সূরাঃ ৯/ আত-তাওবা | At-Tawba | سورة التوبة আয়াতঃ ১২৯ মাদানী
৯: ১১১ اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِكُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۱۱﴾
ان الله اشتری من المؤمنین انفسهم و اموالهم بان لهم الجنۃ یقاتلون فی سبیل الله فیقتلون و یقتلون وعدا علیه حقا فی التورىۃ و الانجیل و القران و من اوفی بعهدهٖ من الله فاستبشروا ببیعكم الذی بایعتم بهٖ و ذلك هو الفوز العظیم ﴿۱۱۱﴾

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য। আল-বায়ান

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। এ ওয়া‘দা তাঁর উপর অবশ্যই পালনীয় যা আছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে। আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশী নিজ ওয়া‘দা পালনকারী? কাজেই তোমরা যে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করেছ তার জন্য আনন্দিত হও, আর এটাই হল মহান সফলতা। তাইসিরুল

নিঃসন্দেহে আল্লাহ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা (কখনও) হত্যা করে এবং (কখনও) নিহত হয়, এর কারণে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ, আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah has purchased from the believers their lives and their properties [in exchange] for that they will have Paradise. They fight in the cause of Allah, so they kill and are killed. [It is] a true promise [binding] upon Him in the Torah and the Gospel and the Qur'an. And who is truer to his covenant than Allah? So rejoice in your transaction which you have contracted. And it is that which is the great attainment. Sahih International

১১১. নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।(১)

(১) আয়াতের শুরুতে ক্রয় শব্দের ব্যবহার করা হয়। মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে, ক্রয় বিক্রয়ের এই সওদা তোমাদের জন্য লাভজনক ও বরকতময়; কেননা, এর দ্বারা অস্থায়ী জান-মালের বিনিময়ের স্থায়ী জান্নাত পাওয়া গেল। মালামাল হলো আল্লাহরই দান। মানুষ শূন্য হাতেই জন্ম নেয়। তারপর আল্লাহ তাকে অর্থ সম্পদের মালিক করেন এবং নিজের দেয়া সে অর্থের বিনিময়েই বান্দাকে জান্নাত দান করেন। তাই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'এ এক অভিনব বেচা-কেনা, মালও মূল্য উভয়ই তোমাদেরকে দিয়ে দিলেন আল্লাহ। [বাগভী]

হাসান বসরী (রহ.) বলেন, লক্ষ্য কর, এ কেমন লাভজনক সওদা, যা আল্লাহ সকল মুমিনের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দান করেছেন, তা থেকে কিছু ব্যয় করে জান্নাত ক্রয় করে নাও। [বাগভী] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জামিন হয়ে যান যিনি তাঁর রাস্তায় বের হয়। তাকে শুধুমাত্র আমার রাহে জিহাদই এবং আমার রাসূলের উপর বিশ্বাসই বের করেছে। আল্লাহ্‌ তার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন যে, যদি সে মারা যায় তবে তাকে জান্নাত দিবেন অথবা সে যা কিছু গনীমতের মাল পেয়েছে এবং সওয়াব পেয়েছে তা সহ তাকে তার সে ঘরে ফিরে পৌছিয়ে দিবেন যেখান থেকে বের হয়েছে। [বুখারী: ৩১২৩; মুসলিম: ১৮৭৬]।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১১) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন;[1] তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ (যুদ্ধে)র দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুর’আনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে?[2] অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ।[3] আর এটা হচ্ছে মহাসাফল্য।

[1] এখানে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও দয়ার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তিনি মু’মিনদেরকে তাদের জান ও ঐ সম্পদ যা তাঁরা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করেছেন। অথচ এই জান ও মালও সেই আল্লাহরই দান। আবার মূল্য ও বদলা হিসাবে যা দান করেছেন, অর্থাৎ সেই জান্নাত নেহাতই মূল্যবান।

[2] এটা উক্ত ক্রয়-বিনিময়ের তা’কীদ যে, আল্লাহ তাআলা এই সত্য অঙ্গীকার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং কুরআনেও করেছেন। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক অঙ্গীকার পূরণকারী কে হতে পারে?

[3] এ কথা মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই আনন্দ তখনই করা যাবে, যখন মুসলিমগণ উক্ত ব্যবসা মেনে নেবে। অর্থাৎ, আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করতে কোন দ্বিধা করবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১২ اَلتَّآئِبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحٰمِدُوۡنَ السَّآئِحُوۡنَ الرّٰكِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ النَّاهُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَ الۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰهِ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۲﴾
التآئبون العبدون الحمدون السآئحون الركعون السجدون الامرون بالمعروف و الناهون عن المنكر و الحفظون لحدود الله و بشر المؤمنین ﴿۱۱۲﴾

তারা তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকূকারী, সিজ্দাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। আল-বায়ান

তারা অনুশোচনাভরে (আল্লাহর দিকে) প্রত্যাবর্তনকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু‘কারী, সাজদাহকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অন্যায় কাজ হতে নিষেধকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী, কাজেই (এসব) মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও। তাইসিরুল

তারা হচ্ছে তাওবাহকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকু ও সাজদাহকারী, সৎ বিষয় শিক্ষা প্রদানকারী এবং মন্দ বিষয়ে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহর সীমাসমূহের (অর্থাৎ আহকামের) সংরক্ষণকারী; আর তুমি এমন মু’মিনদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। মুজিবুর রহমান

[Such believers are] the repentant, the worshippers, the praisers [of Allah], the travelers [for His cause], those who bow and prostrate [in prayer], those who enjoin what is right and forbid what is wrong, and those who observe the limits [set by] Allah. And give good tidings to the believers. Sahih International

১১২. তারা(১) তাওবাহকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী(২), রুকূ’কারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী(৩); আর আপনি মুমিনদেরকে শুভ সংবাদ দিন।

(১) এ গুণাবলী হলো সেসব মুমিনের যাদের সম্পর্কে পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ্‌ জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন’। আল্লাহ্‌র রাহে জিহাদকারী সবাই এ আয়াতের মর্মভুক্ত। তবে এখানে যে সমস্ত গুণাবলীর উল্লেখ হয়েছে, তা শর্তরূপে নয়। কারণ, আল্লাহর রাহে কেবল জিহাদের বিনিময়েই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে এ গুণাবলী উল্লেখের উদ্দেশ্য এই যে, যারা জান্নাতের উপযুক্ত, তারা এ সকল গুণের অধিকারী হয়। [কুরতুবী]

(২) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে আয়াতে উল্লেখিত السَّائِحُونَ দ্বারা উদ্দেশ্য সাওম পালনকারীগণ। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, কুরআন মজীদে ব্যবহৃত سائحين শব্দের অর্থ রোযাদার। [বাগভী; কুরতুবী] তাছাড়া سائح বলে জিহাদকারীদেরকেও বুঝায়। তবে মূল শব্দটি سياحة যার অর্থঃ দেশ ভ্রমণ। বিভিন্ন ধর্মের লোক দেশ ভ্রমণকে ইবাদাত মনে করতো। অর্থাৎ মানুষ পরিবার পরিজন ও ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে ধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াত। ইসলাম একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে [ইবন কাসীর] এর পরিবর্তে সিয়াম পালনের ইবাদতকে এর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। আবার কতিপয় বর্ণনায় জিহাদকেও দেশ ভ্রমনের অনুরূপ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার উম্মতের দেশভ্রমণ হলো জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ। [আবু দাউদ: ২৪৮৬]

(৩) আলোচ্য আয়াতে মুমিন মুজাহিদের আটটি গুণ উল্লেখ করে নবম গুণ হিসেবে বলা হয়েছে “আর আল্লাহর দেয়া সীমারেখার হেফাযতকারী” মূলতঃ এতে রয়েছে উপরোক্ত সাতটি গুণের সমাবেশ। অর্থাৎ সাতটি গুণের মধ্যে যে তাফসীল রয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত সার হলো যে, এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা তথা শরীআতের হুকুমের অনুগত ও তার হেফাযতকারী। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১২) তারা হচ্ছে তওবাকারী, ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহর বিধি-সীমাসমূহের সংরক্ষণকারী।[1] আর তুমি বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও।[2]

[1] এখানে ঐ সকল মু’মিন ব্যক্তিদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে, যাদের জান ও মাল আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে তওবাকারী হবে, নিয়মিত আপন প্রভূর ইবাদতকারী হবে, আর মুখে আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনাকারী এবং এই আয়াতে বর্ণিত সকল গুণের অধিকারী হবে। অধিকাংশ তফসীরবিদদের মতে سَائحُون এর অর্থ রোযাপালনকারী। এই অর্থকেই ইবনে কাসীর (রহঃ) সহীহ ও প্রসিদ্ধ মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। অনেকে তার অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ বলেছেন। এরপরেও ‘সিয়াহাত’ এর অর্থ দেশ-ভ্রমণ নয় যেমন অনেকে এই অর্থ নিয়েছেন। অনুরূপ ইবাদতের জন্য পাহাড়ের চূড়া, গুহা এবং নির্জন মরুভূমিতে গিয়ে বসবাস করাও এর অর্থ নয়। কারণ তা বৈরাগ্যবাদের একটা অংশ যা ইসলাম ধর্মে নেই। তবে হ্যাঁ, ফিতনার সময় নিজের দ্বীন বাঁচানোর তাগীদে শহর ও জনবসতি ত্যাগ করে জঙ্গল ও মরুভূমিতে গিয়ে বাস করার অনুমতি হাদীসে দেওয়া হয়েছে। (বুখারী)

[2] উদ্দেশ্য হল যে, বিশ্বাসী বা পূর্ণ মু’মিন ঐ ব্যক্তি; যে কথা ও কর্মে ইসলামী শিক্ষার উত্তম নমুনা হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারী নয় বরং তার সংরক্ষণকারী হয়। এরূপ পূর্ণ মু’মিনরাই সুসংবাদের অধিকারী। এটা সেই কথাই, যা কুরআনে (آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَات) শব্দ দ্বারা বার বার উক্ত হয়েছে। এখানে কিছু নেক আমলের কথা কিঞ্চিৎ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৩ مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِكِیۡنَ وَ لَوۡ كَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ ﴿۱۱۳﴾
ما كان للنبی و الذین امنوا ان یستغفروا للمشركین و لو كانوا اولی قربی من بعد ما تبین لهم انهم اصحب الجحیم ﴿۱۱۳﴾

নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী। আল-বায়ান

নাবী ও মু’মিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। তাইসিরুল

নাবী ও অন্যান্য মু’মিনদের জন্য জায়েয নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, এ কথা প্রকাশ হবার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। মুজিবুর রহমান

It is not for the Prophet and those who have believed to ask forgiveness for the polytheists, even if they were relatives, after it has become clear to them that they are companions of Hellfire. Sahih International

১১৩. আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সংগত নয় যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।(১)

(১) কোন কোন বর্ণনায় এসেছে এ আয়াত আবু তালেবের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [দেখুন, বুখারী ৪৬৭৫; মুসলিম: ২৪] অন্য বর্ণনায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে, তিনি বলেন, এক লোককে তার পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা চাইতে দেখলাম। অথচ তারা ছিল মুশরিক। আমি বললাম, তারা মুশরিক হওয়া সত্বেও তুমি কি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছ? সে বলল, ইবরাহীম কি তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন নি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [তিরমিযী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৩) অংশীবাদীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও বিশ্বাসীদের জন্য সঙ্গত নয়; যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, তাদের কাছে একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। [1]

[1] এই আয়াতের তফসীর সহীহ বুখারীতে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী (সাঃ)-এর চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল, তখন নবী (সাঃ) তার নিকট গেলেন। তার নিকট আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবী উমাইয়্যাহ বসেছিল। নবী (সাঃ) বললেন, ‘‘চাচাজান! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ে নিন, যাতে আমি আল্লাহর নিকট আপনার জন্য প্রমাণ পেশ করতে পারি। আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবী উমাইয়্যাহ বলল, ‘‘হে আবু তালেব! (মৃত্যুর) সময় আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করবে?’’ (শেষে ঐ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হল।) নবী (সাঃ) বললেন, ‘‘যতক্ষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে নিষেধ না করা হবে, ততক্ষণ আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব।’’ তখন উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হল, যাতে মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। (সহীহ বুখারী) এবং সূরা ক্বস্বাস্বের ৫৬নং আয়াত (إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ) আয়াতটিও এই মর্মে অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় আছে যে, একদা নবী (সাঃ) তাঁর মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদ আহমদ ৫ম খন্ড ৩৫৫পৃঃ) আর নবী (সাঃ) নিজ সম্প্রদায়ের জন্য যে দু’আ করেছিলেন, (اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِيْ فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ) ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও, কারণ তারা অজ্ঞ।’’ তা এই আয়াতের বিরোধী নয়। কারণ এই দু’আর অর্থ হল তাদের জন্য হিদায়াত কামনা করা। অর্থাৎ তারা আমার মর্যাদা ও সম্মান থেকে বেখবর, তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দাও, যাতে তারা ক্ষমার যোগ্য হয়ে যায়। আর জীবিত কাফের ও মুশরিকের জন্য হিদায়াতের দু’আ করা বৈধ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৪ وَ مَا كَانَ اسۡتِغۡفَارُ اِبۡرٰهِیۡمَ لِاَبِیۡهِ اِلَّا عَنۡ مَّوۡعِدَۃٍ وَّعَدَهَاۤ اِیَّاهُ ۚ فَلَمَّا تَبَیَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنۡهُ ؕ اِنَّ اِبۡرٰهِیۡمَ لَاَوَّاهٌ حَلِیۡمٌ ﴿۱۱۴﴾
و ما كان استغفار ابرهیم لابیه الا عن موعدۃ وعدها ایاه فلما تبین لهٗ انهٗ عدو لله تبرا منه ان ابرهیم لاواه حلیم ﴿۱۱۴﴾

নিজ পিতার জন্য ইবরাহীমের ক্ষমা প্রার্থনা তো ছিল একটি ওয়াদার কারণে, যে ওয়াদা সে তাকে দিয়েছিল। অতঃপর যখন তার নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নিশ্চয় সে আল্লাহর শত্রু, সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম ছিল অধিক প্রার্থনাকারী ও সহনশীল। আল-বায়ান

ইবরাহীমের পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার ব্যাপারটি কেবলমাত্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে যা সে তার পিতাকে দিয়েছিল। কিন্তু যখন এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন সে তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল; ইবরাহীম ছিল অতি কোমল হৃদয়, সহিষ্ণু। তাইসিরুল

আর ইবরাহীমের নিজ পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা শুধু সেই ও‘য়াদার কারণে ছিল, যে ও‘য়াদা সে তার সাথে করেছিল। অতঃপর যখন তার নিকট এ বিষয় প্রকাশ পেল যে, সে (পিতা) আল্লাহর দুশমন, তখন সে তা হতে সম্পূর্ণ রূপে নির্লিপ্ত হয়ে গেল। বাস্তবিকই ইবরাহীম ছিল অতিশয় কোমল হৃদয়, সহনশীল। মুজিবুর রহমান

And the request of forgiveness of Abraham for his father was only because of a promise he had made to him. But when it became apparent to Abraham that his father was an enemy to Allah, he disassociated himself from him. Indeed was Abraham compassionate and patient. Sahih International

১১৪. আর ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে; তারপর যখন এটা তার কাছে সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শক্র তখন ইবরাহীম তার সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। ইবরাহীম তো কোমল হৃদয়(১) ও সহনশীল।

(১) (أواه) শব্দটির অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত এসেছে। ইবন মাসউদ ও উবাইদ ইবন উমায়রের মতে এর অর্থ, বেশী বেশী প্রার্থনাকারী। হাসান ও কাতাদা বলেন, এর অর্থ আল্লাহর বান্দাদের প্রতি বেশী দরদী। ইবন আব্বাস বলেন, এটি হাবশী ভাষায় মুমিনকে বোঝায়। কালবী বলেন, এর অর্থ যিনি জনমানবশূণ্য ভূমিতে আল্লাহকে আহবান করে। কারও কারও মতে, বেশী বেশী যিকিরকারী। কারও কারও মতে, ফকীহ।

আবার কারও কারও মতে বিনয়ী ও বিনম্র। কারও কারও মতে, এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নিজের গোনাহের কথা স্মরণ হলেই ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। কারও কারও মতে এর অর্থ, যিনি আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা থেকে সর্বদা প্রত্যাবর্তন করতে থাকে। কারও কারও মতে এর অর্থ, যিনি কল্যাণের কথা মানুষদের শিক্ষা দেন। তবে এ শব্দটির মূল অর্থ যে বেশী বেশী আহ্‌ আহ্‌ বলে কোন গোনাহ হয়ে গেলে আফসোস করতে থাকে। মনে ব্যথা অনুভব হতে থাকে এবং এর জন্য তার মন থেকে আফসোসের শব্দ হতে থাকে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৪) আর ইব্রাহীমের নিজ পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা তো কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে ছিল, যা সে তার সাথে করেছিল। অতঃপর যখন তার নিকট এ সুস্পষ্ট হল যে, সে (পিতা) আল্লাহর দুশমন, তখন সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিল।[1] বাস্তবিকই ইব্রাহীম ছিল অতিশয় কোমল হৃদয়, সহনশীল। [2]

[1] অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ) যখন পরিষ্কার বুঝতে পারলেন যে, তাঁর পিতা আল্লাহর শত্রু ও জাহান্নামী, তখন তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন এবং তারপর আর ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।

[2] আর শুরুতে পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও তাঁর কোমল-হৃদয় ও সহনশীলতার কারণেই ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৫ وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیُضِلَّ قَوۡمًۢا بَعۡدَ اِذۡ هَدٰىهُمۡ حَتّٰی یُبَیِّنَ لَهُمۡ مَّا یَتَّقُوۡنَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۱۱۵﴾
و ما كان الله لیضل قوما بعد اذ هدىهم حتی یبین لهم ما یتقون ان الله بكل شیء علیم ﴿۱۱۵﴾

আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন। যতক্ষণ না তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবেন, যা থেকে তারা সাবধান থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান

আল্লাহ কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে গুমরাহ করেন না যে পর্যন্ত না তিনি তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেন কোন্ বিষয়ে তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ হলেন সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক অবহিত। তাইসিরুল

আর আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে হিদায়াত করার পর পথভ্রষ্ট করেন, যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেই সব বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দেন, যে বিষয়ে তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। মুজিবুর রহমান

And Allah would not let a people stray after He has guided them until He makes clear to them what they should avoid. Indeed, Allah is Knowing of all things. Sahih International

১১৫. আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন—যতক্ষন না তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবেন, যা থেকে তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে তা; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৫) আর আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে পথপ্রদর্শন করার পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেন; যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেসব বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে দেন, যা হতে তারা বেঁচে থাকবে;[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

[1] আল্লাহ তাআলা যখন মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করে দিলেন, তখন কিছু সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ), যাঁরা এই কর্ম করেছিলেন, তাঁরা এই ভেবে চিন্তিত হলেন যে, তাঁরা তাঁদের মুশরিক আত্মীয়দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ভ্রষ্টতার কাজ করেননি তো? আল্লাহ তাআলা বললেন যে, আল্লাহ তাআলা যতক্ষণ কোন বস্তুর নিষিদ্ধতা ঘোষণা না করেন, ততক্ষণ তিনি তার উপর কোন ধর-পাকড় করেন না এবং তাকে ভ্রষ্টতাও গণ্য করেন না। তবে নিষিদ্ধ কর্ম থেকে কেউ বিরত না থাকলে আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করে দেন। ফলে যাঁরা উক্ত আদেশের পূর্বে মৃত মুশরিক আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাঁদের ধর-পাকড় হবে না, কারণ তাঁরা উক্ত নির্দেশ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৬ اِنَّ اللّٰهَ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ؕ وَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۱۱۶﴾
ان الله لهٗ ملك السموت و الارض یحیٖ و یمیت و ما لكم من دون الله من ولی و لا نصیر ﴿۱۱۶﴾

নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর জন্যই আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য না আছে কোন অভিভাবক, না আছে কোন সাহায্যকারী। আল-বায়ান

আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই, তিনিই জীবন দান করেন আর তিনিই মৃত্যু ঘটান। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের নেই কোন অভিভাবক, নেই কোন সাহায্যকারী। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই আল্লাহরই রাজত্ব রয়েছে আসমানসমূহে ও যমীনে। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান; আল্লাহ ছাড়া তোমাদের না কোন বন্ধু আছে, আর না কোন সাহায্যকারী। মুজিবুর রহমান

Indeed, to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth; He gives life and causes death. And you have not besides Allah any protector or any helper. Sahih International

১১৬. নিশ্চয় আল্লাহ, আসমান ও যমীনের মালিকানা তাঁরই তিনি জীবন দান করেন এবং তিনি মৃত্যু ঘটান। আর আল্লাহ্‌ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৬) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব নিশ্চয়ই আল্লাহরই; তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন; আর তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া না কোন বন্ধু আছে, আর না কোন সাহায্যকারী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৭ لَقَدۡ تَّابَ اللّٰهُ عَلَی النَّبِیِّ وَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُ فِیۡ سَاعَۃِ الۡعُسۡرَۃِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا كَادَ یَزِیۡغُ قُلُوۡبُ فَرِیۡقٍ مِّنۡهُمۡ ثُمَّ تَابَ عَلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّهٗ بِهِمۡ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۷﴾ۙ
لقد تاب الله علی النبی و المهجرین و الانصار الذین اتبعوه فی ساعۃ العسرۃ من بعد ما كاد یزیغ قلوب فریق منهم ثم تاب علیهم انهٗ بهم رءوف رحیم ﴿۱۱۷﴾

অবশ্যই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছে সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। তাদের মধ্যে এক দলের হৃদয় সত্যচ্যূত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নাবীর প্রতি, এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি যারা সংকটকালে তাকে অনুসরণ করেছিল। এমনকি তাদের মধ্যে কিছু লোকের অন্তর বেঁকে যাওয়ার উপক্রম হওয়ার পরেও আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

আল্লাহ অনুগ্রহের দৃষ্টি করলেন নাবীর অবস্থার প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের অবস্থার প্রতিও, যারা নাবীর অনুগামী হয়েছিল এমন সংকট মুহুর্তে যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বিচলিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ দৃষ্টি করলেন; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের সকলের উপর স্নেহশীল, করুণাময়। মুজিবুর রহমান

Allah has already forgiven the Prophet and the Muhajireen and the Ansar who followed him in the hour of difficulty after the hearts of a party of them had almost inclined [to doubt], and then He forgave them. Indeed, He was to them Kind and Merciful. Sahih International

১১৭. আল্লাহ অবশ্যই নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করলেন, যারা তার অনুসরণ করেছিল সংকটময় মুহুর্তে(১)- তাদের এক দলের হৃদয় সত্যচ্যুত হওয়ার উপক্রম হবার পর। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করলেন; নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি অতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।

(১) কুরআন মাজীদ তাবুক যুদ্ধের সময়টিকে ‘সংকটময় মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছে। কারণ, সে সময় মুসলিমরা বড় অভাব-অনটনে ছিলেন। সে সময় তাদের না ছিল পর্যাপ্ত বাহন। দশ জনের জন্য ছিল একটি মাত্র বাহন, যার উপর পালা করে তাঁরা আরোহণ করতেন। তদুপরি সফরের সম্বলও ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। অন্যদিকে ছিল গ্রীষ্মকাল, পানিও ছিল পথের মাত্র কয়েকটি স্থানে এবং তাও অতি অল্প পরিমাণে। এমনকি কখনও কখনও একটি খেজুর দু’জনে ভাগ করে নিতেন। কখনও আবার খেজুর শুধু চুষে নিতেন। তাই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেছেন, তাদের ক্রটিসমূহ মার্জন করেছেন। [ইবন কাসীর] এ যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে ইবন আব্বাস উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম। আমরা এক স্থানে অবস্থান নিলাম। আমাদের পিপাসার বেগ প্রচণ্ড হল।

এমনকি আমরা মনে করছিলাম যে, আমাদের ঘাঁঢ় ছিড়ে যাবে। এমনকি কোন কোন লোক পানির জন্য বের হয়ে ফিরে আসত, কিন্তু কিছুই পেত না। তখন পিপাসায় তার ঘাড় ছিড়ে যাবার উপক্রম হতো। এমনকি কোন কোন লোক তার উট যবাই করে সেটার ভূড়ি নিংড়ে তা পান করত। আর কিছু বাকী থাকলে সেটা কলজের উপর বেঁধে রাখত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো দেখেছি, আপনি আল্লাহর কাছে দোআ করলে কল্যাণ লাভ করি। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দোআ করুন। তিনি বললেন, তুমি কি তা চাও? আবু বকর বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দু' হাত উঠালেন। হাত গোটানোর আগেই একখণ্ড মেঘ আমাদের ছায়া দিল এবং সেখান থেকে বৃষ্টি পড়ল। সবাই তাদের সাথে যা ছিল তা পূর্ণ করে নিল। তারপর আমরা অবস্থা দেখতে গেলাম, দেখলাম যে, আমাদের সেনাবাহিনীর বাইরে আর কোন বৃষ্টি নেই। [ইবন হিব্বান: ১৩৮৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৭) আল্লাহ ক্ষমা করলেন নবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবীর অনুগামী হয়েছিল,[1] এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল,[2] তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়।

[1] তাবুক যুদ্ধের সফরকে ‘সঙ্কটমুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছে। কারণ প্রথমতঃ তখন গ্রীষ্মকাল ছিল। দ্বিতীয়তঃ ফসল কাটার সময় ছিল। তৃতীয়তঃ অনেক দূরের সফর ছিল। চতুর্থতঃ সফরের সম্বলও ছিল অতি অল্প। ফলে এই অভিযানে অংশগ্রহণকারীদেরকে (جَيش العُسرَة) (সঙ্কটকালের সেনা) বলা হয়। তওবার জন্য জরুরী নয় যে, পূর্বে গুনাহ বা ভুল হয়ে থাকবে। ভুল বা পাপ ছাড়াও উচ্চমর্যাদা ও অজান্তে সম্পাদিত ত্রুটির জন্য তওবা করা হয়। এখানে মুহাজির ও আনসারদের প্রথম দলটির তওবাও এই অর্থে, যাঁরা বিনা দ্বিধায় নবী (সাঃ)-এর আদেশ শোনামাত্র জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন।

[2] এটা সেই দ্বিতীয় দলটির বর্ণনা, যাঁরা উপরে উল্লিখিত কারণে শুরুতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং আনন্দের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। অন্তরের দ্বিধার অর্থ ধর্মে কোন প্রকার দ্বিধা বা সন্দেহ নয়; বরং উল্লিখিত সাংসারিক ও পারিপারশ্বিক কারণে জিহাদে শরীক হওয়াতে ইতস্ততঃ করা হয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৮ وَّ عَلَی الثَّلٰثَۃِ الَّذِیۡنَ خُلِّفُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا ضَاقَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَ ضَاقَتۡ عَلَیۡهِمۡ اَنۡفُسُهُمۡ وَ ظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّاۤ اِلَیۡهِ ؕ ثُمَّ تَابَ عَلَیۡهِمۡ لِیَتُوۡبُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۱۸﴾
و علی الثلثۃ الذین خلفوا حتی اذا ضاقت علیهم الارض بما رحبت و ضاقت علیهم انفسهم و ظنوا ان لا ملجا من الله الا الیه ثم تاب علیهم لیتوبوا ان الله هو التواب الرحیم ﴿۱۱۸﴾

আর সে তিন জনের (তাওবা কবূল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে তিনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবা কবুল করলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আর (তিনি অনুগ্রহ করলেন) ঐ তিনজনের প্রতিও যারা (তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে) পিছনে থেকে গিয়েছিল [কা‘ব ইবনে মালিক, মুরারা ইবনে রাবী‘আ ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যা (রাযি।)] তাঁরা অনুশোচনার আগুনে এমনি দগ্ধীভূত হয়েছিলেন যে] শেষ পর্যন্ত পৃথিবী তার পূর্ণ বিস্তৃতি নিয়েও তাদের প্রতি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল আর তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই তাঁর পথে ফিরে যাওয়া ব্যতীত। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন যাতে তারা অনুশোচনায় তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

আর ঐ তিন ব্যক্তির অবস্থার প্রতিও (অনুগ্রহ করলেন) যাদের ব্যাপার মুলতবী রাখা হয়েছিল এই পর্যন্ত যে, তখন ভূ-পৃষ্ঠ নিজ প্রশস্ততা সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হতে লাগল এবং তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ল; আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহর পাকড়াও হতে কোথাও আশ্রয় পাওয়া যেতে পারেনা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করা ব্যতীত; অতঃপর তাদের অবস্থার প্রতিও অনুগ্রহের দৃষ্টি করলেন, যাতে তারা তাওবাহ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন অতিশয় অনুগ্রহকারী, করুণাময়। মুজিবুর রহমান

And [He also forgave] the three who were left behind [and regretted their error] to the point that the earth closed in on them in spite of its vastness and their souls confined them and they were certain that there is no refuge from Allah except in Him. Then He turned to them so they could repent. Indeed, Allah is the Accepting of repentance, the Merciful. Sahih International

১১৮. আর তিনি তাওবা কবুল করলেন অন্য তিনজনেরও(১), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না যমীন বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সেটা সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল আর তারা নিশ্চিত উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য তিনি ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তাওবাহ কবুল করলেন যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

(১) এরা তিন জন হলেন কা'আব ইবন মালেক, মুরারা ইবন রবি এবং হেলাল ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাঁরা তিনজনই ছিলেন আনসারদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। যাঁরা ইতিপূর্বে বাই’আতে আকাবা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিভিন্ন জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। কিন্তু এ সময় ঘটনাচক্রে তাঁদের বিচ্যুতি ঘটে যায়। অন্যদিকে যে মুনাফিকরা কপটতার দরুন এ যুদ্ধে শরীক হয়নি, তারা তাঁদের কুপরামর্শ দিয়ে দুর্বল করে তুললো তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ থেকে ফিরে আসলেন, তখন মুনাফিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে ও মিথ্যা শপথ করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চাইল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের গোপন অবস্থাকে আল্লাহর সোর্পদ করে তাদের মিথ্যা শপথেই আশ্বস্ত হলেন, ফলে তারা দিব্যি আরামে সময় অতিবাহিত করে চলে আর ঐ তিন সাহাবীকে পরামর্শ দিতে লাগল যে, আপনারা ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্বস্ত করুন। কিন্তু তাঁদের বিবেক সায় দিল না।

কারণ, প্রথম অপরাধ ছিল জিহাদ থেকে বিরত থাকা, দ্বিতীয় অপরাধ আল্লাহর নবীর সামনে মিথ্যা বলা, যা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই তাঁরা পরিস্কার ভাষায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে নিলেন যে অপরাধের সাজা স্বরূপ তাদের সমাজ চ্যুতির আদেশ দেয়া হয়। আর এদিকে কুরআন মজীদ সকল গোপন রহস্য উদঘাটন এবং মিথ্যা শপথ করে অজুহাত সৃষ্টিকারীদের প্রকৃত অবস্থাও ফাঁস করে দেয়। অত্র সুরার ৯৪ থেকে ৯৮ আয়াত পর্যন্ত রয়েছে এদের অবস্থা ও নির্মম পরিণতির বর্ণনা। কিন্তু যে তিন জন সাহাবী মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছেন, এ আয়াতটি তাঁদের তাওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে নাযিল হয়। ফলে দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন এহেন দুৰ্বিসহ অবস্থা ভোগের পর তারা আবার আনন্দিত মনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সাথে মিলিত হন। [এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তাবারী; বাগভী; ইবন কাসীর প্রমূখগণ বর্ণনা করেছেন]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৮) আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল;[1] পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল[2] আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে।[3] নিশ্চয় আল্লাহই হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময়।

[1] خُلِّفٌوْا আর مُرْجَوْنَ এর অর্থ একই; অর্থাৎ যাঁদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল এবং পঞ্চাশ দিন পর তাদের তওবা কবুল হয়েছিল। তাঁরা তিন জন সাহাবী ছিলেন। কা’ব বিন মালেক, মুরারাহ বিন রাবী’ ও হিলাল বিন উমাইয়াহ (রাঃ)। এঁরা তিনজনই ছিলেন অতি মুখলেস (খাঁটি) ব্যক্তি। যাঁরা ইতিপূর্বে মহানবী (সাঃ)-এর সাথে সকল জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। শুধু তাবুক যুদ্ধে অবহেলাবশতঃ শরীক হননি। পরে তাঁরা আপন ভুল বুঝতে পারলেন ও ভাবলেন যে, জিহাদে শরীক না হয়ে পিছিয়ে থাকায় অপরাধ তো করেছি; কিন্তু পুনরায় মুনাফিকদের ন্যায় রসূল (সাঃ)-এর নিকট মিথ্যা অজুহাত পেশ করার মত ভুল আর করব না। সুতরাং তাঁরা নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে পরিষ্কারভাবে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিলেন এবং তার শাস্তির জন্য নিজেদেরকে পেশ করলেন। নবী (সাঃ) তাঁদের বিষয় আল্লাহকে সোপর্দ করে দিলেন যে, আল্লাহ তাদের বিষয়ে কোন ফায়সালা পাঠাবেন। এরপরেও নবী (সাঃ) সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণকে সেই তিন ব্যক্তির সাথে কোন সামাজিক সম্পর্ক রাখতে, এমনকি কথাবার্তা বলতেও নিষেধ করে দেন এবং চল্লিশ দিন পর তাঁদেরকে নিজ নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দেন। সুতরাং তাই করা হয়। আরো দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁদের তওবা কবুল করা হয় এবং উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (উক্ত ঘটনা বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ বুখারী, কিতাবুল মাগাযী ও মুসলিম, কিতাবুত তাওবাহ)

[2] সামাজিক বয়কটের ফলে তাঁদেরকে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল এটা তারই বর্ণনা ।

[3] অর্থাৎ পঞ্চাশ দিন পর আল্লাহ তাআলা তাঁদের কাকুতি-মিনতি শোনেন এবং তওবা কবুল করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১১৯ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ كُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۱۹﴾
یایها الذین امنوا اتقوا الله و كونوا مع الصدقین ﴿۱۱۹﴾

হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। আল-বায়ান

ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের অর্ন্তভুক্ত হও। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, fear Allah and be with those who are true. Sahih International

১১৯. হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।(১)

(১) পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে জিহাদ থেকে বিরত থাকায় যে ত্রুটি কতিপয় নিষ্ঠাবান সাহাবীর দ্বারাও হয়ে গেল এবং পরে তাঁদের তাওবাহ কবুল হলো, এ ছিল তাঁদের তাকওয়ারই ফলশ্রুতি। তাই এ আয়াতের মাধ্যমে সমস্ত মুসলিমকে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর “তোমরা সবাই সত্যবাদীদের সাথে থাক” বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সত্যবাদীদের সাহচর্য এবং তাদের অনুরূপ আমলের মাধ্যমেই তাকওয়া লাভ হয়। আর এভাবেই কেউ ধ্বংস থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে। [ইবন কাসীর]

হাদীসেও সত্যবাদিতার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা সত্যবাদিতা অবলম্বন কর; কেননা সত্যবাদিতা সৎকাজের দিকে নিয়ে যায়, আর সৎকাজ জান্নাতের পথনির্দেশ করে। মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তাকে সত্যবাদী হিসেবে লিখা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক; কেননা মিথ্যা পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, আর একজন মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টায় থাকে শেষ পর্যন্ত তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখা হয়।” [বুখারী ৬০৯৪; মুসলিম; ২৬০৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৯) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।[1]

[1] সত্যবাদিতার কারণে আল্লাহ তাআলা সেই তিনজন সাহাবী (রাঃ)-এর শুধু অপরাধই ক্ষমা করে দেননি; বরং তাঁদের তওবার কথা কুরআনের আয়াতরূপে অবতীর্ণ করেছেন। ফলে মু’মিনদেরকে আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করার ও সত্যবাদীদের সাথে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এই যে, যে ব্যক্তির মাঝে আল্লাহ-ভীতি থাকবে সে সত্যবাদীও হবে। আর যে মিথ্যুক হবে, জেনে রাখুন যে, তার অন্তর আল্লাহ-ভীতি থেকে খালি হবে। এই জন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মিথ্যা বলা মুনাফিক্বের একটি লক্ষণ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯: ১২০ مَا كَانَ لِاَهۡلِ الۡمَدِیۡنَۃِ وَ مَنۡ حَوۡلَهُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ اَنۡ یَّتَخَلَّفُوۡا عَنۡ رَّسُوۡلِ اللّٰهِ وَ لَا یَرۡغَبُوۡا بِاَنۡفُسِهِمۡ عَنۡ نَّفۡسِهٖ ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ لَا یُصِیۡبُهُمۡ ظَمَاٌ وَّ لَا نَصَبٌ وَّ لَا مَخۡمَصَۃٌ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ لَا یَطَـُٔوۡنَ مَوۡطِئًا یَّغِیۡظُ الۡكُفَّارَ وَ لَا یَنَالُوۡنَ مِنۡ عَدُوٍّ نَّیۡلًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾ۙ
ما كان لاهل المدینۃ و من حولهم من الاعراب ان یتخلفوا عن رسول الله و لا یرغبوا بانفسهم عن نفسهٖ ذلك بانهم لا یصیبهم ظما و لا نصب و لا مخمصۃ فی سبیل الله و لا یطـٔون موطئا یغیظ الكفار و لا ینالون من عدو نیلا الا كتب لهم بهٖ عمل صالح ان الله لا یضیع اجر المحسنین ﴿۱۲۰﴾

মদীনার অধিবাসী ও তার আশপাশের মরুবাসীদের জন্য সংগত নয় যে, রাসূলুল্লাহ থেকে পেছনে থেকে যাবে এবং রাসূলের জীবন অপেক্ষা নিজদের জীবনকে অধিক প্রিয় মনে করবে। এটা এ কারণে যে, তাদেরকে আল্লাহর পথে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় আক্রান্ত করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধ জন্মায় এবং শত্রুদেরকে তারা ক্ষতিসাধন করে, তার বিনিময়ে তাদের জন্য সৎকর্ম লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। আল-বায়ান

মাদীনাবাসী ও তার চতুষ্পার্শ্বস্থ বেদুঈনদের জন্য উচিত নয় আল্লাহর রসূলের (সঙ্গ বাদ দিয়ে) পেছনে থেকে যাওয়া আর নিজেদের জীবনকে তাঁর জীবনের চেয়ে প্রিয় জ্ঞান করা। কেননা এমন কক্ষনো হবে না যে, তারা আল্লাহর পথে তৃষ্ণা, দৈহিক ক্লেশ ও ক্ষুধা ভোগ করবে, আর কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেককারী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আর শত্রুদের নিকট থেকে কিছু লাভ করবে আর তার বিনিময়ে তাদের জন্য কোন নেক ‘আমাল লেখা হবে না (অবশ্যই লেখা হবে)। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল বিনষ্ট করেন না। তাইসিরুল

মাদীনার অধিবাসী এবং তাদের আশেপাশে যে সব পল্লী রয়েছে তাদের পক্ষে এটা উচিত ছিলনা যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সঙ্গী না হয়; আর এটাও (উচিত ছিল) না যে, নিজেদের প্রাণ তার প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় মনে করে। এর কারণ এই যে, আল্লাহর পথে তাদের যে পিপাসা, ক্লান্তি আর ক্ষুধা পায় এবং তাদের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় কাফিরদের যে ক্রোধের কারণ হয়ে থাকে, আর দুশমনদের হতে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয় - এর প্রত্যেকটি সৎ কাজ বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মশীল লোকদের শ্রমফল (সাওয়াব) বিনষ্ট করেননা। মুজিবুর রহমান

It was not [proper] for the people of Madinah and those surrounding them of the bedouins that they remain behind after [the departure of] the Messenger of Allah or that they prefer themselves over his self. That is because they are not afflicted by thirst or fatigue or hunger in the cause of Allah, nor do they tread on any ground that enrages the disbelievers, nor do they inflict upon an enemy any infliction but that is registered for them as a righteous deed. Indeed, Allah does not allow to be lost the reward of the doers of good. Sahih International

১২০. মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সংগত নয় যে, তারা আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পিছনে রয়ে যাবে এবং তার জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে; কারণ আল্লাহর পথে তাদেরকে যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা পেয়ে বসে এবং কাফেরদের ক্রোধ উদ্রেক করে তাদের এমন প্রতিটি পদক্ষেপ আর শক্রদেরকে কোন কষ্ট প্রদান করে(১), তা তাদের জন্য সৎকাজরূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের কাজের প্রতিফল নষ্ট করেন না।

(১) উপরোক্ত অনুবাদটিই অধিকাংশ মুফাসসির উল্লেখ করেছেন। তবে আবুস সা’উদ তাফসীরকারের মতে এখানে আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, শক্ৰদের পক্ষ থেকে তাদের উপর যে বিপদই অনুষ্ঠিত হোক না কেন তা তাদের জন্য সওয়াব হিসেবে লিখা হয়। [তাফসীর আবুস সাউদ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২০) মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয় যে, আল্লাহর রসূলের (সঙ্গী না হয়ে) পিছনে থেকে যাবে[1] এবং তার প্রাণ অপেক্ষা নিজেদের প্রাণকে প্রিয় মনে করবে।[2] কারণ,[3] আল্লাহর পথে তাদেরকে যে পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা পায়, আর অবিশ্বাসীদের ক্রোধ সৃষ্টি করে এমন স্থানে তারা যে পদক্ষেপ করে[4] এবং শত্রুদের নিকট হতে তারা যা লাভ করে,[5] তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তাদের জন্য এক একটি নেক আমল লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ পুণ্যবানদের পুণ্যফল বিনষ্ট করেন না।

[1] তাবুক যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য যেহেতু সাধারণভাবে সকলকে ডাক দেওয়া হয়েছিল। ফলে বিকলাঙ্গ, বৃদ্ধ ও শরয়ী ওজর-ওয়ালা ব্যতীত সকলের জন্য তাতে শরীক হওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু এরপরেও যে সকল মদীনাবাসী বা মদীনার আশে-পাশে বসবাসকারীগণ সেই যুদ্ধে শরীক হয়নি, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তিরস্কার ও ধমক স্বরূপ বলছেন যে, রসূল (সাঃ) থেকে পিছিয়ে থাকা তাদের উচিত হয়নি।

[2] অর্থাৎ এটাও উচিত নয় যে, তারা নিজেদের জান বাঁচিয়ে নেবে এবং রসূল (সাঃ)-এর জান বাঁচানোর প্রতি কোন ভ্রূক্ষেপ থাকবে না। বরং রসূল (সাঃ)-এর নিকটে থেকে তাদের নিজেদের জান বাঁচানোর চেয়ে রসূল (সাঃ)-এর সুরক্ষা বিধান করা বেশি দরকার।

[3] ذلك দ্বারা পিছিয়ে না থাকার কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের এই জন্য পিছিয়ে থাকা উচিত নয় যে, আল্লাহর পথে যে পিপাসা, ক্ষুধা ও ক্লান্তি তাদেরকে স্পর্শ করে বা তাদের এমন পদক্ষেপ যাতে কাফেরদের মনে ক্রোধ বৃদ্ধি পায়, অনুরূপ শত্রু পক্ষের মানুষ হত্যা বা তাদেরকে বন্দী করে, তার প্রত্যেকটিই তাদের জন্য নেক আমল হিসাবে লিখিত হয়। অর্থাৎ নেক আমল শুধু এই নয় যে, মানুষ মসজিদে বা কোন এক নির্জন স্থানে বসে বসে নফল নামায, কুরআন তেলাঅত, আল্লাহর যিকর ইত্যাদি করবে। বরং জিহাদে যে সকল কষ্ট ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়; এমনকি এমন কর্ম যার দ্বারা শত্রুর মনে ভীতি বা ক্রোধের সঞ্চার হয়, তার সকল কিছু আল্লাহর নিকট নেক আমল রূপে লিখিত হয়। ফলে শুধু ইবাদত করার উদ্দেশ্যেও জিহাদ থেকে দূরে থাকা ঠিক নয়, বিনা ওজরে জিহাদে ফাঁকি দেওয়া তো দূরের কথা।

[4] এর অর্থ পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে এমন এলাকা অতিক্রম করা যে, তাদের পদক্ষেপ ও ঘোড়ার পদশব্দে শত্রুর মনে ত্রাস ও কম্পন শুরু হয় এবং তাদের হৃদয়ে ক্রোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।

[5] ‘শত্রুদের নিকট হতে তারা যা লাভ করে।’ এর অর্থ হল তাদের দলের মানুষকে হত্যা বা বন্দী করে অথবা তাদেরকে পরাজিত করে এবং গনীমতের সম্পদ অর্জন করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১১ থেকে ১২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »