বাণী পৌছে দিয়েছিলেন।
(২) কেননা তারা নিজেরাও জানে যে, তারা যে সমস্ত ওযর আপত্তি পেশ করবে সবই বাতিল, অসার ও মিথ্যা। অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা সেটা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা এমন এক দিন যেদিন না তারা কথা বলবে, আর না তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে ওযর পেশ করার।” [সূরা আল-মুরসালাত ৩৫–৩৬] [ইবন কাসীর
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৪) যেদিন আমি প্রত্যেক জাতি হতে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব।[1] অতঃপর সেদিন অবিশ্বাসীদেরকে (ওযর পেশ করার) অনুমতি দেওয়া হবে না এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও দেওয়া হবে না।
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক নবী তাঁর জাতির জন্য সাক্ষ্য দেবেন যে, তিনি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করেছিল। ঐ সকল কাফেরদেরকে অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ তাদের নিকট কোন অজুহাতই থাকবে না। আর না তাদেরকে প্রত্যাবর্তন বা অসন্তোষ দূর করার সময় দেওয়া হবে। কারণ তার প্রয়োজন তখন হয়, যখন কাউকে সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকে। لاَ يُستَعتَبُون এর অন্য এক অর্থ হল, তাদেরকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার কোন সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ সে সুযোগ তাদের পৃথিবীতে দেওয়া হয়েছিল; যা ছিল কর্মস্থল। পরকাল কর্মস্থল নয়; বরং প্রতিদান দেওয়ার দিন। সেখানে মানুষ পৃথিবীতে যা করেছে, তার প্রতিদান পাবে। সেখানে কারো কিছু আমল করার সুযোগ থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা যুলম করেছে, তারা যখন আযাব দেখবে, তখন তাদের উপর থেকে তা শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। আল-বায়ান
সীমালঙ্ঘনকারীরা যখন ‘আযাব প্রত্যক্ষ করবে তাদের থেকে তখন তা কমানো হবে না, আর তাদেরকে সময়-সুযোগও দেয়া হবে না। তাইসিরুল
যখন যালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তাদের শাস্তি লঘু করা হবেনা এবং তাদেরকে কোন বিরাম দেয়া হবেনা। মুজিবুর রহমান
And when those who wronged see the punishment, it will not be lightened for them, nor will they be reprieved. Sahih International
৮৫. আর যারা যুলুম করেছে, তারা যখন শাস্তি দেখবে তখন তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না(১) এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না।
(১) আয়াতের অর্থ, যখন মুশরিকরা আযাব পাবে, তখন তা তাদের থেকে সামান্য সময়ের জন্যও বন্ধ করা হবে না। আর তাদের কাছে সে আযাব পৌছতে দেরীও হবে না। বরং তাদেরকে দ্রুত সেটা গ্রাস করবে। হাশরের মাঠ থেকে পাকড়াও করে হিসাব বাদেই জাহান্নামে নিয়ে যাবে। [ইবন কাসীর] যেমন হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের মাঠে জাহান্নামকে এমতাবস্থায় নিয়ে আসা হবে যে, এর সত্তর হাজার লাগাম থাকবে, প্রত্যেক লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। [মুসলিম: ২৮৪২]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তখন জাহান্নাম থেকে এমন কিছু ঘাড় বের হবে যেগুলো সমস্ত সৃষ্টির উপর থেকে সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে। সেগুলো বলতে থাকবে, আমার উপর এমন প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারী, দুর্দান্ত প্রতাপশীলের ভার ন্যস্ত হয়েছে যে আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ সাব্যস্ত করবে।’ [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৩৬] তারপর জাহান্নাম তাদেরকে ঝাপটে ধরবে এবং হাশরের মাঠের অবস্থান থেকে খুঁজে খুঁজে নিবে যেমন কোন পাখি কোন দানাকে খুঁজে নেয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “দূর থেকে আগুন যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে এর ক্রুদ্ধ গর্জন ও হুঙ্কার। এবং যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় সেটার কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা সেখানে ধ্বংস কামনা করবে। বলা হবে, আজ তোমরা এক ধ্বংসকে ডেকো না, বরং বহু ধ্বংসকে ডাক।” [সূরা আল-ফুরকান: ১২–১৪] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৫) যখন সীমালংঘনকারীরা তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন ঢিল দেওয়াও হবে না। [1]
[1] শাস্তি লঘু বা কম না করার অর্থ, মাঝে কোন বিরতি দেওয়া হবে না; বরং অবিরাম শাস্তি হতে থাকবে। যেমন তাদেরকে কোন ঢিল বা অবকাশও দেওয়া হবে না; বরং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ লাগাম দিয়ে ধরে লোহার শিকলে বেঁধে জাহান্নামে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হবে। অথবা তওবা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ পরকাল কর্মস্থল নয়; প্রতিদান দিবস।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা শিরক করেছে, তারা যখন তাদের শরীকদের দেখবে, তখন বলবে, ‘হে আমাদের রব, এরা হল আমাদের শরীক, যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে আহবান করতাম।’ অতঃপর তারা তাদের প্রতি উত্তরে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা মিথ্যাবাদী।’ আল-বায়ান
মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর শারীক বানিয়েছিল তাদেরকে যখন দেখবে তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব্ব! এরাই হল আমাদের শারীক মা‘বূদ তোমাকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আমরা ডাকতাম।’ তখন এ কথাকে তাদের দিকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদের সেই মা‘বূদরা বলবে, ‘তোমরা অবশ্যই মিথ্যেবাদী।’ তাইসিরুল
মুশরিকরা যাদেরকে (আল্লাহর) শরীক করেছিল তাদেরকে দেখে বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! এরাই তারা যাদেরকে আমরা আপনার শরীক করেছিলাম, যাদেরকে আমরা আহবান করতাম আপনার পরিবর্তে; অতঃপর তদুত্তরে তারা বলবেঃ তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। মুজিবুর রহমান
And when those who associated others with Allah see their "partners," they will say," Our Lord, these are our partners [to You] whom we used to invoke besides You." But they will throw at them the statement, "Indeed, you are liars." Sahih International
৮৬. আর যারা শির্ক করেছে, তারা যখন তাদের শরীকদেরকে দেখবে তখন বলবে, হে আমাদের রব! এরাই তারা যাদেরকে আমরা আপনার শরীক করেছিলাম, যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে ডাকতাম; তখন শরীকরা এ কথা মুশরিকদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলবে, নিশ্চয় তোমরা মিথ্যাবাদী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৬) অংশীবাদীরা যাদেরকে আল্লাহর অংশী করেছিল, তাদেরকে যখন দেখবে তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদের অংশী, যাদেরকে আমরা তোমার পরিবর্তে আহবান করতাম।’ অতঃপর প্রত্যুত্তরে তারা তাদেরকে বলবে, ‘তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ [1]
[1] আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতকারীরা তো নিজেদের এই দাবিতে মিথ্যাবাদী হবে না, কিংবা যাদেরকে তারা আল্লাহর শরীক করত, তারা বলবে যে, এরা মিথ্যাবাদী। অথবা এখানে তাদের শিরক করার কথা খন্ডন করা হয়েছে। অর্থাৎ, আমাদেরকে আল্লাহর শরীক করার ব্যাপারে এরা মিথ্যাবাদী; আল্লাহর শরীক কি কেউ হতে পারে? অথবা এই কারণে তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলবে যে, তারা তাদের শিরক, ইবাদত ও পূজা সম্পর্কে অবগতই ছিল না। যেমন কুরআন কারীম এ কথাটিকে বহু জায়গায় উল্লেখ করেছে। যেমন, {فَكَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِن كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِينَ} অর্থাৎ, আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষীর জন্য যথেষ্ট যে, আমরা তোমাদের ইবাদত সম্বন্ধে অবগত ছিলাম না। (সূরা ইউনুস ২৯) আরো দেখুনঃ সূরা আহক্বাফ ৫-৬, সূরা মারয়্যাম ৮১-৮২, সূরা আনকাবূত ২৫, সূরা কাহ্ফ ৫২নং ইত্যাদি আয়াত। এর একটি অর্থ এও হতে পারে যে, আমরা তোমাদেরকে আমাদের ইবাদত করতে কখনও বলিনি। সেই জন্য তোমরাই মিথ্যাবাদী। আল্লাহর সাথে কৃত উক্ত শরীকরা যদি পাথর বা গাছপালা হয়, তাহলে মহান আল্লাহ তাদের বাকশক্তি দান করবেন। আর জীন-শয়তান হলে তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর যদি শরীক আল্লাহর নেক বান্দা হয়ে থাকেন, যেমন বহু নেক, পরহেযগার ও বুযুর্গ আল্লাহর ওলীদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকা হয়, তাঁদের নামে নযর মানত করা হয়, তাঁদের কবরে গিয়ে এমন তা’যীম করা হয়, যেমন ভয় ও আশার সাথে কোন দেবদেবীর করা হয়, মহান আল্লাহ তাঁদেরকে হাশরের মাঠে নির্দোষ ঘোষণা করবেন। আর যারা তাঁদের ইবাদত করত, তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেওয়া হবে। যেমন ঈসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহর প্রশ্নোত্তর সূরা মায়েদার শেষের দিকে (১১৬-১১৮নং আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসেদিন তারা আল্লাহর প্রতি আনুগহ্য পেশ করবে এবং তারা যে মিথ্যা রটাত, তা উধাও হয়ে যাবে। আল-বায়ান
সেদিন তারা আল্লাহর নিকট খোলাখুলি আত্মসমর্পণ করবে, আর তারা যে সব মিথ্যে উদ্ভাবন করেছিল তা তাদের নিকট হতে হারিয়ে যাবে। তাইসিরুল
সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের জন্য নিষ্ফল হবে। মুজিবুর রহমান
And they will impart to Allah that Day [their] submission, and lost from them is what they used to invent. Sahih International
৮৭. সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে(১) এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে।(২)
(১) কাতাদা ও ইকরিমা বলেন, সেদিন তারা সবাই আনুগত্য করবে ও সবকথা মেনে নিবে। তখন সবাই শ্রোতা ও আনুগত্যকারী হয়ে যাবে। [ইবন কাসীর] তারা যে সেদিন কত বেশী শুনবে আর কত বেশী দেখবে! সেটা আশ্চর্যের বিষয়। [ইবন কাসীর] আল্লাহ আরও বলেন, “আর আপনি যদি দেখতেন। যখন অপরাধীরা তাদের রবের নিকট অবনত মস্তকে বলবে, হে আমাদের রব! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফেরত পাঠান, আমরা সৎকাজ করব, নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।” [আস-সাজদাহঃ ১২] আরও বলেন, “চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারকের কাছে সবাই হবে নিম্নমুখী।” [ত্বা-হাঃ ১১১]
(২) অর্থাৎ তা সবই মিথ্যা প্রমাণিত হবে। দুনিয়ায় তারা যেসব নির্ভর বানিয়ে নিয়েছিল এবং তাদের ওপর ভরসা করতো, সেসব অদৃশ্য হয়ে যাবে। কোন অভিযোগের প্রতিকারকারীকে সেখানে অভিযোগের প্রতিকার করার জন্য পাবে না। কোন সংকট নিরসনকারীকে তাদের সংকট নিরসন করার জন্য সেখানে পাওয়া যাবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৭) সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে যাবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা দিয়েছে, আমি তাদেরকে আযাবের উপর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ তারা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত। আল-বায়ান
যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব, কারণ তারা ফাসাদ সৃষ্টি করত। তাইসিরুল
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বাধা দিয়েছে, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব। মুজিবুর রহমান
Those who disbelieved and averted [others] from the way of Allah - We will increase them in punishment over [their] punishment for what corruption they were causing. Sahih International
৮৮. যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিয়েছে, আমরা তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব(১); কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।
(১) অর্থাৎ একটা আযাব হবে কুফরী করার জন্য এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়ার জন্য হবে আর একটা আযাব। এ শাস্তির ধরন সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সেগুলো হবে এমন বিচ্ছু-সাপ, যার আক্রমনাত্মক দাঁতগুলো লম্বা খেজুর গাছের মত। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৫৫–৩৫৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৮) আমি অবিশ্বাসীদের ও আল্লাহর পথে বাধাদানকারীদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব;[1] কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।
[1] যেমন জান্নাতে জান্নাতবাসীদের মর্যাদা ভিন্ন ভিন্ন হবে, অনুরূপ জাহান্নামে কাফেরদের আযাবও বিভিন্ন ধরনের হবে। যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার সাথে সাথে অপরকে পথভ্রষ্ট করার কারণ হয়েছিল, তাদের আযাব অন্যের তুলনায় কঠিনতর হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উত্থিত করব এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে হাযির করব। আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। আল-বায়ান
সেদিন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব, আর (তোমার) এই লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে (হে মুহাম্মাদ!) আমি তোমাকে আনব। আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমাত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ। তাইসিরুল
সেদিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনব সাক্ষী রূপে এদের বিষয়ে; আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলিম) জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথ নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদ স্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি। মুজিবুর রহমান
And [mention] the Day when We will resurrect among every nation a witness over them from themselves. And We will bring you, [O Muhammad], as a witness over your nation. And We have sent down to you the Book as clarification for all things and as guidance and mercy and good tidings for the Muslims. Sahih International
৮৯. আর স্মরণ করুন, যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মতের কাছে, তাদের থেকে তাদেরই বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উত্থিত করব(১) এবং আপনাকে আমরা তাদের উপর সাক্ষীরূপে নিয়ে আসব(২)। আর আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি(৩) প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ(৪), পথনির্দেশ, দয়া ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।
(১) তারা প্রত্যেক উম্মতের নবীগণ। কিয়ামতের দিন তারা তাদের উম্মতের উপর সাক্ষ্য হবেন। তারা সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা উম্মতের কাছে রিসালাত পৌছিয়েছেন, তাদেরকে ঈমানের দিকে আহবান জানিয়েছেন। [কুরতুবী]
(২) এ আয়াতাংশটি সূরা আন-নিসার ৪১ নং আয়াতের সমার্থবোধক। সেখানে এর বিষয়বস্তুর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
(৩) আয়াতের প্রথমাংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাশরের মাঠে সাক্ষ্য বানানোর কথা ঘোষণা করার পর দ্বিতীয়াংশে কুরআন নাযিল করার কথা উল্লেখ করে সম্ভবতঃ এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যিনি আপনাকে কিতাব দিচ্ছেন এবং আপনার উপর তা প্রচার-প্রসার করা ফরয করে দিয়েছেন তিনিই আপনাকে এ ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ ব্যাপারে কুরআনের আরও আয়াত থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। [দেখুনঃ সূরা আল-আরাফঃ ৬, সূরা আল-হিজরঃ ৯২–৯৩, সূরা আল-মায়েদাহঃ ১০৯, সূরা আল-কাসাসঃ ৮৫]
(৪) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কুরআন আমাদেরকে সবকিছুর জ্ঞান বর্ণনা করেছে এবং সবকিছু জানিয়েছে। মুজাহিদ বলেন, হালাল ও হারাম জানিয়েছে। তবে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথাটি বেশী ব্যাপক। কেননা কুরআন প্রতিটি উপকারী জ্ঞানসমৃদ্ধ, যা গত হয়েছে সেটার সংবাদ এবং যা আসবে সেটার জ্ঞান আর প্রতিটি হালাল ও হারাম। তেমনিভাবে মানুষ তাদের দুনিয়া ও দ্বীনের ব্যাপারে তাদের জীবিকা ও পুনরুত্থান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এতে পাবে। অন্তরসমূহের জন্য এতে রয়েছে হেদায়াত এবং মুসলিমদের জন্য এতে রয়েছে রহমত ও সুসংবাদ [ইবন কাসীর] ইমাম আওযায়ী বলেন, আয়াতের অর্থ, আমরা কুরআনকে সুন্নাহ দ্বারা সবকিছুর স্পষ্টব্যাখ্যারূপে নাযিল করেছি। [ইবন কাসীর]
মোটকথা: কুরআন এমন প্রত্যেকটি জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে, যার ওপর হিদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে, যা জানা সঠিক পথে চলার জন্য একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বস্তুত কুরআনুল কারীমে সব বিষয়েরই মূলনীতি বিদ্যমান রয়েছে। যেসব মূলনীতির আলোকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস মাসআলা বর্ণনা করেছেন। কুরআনেই সেটা করতে রাসূলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বলেছেন, জেনে রাখ! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং কুরআনের অনুরূপও দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৯) সেদিন প্রত্যেক জাতিতে তাদেরই মধ্য হতে তাদেরই বিপক্ষে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব এবং ওদের বিষয়ে তোমাকে আমি আনব সাক্ষীরূপে।[1] আর আমি তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ[2] এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের জন্য, পথনির্দেশ, করুণা ও সুসংবাদ স্বরূপ।
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক নবী তাঁর জাতির জন্য সাক্ষ্য দেবে এবং নবী (সাঃ) ও তাঁর উম্মত অন্যান্য সকল নবীদের ব্যাপারে সাক্ষী দেবেন যে, তাঁরা সত্যবাদী; তাঁরা অবশ্যই তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। (বুখারীঃ তফসীর সূরা নিসা)
[2] ‘গ্রন্থ’ বলতে আল্লাহর কিতাব ও নবী (সাঃ)-এর ব্যাখ্যা অর্থাৎ হাদীসকে বুঝানো হয়েছে। মহানবী (সাঃ) নিজ হাদীসকেও ‘আল্লাহর কিতাব’ বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন এক চাকরের প্রভু-পত্নীর সাথে ব্যভিচারের ঘটনা ইত্যাদিতে উল্লিখিত। (দেখুনঃ বুখারীঃ কিতাবুল মুহারেবীন, কিতাবুস সালাত প্রভৃতি) আর ‘প্রত্যেক বিষয়’ বলতে অতীত ও ভবিষ্যতের এমন সংবাদ যার জ্ঞান রাখা উপকারী ও আব্যশিক। অনুরূপ হালাল হারামের বিস্তারিত আলোচনা এবং দ্বীন ও দুনিয়ার এমন সব কথা বা ইহকাল ও পরকালের এমন সব ব্যাপার যা মানুষের জানা প্রয়োজন; কুরআন ও হাদীস উভয়েই সে সব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। আল-বায়ান
আল্লাহ ন্যায়-বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দেরকে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন, আর তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অপকর্ম আর বিদ্রোহ থেকে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয় স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লংঘন করতে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। মুজিবুর রহমান
Indeed, Allah orders justice and good conduct and giving to relatives and forbids immorality and bad conduct and oppression. He admonishes you that perhaps you will be reminded. Sahih International
৯০. নিশ্চয় আল্লাহ্ আদল (ন্যায়পরায়ণতা)(১), ইহসান (সদাচরণ)(২), ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের(৩) নির্দেশ দেন(৪) এবং তিনি অশ্লীলতা,(৫) অসৎকাজ(৬) ও সীমালজ্ঞান(৭) থেকে নিষেধ করেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
(১) এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা পূর্ববর্তী আয়াতে জানিয়েছিলেন যে, কুরআনে সবকিছুর বর্ণনাই স্থান পেয়েছে, সে কথার সত্যায়ণ স্বরূপ এ আয়াতে এমন কিছু আলোচনা করছেন যা সমস্ত বিধি-বিধানের মূল ও প্রাণ। [ফাতহুল কাদীর] তন্মধ্যে প্রথম নির্দেশ হচ্ছে, তিনি আদলের নির্দেশ দিচ্ছেন। মূলত: عدل শব্দের আসল ও আভিধানিক অর্থ সমান করা। এ অর্থের দিক দিয়েই স্বল্পতা ও বাহুল্যের মাঝামাঝি সমতাকেও عدل বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাসসির এ অর্থের সাথে সম্বন্ধ রেখেই আলোচ্য আয়াতে বাইরে ও ভেতরে সমান হওয়া দ্বারা عدل শব্দের তাফসীর করেছেনে। ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। কারও মতে আদল হচ্ছে, ফরয। কারও নিকট, আদল হচ্ছে, ইনসাফ। তবে বাস্তব কথা এই যে, عدل শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তার আভিধানিক অর্থই গ্রহণ করা। যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। কেননা কোন কিছুতে বাড়াবাড়ি যেমন খারাপ তেমনি কোন কিছুতে কমতি করাও খারাপ। [ফাতহুল কাদীর]
(২) আয়াতের দ্বিতীয় নির্দেশ হচ্ছে, ইহসান করা। বস্তুত: الإحسان এর আসল আভিধানিক অর্থ সুন্দর করা। যা ওয়াজিব নয় তা অতিরিক্ত প্রদান করা। যেমন, অতিরিক্ত সাদকা। [ফাতহুল কাদীর] ইমাম কুরতুবী বলেনঃ আলোচ্য আয়াতে এ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই উপরোক্ত উভয় প্রকার অর্থই এতে শামিল রয়েছে। প্রসিদ্ধ 'হাদীসে জিবরীল'-এ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহসানের যে অর্থ বর্ণনা করেছেন, তা হচ্ছে ইবাদাতের ইহসান। এর সারমর্ম এই যে, আল্লাহর ইবাদাত এভাবে করা দরকার, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। যদি এ স্তর অর্জন করতে না পার, তবে এটুকু বিশ্বাস তো প্রত্যেক ইবাদতকারীরই থাকা উচিত যে, আল্লাহ্ তা'আলা তার কাজ দেখছেন। [ফাতহুল কাদীর]
(৩) আয়াতের এ হচ্ছে তৃতীয় আদেশ। আত্মীয়দের দান করা। কি বস্তু দেয়া, এখানে তা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু অন্য এক আয়াতে তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “আত্মীয়কে তার প্রাপ্য প্রদান কর।” [সূরা আল-ইসরাঃ ২৬] বাহ্যতঃ আলোচ্য আয়াতেও তাই বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিতে হবে। অর্থ দিয়ে আর্থিক সেবা করা, দৈহিক সেবা করা, অসুস্থ হলে দেখাশোনা করা, মৌখিক সান্তনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করা ইত্যাদি সবই উপরোক্ত প্রাপ্যের অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা: তাদের যা প্রয়োজন তা প্রদান করা। [ফাতহুল কাদীর] ইহসান শব্দের মধ্যে আত্মীয়ের প্রাপ্য দেয়ার কথাও অন্তর্ভুক্ত ছিল; কিন্তু অধিক গুরুত্ব বোঝাবার জন্য একে পৃথক উল্লেখ করা হয়েছে। এ তিনটি ছিল ইতিবাচক নির্দেশ। [ফাতহুল কাদীর]
(৪) আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তিনটি বিষয়ের আদেশ দিয়েছেনঃ সুবিচার, অনুগ্রহ ও আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে তিন প্রকার কাজ করতে নিষেধ করেছেনঃ অশ্লীলতা, যাবতীয় মন্দ কাজ এবং যুলুম ও উৎপীড়ন। এ আয়াত সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এটি হচ্ছে কুরআনুল কারীমের ব্যাপকতর অর্থবোধক একটি আয়াত। [ইবন কাসীর]
কোন কোন সাহাবী এ আয়াত শ্রবণ করেই মুসলিম হয়েছিলেন। উসমান ইবনে মযউন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ শুরুতে আমি লোকমুখে শুনে ঝোঁকের মাথায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম, আমার অন্তরে ইসলাম বদ্ধমূল ছিল না। একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম, হঠাৎ তার উপর ওহী নাযিলের লক্ষণ প্রকাশ পেল। কতিপয় বিচিত্র অবস্থার পর তিনি বললেনঃ আল্লাহর দূত এসেছিল এবং এই আয়াত আমার প্রতি নাযিল হয়েছে। উসমান ইবনে মযউন বলেনঃ এই ঘটনা দেখে এবং আয়াত শুনে আমার অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল ও অটল হয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত আমার মনে আসন পেতে বসল। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩১৮]
(৫) ওপরের তিনটি সৎকাজের মোকাবিলায় আল্লাহ তিনটি অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, “ফাহশা”। যার অর্থ অশ্লীলতা-নির্লজ্জতা। কথায় হোক বা কাজে। [ফাতহুল কাদীর] প্রকাশ্য মন্দকৰ্ম অথবা কথাকে অশ্লীলতা বলা হয়, যাকে প্রত্যেকেই মন্দ মনে করে। সব রকমের অশালীন, কদর্য ও নির্লজ্জ কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। এমন প্রত্যেকটি খারাপ কাজ যা স্বভাবতই কুৎসিত, নোংরা, ঘৃণ্য ও লজ্জাকর তাকেই বলা হয় অশ্লীল।
যেমন কৃপণতা, ব্যভিচার, উলঙ্গতা, সমকামিতা, মুহররাম আত্মীয়কে বিয়ে করা, চুরি, শরাব পান, ভিক্ষাবৃত্তি, গালাগালি করা, কটু কথা বলা ইত্যাদি। এভাবে সর্বসমক্ষে বেহায়াপনা ও খারাপ কাজ করা এবং খারাপ কাজকে ছড়িয়ে দেয়াও অশ্লীলতা-নির্লজ্জতার অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা দোষারোপ, গোপন অপরাধ জন সমক্ষে বলে বেড়ানো, অসৎকাজের প্ররোচক গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র, উলংগ চিত্র, মেয়েদের সাজগোজ করে জনসমক্ষে আসা, নারীপুরুষ প্রকাশ্যে মেলামেশা এবং মঞ্চে মেয়েদের নাচগান করা ও তাদের শারীরিক অংগভংগীর প্রদর্শনী করা ইত্যাদি।
(৬) নিষিদ্ধ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, মুনকার তথা দুস্কৃতি বা অসৎকর্ম। যা এমন কথা অথবা কাজকে বলা হয় যা শরীআত হারাম করেছেন। যাবতীয় গোনাহই এর অন্তর্ভুক্ত। কারও কারও মতে এর অর্থ শির্ক। [ফাতহুল কাদীর]
(৭) নিষিদ্ধ তৃতীয় জিনিসটি হচ্ছে, بغي, এ শব্দের আসল অর্থ সীমালঙ্ঘন করা, [ফাতহুল কাদীর] কারও কারও মতে, যুলুম। কারও কারও মতে, হিংসা-বিদ্বেষ। মোটকথা: এর দ্বারা যুলুম ও উৎপীড়ন বোঝানো হয়েছে। নিজের সীমা অতিক্রম করা এবং অন্যের অধিকার লংঘন করা ও তার ওপর হস্তক্ষেপ করা। তা আল্লাহর হক হোক বা বান্দার হক। মুনকার শব্দের যে অর্থ বর্ণিত হয়েছে, তাতে فحشاء ও بغي ও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু চূড়ান্ত মন্দ হওয়ার কারণে এ কে পৃথক ও আগে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯০) নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন।[1] তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
[1] عدل এর প্রসিদ্ধ অর্থ ন্যায়পরায়ণতা (সুবিচার)। অর্থাৎ, ঘর-পর সকলের ব্যাপারে সুবিচার করা। কারো সাথে শত্রুতা, ঝগড়া, ভালবাসা বা আত্মীয়তার কারণে সুবিচার যেন প্রভাবিত না হয়। এর দ্বিতীয় অর্থ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা এবং কোন ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করা, এমন কি দ্বীনের ব্যাপারেও। কেননা, দ্বীনের মধ্যে إفراط এর পরিণাম সীমা অতিক্রম বা অতিরঞ্জন করা যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে এর বিপরীত تفريط এর অর্থ দ্বীনের মধ্যে অলসতা করা; আর এটিও অপছন্দনীয়।إحسان এর একটি অর্থ সদাচরণ, ক্ষমা ও মাফ করা। দ্বিতীয় অর্থ এহসানি বা অনুগ্রহ করা; ওয়াজিব (প্রাপ্য) অধিকারের চেয়ে বেশি দেওয়া বা ওয়াজেব (কর্তব্য) কাজের অধিক করা। যেমন কোন শ্রমিকের পারিশ্রমিক ঠিক হয়েছে এক শত টাকা, কিন্তু দেওয়ার সময় একশত দশ বা বিশ টাকা দেওয়া। এক শত টাকা দেওয়া এটি ওয়াজেব (প্রাপ্য) অধিকার, আর এটাই সুবিচার, আর দশ বিশ টাকা বেশি দেওয়া এটাই হল এহসান বা অনুগ্রহ। সুবিচার দ্বারা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু সদাচরণ ও অনুগ্রহ প্রদর্শন দ্বারা সমাজে অধিক সৌন্দর্য, সৌহার্দ্য ত্যাগ-তিতিক্ষার স্পৃহা সৃষ্টি হয়। অনুরূপভাবে ফরয কাজ সম্পাদন করার সাথে সাথে নফল কাজে আগ্রহী হওয়া কর্তব্যের চাইতে বেশি আমল। যার দ্বারা আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এহসানের তৃতীয় অর্থঃ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা ও তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা। যার হাদীসে أن تعبد الله كأنك تراه (আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ) বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। إيتاء ذي القربى আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করা, অর্থাৎ, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এটাকেই হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা বলা হয়েছে এবং তার প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুবিচার, সদাচরণ অনুগ্রহের পর এর পৃথকভাবে উল্লেখ জ্ঞাতি-বন্ধন বজায় রাখার গুরুত্বকে আরো অধিকরূপে বাড়িয়ে তোলে। فحشاء অশ্লীল কাজ, আজকাল অশ্লীলতা এত ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, তার নামই সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রগতি ও শিল্পকলা হয়ে গেছে! অথবা চিত্ত-বিনোদন বা মনোরঞ্জনের নামে তাকে বৈধ করে নেওয়া হয়েছে। তবে সুন্দর লেবেল লাগালে কোন জিনিসের আসলত্ব পাল্টে যায় না। অনুরূপ ইসলাম ব্যভিচার ও তার সকল ছিদ্রপথ; নাচ, পর্দাহীনতা, ফ্যাশন-প্রবণতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং অনুরূপ লজ্জাহীনতা প্রদর্শনকে অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছে। তার নাম যত সুন্দরই হোক না কেন; পাশ্চাত্য হতে আমদানীকৃত নোংরামি কোন মতেই বৈধ হতে পারে না। منكر (গর্হিত) প্রত্যেক সেই কাজ, যা শরীয়তে অবৈধ। بغي অর্থ অত্যাচার ও সীমালংঘন করা। একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ও অত্যাচার করা এই দুই পাপ মহান আল্লাহর নিকট এত ঘৃণিত যে, আল্লাহর পক্ষ হতে পরকাল ছাড়া পৃথিবীতেই তার তৎক্ষণাৎ শাস্তির আশংকা থেকে যায়। (ইবনে মাজাহ কিতাবুয যুহদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান