بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭৩/ আল-মুযযাম্মিল | Al-Muzzammil | سورة المزمل আয়াতঃ ২০ মাক্কী
৭৩:১১ وَ ذَرۡنِیۡ وَ الۡمُكَذِّبِیۡنَ اُولِی النَّعۡمَۃِ وَ مَهِّلۡهُمۡ قَلِیۡلًا ﴿۱۱﴾
و ذرنی و المكذبین اولی النعمۃ و مهلهم قلیلا ﴿۱۱﴾

আর ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাস সামগ্রীর অধিকারী মিথ্যারোপকারীদেরকে। আর তাদেরকে কিছুকাল অবকাশ দাও। আল-বায়ান

আর ছেড়ে দাও আমাকে আর নানান বিলাস সামগ্রীর মালিক ঐ মিথ্যুকদেরকে এবং তাদেরকে কিছুটা সময় অবকাশ দাও। তাইসিরুল

ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাস সামগ্রীর অধিকারী সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে; আর কিছু কালের জন্য তাদেরকে অবকাশ দাও। মুজিবুর রহমান

And leave Me with [the matter of] the deniers, those of ease [in life], and allow them respite a little. Sahih International

১১. আর ছেড়ে দিন আমাকে ও মিথ্যারোপকারীদেরকে(১); এবং কিছু কালের জন্য তাদেরকে অবকাশ দিন,

(১) এতে কাফেরদেরকে (أُولِي النَّعْمَةِ) বলা হয়েছে। نَعْمَة শব্দের অর্থ ভোগ-বিলাস, ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির প্রাচুর্য। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাস সামগ্রীর অধিকারী মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে; আর কিছুকালের জন্য তাদেরকে অবকাশ দাও।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১২ اِنَّ لَدَیۡنَاۤ اَنۡكَالًا وَّ جَحِیۡمًا ﴿ۙ۱۲﴾
ان لدینا انكالا و جحیما ﴿۱۲﴾

নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছে শিকলসমূহ ও প্রজ্জ্বলিত আগুন। আল-বায়ান

আমার কাছে আছে শেকল আর দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন, তাইসিরুল

আমার নিকট আছে শৃংখল প্রজ্জ্বলিত আগুন। মুজিবুর রহমান

Indeed, with Us [for them] are shackles and burning fire Sahih International

১২. নিশ্চয় আমাদের কাছে আছে শৃংখলসমূহ ও প্রজ্বলিত আগুন,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) আমার নিকট আছে শৃংখল, প্রজ্বলিত অগ্নি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৩ وَّ طَعَامًا ذَا غُصَّۃٍ وَّ عَذَابًا اَلِیۡمًا ﴿٭۱۳﴾
و طعاما ذا غصۃ و عذابا الیما ﴿٭۱۳﴾

ও কাঁটাযুক্ত খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল-বায়ান

আর গলায় আটকে যায় এমন খাবার আর মর্মান্তিক শাস্তি। তাইসিরুল

আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং মর্মন্তদ শাস্তি। মুজিবুর রহমান

And food that chokes and a painful punishment - Sahih International

১৩. আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শান্তি।(১)

(১) অতঃপর আখেরাতের কঠিনতম শাস্তির বর্ণনা প্রসঙ্গে أَنْكَال শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ আটকাবস্থা ও শিকল। এরপর জাহান্নামের উল্লেখ করে জাহান্নামীদের ভয়াবহ খাদ্যের কথা বলা হয়েছে। (وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ) এর অর্থ গলগ্রহ খাদ্য। অর্থাৎ যে খাদ্য গলায় এমনভাবে আটকে যায় যে, গলাধঃকরণও করা যায় না এবং উদগীরণও করা যায় না। জাহান্নামীদের খাদ্য ضريع , غسلين زقوم এর অবস্থা তাই হবে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, তাতে আগুনের কাটা থাকবে; যা গলায় আটকে যাবে। [কুরতুবী] শেষে বলা হয়েছে: (وَعَذَابًا أَلِيمًا) নির্দিষ্ট আযাব উল্লেখ করার পর একথা বলে এর আরও অধিক অন্যান্য শাস্তির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [1]

[1] أَنْكَالٌ হল نَكْلٌ এর বহুবচন। যার অর্থ, শৃঙ্খল বা শিকল। আর কেউ কেউ এর অর্থ أَغْلاَل (বেড়ি) করেছেন। جَحِيْمًا অর্থাৎ, প্রজ্বলিত আগুন। ذَا غُصَّةٍ গলায় আটকে যায় এমন খাদ্য। না গলা থেকে নিচে যায়, আর না বেরিয়ে আসে। এটা زَقُّوْمٌ অথবা ضَرِيْعٌ এর খাবার হবে। ضَرِيْعٌ একটি কাঁটাদার গাছ; যা অতি দুর্গন্ধময় এবং বিষাক্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৪ یَوۡمَ تَرۡجُفُ الۡاَرۡضُ وَ الۡجِبَالُ وَ كَانَتِ الۡجِبَالُ كَثِیۡبًا مَّهِیۡلًا ﴿۱۴﴾
یوم ترجف الارض و الجبال و كانت الجبال كثیبا مهیلا ﴿۱۴﴾

যেদিন যমীন ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পাহাড়গুলো চলমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে। আল-বায়ান

(এসব শাস্তি দেয়া হবে) যেদিন যমীন আর পাহাড়গুলো কেঁপে উঠবে, আর পাহাড়গুলো হবে চলমান বালুকারাশি। তাইসিরুল

সেই দিনে পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে। মুজিবুর রহমান

On the Day the earth and the mountains will convulse and the mountains will become a heap of sand pouring down. Sahih International

১৪. সেদিন যমীন ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বিক্ষিপ্ত বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।(১)

(১) সে সময় অতি শক্ত-মজবুত পাহাড়সমূহ দূৰ্বল হয়ে পড়বে, তাই প্রথমে তা মিহি বিক্ষিপ্ত বালুর স্তুপে পরিণত হবে। অতঃপর বালুর এ স্তুপ বিক্ষিপ্ত হয়ে উড়ে যাবে। [সা’দী] এরপর গোটা ভূপৃষ্ঠ একটা বিশাল প্রান্তরে রূপান্তরিত হবে। এ অবস্থার একটি চিত্র অন্যত্র এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, “লোকেরা আপনাকে এসব পাহাড়ের অবস্থা কি হবে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, আমার রব পাহাড়সমূহকে ধুলির মত করে ওড়াবেন এবং ভূপৃষ্ঠকে এমন সমতল বিশাল প্রান্তরে রূপান্তরিত করবেন যে, তুমি সেখানে উঁচু নীচু বা ভাঁজ দেখতে পাবে না।” [সূরা ত্বা-হা: ১০৫–১০৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।[1]

[1] অর্থাৎ, এই আযাব সেই দিন হবে যেদিন যমীন এবং পাহাড় ভূমিকম্পে উলট-পালট হয়ে যাবে। আর অতীব বিশাল ভয়ঙ্কর পাহাড়-পর্বত সেদিন অসার বালুর স্তূপে পরিণত হবে। كَثِيْبٌ বালির ঢিপি। مَهِيْلًا অর্থ বহমান (ভুরভুরে) বালি, যা পায়ের নিচে থেকে সরে যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৫ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلَیۡكُمۡ رَسُوۡلًا ۬ۙ شَاهِدًا عَلَیۡكُمۡ كَمَاۤ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ رَسُوۡلًا ﴿ؕ۱۵﴾
انا ارسلنا الیكم رسولا شاهدا علیكم كما ارسلنا الی فرعون رسولا ﴿۱۵﴾

নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্বাক্ষীস্বরূপ তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি যেমনিভাবে ফির‘আউনের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম। আল-বায়ান

আমি তোমাদের কাছে তেমনিভাবে একজন রসূলকে তোমাদের প্রতি সাক্ষ্যদাতা হিসেবে পাঠিয়েছি (যিনি ক্বিয়ামতে সাক্ষ্য দিবেন যে, দ্বীনের দাওয়াত তিনি যথাযথভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন) যেমনভাবে আমি ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলাম একজন রসূলকে। তাইসিরুল

আমি তোমাদের নিকট পাঠিয়েছি রাসূল তোমাদের জন্য স্বাক্ষী স্বরূপ, যেমন রাসূল পাঠিয়েছিলাম ফিরআউনের নিকট। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have sent to you a Messenger as a witness upon you just as We sent to Pharaoh a messenger. Sahih International

১৫. নিশ্চয় আমরা তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি এক রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ যেমন রাসূল পাঠিয়েছিলাম ফির’আউনের কাছে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) আমি তোমাদের নিকট তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ[1] এক রসূল পাঠিয়েছি, যেমন রসূল পাঠিয়েছিলাম ফিরআউনের নিকট।

[1] যিনি কিয়ামতের দিন তোমাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৬ فَعَصٰی فِرۡعَوۡنُ الرَّسُوۡلَ فَاَخَذۡنٰهُ اَخۡذًا وَّبِیۡلًا ﴿۱۶﴾
فعصی فرعون الرسول فاخذنه اخذا وبیلا ﴿۱۶﴾

কিন্তু ফির‘আউন রাসূলকে অমান্য করল। তাই আমি তাকে অত্যন্ত শক্তভাবে পাকড়াও করলাম। আল-বায়ান

তখন ফেরাউন সেই রসূলকে অমান্য করল। ফলে আমি তাকে শক্ত ধরায় ধরলাম। তাইসিরুল

কিন্তু ফির‘আউন সেই রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলাম। মুজিবুর রহমান

But Pharaoh disobeyed the messenger, so We seized him with a ruinous seizure. Sahih International

১৬. কিন্তু ফিরআউন সে রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমরা তাকে অত্যন্ত শক্তভাবে পাকড়াও করেছিলাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) কিন্তু ফিরআউন সেই রসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমি তাকে কঠিনভাবে পাকড়াও করেছিলাম।[1]

[1] এতে মক্কাবাসীদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তোমাদের পরিণামও তাই হবে, যা মূসা (আঃ)-কে মিথ্যা জানার কারণে ফিরআউনের হয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৭ فَكَیۡفَ تَتَّقُوۡنَ اِنۡ كَفَرۡتُمۡ یَوۡمًا یَّجۡعَلُ الۡوِلۡدَانَ شِیۡبَۨا ﴿٭ۖ۱۷﴾
فكیف تتقون ان كفرتم یوما یجعل الولدان شیبا ﴿٭۱۷﴾

অতএব তোমরা যদি কুফরী কর, তাহলে তোমরা সেদিন কিভাবে আত্মরক্ষা করবে যেদিন কিশোরদেরকে বৃদ্ধে পরিণত করবে। আল-বায়ান

অতএব তোমরা যদি (এই রসূলকে) অস্বীকার কর, তাহলে তোমরা কীভাবে সেদিন আত্মরক্ষা করবে যেদিনটি (তার ভীষণতা ও ভয়াবহতায়) বালককে ক’রে দেবে বুড়ো। তাইসিরুল

অতএব যদি তোমরা কুফরী কর, কি করে আত্মরক্ষা করবে সেদিন যেদিন শিশুদেরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে? মুজিবুর রহমান

Then how can you fear, if you disbelieve, a Day that will make the children white- haired? Sahih International

১৭. অতএব যদি তোমরা কুফরী কর, তবে কি করে আত্মরক্ষা করবে সেদিন যে দিনটি কিশোরদেরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) অতএব যদি তোমরা অস্বীকার কর, তাহলে কি করে আত্মরক্ষা করবে সেইদিন, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধে পরিণত করে দেবে। [1]

[1] شِيْبٌ হল أَشْيَبٌ এর বহুবচন। কিয়ামতের দিন কিয়ামতের ভয়াবহতায় শিশুরা সত্যিকারেই বৃদ্ধ হয়ে যাবে। অথবা কেবল উপমাস্বরূপ এ রকম বলা হয়েছে। হাদীসেও এসেছে যে, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে বলবেন, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে জাহান্নামীদেরকে বের করে নাও। তিনি বলবেন, ‘হে আল্লাহ! কেমন করে?’ মহান আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেক হাজার থেকে ৯৯৯ জনকে।’ সেই দিন গর্ভবতীর গর্ভস্থ ভ্রূণ খসে পড়বে এবং শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে।’’ ব্যাপারটা সাহাবায়ে কেরামদের নিকট বড় কঠিন মনে হল এবং তাঁদের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তা দেখে রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘ইয়া’জূজ-মা’জূজ সম্প্রদায় থেকে ৯৯৯ জন হবে এবং তোমাদের থেকে একজন। আল্লাহর দয়ায় আমি আশা করি, সমস্ত জান্নাতীদের মধ্যে আমরা অর্ধেক হব।’’ (বুখারী, তাফসীর সূরাতুল হাজ্জ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৮ السَّمَآءُ مُنۡفَطِرٌۢ بِهٖ ؕ كَانَ وَعۡدُهٗ مَفۡعُوۡلًا ﴿۱۸﴾
السمآء منفطر بهٖ كان وعدهٗ مفعولا ﴿۱۸﴾

যার কারণে আসমান হবে বিদীর্ণ, আল্লাহর ওয়াদা হবে বাস্তবায়িত। আল-বায়ান

যার কারণে আকাশ ফেটে যাবে, আল্লাহর ওয়া‘দা পূর্ণ হয়ে যাবে। তাইসিরুল

যেদিন আকাশ হবে বিদীর্ণ; তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। মুজিবুর রহমান

The heaven will break apart therefrom; ever is His promise fulfilled. Sahih International

১৮. সে-দিন আসমান হবে বিদীর্ণ(১) তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।

(১) এখানে به শব্দের অর্থ করা হয়েছে, فيه বা ‘সে দিন'। তাছাড়া এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে, بسببه বা ‘এর কারণে’ বা له বা ‘যে জন্য’। প্রতিটি অর্থই উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে প্রথমটিই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ সেদিনের ভয়াবহতা এমন যে, তাতে আসমান ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) যেদিন আকাশ হবে বিদীর্ণ; [1] তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। [2]

[1] এটা কিয়ামতের আর এক অবস্থা। সেদিনকার ভয়াবহতায় আসমান ফেটে যাবে।

[2] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মানুষের মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করা, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নামের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অবশ্যই ঘটবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:১৯ اِنَّ هٰذِهٖ تَذۡكِرَۃٌ ۚ فَمَنۡ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰی رَبِّهٖ سَبِیۡلًا ﴿۱۹﴾
ان هذهٖ تذكرۃ فمن شآء اتخذ الی ربهٖ سبیلا ﴿۱۹﴾

নিশ্চয় এ এক উপদেশ। অতএব যে চায় সে তার রবের দিকে পথ অবলম্বন করুক। আল-বায়ান

এটা উপদেশ। কাজেই যার মন চায় সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ ধরুক। তাইসিরুল

ইহা এক উপদেশ, অতএব যার অভিরুচি সে তার রবের পথ অবলম্বন করুক! মুজিবুর রহমান

Indeed, this is a reminder, so whoever wills may take to his Lord a way. Sahih International

১৯. নিশ্চয় এটা এক উপদেশ, অতএব যে চায় সে তার রবের দিকে পথ অবলম্বন করুক!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) এটা এক উপদেশ। অতএব যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করুক।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩:২০ اِنَّ رَبَّكَ یَعۡلَمُ اَنَّكَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَ نِصۡفَهٗ وَ ثُلُثَهٗ وَ طَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَكَ ؕ وَ اللّٰهُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ ؕ عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡهُ فَتَابَ عَلَیۡكُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ عَلِمَ اَنۡ سَیَكُوۡنُ مِنۡكُمۡ مَّرۡضٰی ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۫ۖ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنۡهُ ۙ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوۃَ وَ اَقۡرِضُوا اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِكُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡهُ عِنۡدَ اللّٰهِ هُوَ خَیۡرًا وَّ اَعۡظَمَ اَجۡرًا ؕ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۲۰﴾
ان ربك یعلم انك تقوم ادنی من ثلثی الیل و نصفهٗ و ثلثهٗ و طآئفۃ من الذین معك و الله یقدر الیل و النهار علم ان لن تحصوه فتاب علیكم فاقرءوا ما تیسر من القران علم ان سیكون منكم مرضی و اخرون یضربون فی الارض یبتغون من فضل الله و اخرون یقاتلون فی سبیل الله فاقرءوا ما تیسر منه و اقیموا الصلوۃ و اتوا الزكوۃ و اقرضوا الله قرضا حسنا و ما تقدموا لانفسكم من خیر تجدوه عند الله هو خیرا و اعظم اجرا و استغفروا الله ان الله غفور رحیم ﴿۲۰﴾

নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালক জানেন যে, তুমি কখনও রাতের দু’তৃতীয়াংশ ‘ইবাদাতের জন্য দাঁড়াও, কখনও অর্ধেক, কখনও রাতের এক তৃতীয়াংশ, তোমার সঙ্গী-সাথীদের একটি দলও (তাই করে)। আল্লাহ্ই রাত আর দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করেন। তিনি জানেন, তোমরা তা যথাযথ হিসাব রেখে পালন করতে পারবে না। কাজেই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু পড়া তোমার জন্য সহজ হয়, তুমি ততটুকু পড়। তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, আর কতক আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে যমীনে ভ্রমণ করবে, আর কতক আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। কাজেই তোমাদের জন্য যতটুকু সহজসাধ্য হয় তাই তাত্থেকে পাঠ কর, আর নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও আর আল্লাহকে ঋণ দাও উত্তম ঋণ। তোমরা যা কিছু কল্যাণ নিজেদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট (সঞ্চিত) পাবে, তাই উত্তম এবং পুরস্কার হিসেবে খুব বড়। তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

তোমার রাব্বতো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনও রাতের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও এক-তৃতীয়াংশ এবং জাগে তোমার সংগে যারা আছে তাদের একটি দলও এবং আল্লাহই নির্ধারণ করেন দিন ও রাতের পরিমাণ। তিনি জানেন যে, তোমরা এর সঠিক হিসাব রাখতে পারনা, অতএব আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব কুরআনের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর; আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেহ কেহ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেহ কেহ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে। অতএব কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য আবৃত্তি কর। সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ। তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর নিকট। উহা উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

Indeed, your Lord knows, [O Muhammad], that you stand [in prayer] almost two thirds of the night or half of it or a third of it, and [so do] a group of those with you. And Allah determines [the extent of] the night and the day. He has known that you [Muslims] will not be able to do it and has turned to you in forgiveness, so recite what is easy [for you] of the Qur'an. He has known that there will be among you those who are ill and others traveling throughout the land seeking [something] of the bounty of Allah and others fighting for the cause of Allah. So recite what is easy from it and establish prayer and give zakah and loan Allah a goodly loan. And whatever good you put forward for yourselves - you will find it with Allah. It is better and greater in reward. And seek forgiveness of Allah. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International

২০. নিশ্চয় আপনার রব জানেন যে, আপনি সালাতে দাঁড়ান কখনও রাতের প্ৰায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনও অর্ধাংশ এবং কখনও এক-তৃতীয়াংশ এবং দাঁড়ায় আপনার সঙ্গে যারা আছে তাদের একটি দলও। আর আল্লাহ্‌ই নির্ধারণ করেন দিন ও রাতের পরিমাণ।(১) তিনি জানেন যে, তোমরা এটা পুরোপুরি পালন করতে পারবে না।(২), তাই আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করলেন।(৩) কাজেই কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়, আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, আর কেউ কেউ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্ৰমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। কাজেই তোমরা কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য ততটুকু পড়। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্ৰদান কর(৪) এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ।(৫) তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম পাঠাবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর কাছে।(৬) তা উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(১) সূরার শুরুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সকল মুসলিমের উপর তাহাজ্জুদ ফরয করা হয়েছিল এবং এই সালাত অর্ধারাত্রির কিছু বেশী এবং কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দীর্ঘ হওয়াও ফরয ছিল। আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী যখন এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তাহাজ্জুদের ফরয রহিত করে সে নির্দেশ শিথিল ও সহজ করে দেয়া হলো। [দেখুন: কুরতুবী]

(২) تُحْصُوه এর মূল হলো إحصاء যার অর্থ গণনা করা। যেমন, পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, (وَأَحْصَىٰ كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا) “আর তিনি (আল্লাহ) সবকিছু সংখ্যায় গণনা করে রেখেছেন।” [সূরা আল-জিন্ন: ২৮] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা জানেন যে, তোমরা এর গণনা করতে পারবে না। তাহাজ্জুদের সালাতে আল্লাহ্ তা'আলা রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ থেকে দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে এই সালাতে মশগুল থাকা অবস্থায় রাত্র কতটুকু হয়েছে, তা জানা কঠিন ছিল। [দেখুন: কুরতুবী; সা’দী]

আবার কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, إحصاء অর্থ কোন কিছু যথানিয়মে কাজে লাগানো বা সক্ষম হওয়া। সে হিসেবে এখানে (لَنْ تُحْصُوهُ) শব্দের অর্থ দীর্ঘ সময় এবং নিদ্রার সময়ে প্রত্যেকে যথারীতি সালাত পড়তে সক্ষম না হওয়া। [তাবারী] এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার এসেছে, যেমন হাদীসে আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, من أحصاها دخل الجنة অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর নামসমূহকে কর্মের ভিতর দিয়ে পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলে সে জান্নাতে দাখিল হবে।” [বুখারী: ৬৪১০, মুসলিম: ২৬৭৭]। এ অর্থের জন্য দেখুন, শারহুস সুন্নাহ লিল বাগভী: ৫/৩১; আল-আসমা ওয়াস সিফাত লিল বাইহাকী: ১/২৭; কাশফুল মুশকিল মিন হাদীসিস সাহীহাইন লি ইবনিল জাওযী: ৩/৪৩৫; তারহুত তাসরীব লিল ইরাকী: ৭/১৫৪; ফাতহুল বারী লি ইবন হাজার: ১/১০৬; সুবুলুস সালাম লিস সান আনী: ২/৫৫৬৷

(৩) تاب শব্দের আসল অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। গোনাহের তাওবাকেও এ কারণে তাওবা বলা হয় যে, মানুষ এতে পূর্বের গোনাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করে। কেউ কেউ বলেন, এখানে কেবল প্রত্যাহার বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ফরয তাহাজ্জুদের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। [কুরতুবী]

(৪) প্ৰসিদ্ধ এই যে, যাকাত হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে ফরয হয়েছে এই আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ কারণে কোন কোন তাফসীরবিদ বিশেষভাবে এই আয়াতটিকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন। কিন্তু সঠিক মত হলো, যাকাত মক্কায় ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ফরয হয়েছিল, কিন্তু তার নেসাব ও পরিমাণের বিস্তারিত বিবরণ মদীনায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বৰ্ণিত হয়েছে, এমতাবস্থায় আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হলেও ফরয যাকাত বোঝানো যেতে পারে। [দেখুন: ইবন কাসীর]

(৫) মূলত এখানে ফরয ও নফল দান-খয়রাত ও কার্যাদি বোঝানো হয়েছে। [সা'দী] আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে এমনভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যেন ব্যয়কারী আল্লাহকে ঋণ দিচ্ছে। কেউ কেউ এর অর্থ এই নিয়েছেন যে, যাকাত ছাড়াও অনেক আর্থিক ওয়াজিব পাওনা মানুষের উপর বর্তে; যেমন: স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতির ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। [কুরতুবী]

(৬) এর অর্থ হলো, আখেরাতের জন্য যা কিছু তোমরা আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে তা তোমাদের ঐ সব জিনিসের চেয়ে অনেক বেশী উপকারী যা তোমরা দুনিয়াতেই রেখে দিয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করোনি। হাদীসে উল্লেখ আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের এমন কেউ আছে যার নিজের অর্থ-সম্পদ তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদের চেয়ে তার কাছে বেশী প্রিয়? জবাবে লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কেউ-ই এমন নেই যার নিজের অর্থ-সম্পদ তাঁর কাছে তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদ থেকে বেশী প্রিয় নয়। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি বলছে তা ভেবে দেখো। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের অবস্থা আসলেই এরূপ। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের নিজের অর্থ-সম্পদ তো সেইগুলো যা তোমরা আখেরাতের জন্য অগ্ৰিম পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যা তোমরা রেখে দিয়েছে সেগুলো ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের অর্থ-সম্পদ৷ [বুখারী: ৬৪৪২] [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) তোমার প্রতিপালক তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনো রাত্রির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক-তৃতীয়াংশ এবং জাগে তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও।[1] আর আল্লাহই নির্ধারিত করেন দিবস ও রাত্রির পরিমাণ।[2] তিনি জানেন যে, তোমরা এর সঠিক হিসাব কখনও রাখতে পারবে না,[3] তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন।[4] কাজেই কুরআনের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।[5] আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ-সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে[6] এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে।[7] কাজেই কুরআন হতে যতটুকু সহজসাধ্য আবৃত্তি কর,[8] নামায প্রতিষ্ঠিত কর,[9] যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ।[10] তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে, তোমরা তা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর পাবে।[11] আর তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

[1] যখন সূরার শুরুতে অর্ধরাত অথবা তার কিছু কম-বেশী কিয়াম করার (তাহাজ্জুদ নামায পড়ার) আদেশ দেওয়া হল, তখন নবী (সাঃ) এবং তাঁর সাথে সাহাবা (রাঃ)-দের একটি দল রাতে কিয়াম করতে লাগলেন। কখনো দুই-তৃতীয়াংশের কম, কখনো অর্ধরাত পর্যন্ত, আবার কখনো রাতের এক-তৃতীয়াংশ, যা এখানে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু প্রথমতঃ রাতে ধারাবাহিকতার সাথে এই কিয়াম করা বড়ই কঠিন ছিল। দ্বিতীয়তঃ অর্ধ রাতের অথবা এক-তৃতীয়াংশের বা দুই-তৃতীয়াংশের অনুমান করে কিয়াম করা আরো কঠিন ছিল। তাই মহান আল্লাহ এই আয়াতে লঘুকরণের নির্দেশ অবতীর্ণ করলেন। যার অর্থ কারো কারো নিকট, কিয়াম ত্যাগ করার অনুমতি। আর কারো নিকট এর অর্থ হল, তাঁর (কিয়ামের) ফরযকে মুস্তাহাবে পরিবর্তন করণ। এখন এটা না উম্মতের উপর ফরয, আর না নবী (সাঃ)-এর উপর ফরয। কেউ কেউ বলেছেন, এটা কেবল উম্মতের জন্য হাল্কা করা হয়েছে। নবী (সাঃ)-এর জন্য তা পড়া জরুরী ছিল।

[2] অর্থাৎ, মহান আল্লাহই মুহূর্তগুলো গণনা করতে পারেন যে, তা কতটা অতিবাহিত হয়েছে এবং কতটা অবশিষ্ট আছে। তোমাদের জন্য এর অনুমান করা অসম্ভব ব্যাপার।

[3] রাত কতটা অতিবাহিত হয় --তা জানা যখন তোমাদের পক্ষে সম্ভবই নয়, তখন তোমরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাযে কিভাবে মগ্ন থাকতে পার?

[4] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা রাতের কিয়ামের অপরিহার্যতা রহিত করে দিয়েছেন। এখন কেবল তার ইস্তিহবাব (পড়লে ভাল --এই মান) অবশিষ্ট রয়েছে। আর তাও নির্দিষ্ট ওয়াক্তের ধরাবাঁধা কোন নিয়ম ছাড়াই পড়া যায়। অর্ধরাতের, রাতের এক তৃতীয়াংশের অথবা দুই তৃতীয়াংশের নিয়মিত অভ্যাস বজায় রাখাও জরুরী নয়। যদি কেউ সামান্য সময় ব্যয় করে দু’ রাকআতই পড়ে নেয়, তবুও সে আল্লাহর নিকট রাতে কিয়াম করার নেকী পাওয়ার অধিকারী হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি রসূল (সাঃ)-এর অভ্যাস অনুসারে ৮ (এবং বিত্র সহ ১১) রাকআত তাহাজ্জুদ নামায পড়তে যত্নবান হয়, তাহলে তা হবে সর্বাধিক উত্তম এবং সে নবী (সাঃ)-এর ভক্ত অনুসারী গণ্য হবে।

[5] فَاقْرَأُوْا (কুরআনের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর) এর অর্থ হল, فَصَلُّوْا (তোমরা নামায পড়)। আর ‘কুরআন’ বলতে এখানে الصَّلاَةَ (নামায) বুঝানো হয়েছে। যেহেতু তাহাজ্জুদের নামাযে কিয়াম (দাঁড়ানো) অনেক লম্বা হয় এবং কুরআন খুব বেশী পড়া, তাই তাহাজ্জুদের নামাযকেই কুরআন বলে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া একান্ত জরুরী হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ হাদীসে ক্বুদসীতে এটা (সূরা ফাতিহা)-কে ‘নামায’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, قَسَّمْتُ الصَّلاَةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي । কাজেই ‘যতটুকু কুরআন পড়া সহজ হয়, ততটুকু পড়’এর অর্থ হল, রাতে যত রাকআত নামায পড়া সহজসাধ্য হয়, তত রাকআত পড়ে নাও। এর জন্য না সময় নির্ধারণের প্রয়োজন আছে, আর না রাকআতের ব্যাপারে কোন ধরাবাঁধা সংখ্যা আছে। এই আয়াতের ভিত্তিতে কেউ কেউ বলেছেন যে, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া জরুরী নয়। যার জন্য কুরআনের যে অংশ পড়া সহজ, সে তা পড়ে নেবে। কেউ যদি কুরআনের যে কোন স্থান থেকে একটি আয়াতও পড়ে নেয়, তারও নামায হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথমতঃ এখানে কুরআন বা ‘ক্বিরাআত’ অর্থ নামায যা আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি। অতএব আয়াতের সম্পর্ক এর সাথে নেই যে, নামাযে কতটা ক্বিরাআত পড়া জরুরী? দ্বিতীয়তঃ যদি মেনেও নেওয়া যায় যে, এর সম্পর্ক ক্বিরাআতের সাথে, তবুও এ দলীলের মধ্যে কোন শক্তি নেই। কেননা, مَا تَيَسَّرَ তফসীর স্বয়ং নবী করীম (সাঃ) করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, কমসে-কম যে ক্বিরাআত ব্যতীত নামায হয় না তা হল, সূরা ফাতিহা। এই জন্যই তিনি বলেছেন, এটা (সূরা ফাতিহা) অবশ্যই পড়। যেমন সহীহ এবং অত্যধিক শক্তিশালী ও স্পষ্ট হাদীসমূহে এ নির্দেশ রয়েছে। নবী করীম (সাঃ) এর ব্যাখ্যার বিপরীত এই বলা যে, ‘নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া জরুরী নয়, বরং যে কোন একটি আয়াত পড়লেই নামায হয়ে যাবে’ বড়ই দুঃসাহসিকতা এবং নবী (সাঃ)-এর হাদীসকে কোন গুরুত্ব না দেওয়ারই নামান্তর। অনুরূপ এটা ইমামদের উক্তিরও বিপরীত। তাঁরা উসূলের কিতাবগুলোতে লিখেছেন যে, এই আয়াতকে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়ার দলীল হিসাবে গ্রহণ করা ঠিক নয়। কারণ, দু’টি আয়াত পরস্পর বিপরীতমুখী। তবে কেউ যদি জেহরী (মাগরেব, এশা, ফজর, জুমআহ, তারাবীহ, ঈদ প্রভৃতি) নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়ে, তাহলে ইমামদের কেউ কেউ কোন কোন হাদীসের ভিত্তিতে তা জায়েয বলেছেন। আবার কেউ তো না পড়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (বিস্তারিত জানার জন্য ‘ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া জরুরী’ এ বিষয়ে লিখিত কিতাবসমূহ দ্রষ্টব্যঃ)

[6] অর্থাৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কাজ-কর্মের জন্য সফর করবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে অথবা এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে যাতায়াত করবে।

[7] অনুরূপ জিহাদেও সফরের কষ্ট ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আর এই তিনটি জিনিসেরই --অসুস্থতা, সফর এবং জিহাদ-- পালাক্রমে সকলেই শিকার হয়ে থাকে। এই জন্য আল্লাহ তাআলা রাতে কিয়াম করার জরুরী নির্দেশকে শিথিল করে দেন। কেননা, এই তিনটি অবস্থাতে এ কাজ অতি কঠিন এবং বড়ই ধৈর্যসাপেক্ষ কাজ।

[8] শিথিল ও হাল্কা করার কারণসমূহ বর্ণনার সাথে এখানে পুনরায় উক্ত নির্দেশ হাল্কা করার কথাকে তাকীদ স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।

[9] অর্থাৎ, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায।

[10] অর্থাৎ, আল্লাহর রাস্তায় প্রয়োজন ও সাধ্যমত ব্যয় কর। এটাকে ‘ক্বারযে হাসানা’ (উত্তম ঋণ) নামে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ এর পরিবর্তে সাতশ’ গুণ বরং তার থেকেও বেশী সওয়াব দান করবেন।

[11] অর্থাৎ, নফল নামাযসমূহ, সাদাকা-খয়রাত এবং অন্যান্য যে সব সৎকর্মই করবে, আল্লাহর কাছে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট ২০নং এই আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই জন্য তাঁরা বলেন যে, এর অর্ধেক অংশ মক্কায় এবং অর্ধেক অংশ মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। (আইসারুত্ তাফাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2