-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. অতঃপর স্ত্রীলোকটি যখন তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল(১) এবং তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল। আর তাদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, তাদের সামনে বের হও। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল তখন তারা তার সৌন্দর্যে অভিভূত হল(২) ও নিজেদের হাত কেটে ফেলল এবং তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা(৩)।
(১) অর্থাৎ আযীয-পত্নী মহিলাদের চক্রান্তের কথা জানতে পারল, তখন তাদেরকে একটি ভোজসভায় ডেকে পাঠাল। এখানে মহিলাদের কানাঘুষাকে আযীয-পত্নী مكر অর্থাৎ চক্রান্ত বলেছে। অথচ, বাহ্যতঃ তারা কোন চক্রান্ত করেনি। কিন্তু যেহেতু তারা গোপনে গোপনে কুৎসা রটনা করত, তাই একে চক্রান্ত বলা হয়েছে। [কুরতুবী] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে চক্রান্ত বলে উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে সমস্ত মহিলারা ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্যের কথা শুনতে পেয়ে তাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। তখন তারা কানযুষা শুরু করে দিল যাতে তাকে দেখতে সমর্থ হয়। এটাই হচ্ছে তাদের চক্রান্ত। [ইবন কাসীর]
(২) মূল শব্দ যা ব্যবহার হয়েছে, তার অর্থ দাঁড়ায়, “তারা তাকে খুব বড় করল”। কিন্তু কিসে তাকে বড় করল? মূলত, তার সৌন্দর্যই তাকে তাদের দৃষ্টিতে বৃহৎ আকারে প্রতিভাত হলো, এজন্য আয়াতের অর্থ করা হয়েছে, তার সৌন্দর্যে তারা অভিভূত হল। এ অর্থের সপক্ষে আয়াতের পরবর্তী বাক্য “এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফিরিশতা’। কারণ ফেরেশতাদের সৌন্দর্য সর্বজনস্বীকৃত। অন্য অর্থ হচ্ছে, তার মর্যাদা তাদের কাছে অনেক গুণ বেড়ে গেল। তারা তাকে উচ্চ মর্যাদাশীল মনে করল। [মুয়াসসার]
(৩) এ আয়াত থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, তাদের মধ্যেও ফিরিশতার উপর বিশ্বাস ছিল। অনুরূপভাবে এ আয়াত থেকে আরও জানতে পারি যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম অত্যন্ত সুন্দর ছিলেন। ইসরা ও মিরাজের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেনঃ “তারপর আমি আচানকভাবে ইউসুফকে দেখতে পেলাম। তাকে সৌন্দর্যের অর্ধেকটাই দেয়া হয়েছে।” [মুসলিমঃ ১৬২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) মহিলাটি যখন তাদের চক্রান্তের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল[1] এবং একটি বৈঠকের আয়োজন করল।[2] তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি দিল এবং তাকে বলল, ‘তাদের সামনে বের হও।’[3] অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তারা তার (রূপ-মাধুর্যে) অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল।[4] তারা বলল, ‘আল্লাহ পবিত্র! এ তো মানুষ নয়। এ তো এক মহিমান্বিত ফিরিশতা!’ [5]
[1] মিসরের মহিলাদের পশ্চাতে সমালোচনা এবং নিন্দা ও ভৎর্সনাকে ‘চক্রান্ত’ বলা হয়েছে। যার ফলে কোন কোন তফসীরবিদ বলেছেন যে, শহরের সেই নারীদের নিকটেও ইউসুফ (আঃ)-এর অপরূপ সৌন্দর্যের সংবাদ পৌঁছে গিয়েছিল এবং তারাও কোনক্রমে সেই সৌন্দর্যের অধিকারী (ইউসুফ)-কে দেখতে চাচ্ছিল। সুতরাং তারা তাদের সেই চক্রান্ত (গুপ্ত কৌশলে) কৃতকার্য হয়ে গেল। যেহেতু আযীয-পত্নী এই কথা প্রমাণ করার জন্য সেই মহিলাদেরকে যিয়াফত করল এবং তাদের ভোজনের ব্যবস্থা করল যে, আমি যার প্রতি আসক্তা হয়ে পড়েছি, সে শুধু একজন দাস বা সাধারণ ব্যক্তি নয়; বরং সে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক এমন অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারী যে, তাকে দেখে মন মুগ্ধ ও প্রাণ লুণ্ঠিত হওয়া কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়।
[2] অর্থাৎ, এমন বসার স্থান নির্দিষ্ট করল, যেখানে হেলান-বালিশ রাখা হয়ে ছিল। যেমন বর্তমানে আরবদের মাঝে এরূপ মজলিস প্রসিদ্ধ আছে, এমনকি হোটেল ও রেস্তরাঁতেও তা রাখা হয়।
[3] অর্থাৎ, ইউসুফ (আঃ)-কে প্রথমে আড়ালে রাখা হয়েছিল। অতঃপর যখন উপস্থিত সব মহিলারা (ফল বা অন্য কিছু কেটে খাওয়ার জন্য) ছুরি হাতে নিল, তখন আযীয-পত্নী (যুলাইখা) ইউসুফ (আঃ)-কে উক্ত মজলিসে আসার আদেশ দিল।
[4] অর্থাৎ, ইউসুফের মনোমুগ্ধকর রূপ দেখে প্রথমতঃ তাঁর মাহাত্ম্য ও মর্যাদার কথা স্বীকার করল এবং দ্বিতীয়তঃ তারা নিজেরা এমন দিশেহারা হয়ে পড়ল যে, (ফল কাটার জায়গায়) নিজ নিজ হাতেই ছুরি চালিয়ে বসল, ফলে তাদের হাত কেটে রক্তাক্ত হয়ে গেল। হাদীসে এসেছে যে, ইউসুফকে (সৃষ্টির) অর্ধেক রূপ দান করা হয়েছিল। (মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়)
[5] এর অর্থ এ নয় যে, ফিরিশতাগণ আকার-আকৃতিতে মানুষ থেকে অধিক সুন্দর। কারণ, ফিরিশতাদেরকে তো মানুষ দেখেইনি। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষ সম্পর্কে নিজেই কুরআন মাজীদে বর্ণনা দিয়েছেন যে, আমি তাদেরকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছি। (সূরা তীন) সেই মহিলাগণ ইউসুফ (আঃ)-কে ‘মানুষ নয়’ এই জন্য বলেছিল যে, তারা তখন যেরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী ব্যক্তিকে দেখেছিল, সেরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী কোন মানুষকে কখনো দেখেনি এবং তারা এই জন্য তাঁকে ফিরিশতা বলেছিল যে, সাধারণতঃ মানুষ মনে করে যে, ফিরিশতাগণ রূপ ও গুণের দিক থেকে এমন হন, যা মানুষ থেকে ঊর্ধ্বে। এ থেকে বুঝা গেল যে, নবীগণের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য ও স্বতন্ত্র গুণাবলীর কারণে তাঁদেরকে মানব-বংশ থেকে বের করে ‘নূরের সৃষ্টি’ বলা সর্বযুগের এমন মানুষদের স্বভাব ছিল, যারা নবুঅত ও তাঁর মর্যাদার ব্যাপারে অজ্ঞ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. সে বলল, এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আর আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে অবশ্যই অবশ্যই কারারুদ্ধ হবে এবং অবশ্যই সে হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(১)
(১) আযীয-পত্নী বললঃ দেখে নাও, এ ঐ ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করতে। বাস্তবিকই আমি তার কাছে নিজেকে সমর্পন করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু সে নিষ্পাপ রয়েছে। ভবিষ্যতে সে আমার আদেশ পালন না করলে অবশ্যই কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্ছিত হবে। কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ আযীয-পত্নী এখানে “কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে” একথা বলে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, সে বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে তার আরো একটি মহা সৌন্দর্য রয়েছে, আর তা হল, আত্মিক পবিত্রতা। যা তোমরা দেখতে পাওনি। [ইবন কাসীর]
আযীয-পত্নী যখন দেখল যে, সমাগত মহিলাদের সামনে তার গোপন ভেদ ফাঁস হয়ে গেছে, তখন সে তাদের সামনেই ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে ভীতি প্রদর্শন করতে লাগল। কোন কোন তাফসীরবিদ বর্ণনা করেছেন যে, তখন আমন্ত্রিত মহিলারা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে বলতে লাগলঃ তুমি আযীযপত্নীর কাছে ঋণী। কাজেই তার ইচ্ছার অবমাননা করা উচিত নয়। পরবর্তী আয়াতের কোন কোন শব্দ দ্বারাও মহিলাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়; যেমন, يَدْعُونَنِي এবং كَيْدَهُنَّ এগুলোতে বহুবচনে কয়েকজনের কথা বলা হয়েছে। [দেখুন: কুরতুবী]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদীস থেকেও আমরা বুঝতে পারি যে, এ আমন্ত্রিত মহিলাগুলো ইউসুফ আলাইহিস সালামকে তার সঙ্কল্প থেকে টলাতে চেষ্টা করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যু শয্যায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাতের ইমামতি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কয়েকজন এ মন্তব্য করল যে, আবু বকর নরমদিল মানুষ। তিনি আপনার জায়গায় দাঁড়ালে কান্না চেপে রাখতে পারবেন না। সুতরাং উমর বা অন্য কাউকে সালাতের ইমামতির জন্য নির্দেশ দেয়া হোক। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার নির্দেশ দিলেন আর তিনবারই তাকে একথা জানানো হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগাম্বিত হয়ে বললেনঃ “তোমরা তো দেখছি ইউসুফের সেসব সঙ্গীনিদের মতই। আবু বকরকে বল যেন মানুষদের নিয়ে সালাতে ইমামতি করে।” [বুখারীঃ ৬৪৬, মুসলিমঃ ৪২০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) সে বলল, ‘এই সে, যার সম্বন্ধে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করেছ।[1] আমি তো তার কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছি; কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে। আমি তাকে যা আদেশ করি, সে যদি তা না করে, তাহলে অবশ্যই সে কারারুদ্ধ হবে এবং লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ [2]
[1] যখন আযীযের স্ত্রী দেখল যে তার ছলনা ও চক্রান্ত সফল ও কৃতকার্য হয়েছে এবং ইউসুফের রূপ দেখে সমালোচক মহিলারা অভিভূত হয়ে পড়েছে, তখন বলতে লাগল যে, তাকে এক ঝলক দেখাতেই তোমাদের এ অবস্থা হয়ে গেল, তাহলে কি এখন তার প্রেম-জালে আবদ্ধ হওয়ার কারণে তোমরা আমার নিন্দা করবে? এ তো সেই তরুণ, যার সম্পর্কে তোমরা আমার নিন্দা করেছ।
[2] সমালোচক মহিলাদেরকে অভিভূত হতে দেখে তার স্পর্ধা আরো বেড়ে গেল এবং লজ্জা-শরমের সমস্ত পর্দা খুলে দিয়ে সে তার অসৎ কামনা আরো একবার প্রকাশ করল। (এবং এবারে অস্বীকার অবস্থায় তাকে হুমকি দেখানো হল।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. ইউসুফ বললেন, হে আমার রব! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।(১)
(১) ইউসুফ আলাইহিস সালাম দেখলেন যে, আযীয-পত্নীর চক্রান্তের জাল ছিন্ন করার বাহ্যিক কোন উপায় নেই। এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তার দরবারে আরয করলেনঃ হে আমার পালনকর্তা! এই মহিলারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করছে, এর চাইতে জেলখানাই আমার অধিক পছন্দনীয়। যদি আপনি আমার থেকে ওদের চক্রান্ত প্রতিহত না করেন, তবে সম্ভবতঃ আমি তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ব এবং নির্বুদ্ধিতার কাজ করে ফেলব। এ থেকে আরো জানা গেল যে, আল্লাহ্ তা'আলার সাহায্য ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তিই গোনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। আরো জানা গেল যে, প্রত্যেক গোনাহর কাজ মূর্খতাবশতঃ হয়ে থাকে। জ্ঞান মানুষকে গোনাহর কাজ থেকে বিরত রাখে। সুতরাং মূর্খতা ও মূর্খ ব্যক্তি নিন্দনীয় [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এই মহিলারা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়। তুমি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না কর, তাহলে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ [1]
[1] ইউসুফ (আঃ) মনে মনে উক্ত দু’আ করেছিলেন। কারণ মুমিনের জন্য দু’আ একটি হাতিয়ার। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হল সেই ব্যক্তি, যাকে একজন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারী কুকর্ম করার জন্য আহবান করে। কিন্তু সে তাকে এই বলে উত্তর দেয় যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’’
(বুখারী ও মুসলিম)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. সুতরাং তার রব তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) অতঃপর তার প্রতিপালক তার আহবানে সাড়া দিলেন এবং তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. তারপর বিভিন্ন নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের মনে হল যে, তাকে অবশ্যই কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করতে হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) নিদর্শনাবলী দেখার পরও তাদের মনে হল যে, তাকে কিছুকালের জন্য কারারুদ্ধ করতেই হবে। [1]
[1] নির্দোষিতা ও পবিত্রতা প্রকাশ হওয়ার পরেও ইউসুফ (আঃ)-কে জেলখানায় পাঠানোতে আযীযের দৃষ্টিতে এই যুক্তি ও কল্যাণ থাকতে পারে যে, তিনি ইউসুফ (আঃ)-কে তাঁর স্ত্রী থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছিলেন, যাতে সে পুনরায় ইউসুফ (আঃ)-কে নিজ প্রেম-জালে ফাঁসানোর চেষ্টা না করতে পারে, যেমন তার ইচ্ছা তাই ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. আর তার সাথে দুই যুবক কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম, আমি মদের জন্য আংগুর নিংড়াচ্ছি, এবং অন্যজন বলল, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম, আমি আমার মাথায় রুটি বহন করছি এবং পাখি তা থেকে খাচ্ছে। আমাদেরকে আপনি এটার তাৎপর্য জানিয়ে দিন, আমরা তো আপনাকে মুহসিনদের অন্তর্ভুক্ত দেখছি।(১)
(১) কারাগারে ইউসুফকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হতো এ থেকে তা আন্দাজ করা যেতে পারে। ওপরে যেসব ঘটনার কথা আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো সামনে রাখলে ব্যাপারটা আর মোটেই বিস্ময়কর মনে হয় না যে, এ কয়েদী দুজন ইউসুফের কাছেই-বা এসে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলো কেন এবং তাঁকে “আমরা আপনাকে মুহসিন হিসেবেই পেয়েছি” বলে সম্মান করলো কেন। জেলখানার ভেতরে বাইরে সবাই জানতো, এ ব্যক্তি কোন অপরাধী নয়, বরং একজন অত্যন্ত সদাচারী পুরুষ। কঠিনতম পরীক্ষায় তিনি নিজের আল্লাহভীতি ও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার প্রমাণ পেশ করেছেন। তিনি রাতে ইবাদত করতেন, খুব কান্নাকাটি করতেন। তার কারণে কারাগারেও মানুষের মধ্যে পবিত্রতা ফিরে আসল। আজ সারাদেশে তাঁর মতো লোক একজনও নেই। এ কারণে শুধু কয়েদীরাই তাঁকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতো না বরং কয়েদখানার পরিচালকবৃন্দ এবং কর্মচারীরাও তাঁর ভক্তদলে শামিল হয়ে গিয়েছিল। [দেখুন, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) তার সাথে দু’জন যুবক কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি (আঙ্গুর) নিঙড়ে মদ তৈরী করছি’ এবং অপরজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি আমার মাথায় রুটি বহন করছি এবং পাখি তা হতে খাচ্ছে। আমাদেরকে আপনি এর তাৎপর্য জানিয়ে দিন, আমরা আপনাকে সৎকর্মপরায়ণ দেখছি।’ [1]
[1] উক্ত দুই যুবক রাজকর্মচারী ছিল। প্রথমজন শারাব পান করানোর কাজ করত এবং দ্বিতীয়জন রুটি তৈরী করত। কোন কারণে উভয়কে জেলখানায় বন্দী করা হয়েছিল। ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর পয়গম্বর ছিলেন। দাওয়াত ও তবলীগের সাথে সাথে ইবাদত ও আচরণ, পরহেযগারী ও সচ্চরিত্রতার দিক থেকে জেলখানার অন্যান্য বন্দীদের থেকে স্বতন্ত্র ছিলেন। এ ছাড়া আল্লাহ তাআলা তাঁকে স্বপ্নের তা’বীর (ব্যাখ্যা) করার বিশেষ জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। উক্ত বন্দীদ্বয় যখন স্বপ্ন দেখল, তখন তারা ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট এল এবং বলল, আমরা আপনাকে সৎকর্মপরায়ণ দেখছি। আপনি আমাদেরকে আমাদের স্বপ্নের তাৎপর্য বলে দিন। কেউ কেউ محسن শব্দটির অর্থ এই বলেছেন যে, আপনি স্বপ্নের ভাল তাৎপর্য বর্ণনা করতে পারেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. ইউসুফ বললেন, তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার আগে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের তাৎপর্য জানিয়ে দেব।(১) আমি যা তোমাদেরকে বলব তা, আমার রব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে বলব। নিশ্চয় আমি বর্জন করেছি সে সম্প্রদায়ের ধর্মমত যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না। আর যারা আখিরাতের সাথে কুফরকারী।
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাহিনীর একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর নিষ্পাপ চরিত্র ও পবিত্রতা দিবালোকের মত ফুটে উঠা সত্ত্বেও আযীযে-মিসর ও তার স্ত্রী লোক-নিন্দা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে কিছু দিনের জন্য ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কারাগারে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এটা প্রকৃতপক্ষে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর দোআ ও বাসনার বাস্তব রূপায়ণ ছিল। কেননা, আযীযে-মিসরের গৃহে বাস করে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইউসুফ আলাইহিস সালাম কারাগারে পৌছলে সাথে আরো দু’জন অভিযুক্ত কয়েদীও কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বাদশাহকে মদ্যপান করাত এবং অপরজন বাবুর্চি ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বাদশাহর খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করার অভিযোগ ছিল। মোকাদ্দমার তদন্ত চলছিল বলে তাদেরকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম কারাগারে প্রবেশ করে নবীসুলভ চরিত্র, দয়া ও অনুকম্পার কারণে সব কয়েদীর প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন এবং সাধ্যমত তাদের দেখাশোনা করতেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবা-শুশ্রুষা করতেন। কাউকে চিন্তিত ও উৎকষ্ঠিত দেখলে তাকে সাস্তুনা দিতেন। ধৈর্য শিক্ষা এবং মুক্তির আশা দিয়ে তার হিম্মত বাড়াতেন। নিজে কষ্ট করে অপরের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করতেন এবং আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। তার এহেন অবস্থা দেখে কারাগারের সব কয়েদী তার ভক্ত হয়ে গেল।
তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে, আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে জানি। ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সাথে কারাগারে প্রবেশকারী দু’জন কয়েদী একদিন বললঃ আমাদের দৃষ্টিতে আপনি একজন সৎ ও মহানুভব ব্যক্তি। তাই আপনার কাছে আমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করতে চাই। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্য তাফসীরবিদগণ বলেনঃ তারা বাস্তবিকই এ স্বপ্ন দেখেছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ প্রকৃত স্বপ্ন ছিল না। শুধু ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মহানুভবতা ও সততা পরীক্ষার উদ্দেশ্যে স্বপ্ন রচনা করা হয়েছিল। [দেখুন, কুরতুবী]
মোটকথা, তাদের একজন অর্থাৎ যে ব্যক্তি বাদশাহকে মদ্যপান করাত, সে বললঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আঙ্গুর থেকে শরাব বের করছি। দ্বিতীয় জন অর্থাৎ বাবুর্চি বললঃ আমি দেখি যে, আমার মাথায় রুটিভর্তি একটি ঝুড়ি রয়েছে। তা থেকে পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে আহার করছে। তারা উভয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিতে অনুরোধ জানাল।
এখানে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে; কিন্তু তিনি নবীসুলভ ভঙ্গিতে এ প্রশ্নের উত্তর দানের পূর্বে ঈমানের দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারের কাজ আরম্ভ করে দিলেন। প্রচারের মূলনীতি অনুযায়ী প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম তাদের অন্তরে আস্থা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন যে, যা কিছুই তোমরা স্বপ্নে দেখ না কেন আমি তার তা'বীর জানি। তোমাদের কাছে প্রাত্যহিক যে খাবার আসে তা আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে তোমাদের স্বপ্নের তা'বীর বলে দেব। [ইবন কাসীর; সা’দী]
কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন ভিন্ন রকম। তারা বলেনঃ এর অর্থ আমি তোমাদের যাবতীয় স্বপ্নের তা'বীর বলে দিতে পারি। তারপর তিনি একথার প্রতি তাদের আস্থা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে একটি মু'জিযা উল্লেখ করলেন যে, তোমাদের জন্য প্রত্যহ যে খাদ্য তোমাদের বাসা থেকে কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে আসে, তা আসার আগেই আমি তোমাদেরকে খাদ্যের প্রকার, গুণাগুণ, পরিমাণ ও সময় সম্পর্কে বলে দেই। তারা বলল, বলে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য এরকম এরকম খাবার আসবে। বাস্তবেও তাই ঘটে। আর এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে গায়েবী বিষয় জানিয়ে দেয়ার অন্তর্ভুক্ত। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) ইউসুফ বলল, ‘তোমাদেরকে যে খাদ্য দেওয়া হয়, তা আসবার পূর্বে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব, এ জ্ঞান আমার প্রতিপালক আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তারই অন্তর্ভুক্ত।[1] যে সম্প্রদায় আল্লাহকে বিশ্বাস করে না ও পরলোকে অবিশ্বাসী আমি তাদের মতবাদ বর্জন করেছি। [2]
[1] অর্থাৎ, আমি যে তাৎপর্য বলব, তা জ্যোতিষী ও গণকদের মত ধারণা বা অনুমানের ভিত্তিতে নয়, যাতে ঠিক ও ভুল উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। বরং আমার তাৎপর্য সুদৃঢ় জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হবে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে প্রদান করা হয়েছে। যাতে ভুলের কোন অবকাশ নেই।
[2] এটা ইলহাম ও আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান লাভের কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, আমি সেই লোকদের মতবাদ বর্জন করেছি, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে না। এরই বদৌলতে আমার উপর আল্লাহর এই অনুগ্রহ হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ইসহাক এবং ইয়াকুবের মিল্লাত অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের জন্য সংগত নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের দ্বীন অনুসরণ করি।[1] আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়।[2] এটা আমাদের এবং সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
[1] পিতামহ-প্রপিতামহকেও পিতা বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ তাঁরাও পিতা। পুনরায় পর্যায়ক্রমে প্রপিতামহ ইবরাহীম (আঃ) তাঁরপর পিতামহ ইসহাক (আঃ) এবং তাঁরপর পিতা ইয়াকূব (আঃ)-কে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, প্রথমে প্রথম পুরুষ, অতঃপর দ্বিতীয় পুরুষ ও সবশেষে তৃতীয় পুরুষকে উল্লেখ করেছেন।
[2] সেই তওহীদের দাওয়াত এবং শিরকের খন্ডন; যা প্রত্যেক নবীর বুনিয়াদী ও প্রাথমিক শিক্ষা এবং দাওয়াত ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. হে আমার কারা-সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু রব উত্তম, না মহাপ্রতাপশালী এক আল্লাহ?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) হে আমার কারা-সঙ্গীদ্বয়![1] ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? [2]
[1] ‘কারাসঙ্গী’ বা জেলখানার সাথী এই জন্য বলেছেন যে, এরা সকলে দীর্ঘ সময় ধরে জেলখানায় বন্দী হয়ে ছিল।
[2] অর্থাৎ, সত্তা, গুণ ও সংখ্যার দিক দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপালক। অর্থাৎ, সেই সকল (কল্পিত) প্রতিপালক উত্তম, যারা নিজ নিজ সত্তার দিক থেকে এক অপর হতে আলাদা, গুণের দিক থেকে এক অপর হতে পৃথক এবং সংখ্যার দিক থেকেও বিভিন্ন, নাকি সেই আল্লাহ উত্তম, যিনি নিজ সত্তা ও গুণে একক, যাঁর কোন অংশীদার নেই এবং তিনি সকলের উপর পরাক্রমশালী ও ক্ষমতাবান?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. তাঁকে ছেড়ে তোমরা শুধু কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার শুধু মাত্র আল্লাহরই তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধু তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত না করতে, এটাই শাশ্বত দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।(১)
(১) এখানে যে কাহিনীটি বর্ণনা করা হয়েছে এ ভাষণটি হচ্ছে তার প্রাণ। এটি কুরআনেরও তাওহীদ সম্পর্কিত সর্বোত্তম ভাষণগুলোর অন্যতম। ইউসুফের নিজের একটি নবুওয়াত মিশন ছিল এবং তার দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ তিনি কারাগারেই শুরু করে দিয়েছিলেন। এ প্রথম তিনি লোকদের সামনে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। প্রথমেই তিনি বলেন যে, হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু রব উত্তম, না মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ? যিনি তাঁর সম্মান ও মাহাত্ম্য দিয়ে সবকিছুর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন? তারপর তিনি তাদেরকে বললেন, যেগুলোর তোমরা ইবাদাত করো এবং যাদেরকে তোমরা ইলাহরূপে নাম দিয়েছ, সেটা নিতান্তই তাদের মূর্খতা। তারা নিজেরাই সেগুলোর নাম রেখেছে। তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করেছে মাত্র। এ ব্যাপারে তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তারপর তিনি বললেন, রাজত্ব ও হুকুম সবই একমাত্র আল্লাহর।
আর তিনি তাঁর বান্দাদের সবাইকে এ নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কারও যেন ইবাদাত করা না হয়। তারপর তিনি বললেন, এই যে বস্তুটির দিকে আমি তোমাদের আহবান জানাচ্ছি, আল্লাহর জন্য তাওহীদ, একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠাসহকারে আমল করা সেটাই তো সরল সোজা প্রকৃত দ্বীন। যা গ্রহণ করার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। যার জন্য তিনি দলীল-প্রমাণাদি নাযিল করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না বলেই শির্কে লিপ্ত হয়। [ইবন কাসীর] ইবন জারীর বলেন, তিনি যখন দেখলেন যে, তারা তাকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে প্রশ্ন করছে তখন এটাকেই তাদেরকে তাওহীদ ও ইসলামের দিকে দাওয়াতের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলেন। কারণ তিনি দেখতে পেলেন যে, তাদের প্রকৃতিতে কল্যাণ গ্রহণের ও শোনার প্রবণতা রয়েছে। আর সেজন্যই যখন তিনি তার দাওয়াত ও নসীহত শেষ করলেন, তখনি তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যার দিকে মনোনিবেশ করলেন। দ্বিতীয়বার প্রশ্নের অপেক্ষায় থাকলেন না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) তাকে ছেড়ে তোমরা শুধু এমন কতকগুলি নামের উপাসনা করছ যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখে নিয়েছ। এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি।[1] বিধান দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া আর কারোও উপাসনা করবে না। এটাই সরল-সঠিক দ্বীন।[2] কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। [3]
[1] এর এক অর্থ এই যে, তাদের ‘উপাস্য’ নামটি তোমরা নিজেরাই দিয়েছ। প্রকৃতপক্ষে না তারা উপাস্য, আর না সে সম্পর্কে কোন প্রমাণ আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, সেই উপাস্যদের বিভিন্ন নাম যা তোমরা দিয়ে রেখেছ; যেমন বর্তমানে, খাজা গরীব নেওয়ায, গঞ্জ বখশ, কিরনী ওয়ালা, কারমাঁ ওয়ালা, গওসে আযম, দস্তগীর, মুশকিল কুশা (অনুরূপ দাতা সাহেব, খাজাবাবা, সাঁইবাবা) ইত্যাদি এসব তোমাদের নিজেদের মনগড়া নাম, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এর কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করা হয়নি।
[2] এই দ্বীন, যার দিকে আমি তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছি, যাতে কেবল এক আল্লাহরই ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে, তা সঠিক ও সুদৃঢ়, যা অবলম্বন করার আদেশ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
[3] যার কারণে অধিকাংশ মানুষ শির্কে লিপ্ত হয়, মহান আল্লাহ বলেন,{وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ} অর্থাৎ, তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু তাঁর অংশী স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ ১০৬){وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ} অর্থাৎ, তুমি যতই আগ্রহী হও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়। (সূরা ইউসুফ : ১০৩)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান