হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। আল-বায়ান
হে মানুষ! ‘তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী (পরহেযগার) হতে পার’। তাইসিরুল
হে মানববৃন্দ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ধর্মভীরু হও। মুজিবুর রহমান
O mankind, worship your Lord, who created you and those before you, that you may become righteous - Sahih International
২১. হে মানুষ(১)! তোমরা তোমাদের সেই রব-এর(২) ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববতীদেরকে সৃষ্টি করেছেন(৩), যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও(৪)।
১. আয়াতে উল্লেখিত ‘নাস’ আরবী ভাষায় সাধারণভাবে মানুষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। ফলে পূর্বে আলোচিত মানব সমাজের মুমিন-কাফির ও মুনাফিক এ তিন শ্রেণীই এ আহবানের অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, তোমাদের রব-এর ইবাদাত কর। ইবাদাতের আভিধানিক অর্থ নম্র ও অনুগত হওয়া আর শরীআতের পরিভাষায় ইবাদাত হচ্ছেঃ আল্লাহ্ তা'আলা ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন এমন সব প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজের ব্যাপক একটি নাম। এ সমস্ত কথা ও কাজ পরিপূর্ণ ভালবাসা ও পরিপূর্ণ বিনয়ের সাথে আল্লাহর জন্য আদায় করলেই তা আমাদের পক্ষ থেকে ইবাদাত বলে গণ্য হবে।
সুতরাং আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত বিষয়ের ব্যাপারে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা সেসব কাজ বা কথা ভালবাসেন তার বাইরে কোন কিছুর মাধ্যমে আমরা তার ইবাদাত করতে পারব না। ইবাদাতের ভিত্তি তিনটি রুকনের উপর স্থাপিত। এক. আল্লাহ্ তা'আলার জন্য পরিপূর্ণ ভালবাসা পোষণ করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ভালবাসে [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৬৫] দুই. পরিপূর্ণ আশা পোষণ করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এবং তারা তার দয়া প্রত্যাশা করে”। [সূরা আলইসরাঃ ৫৭] তিন. আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে ভয় করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এবং তারা তার শাস্তিকে ভয় করে”। [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৭]
২. এ ক্ষেত্রে রব শব্দের পরিবর্তে আল্লাহ বা তার গুণবাচক নামসমূহের মধ্য থেকে অন্য যেকোন একটা ব্যবহার করা যেতে পারত, কিন্তু তা না করে রব শব্দ ব্যবহার করে বুঝানো হয়েছে যে, এখানে দাবীর সাথে দলীলও পেশ করা হয়েছে। কেননা, ইবাদাতের যোগ্য একমাত্র সে সত্তাই হতে পারে, যে সত্তা তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যিনি বিশেষ এক পালননীতির মাধ্যমে সকল গুণে গুনান্বিত করে মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করেছেন এবং পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকার সকল ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন। মানুষ যত মূৰ্খই হোক এবং নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তি যতই হারিয়ে থাকুক না কেন, একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে যে, পালনের সকল দায়িত্ব নেয়া আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
আর সাথে সাথে এ কথাও উপলব্ধি করতে পারবে যে মানুষকে অগণিত এ নেয়ামত না পাথর-নির্মিত কোন মূর্তি দান করেছে, না অন্য কোন শক্তি। আর তারা করবেই বা কিরূপে? তারা তো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার বা বেঁচে থাকার জন্য নিজেরাই সে মহাশক্তি ও সত্তার মুখাপেক্ষী। যে নিজেই অন্যের মুখাপেক্ষী সে অন্যের অভাব কি করে দূর করবে? যদি কেউ বাহ্যিক অর্থে কারো প্রতিপালন করেও, তবে তাও প্রকৃতপ্রস্তাবে সে সত্তার ব্যবস্থাপনার সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। এর সারমর্ম এই যে, যে সত্তার ইবাদাতের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্তা আদৌ ইবাদাতের যোগ্য নয়।
৩. এ আয়াতটি পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম নির্দেশ, আর সে নির্দেশই হচ্ছে তাওহীদের। ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদ বিশ্বাস। যা মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানুষরূপে গঠন করার একমাত্র উপায়। এটি মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেয়, সকল সংকটে আশ্রয় দান করে এবং সকল দুঃখ-দুর্বিপাকের মর্মসাথী। তাওহীদ শব্দটি মাসদার বা মূলধাতু। যার অর্থ- কোন কিছুকে এক বলে জানা এবং ঘোষণা করা। সে অনুসারে আল্লাহর একত্ববাদ অর্থ- আল্লাহ যে এক তা ঘোষণা করা। শরীআতের পরিভাষায় তাওহীদ বলতে বুঝায় একথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহই একমাত্র মা’বুদ। তার কোন শরীক নাই। তার কোন সমকক্ষ নাই। একমাত্র তার দিকেই যাবতীয় ইবাদাতকে সুনির্দিষ্ট করা। তার যাবতীয় সুন্দর নাম ও গুণাবলী আছে বলে বিশ্বাস করা। এতে বুঝা গেল যে, তাওহীদ হলো আল্লাহকে রবুবিয়াত তথা প্রভূত্ত্বে, তার সত্তায়, নাম ও গুণে এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে একক সত্তা বলে স্বীকৃতি দেয়া। তাই এ তাওহীদ বিশুদ্ধ হতে হলে এর মধ্যে তিনটি অংশ অবশ্যই থাকতে হবে -
(১) আল্লাহর প্রভূত্বে ঈমান ও সে অনুসারে চলা। যা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ নামে খ্যাত।
(২) আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে ঈমান আর সেগুলো তার জন্যই নির্দিষ্ট করা। যাকে তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত বলা হয়। আর
(৩) যাবতীয় ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা। যাকে তাওহীদুল উলুহিয়াহ’ও বলা হয়। এ তিন অংশের কোন অংশ বাদ পড়লে তাওহীদ বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা হবে না এবং দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি পাবে না।
৪. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করলেই তাকওয়ার অধিকারী হওয়া যাবে নতুবা নয়। যাদের কর্মকাণ্ডে শির্ক রয়েছে, তারা যত পরহেযগার বা যত আমলই করুক না কেন তারা কখনো মুত্তাকী হতে পারবে না। তাই জীবনের যাবতীয় ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য খালেসভাবে করতে হবে। এটা জানার জন্য ইবাদাত ও শির্ক সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। যার আলোচনা সামনে আসবে।
তাফসীরে জাকারিয়া২১। হে মানুষ সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের উপাসনা কর, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা পরহেযগার (ধর্মভীরু) হতে পার।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আসমানকে ছাদ এবং আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিয্কস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না। আল-বায়ান
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, কাজেই জেনে বুঝে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না। তাইসিরুল
যিনি তোমাদের জন্য ভূতলকে শয্যা ও আকাশকে ছাদ স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্বারা তোমাদের জন্য উপজীবিকা স্বরূপ ফলপুঞ্জ উৎপাদন করেন, অতএব তোমরা আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করনা এবং তোমরা এটা অবগত আছ। মুজিবুর রহমান
[He] who made for you the earth a bed [spread out] and the sky a ceiling and sent down from the sky, rain and brought forth thereby fruits as provision for you. So do not attribute to Allah equals while you know [that there is nothing similar to Him]. Sahih International
২২. যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আসমানকে করেছেন ছাদ এবং আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেছেন। কাজেই তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ(১) দাঁড় করিও না।
১. আয়াতে উল্লেখিত أنداد শব্দটি ند এর বহুবচন। যার অর্থ সমকক্ষ স্থির করা। এখানে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ সমকক্ষ স্থির করাটাই শির্ক। আর শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় গোনাহ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনি সৃষ্টি করেছেন... [বুখারীঃ ৪৪৭৭]
শির্কের প্রকারভেদঃ শির্ক দু'প্রকার, যথা- বড় শির্ক ও ছোট শির্ক। বড় শির্ক আবার দু'প্রকার। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা প্রভূত্বে শির্ক করা। আল্লাহর উলুহিয়াত তথা ইবাদাতে শির্ক করা।
আল্লাহর রুবুবিয়্যাত বা প্রভূত্বে শির্ক দু’ভাবে হয়ে থাকে -
১) জগতের রব বা পালনকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার না করা যেমন কম্যুনিষ্ট, নাস্তিক, মুলহিদ ইত্যাদি সম্প্রদায়। আল্লাহর নাম, গুণ ও কর্মকাণ্ডকে স্বীকার না করা, যেমন- ঈসমাঈলী সম্প্রদায়, বাহাই সম্প্রদায়, বুহরা সম্প্রদায়, জাহমিয়া ও মু'তাজিলা সমপ্রদায়। অনুরূপভাবে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে পার্থক্য না করে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে এক করে দেখা যেমন ওয়াহদাতুল অজুদে বিশ্বাসী সম্প্রদায়, যারা মনে করে যে, আল্লাহ কোন কিছুর সূরত ইখতিয়ার করে তাতে নিজেকে প্রকাশ করেন যেমন, হুলুলী সম্প্রদায় এবং যারা বিশ্বাস করে যে, কারো পক্ষে আল্লাহর সাথে একাকার হয়ে যাওয়া সম্ভব।
২) জগতের রব বা পালনকর্তা আল্লাহর সত্তা, নাম, গুণাবলী ও তাঁর কর্মকাণ্ডে কাউকে সমকক্ষ নির্ধারণ করা।
ক) আল্লাহর স্বত্ত্বার সমকক্ষ কোন সত্তা নির্ধারণ করার মত কোন শির্ক বনী আদমের মধ্যে বিরল। এ ধরণের দাবী প্রথম নমরূদ করেছিল, কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সাথে বিতর্কে সে তার সে দাবীর সপক্ষে যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়ে হেরে গিয়েছিল। অনুরূপভাবে ফিরআউনও প্রকাশ্যে এ ধরণের দাবী করেছিল। আল্লাহ তাকে স্বপরিবারে দলবলসহ ধ্বংস করে তার দাবীর অসারতা দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
খ) আল্লাহর নামসমূহের কোন নাম অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করার মত শির্ক বিভিন্ন জাতিতে বিদ্যমান। যারাই তাদের উপাস্যদেরকে আল্লাহ্র নামের মত নাম দেয় তারাই এ ধরণের শির্কে লিপ্ত। যেমন হিন্দুগণ তাদের বিভিন্ন অবতারকে আল্লাহর নামসমূহের মত নাম দিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে কোন কোন বাতেনী গ্রুপের লোকেরা যেমন, দ্রুজ সম্প্রদায়, নুসাইরী সম্প্রদায়, আগাখানী ঈসমাঈলী সম্প্রদায় তাদের ঈমামদেরকে আল্লাহর নামসমূহে অভিহিত করে।
গ) আল্লাহর গুণ ও কর্মকাণ্ডকে অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করা। আল্লাহর গুণ ও কর্মকাণ্ডের কোন শেষ নেই। সেগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। আল্লাহর অপার শক্তির সাথে সম্পৃক্ত, তাঁর জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত এবং হুকুম ও শরীআতের সাথে সম্পৃক্ত।
১. আল্লাহর অপার শক্তির সাথে যারা শির্ক করে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সৃষ্টি, মৃত্যু, জীবন, বিপদাপদ থেকে উদ্ধার, উদ্দেশ্য হাসিলকারী বলে বিশ্বাস করে। যেমন, অনেক অজ্ঞ মূৰ্খ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, অনেক সুফীরা তাদের পীর সাহেব সম্পর্কে বিশ্বাস করে থাকে। অনুরূপভাবে অনেকে কবরবাসী কোন লোক সম্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তদ্রুপ অনেকে জাদুকর জাতীয় লোকদের সম্পর্কেও এ ধরণের বিশ্বাস করে। অনুরূপভাবে শিয়া সম্প্রদায়ও তাদের ইমামদের ব্যাপারে এ ধরণের বিশ্বাস করে।
২. আল্লাহর পরিপূর্ণ জ্ঞানের সাথে যারা শির্ক করে থাকে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করে। যেমন, অনেক অজ্ঞ মূৰ্খ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, অনেক সুকীরা তাদের পীর সাহেব সম্পর্কে বিশ্বাস করে যে তারা গায়েব জানে। আবার অনেকে কবরবাসী কোন কোন লোক সম্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তদ্রুপ অনেকে গণক, জ্যোতিষ, জীন, প্রেতাত্মা, ইত্যাদীতে বিশ্বাস করে যে, তারাও গায়েব জানে। অনুরূপভাবে শিয়া সম্প্রদায়ও তাদের ইমামদের ব্যাপারে বিশ্বাস করে যে, তারা গায়েব জানতো।
৩. আল্লাহর শরীআত ও হুকুমের সাথে যারা শির্ক করে থাকে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহর মত শরীআত প্রবর্তনের অধিকার তাদের আলেম ও শাসকদের দিয়ে থাকে। যেমন, ঐ সমস্ত জাতি যারা সরকার বা পার্লামেন্টকে আল্লাহর আইন বিরোধী আইন করে তদস্থলে অন্য আইনে বিচার করা শ্রেয় বা জায়েয বা আল্লাহর আইন ও অন্যান্য আইন সমমানের মনে করে থাকে। শির্কের এ সমস্ত প্রকার আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা প্রভূত্বের সাথে সম্পৃক্ত।
আল্লাহর ইবাদাতে শির্কঃ আল্লাহর ইবাদাতে শির্ক বলতে বুঝায়, আল্লাহ যা কিছু ভালবাসেন সন্তুষ্ট হন বান্দার এমন সব কথা ও কাজ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা। যেমন আল্লাহ্ তাঁর কাছে দোআ করা ভালবাসেন, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া ভালবাসেন, তাঁর কাছে উদ্ধার কামনা ভালবাসেন, তাঁর কাছে পরিপূর্ণভাবে বিনয়ী হওয়া ভালবাসেন, তাঁর জন্যই সিজদা, রুকু, সালাত, যবেহ, মানত ইত্যাদী ভালবাসেন। এর কোন কিছু যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করে তবে তা হবে আল্লাহর ইবাদাতে শির্ক। অন্য কারো কাছে পরিপূর্ণ আশা করলে, অন্য কাউকে গোপন ভয় করলেও তা শির্ক হিসাবে গণ্য হবে। যেহেতু বান্দার ইবাদাতসমূহ বিশ্বাস, কথা ও কাজের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে, সে হিসাবে ইবাদতের মধ্যেও এ তিন ধরণের শির্ক পাওয়া যায়। অর্থাৎ কখনো কখনো ইবাদত হয় মনের ইচ্ছার মাধ্যমে, আন্তরিক আনুগত্যের মাধ্যমে, আবার কখনো কখনো তা সংঘটিত হয় বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। আবার কখনো কখনো তা সংঘটিত হয়ে থাকে কথাবার্তার মাধ্যমে।
দ্বিতীয় প্রকার শির্ক হলোঃ ছোট শির্ক, কিন্তু তাও কবীরাগুনাহ হতে মারাত্মক। ছোট শির্কের উদাহরণ হলো, এ প্রকার বলা যে, কুকুর না ডাকলে চোর আসত, আপনি ও আল্লাহ যা চান, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা, সামান্য লোক দেখানোর জন্য কোন কাজ করা। ইত্যাদি। [ইবনুল কাইয়্যেম, আল-জাওয়াবুল কাফী লিমান সাআলা আনিদ দাওয়ায়িশ শাফী', শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সুলাইমান আততামীমী, আল-ওয়াজিবুল মুতাহাত্তিমাতুল মারিফাহ'; আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া২২। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ সরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না।
হিদায়াত এবং গুমরাহীর দিক দিয়ে মানুষের তিনটি দলের কথা উল্লেখ করার পর মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর ইবাদতের প্রতি আহবান প্রত্যেক মানুষকে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যখন তোমাদের ও সারা বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা আল্লাহ, তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনের ব্যবস্থাপক তিনিই, তখন তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত কেন কর? অন্যকে তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন কেন কর? যদি তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে চাও, তাহলে তার একটাই উপায় এই যে, তোমরা আল্লাহকে একক মেনে নিয়ে কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং জেনে-শুনে শির্ক করো না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও’। অতঃপর যখন সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল, তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব জানি এবং জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’? আল-বায়ান
তিনি নির্দেশ করলেন, ‘হে আদাম! এ জিনিসগুলোর নাম তাদেরকে জানিয়ে দাও’। যখন সে এ সকল নাম তাদেরকে বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা প্রকাশ কর ও গোপন কর, আমি তাও অবগত’? তাইসিরুল
তিনি বলেছিলেনঃ হে আদম! তুমি তাদেরকে ঐ সকলের নামসমূহ বর্ণনা কর; অতঃপর যখন সে তাদেরকে ঐগুলির নামসমূহ বলেছিল তখন তিনি বলেছিলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয়ই আমি আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় অবগত আছি এবং তোমরা যা প্রকাশ কর ও যা গোপন কর আমি তাও পরিজ্ঞাত আছি? মুজিবুর রহমান
He said, "O Adam, inform them of their names." And when he had informed them of their names, He said, "Did I not tell you that I know the unseen [aspects] of the heavens and the earth? And I know what you reveal and what you have concealed." Sahih International
৩৩. তিনি বললেন, ‘হে আদম! তাদেরকে এসবের নাম বলে দিন। অতঃপর তিনি (আদম) তাদেরকে সেসবের নাম বলে দিলে তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আসমান যমীনের গায়েব জানি। আরও জানি যা তোমরা ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’।(১)
১. কাতাদাহ ও আবুল আলীয়া বলেন, তারা যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, আমাদের রব আল্লাহ্ তা'আলা যা-ই সৃষ্টি করুক না কেন আমরা তার থেকে বেশী জ্ঞানী ও সম্মানিত থাকব। [তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ] তাছাড়া বিভিন্ন সাহাবা থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা যা প্রকাশ করেছিল তা হলো, “আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে”। আর যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, ইবলীস তার মনের মধ্যে যে গর্ব ও অহঙ্কার গোপন করে রাখছিল তা। [ইবনে কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩৩। তিনি বললেন, ‘হে আদম! ওদেরকে (ফিরিশতাদেরকে) এদের (এ সকলের) নাম বলে দাও।’ অতঃপর যখন সে তাদেরকে সে-সবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (1)
(1) আসমা তথা নামসমূহ বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিস-পত্রের নামসমূহ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ যা মহান আল্লাহ 'ইলহাম' 'ইলক্বা' (অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করা)র মাধ্যমে আদম (আঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন আদম (আঃ)-কে ঐ জিনিসগুলোর নাম বলতে বলা হল, তখন তিনি সত্বর তা বলে দিলেন। অথচ ফিরিশতাগণ তা পারেননি। এইভাবে আল্লাহ তাআলা প্রথমতঃ ফিরিশতাদের সামনে আদম সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করলেন। দ্বিতীয়তঃ দুনিয়ার নিয়ম-নীতি পরিচালনার জন্য জ্ঞানের কত গুরুত্ব এবং তার কত ফযীলত ও মর্যাদা তা বর্ণনা করে দিলেন। যখন ফিরিশতাদের সামনে (আদম সৃষ্টির) যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন তাঁরা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি যে অতি সল্প তা স্বীকার করে নিলেন। আর ফিরিশতাদের এই স্বীকৃতি দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা একমাত্র আল্লাহর সত্তা। তাঁর বিশিষ্ট বান্দাদের কেবল ততটাই জ্ঞান থাকে, যতটা মহান আল্লাহ তাঁদেরকে দান করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, তা আল্লাহ জানেন? আল-বায়ান
তাদের কি জানা নেই যে, যা তারা গোপন রাখে অথবা প্রকাশ করে অবশ্যই আল্লাহ তা জানেন? তাইসিরুল
তারা কি জানেনা যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা প্রকাশ করে, আল্লাহ সবই জানেন? মুজিবুর রহমান
But do they not know that Allah knows what they conceal and what they declare? Sahih International
৭৭. তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে এবং যা ব্যক্ত করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন?
-
তাফসীরে জাকারিয়া৭৭। তারা কি জানে না যে, তারা যা গোপন রাখে কিংবা প্রকাশ করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা জানেন? (1)
(1) মহান আল্লাহ বলছেন, তোমরা বল আর না বল, আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে অবগত। তোমরা না বললেও তিনি এই কথাগুলো মুসলিমদের জন্য প্রকাশ করে দিতে পারেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহর? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই। আল-বায়ান
তুমি কি জান না যে, আকাশমন্ডলী ও ভূমন্ডলের রাজত্ব সেই আল্লাহরই এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনও অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই। তাইসিরুল
তুমি কি জাননা যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধুও নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই? মুজিবুর রহমান
Do you not know that to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth and [that] you have not besides Allah any protector or any helper? Sahih International
১০৭. আপনি কি জানেন না যে, আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবকও নেই, নেই সাহায্যকারীও।
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০৭। তুমি কি জান না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহরই? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। আল-বায়ান
আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকারী, যখন কোন কাজ করতে মনস্থ করেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, হয়ে যাও, তক্ষুনি তা হয়ে যায়। তাইসিরুল
তিনি আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং যখন তিনি কোন কাজ সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন তখন তার জন্য শুধুমাত্র ‘হও’ বলেন, আর তাতেই তা হয়ে যায়। মুজিবুর রহমান
Originator of the heavens and the earth. When He decrees a matter, He only says to it, "Be," and it is. Sahih International
১১৭. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের উদ্ভাবক। আর যখন তিনি কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া১১৭। তিনি গগন ও ভূবনের উদ্ভাবনকর্তা এবং যখন তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।[1]
[1] অর্থাৎ, তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনের প্রতিটি জিনিসের (সৃষ্টিকর্তা ও) মালিক। প্রত্যেকটি জিনিস তাঁর অনুগত। আসমান ও যমীনকে কোন নমুনা ছাড়াই তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়াও তিনি যা করতে চান তার জন্য কেবল 'কুন' (হও) শব্দই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়। এমন সুমহান সত্তার আবার সন্তানাদির প্রয়োজন হয় কি করে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু। তাইসিরুল
এবং তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ; সেই সর্বদাতা করুণাময় ব্যতীত অন্য কেহ উপাস্য নেই। মুজিবুর রহমান
And your god is one God. There is no deity [worthy of worship] except Him, the Entirely Merciful, the Especially Merciful. Sahih International
১৬৩. আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, দয়াময়, অতি দয়ালু তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই।(১)
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহর ইসমে আযাম' এ দুটি আয়াতের মধ্যে রয়েছে।” তারপর তিনি এ আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। [তিরমিযী: ৩৪৭৮, আবু দাউদ: ১৪৯৬, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬৩) আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য (আল্লাহ)। তিনি ব্যতীত আর কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই, [1] তিনি চরম করুণাময়, পরম দয়ালু।
[1] এই আয়াতে আবারও তাওহীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাওহীদের এই দাওয়াত মক্কার মুশরিকদের জন্য বোধগম্য ছিল না। তারা বলল, {أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ} সে কি এতগুলো উপাস্যের পরিবর্তে একটি মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করেছে। নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। (সূরা স্বা-দঃ ৫ আয়াত) এই জন্যই পরের আয়াতে এই তাওহীদের প্রমাণাদি পেশ করা হচ্ছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্ত্ত নিয়ে চলে এবং আসমান থেকে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন অতঃপর তার মাধ্যমে মরে যাওয়ার পর যমীনকে জীবিত করেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী ও বাতাসের পরিবর্তনে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে নিদর্শনসমূহ এমন কওমের জন্য, যারা বিবেকবান। আল-বায়ান
নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে, লোকের উপকারী দ্রব্যাদিসহ সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের মধ্যে এবং আকাশ হতে আল্লাহর বর্ষিত সেই পানির মধ্যে যদ্বারা তিনি পৃথিবীকে- মরে যাওয়ার পর আবার জীবিত করেন এবং তাতে সকল প্রকার জীব-জন্তুর বিস্তারণে এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যে এবং আকাশ ও ভূমন্ডলের মধ্যস্থলে নিয়ন্ত্রিত মেঘপুঞ্জের মধ্যে বিবেকসম্পন্ন লোকেদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে, নৌ-পথে জাহাজসমূহের চলাচলে - যাতে রয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণ। মৃত পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করণে, তাতে নানাবিধ জীবজন্তু সঞ্চারিত করার জন্য আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বায়ুরাশির গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থ সঞ্চিত মেঘের সঞ্চারণে সত্যি সত্যিই জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। মুজিবুর রহমান
Indeed, in the creation of the heavens and earth, and the alternation of the night and the day, and the [great] ships which sail through the sea with that which benefits people, and what Allah has sent down from the heavens of rain, giving life thereby to the earth after its lifelessness and dispersing therein every [kind of] moving creature, and [His] directing of the winds and the clouds controlled between the heaven and the earth are signs for a people who use reason. Sahih International
১৬৪. নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে(১), রাত ও দিনের পরিবর্তনে(২), মানুষের উপকারী(৩) দ্রব্যবাহী চলমান সামুদ্রিক জাহাজে এবং আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মূধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠকে তার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে বিবেকবান কওমের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে।(৪)
(১) আসমান ও যমীনের সৃষ্টি কিভাবে নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, তা এ আয়াতে ব্যাখ্যা করে বলা হয় নি। অন্যত্র তা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, যেমন “তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমরা কিভাবে তা নির্মাণ করেছি ও তাকে সুশোভিত করেছি এবং তাতে কোন ফাটলও নেই? আর আমরা বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদগত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ, আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।” [সূরা কাফ: ৬-৮] আর আসমান সম্পর্কে বলেছেন “যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আসমান। রহমানের সৃষ্টিতে আপনি কোন খুঁত দেখতে পাবেন না; আপনি আবার তাকিয়ে দেখুন, কোন ক্রটি দেখতে পান কি?
তারপর আপনি দ্বিতীয়বার দৃষ্টি ফেরান, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আপনার দিকে ফিরে আসবে। আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি [সূরা আল-মুলক ৩-৫] তারপর যমীন সম্পর্কে বলেছেন, “তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযক থেকে তোমরা আহার কর; আর পুনরুত্থান তো তারই কাছে।” [সূরা আল-মুলক: ১৫]
(২) রাত দিনের পরিবর্তন কিভাবে নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, তা এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয় নি। অন্য আয়াতে তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। যেমন, “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোন ইলাহ আছে, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না? বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ ছাড়া এমন কোন ইলাহ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না?” [সূরা আল-কাসাস: ৭১, ৭২]
(৩) এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সামুদ্রিক জাহাজের মাধ্যমে এক দেশের মালামাল অন্য দেশে আমদানী-রফতানী করার মাঝেও মানুষের এত বিপুল কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা গণনাও করা যায় না। আর এ উপকারিতার ভিত্তিতেই যুগে যুগে, দেশে দেশে নতুন নতুন বাণিজ্যপন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে। এমনিভাবে আকাশ থেকে এভাবে পানিকে বিন্দু বিন্দু করে বর্ষণ করা, যাতে কোন কিছুর ক্ষতিসাধিত না হয়। যদি এ পানি প্লাবনের আকারে আসত, তাহলে কোন মানুষ, জীব-জন্তু কিংবা অন্যান্য জিনিসপত্র কিছুই থাকত না।
অতঃপর পানি বর্ষণের পর ভূ-পৃষ্ঠে তাকে সংরক্ষণ করা মানুষের সাধ্যের আওতায় ছিল না। যদি তাদেরকে বলা হত, তোমাদের সবাই নিজ নিজ প্রয়োজনমত ছ'মাসের প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ করে রাখ, তাহলে তারা পৃথক পৃথকভাবে কি সে ব্যবস্থা করতে পারত? আর কোনক্রমে রেখে দিলেও সেগুলো পচন অথবা বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে কেমন করে রক্ষা করত? কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই সে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছেঃ “আমি পানিকে ভূমিতে ধারণ করিয়েছি, যদিও বৃষ্টির পানি পড়ার পর তাকে প্রবাহিত করেই নিঃশেষ করে দেয়ার ক্ষমতা আমার ছিল”। [সূরা আল-মুমিনুন: ১৮]
কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা পানিকে বিশ্ববাসী মানুষ ও জীব-জন্তুর জন্য কোথাও উন্মুক্ত খাদ-খন্দে সংরক্ষিত করেছেন, আবার কোথাও ভূমিতে বিস্তৃত বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ভূমির অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করেছেন। তারপর এমন এক ফল্গুধারা সমগ্র জমীনে বিছিয়ে দিয়েছেন যা পতিত কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে করে নিতে পারে। আবার এ পানিরই একটা অংশকে জমাট বাধা সাগর বানিয়ে তুষার আকারে পাহাড়ের চূড়ায় চাপিয়ে দিয়েছেন যা পতিত কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একান্ত সংরক্ষিত; অথচ ধীরে ধীরে গলে প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারকথা, উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পরিপূর্ণ ক্ষমতার কয়েকটি বিকাশস্থলের বর্ণনার মাধ্যমে তাওহীদ বা একত্ববাদই প্রমাণ করা হয়েছে।
(৪) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত একত্ববাদ সম্পর্কে বাস্তব লক্ষণ ও প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জ্ঞানী-নিজ্ঞান নির্বিশেষে যে কেউই বুঝতে পারে। আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের চিরাচরিত বিবর্তন তারই ক্ষমতার পরিপূর্ণতা ও একত্ববাদের প্রকৃত প্রমাণ। অনুরূপভাবে পানির উপর নৌকা ও জাহাজ তথা জলযানসমূহের চলাচলও একটি বিরাট প্রমাণ। পানিকে আল্লাহ্ তা'আলা এমন এক তরল পদার্থ করে সৃষ্টি করেছেন যে, একান্ত তরল ও প্রবাহমান হওয়া সত্বেও তার পিঠের উপর লক্ষ লক্ষ মণ ওজনবিশিষ্ট বিশালাকায় জাহাজ বিরাট ওজনের চাপ নিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলাচল করে।
তদুপরি এগুলোকে গতিশীল করে তোলার জন্য বাতাসের গতি ও নিতান্ত রহস্যপূর্ণভাবে সে গতির পরিবর্তন করতে থাকা প্রভৃতি বিষয়ও এদিকেই ইঙ্গিত করে যে, এগুলোর সৃষ্টি ও পরিচালনার পিছনে এক মহাজ্ঞানী ও মহা বিজ্ঞ সত্তা বিদ্যমান। পানীয় পদার্থগুলো তরল না হলে যেমন এ কাজটি সম্ভব হত না, তেমনি বাতাসের মাঝে গতি সৃষ্টি না হলেও জাহাজ চলতে পারত না; এগুলোর পক্ষে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করাও সম্ভব হত না। মহান আল্লাহ বলেন, “তিনি ইচ্ছে করলে বায়ুকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন; ফলে নৌযানসমূহ নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠে। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক চরম ধৈর্যশীল ও একান্ত কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।” [সূরা আশ-শুরা ৩৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬৪) নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে, যে সব জাহাজ মানুষের লাভের জন্য সাগরে চলাচল করে তাদের মধ্যে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করে মৃত ভূমিকে জীবিত করেন[1] এবং সকল প্রকার প্রাণী তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, আর বায়ুরাশির প্রবাহের মধ্যে (গতি পরিবর্তনে) এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী (আল্লাহর আজ্ঞাধীন ভাসমান) মেঘের মধ্যে জ্ঞানী লোকের জন্য অবশ্যই (আল্লাহর মহিমার) বহু নিদর্শন রয়েছে।
1] এই আয়াতটি বহুল অর্থবিশিষ্ট। কারণ, বিশ্বজাহানের সৃষ্টি এবং তার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কীয় সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে একত্রে উল্লিখিত হয়েছে, যা অন্য কোন আয়াতে নেই। (ক) আসমান ও যমীনের সৃষ্টিঃ যার ব্যাপকতা ও বিশালতা বর্ণনার মুখাপেক্ষী নয়।
(খ) রাত ও দিনের একের পর এক আসা। দিনকে উজ্জ্বল এবং রাতকে অন্ধকার করাঃ যাতে জীবিকার জন্য কাজকর্মও যেন হয় এবং আরামও যেন করা যেতে পারে। আবার রাত বড় ও দিন ছোট হওয়া। অনুরূপ এর বিপরীত দিন বড় ও রাত ছোট হওয়া।
(গ) সমুদ্রে নৌকা ও পানিজাহাজের চলাচলঃ যার সাহায্যে ব্যবসার সফরও হয় এবং জীবিকা নির্বাহের টন টন পণ্যসামগ্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো হয়।
(ঘ) বৃষ্টিঃ যা যমীনের উর্বরতা ও শ্যামলতার জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
(ঙ) বিভিন্ন প্রকারের পশু-সৃষ্টিঃ যা বহন, চাষাবাদ এবং যুদ্ধেও কাজে আসে। এমন কি মানুষের খাদ্যের একটা বড় পরিমাণ প্রয়োজন এদের দিয়ে পূরণ হয়।
(চ) সব রকমের হাওয়া প্রবাহিতকরণঃ ঠান্ডা ও গরম, উপকারী ও অপকারী। পূর্ব ও পশ্চিমমুখী, আবার উত্তর ও দক্ষিণমুখী; মানুষের জীবন এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী।
(ছ) মেঘের সৃষ্টিঃ যার দ্বারা মহান আল্লাহ যেখানে চান, সেখানেই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই যাবতীয় বিষয়াদি কি মহান আল্লাহর মহাশক্তি ও তাঁর একত্বকে প্রমাণ করে না? অবশ্যই করে। এই সৃষ্টিসমূহ এবং তার নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় তাঁর কি কোন শরীক আছে? না, অবশ্যই না। তাহলে তাঁকে ছেড়ে অন্যকে উপাস্য এবং প্রয়োজন পূরণকারী মনে করা কি বুদ্ধিমানের কাজ?
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। আল-বায়ান
যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) নিকটেই, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়। তাইসিরুল
এবং যখন আমার সেবকবৃন্দ (বান্দা) আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি সন্নিকটবর্তী। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিই; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে - তাহলেই তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পারবে। মুজিবুর রহমান
And when My servants ask you, [O Muhammad], concerning Me - indeed I am near. I respond to the invocation of the supplicant when he calls upon Me. So let them respond to Me [by obedience] and believe in Me that they may be [rightly] guided. Sahih International
১৮৬. আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।(১)
(১) পূর্ববতী আয়াতগুলোতে রামাদানের হুকুম-আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর একটি সুদীর্ঘ আয়াতে সাওম ও ইতিকাফের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। এখানে মাঝখানে বর্তমান সংক্ষিপ্ত আয়াতটিকে বান্দাদের অবস্থার প্রতি মহান রব-এর অনুগ্রহ এবং তাদের প্রার্থনা শ্রবণ ও কবুল করার বিষয় আলোচনা করে নির্দেশ পালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ, সাওম সংক্রান্ত ইবাদাতে অবস্থাবিশেষে অব্যাহতি দান এবং বিভিন্ন সহজতা সত্বেও কিছু কষ্ট বিদ্যমান রয়েছে। এ কষ্টকে সহজ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আমি আমার বান্দাদের সন্নিকটে রয়েছি, যখনই তারা আমার কাছে কোন বিষয়ে দো'আ করে, আমি তাদের সে দোআ কবুল করে নেই এবং তাদের বাসনা পূরণ করে দেই। এমতাবস্থায় আমার হুকুম-আহকাম মেনে চলা বান্দাদেরও একান্ত কর্তব্য। তাতে কিছুটা কষ্ট হলেও তা সহ্য করা উচিত।
ইমাম ইবনে কাসীর দো'আর প্রতি উৎসাহ দান সংক্রান্ত এই মধ্যবর্তী বাক্যটির তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এ আয়াতের দ্বারা সাওম রাখার পর দোআ কবুল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সে জন্যই সাওমের ইফতারের পর দোআর ব্যাপারে বিশেষ তৎপরতা অবলম্বন করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “সিয়াম পালনকারীর দো'আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অর্থাৎ কবুল হয়ে থাকে।” [ইবনে মাজাহ ১৭৫৩] সে জন্যই আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ইফতারের সময় পরিবার পরিজনকে ডাকতেন এবং দো'আ করতেন। [ইবনে কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮৬) আর আমার দাসগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন তুমি বল, আমি তো কাছেই আছি। যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই।[1] অতএব তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।
[1] বরকতময় রমযান মাসের বিধি-বিধান ও মসলা-মাসায়েলের সাথে দুআর কথা উল্লেখ করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, রমযান মাসে দুআরও বড় ফযীলত রয়েছে। অতএব এ মাসে দুআর প্রতি খুব যত্ন নেওয়া উচিত। বিশেষ করে রোযা থাকা অবস্থায়। কেননা, রোযাদারের দুআ কবুল হয়।
(প্রকাশ থাকে যে, বিশেষ করে ইফতারীর সময় দুআ কবুল হওয়ার হাদীস সহীহ নয়। -সম্পাদক) অবশ্য দুআ কবুল হওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক হল, সেই সব আদবসমূহ ও শর্তাবলীর খেয়াল রাখা, যা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর এই শর্তাবলীর দুটি এখানে বর্ণিত হয়েছে। একঃ আল্লাহর উপর সত্যিকারের ঈমান রাখা এবং দুইঃ তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা। অনুরূপ হাদীসসমূহে হারাম খাদ্য থেকে বেঁচে থাকতে এবং কাকুতি-মিনতির প্রতি যত্ন নেওয়ার উপর তাকীদ করা হয়েছে।
আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না। আল-বায়ান
আল্লাহ সূদকে বিলুপ্ত করেন এবং খয়রাতকে বৃদ্ধি করেন, আল্লাহ অকৃতজ্ঞ পাপীদেরকে ভালবাসেন না। তাইসিরুল
আল্লাহ সুদকে ক্ষয় করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি কৃতঘ্ন পাপাচারীদেরকে ভালবাসেননা। মুজিবুর রহমান
Allah destroys interest and gives increase for charities. And Allah does not like every sinning disbeliever. Sahih International
২৭৬. আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন(১)। আর আল্লাহ কোন অধিক কুফরকারী, পাপীকে ভালবাসেন না।(২)
(১) আল্লাহ্ তা'আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন। এখানে একটি বিশেষ সামঞ্জস্যের কারণে সুদের সাথে সদকা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সুদ ও দান-সদকা উভয়ের স্বরূপ যেমন পরস্পর বিরোধী, উভয়ের পরিণামও তেমনি পরস্পর বিরোধী। আর সাধারণতঃ যারা এসব কাজ করে, তাদের উদ্দেশ্য এবং নিয়্যতও পরস্পর বিরোধী হয়ে থাকে। এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, আয়াতে সুদকে মেটানো আর দান-সদকাকে বর্ধিত করার উদ্দেশ্য কি? কোন কোন তাফসীরকার বলেনঃ এ মেটানো ও বাড়ানো আখেরাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুদখোরের ধন-সম্পদ আখেরাতে তার কোনই কাজে আসবে না; বরং তা তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পক্ষান্তরে দান-সদকাকারীদের ধন-সম্পদ আখেরাতে তাদের জন্য চিরস্থায়ী নেয়ামত ও শান্তি লাভের উপায় হবে। এ ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট। এতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
সাধারণ তাফসীরকারগণ বলেনঃ সুদকে মেটানো এবং দান-সদকাকে বাড়ানো আখেরাতে তো হবেই, কিন্তু এর কিছু কিছু লক্ষণ দুনিয়াতেও প্রত্যক্ষ করা যায়। যে সম্পদের সাথে সুদ মিশ্রিত হয়ে যায়, অধিকাংশ সময় সেগুলো তো ধ্বংস হয়ই, অধিকন্তু আগে যা ছিল, তাও সাথে নিয়ে যায়। সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই এরূপ ঘটনা সংঘটিত হতে দেখা যায়। অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকীরে পরিণত হয়। মোটকথা, এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন। এ উক্তি আখেরাতের দিক দিয়ে তো সম্পূর্ণ পরিস্কার; সত্য উপলব্ধির সামান্য চেষ্টা করলে দুনিয়ার দিক দিয়েও সুস্পষ্ট। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ “সুদ যদিও বৃদ্ধি পায় কিন্তু এর শেষ পরিণতি হচ্ছে স্বল্পতা”। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩৯৫] এর উদ্দেশ্যও তাই।
(২) আয়াতের শেষে বলা হয়েছে “আল্লাহ্ তা'আলা কোন কাফের গোনাহগারকে পছন্দ করেন না”। এতে ইশারা করা হয়েছে যে, যারা সুদকে হারামই মনে করে না, তারা কুফরে লিপ্ত এবং যারা হারাম মনে করা সত্ত্বেও কার্যতঃ সুদ খায়, তারা গোনাহগার ও পাপাচারী। [মাআরিফুল কুরআন]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭৬) আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি দেন।[1] আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।
[1] এটা হল সূদের অভ্যন্তরীণ ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিসমূহ এবং সাদাকার বরকতসমূহের বিবরণ। সূদ বাহ্যিকভাবে দেখতে বৃদ্ধিশীল লাগলেও অভ্যন্তরীণভাবে অথবা পরিণামের দিক দিয়ে সূদের অর্থ ধ্বংস ও বিনাশেরই হয়। আর এ কথা যে অতি বাস্তব তা ইউরোপের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল-বায়ান
যা কিছু আকাশসমূহে ও ভূমন্ডলে আছে, সবকিছু আল্লাহরই। তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন। সুতরাং যাকে ইচ্ছে তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছে তিনি শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। তাইসিরুল
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর এবং তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে তা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন; অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন; এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়োপরি শক্তিমান। মুজিবুর রহমান
To Allah belongs whatever is in the heavens and whatever is in the earth. Whether you show what is within yourselves or conceal it, Allah will bring you to account for it. Then He will forgive whom He wills and punish whom He wills, and Allah is over all things competent. Sahih International
২৮৪. আল্লাহর জন্যই যা আছে আসমানসমূহে ও যা আছে যমীনে। তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহ সেগুলোর হিসেব তোমাদের কাছ থেকে নিবেন(১)। অতঃপর যাকে ইচ্ছে তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি দিবেন।(২)। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
(১) আয়াতের মর্মার্থ এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা তার সকল সৃষ্টির যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। যে কাজ করা হয়েছে এবং যে কাজের শুধু মনে মনে সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সে সবগুলোরই হিসাব গ্রহণ করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন মুমিনকে আল্লাহ্ তা'আলার নিকটবর্তী করা হবে এবং আল্লাহ তাকে এক এক করে সব গোনাহ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করবেনঃ এ গোনাহটি কি তোমার জানা আছে? মুমিন স্বীকার করবে। আল্লাহ্ তাআলা বলবেনঃ আমি দুনিয়াতেও তোমার গোনাহ জনসমক্ষে প্রকাশ করিনি, আজও তা ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর নেক কাজের আমলনামা তার হাতে অর্পণ করা হবে। পক্ষান্তরে কাফের ও মুনাফেকদের পাপকাজসমূহ প্রকাশ্যে বর্ণনা করা হবে। [বুখারীঃ ২৪৪১, মুসলিমঃ ২৭৬৮]
(২) এটি আল্লাহর অবাধ ক্ষমতারই একটি বর্ণনা। তার উপর কোন আইনের বাঁধন নেই। কোন বিশেষ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি বাধ্য নন। বরং তিনি সর্বময় ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। শাস্তি দেয়ার ও মাফ করার পূর্ণ ইখতিয়ার তার রয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই আল্লাহর। বস্তুতঃ তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করবেন।[1] অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে খুশী শাস্তি দেবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
[1] হাদীসসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, তখন সাহাবায়ে কেরাম বড়ই বিচলিত হয়ে পড়েন। তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজি পেশ করে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! নামায-রোযা এবং যাকাত ও জিহাদ ইত্যাদি যে সমস্ত আমল করার নির্দেশ আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তা আমরা করছি। কারণ, এ কাজগুলো আমাদের সামর্থ্যের বাইরে নয়। কিন্তু অন্তরে যেসব খেয়াল ও কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয় তার উপর তো আমাদের কোন এখতিয়ার নেই। সেগুলো তো মানুষের শক্তির বাইরের জিনিস। অথচ মহান আল্লাহ তারও হিসাব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। নবী করীম (সাঃ) বললেন, ‘আপাতত তোমরা বল, আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম।’ এরপর সাহাবাদের শোনার ও মানার উদ্দীপনা দেখে মহান আল্লাহ উক্ত আয়াতকে
{لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا} আয়াত দ্বারা মানসুখ (রহিত) করে দিলেন। (ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর) বুখারী-মুসলিম এবং অন্যান্য সুনান গ্রন্থে বর্ণিত হাদীসটিও এর সমর্থন করে, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদীয়মান খেয়ালের কোন বিচার করবেন না, যে পর্যন্ত না তা কাজে পরিণত করবে অথবা মুখে উচ্চারণ করবে।’’ (বুখারী ২৫২৮-মুসলিম ১২৭নং) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অন্তরে উদিত খেয়ালের কোন হিসাব হবে না। কেবল সেই খেয়ালের হিসাব হবে, যা কাজে পরিণত করা হবে। (উক্ত) আয়াতের ব্যাপারে ইমাম ইবনে জারীরের বিপরীত মন্তব্য রয়েছে। তাঁর খেয়াল হল, আয়াতকে রহিত করা হয়নি। কেননা, হিসাব হলেই যে শাস্তি হবে তা জরুরী নয়। অর্থাৎ, এটা জরুরী নয় যে, মহান আল্লাহ যারই হিসাব নিবেন, তাকেই শাস্তি দিবেন। বরং তিনি হিসাব তো প্রত্যেকেরই নিবেন, কিন্তু অনেক মানুষ এমনও থাকবে যাদের হিসাব নেওয়ার পর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। কিছু লোকের সাথে তো এমনও ব্যবহার করা হবে যে, তাদের একটি একটি পাপকে স্মরণ করিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে বলবেন, দুনিয়ায় এই পাপগুলোকে আমি গোপন করে রেখেছিলাম। যাও, আজ এগুলোকে আমি মাফ করে দিলাম। (এই হাদীস সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে কাসীর) কোন কোন উলামা বলেছেন, এখানে ‘নাসখ’ (রহিত করণ) পারিভাষিক অর্থে বলা হয়নি, বরং কখনো কখনো ‘নাসখ’ ব্যবহার করা হয় কোন জিনিসকে আরো পরিষ্কারভাবে বিশ্লেষণ করে দেওয়ার অর্থে। তাই সাহাবাদের অন্তরে এই আয়াত থেকে যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল সেটাকে দূর করে দেওয়া হল
{لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا} এই আয়াত এবং ‘‘অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরের খেয়ালের বিচার করবেন না---।’’ এই হাদীস দ্বারা। এভাবে উভয় আয়াতের একটিকে ‘নাসিখ’ এবং অপরটি ‘মানসূখ’ ভাবার কোন প্রয়োজন হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। আল-বায়ান
আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না, সে ভাল যা করেছে সে তার সওয়াব পাবে এবং স্বীয় মন্দ কৃতকর্মের জন্য সে নিজেই নিগ্রহ ভোগ করবে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করো না, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আগের লোকেদের উপর যেমন গুরু-দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না; হে আমাদের প্রতিপালক! যে ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই, এমন ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দিও না, (ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে) আমাদেরকে রেহাই দাও, আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর; তুমিই আমাদের প্রতিপালক, কাজেই আমাদেরকে কাফিরদের উপর জয়যুক্ত কর। তাইসিরুল
কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেননা; সে যা উপার্জন করেছে তা তারই জন্য এবং যা সে অর্জন করেছে তা তারই উপর বর্তাবে। হে আমাদের রাব্ব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি সেজন্য আমাদেরকে অপরাধী করবেননা। হে আমাদের রাব্ব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেরূপ গুরুভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের উপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেননা। হে আমাদের রাব্ব! যা আমাদের শক্তির বাইরে ঐরূপ ভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেননা, এবং আমাদের পাপ মোচন করুন ও আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে দয়া করুন, আপনিই আমাদের আশ্রয়দাতা! অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন। মুজিবুর রহমান
Allah does not charge a soul except [with that within] its capacity. It will have [the consequence of] what [good] it has gained, and it will bear [the consequence of] what [evil] it has earned. "Our Lord, do not impose blame upon us if we have forgotten or erred. Our Lord, and lay not upon us a burden like that which You laid upon those before us. Our Lord, and burden us not with that which we have no ability to bear. And pardon us; and forgive us; and have mercy upon us. You are our protector, so give us victory over the disbelieving people." Sahih International
২৮৬. আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত(১)। সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই, আর মন্দ যা কামাই করে তার প্রতিফল তার উপরই বার্তায়। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের উপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দিবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না যার সামর্থ আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন(২)।
(১) পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছিল যে, তোমাদের অন্তরে যা আছে, প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তোমরা স্বেচ্ছায় যেসব কাজ করবে, আল্লাহ তা'আলা তার হিসাব নেবেন। অনিচ্ছাকৃত কু-চিন্তা ও ক্রটি-বিচূতি এর অন্তর্ভুক্তই ছিল না। কিন্তু আয়াতের ভাষা বাহ্যতঃ ব্যাপক ছিল। এতে বোঝা যেত যে, অনিচ্ছকৃত ধারণারও হিসাব নেয়া হবে। এ আয়াত শুনে সাহাবায়ে কেরাম অস্থির হয়ে গেলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতদিন আমরা মনে করতাম যে, আমাদের ইচ্ছাকৃত কাজেরই হিসাব হবে। মনে যেসব অনিচ্ছাকৃত কল্পনা আসে, সেগুলোর হিসাব হবে না। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, প্রতিটি কল্পনারও হিসাব হবে। এতে তো শাস্তির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সাংঘাতিক কঠিন মনে হয়।
মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতের সঠিক উদ্দেশ্য জানতেন, কিন্তু উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত শব্দের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা সমীচীন মনে করলেন না, বরং ওহীর অপেক্ষায় রইলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে আপাততঃ আদেশ দিলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশ আসে, তা সহজ হোক কিংবা কঠিন - মুমিনের কাজ হলো তা মেনে নেয়া। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশমত কাজ করলেন; যদিও তাদের মনে এ সংশয় ছিল যে, অনিচ্ছাকৃত কল্পনা ও কু-চিন্তা থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা'আলা প্রথমে মুসলিমদের আনুগত্যের প্রশংসা করেন এবং বিশেষ ভঙ্গিতে ঐ সন্দেহের নিরসন করে বলেন, আল্লাহ তা'আলা কাউকে তার সাধ্যের বহির্ভূত কোন কাজের নির্দেশ দেন না।
কাজেই অনিচ্ছাকৃতভাবে যেসব কল্পনা ও কু-চিন্তা অন্তরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, এরপর সেগুলো কার্যে পরিণত করা না হয়, সেসব আল্লাহ তা'আলার কাছে মাফযোগ্য। যেসব কাজ ইচ্ছে করে করা হয়, শুধু সেগুলোরই হিসাব হবে। কুরআনে বর্ণিত এ ব্যাখ্যার ফলে সাহাবায়ে কেরামের মানসিক উদ্বেগ দূর হয়ে যায়। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৪১২, ১/৩৩২: মুসলিম: ১২৫] তারপর আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদেরকে একটি বিশেষ দো'আ শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে ভুল-ভ্রান্তিবশতঃ কোন কাজ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পূর্ববর্তী উম্মতদের মত শাস্তিও যেন এ উম্মতের উপর না আসে, তার জন্য বিশেষভাবে দো'আ করতে বলা হয়েছে।
(২) আলোচ্য আয়াত দুটি সূরা বাকারার শেষ আয়াত। সহীহ হাদীসসমূহে এ আয়াত দুটির বিশেষ ফয়ীলতের কথা বর্ণিত আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেউ রাতের বেলায় এ আয়াত দুটি পাঠ করলে তা তার জন্য যথেষ্ট। [বুখারীঃ ৪০০৮, ৫০০৮, মুসলিমঃ ৮০৮] অর্থাৎ বিপদাপদ ও বিভিন্ন প্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকার জন্য যথেষ্ট।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮৬) আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভাল উপার্জন করবে সে তার (প্রতিদান পাবে) এবং যে মন্দ উপার্জন করবে সে তার (প্রতিফল পাবে)। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তাহলে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের পাপ মোচন কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে (সাহায্য ও) জয়যুক্ত কর।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট গোপন থাকে না কোন কিছু যমীনে এবং না আসমানে । আল-বায়ান
নিশ্চয়ই ভূমন্ডলের ও নভোমন্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের কোন বিষয়ই লুকায়িত নেই। মুজিবুর রহমান
Indeed, from Allah nothing is hidden in the earth nor in the heaven. Sahih International
৫. নিশ্চয় আল্লাহ, আসমান ও যমীনের কোন কিছুই তার কাছে গোপন থাকে না।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছু জানেন। সূরা আল-আন'আমে এ বিষয়টি বিস্তারিত এসেছে, সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, এসব কিছু তিনি যে শুধু জানেন তা-ই নয় বরং তিনি তা এক গ্রন্থে লিখেও রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর অদৃশ্যের চাবি তারই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তার অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুস্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা আল-আন’আম: ৫৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দ্যুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে তিনি চান। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
তিনিই তোমাদেরকে মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছে আকৃতি দেন, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাশীল। তাইসিরুল
তিনিই স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোনই উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রান্তশালী, বিজ্ঞানময় । মুজিবুর রহমান
It is He who forms you in the wombs however He wills. There is no deity except Him, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International
৬. তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।(১) তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই; (তিনি) প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(১) কাতাদা বলেন, আল্লাহর শপথ, আমাদের রব তার বান্দাদেরকে মায়ের গর্ভে যেভাবে ইচ্ছা গঠন করতে পারেন। ছেলে বা মেয়ে, কালো বা গৌরবর্ণ, পূর্ণসৃষ্টি অথবা অপূর্ণসৃষ্টি। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। [1] তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[1] সুশ্রী অথবা কুশ্রী, ছেলে অথবা মেয়ে, সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগ্যবান এবং পূর্ণাঙ্গ অথবা বিকলাঙ্গ ইত্যাদি বিচিত্রময়তা মায়ের গর্ভে যখন এককভাবে আল্লাহই সৃষ্টি করেন, তখন ঈসা (আঃ) ইলাহ কিভাবে হতে পারেন? তিনি নিজেও তো সৃষ্টির নানা পর্যায় অতিক্রম করে দুনিয়াতে এসেছেন। মহান আল্লাহ তাঁরও সৃষ্টি সম্পাদন করেছেন তাঁর মায়ের গর্ভে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। আল-বায়ান
হে আমাদের প্রতিপালক! সৎ পথ প্রদর্শনের পরে তুমি আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না, আমাদেরকে তোমার নিকট হতে রহমত প্রদান কর, মূলতঃ তুমিই মহান দাতা। তাইসিরুল
হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার নিকট হতে করুণা প্রদান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রভূত প্রদানকারী। মুজিবুর রহমান
[Who say], "Our Lord, let not our hearts deviate after You have guided us and grant us from Yourself mercy. Indeed, You are the Bestower. Sahih International
৮. হে আমাদের রব সরল পথ দেয়ার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না। আর আপনার কাছ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিও না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান কর। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। আল-বায়ান
হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি সমুদয় মানুষকে একদিন সমবেত করবে, যাতে কোনও সন্দেহ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ অঙ্গীকারের খেলাফ করেন না। তাইসিরুল
হে আমাদের রাব্ব! নিশ্চয়ই আপনি সকল মানুষকে সমবেতকারী, ঐ দিনে মোটেই সন্দেহ নেই, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী নন। মুজিবুর রহমান
Our Lord, surely You will gather the people for a Day about which there is no doubt. Indeed, Allah does not fail in His promise." Sahih International
৯. হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি সমস্ত মানুষকে একদিন একত্রে সমবেত করবেন এতে কোন সন্দেহ নেই(১); নিশ্চয় আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।
(১) শাফাআতের বিখ্যাত হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা'আলা পূর্বাপর সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন এক মাঠে একত্রিত করবেন। অতঃপর তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তাদের চক্ষু পরস্পরকে বেষ্টন করবে এবং তারা যে কোন আহবানকারীর আহবান শুনতে পাবে। আর সূর্য তাদের নিকটবর্তী করা হবে।” [বুখারী ৩৩৬১]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি মানবজাতিকে একদিন একত্রে সমাবেশ করবে -- এতে কোন সন্দেহ নেই; নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের ব্যতিক্রম (প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ) করেন না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। আল-বায়ান
বল, ‘হে আল্লাহ! তুমি সমুদয় রাজ্যের মালিক, যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান কর আর যার থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছে সম্মানিত কর আর যাকে ইচ্ছে অপদস্থ কর, তোমারই হাতে সব রকম কল্যাণ, নিশ্চয়ই তুমি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান’। তাইসিরুল
তুমি বলঃ হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন; যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন; আপনারই হাতে রয়েছে কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। মুজিবুর রহমান
Say, "O Allah, Owner of Sovereignty, You give sovereignty to whom You will and You take sovereignty away from whom You will. You honor whom You will and You humble whom You will. In Your hand is [all] good. Indeed, You are over all things competent. Sahih International
২৬. বলুন, ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে।(১) নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(১) আয়াতে আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছেঃ “আপনার হাতেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ”। আয়াতের প্রথমাংশে রাজত্ব দান করা ও ছিনিয়ে নেয়া এবং সম্মান ও অপমান উভয়দিক উল্লেখ করা হয়েছিল। এতে রয়েছে কল্যাণ ও অকল্যাণ। কিন্তু আয়াতে শুধু আল্লাহর হাতেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ একথা বলা হয়েছে। অকল্যাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এধরণের শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তার কারণ হল, সহীহ আকীদা অনুসারে আল্লাহর প্রতি অকল্যাণের সম্পর্ক দেখানো জায়েয নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেছেনঃ অকল্যাণ আপনার পক্ষ থেকে নয়। [মুসলিমঃ ৭৭১] কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা বান্দার জন্য অকল্যাণ চান না। মানুষের যাবতীয় অকল্যাণ মানুষের হাতের কামাই করা।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) বল, ‘হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান কর এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নাও, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত কর এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। তোমার হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। [1] নিশ্চয় তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
[1] এই আয়াতে রয়েছে মহান আল্লাহর সীমাহীন শক্তি ও তাঁর মহা কুদরতের প্রকাশ। তিনি বাদশাহকে ফকীর করেন এবং ফকীরকে বাদশাহ। তিনিই সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক। الْخَيْرُ بِيَدِكَ (যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে) না বলে, بِيَدِكَ الْخَيْرُ (তোমারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ) বলা হয়েছে। অর্থাৎ, বিধেয় পদকে আগে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য নির্দিষ্টীকরণ। অর্থাৎ, সমস্ত কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তুমি ছাড়া কল্যাণদাতা আর কেউ নেই। অকল্যাণের স্রষ্টা যদিও মহান আল্লাহই, তবুও এখানে কেবল কল্যাণের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, অকল্যাণের নয়। কারণ, কল্যাণ আল্লাহর নিছক অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে অকল্যাণ হল মানুষের কর্মের ফল যা তাদেরকে ভুগতে হয়। অথবা অকল্যাণও যেহেতু তাঁরই নির্ধারিত নিয়তির অংশ, সুতরাং তাতেও কোন না কোন প্রকার মঙ্গল আছে। এই দিক দিয়ে তাঁর সমস্ত কাজই কল্যাণময়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’। আল-বায়ান
তুমিই রাতকে দিনের ভিতর আর দিনকে রাতের ভিতর ঢুকিয়ে দাও, তুমিই জীবিতকে মৃত হতে বের কর এবং মৃতকে জীবিত হতে বের কর আর যাকে ইচ্ছে বেহিসাব রিয্ক্ব দান কর। তাইসিরুল
আপনি রাতকে দিনে পরিবর্তিত করেন এবং দিনকে রাতে পরিণত করেন, এবং জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করেন ও মৃতকে জীবিত হতে বহির্গত করেন এবং আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। মুজিবুর রহমান
You cause the night to enter the day, and You cause the day to enter the night; and You bring the living out of the dead, and You bring the dead out of the living. And You give provision to whom You will without account." Sahih International
২৭. আপনি রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে প্রবিষ্ট করান; আপনি মৃত থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটান। আর আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযক দান করেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) তুমি রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করাও,[1] তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। [2] তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করে থাক।’
[1] রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করানোর অর্থ হল ঋতুর পরিবর্তন। যখন রাত লম্বা হয়, তখন দিন ছোট হয়ে যায়। আবার অন্য ঋতুতে যখন দিন বড় হয়, তখন রাত ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ, কখনো রাতের অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের অংশকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। যার কারণে রাত ও দিন ছোট-বড় হয়ে যায়।
[2] যেমন (মৃত) বীর্য যা জীবন্ত মানুষ থেকে বের হয়। অতঃপর সেই মৃত (বীর্য) থেকে বের হয় জীবন্ত মানুষ। অনুরূপ মৃত ডিম থেকে প্রথমে মুরগী, তারপর জীবন্ত মুরগী থেকে (মৃত) ডিম অথবা কাফের থেকে মু’মিন এবং মু’মিন হতে কাফের সৃষ্টি হয়। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, মুআ’য (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-কে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার অভিযোগ করলে তিনি তাকে বললেন, তুমি [اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ] আয়াতটি পাঠ করে এই দু’আটি করো, (رَحْمَنَ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَرَحِيْمَهُمَا تُعْطِيْ مَنْ تَشَاءُ مِنْهُمَا وَتَمْنَعُ مَنْ تَشَاءُ، ارْحَمْنِيْ رَحْمَةً تُغْنِيْنِيْ بِهَا عَنْ رَحْمَةِ مَنْ سِوَاكَ، اللَّهُمَّ أَغْنِنِيْ مِنَ الْفَقْرِ، وَاقْضِ عَنِّيْ الدَّيْنَ) অপর আর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘‘এটা এমন একটি দু’আ যে, তোমার উপর উহুদ পাহাড় সমানও যদি ঋণ থাকে, মহান আল্লাহ সে ঋণকেও তোমার জন্য আদায় করার ব্যবস্থা করে দিবেন।’’
(মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ১০/১৮৬ হাদীসের বর্ণনাকারীরা সবাই নির্ভরযোগ্য)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘তোমরা যদি তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন। আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা আছে, তাও তিনি জানেন। আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’। আল-বায়ান
বল, ‘তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়কে গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন, আর তিনি জানেন যা কিছু আকাশসমূহে এবং ভূভাগে আছে; আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান’। তাইসিরুল
তুমি বলঃ তোমাদের অন্তরসমূহে যা রয়েছে তা তোমরা গোপন কর অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ তা অবগত আছেন এবং নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জ্ঞাত আছেন; এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। মুজিবুর রহমান
Say, "Whether you conceal what is in your breasts or reveal it, Allah knows it. And He knows that which is in the heavens and that which is on the earth. And Allah is over all things competent. Sahih International
২৯. বলুন, ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন কর বা ব্যক্ত কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন(১)। আর আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যা আছে তাও তিনি জানেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(১) আল্লাহ তা'আলা প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু সম্যকরূপে জানেন। মানুষের অন্তরে কি আছে, এমনকি কি উদিত হবে তাও আল্লাহ জানেন। কারণ, হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা'আলা যখন প্রথম কলম সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে বললেন, লিখ। তখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা সবই লিখা হতে লাগল। [মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১৭] সুতরাং মানুষের মনে কি উদিত হবে সেটাও কলম লিখে রেখেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) বল, ‘তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন। আর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তাও তিনি অবগত আছেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানমারইয়াম বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি’! আল্লাহ বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, ‘হও’। ফলে তা হয়ে যায়। আল-বায়ান
মারইয়াম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে আমার পুত্র হবে, অথচ আমাকে কোন মানব স্পর্শ করেনি’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ সৃজন করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন, তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘‘হয়ে যাও’’ সুতরাং তা হয়ে যায়। তাইসিরুল
সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! কিরূপে আমার পুত্র হবে? কোন পুরুষ মানুষতো আমাকে স্পর্শ করেনি; তিনি বললেনঃ এরূপে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, সৃষ্টি করে থাকেন, যখন তিনি কোন কাজের মনস্থ করেন তখন তিনি ওকে ‘হও’ বলেন, ফলতঃ তাতেই হয়ে যায়। মুজিবুর রহমান
She said, "My Lord, how will I have a child when no man has touched me?" [The angel] said, "Such is Allah; He creates what He wills. When He decrees a matter, He only says to it, 'Be,' and it is. Sahih International
৪৭. সে বলল, হে আমার রব! আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, এমতাবস্থায় আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘এভাবেই’, আল্লাহ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়(১)।
(১) এ আয়াতে মারইয়াম আলাইহাস সালাম কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে গর্ভে ধারনের বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে। এর বিস্তারিত বর্ণনা সূরা মারইয়ামে বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, “বর্ণনা করুন এ কিতাবে মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, তারপর তাদের থেকে সে পর্দা করল। এরপর আমরা তার কাছে আমাদের রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারইয়াম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহকে ভয় কর) যদি তুমি মুত্তাকী হও, সে বলল, আমি তো তোমার রব-এর দূত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মারইয়াম বলল, “কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই?
সে বলল, “এ রূপই হবে। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমরা তাকে এজন্যে সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমাদের কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। তারপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল; [১৬-২২] এখানেও গর্ভে ধারনের প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটা বলা হয়নি। সূরা আল-আম্বিয়ায় বলা হয়েছে যে, “অতঃপর আমরা তার (মারইয়ামের) মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম” [৯১]। আর যিনি রূহ ফুঁকে দেয়ার কাজটি করেছিলেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। কারণ, সূরা আলে ইমরান ও সূরা মারইয়ামের আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, মারইয়ামের কাছে যিনি এসেছিলেন, তিনি স্বয়ং জিবরীল আলাইহিস সালাম। এ সমস্ত বর্ণনা একত্রিত করলে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মকাহিনী স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু (সৃষ্টি করবেন বলে) স্থির করেন, তখন বলেন, ‘হও’, আর তখনই তা হয়ে যায়। [1]
[1] অর্থাৎ, তোমার আশ্চর্য হওয়া ঠিকই আছে, তবে মহাশক্তির অধিকারী আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি ইচ্ছা করলে স্বাভাবিক নিয়ম-নীতি ও বাহ্যিক হেতু ও উপকরণাদির মাধ্যমে ঘটনাঘটনের ধারাবাহিকতা খতম করে কেবল ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারা নিমেষে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান