আল্লাহ মহা হিকমতওয়ালা (প্রজ্ঞাময়) বিষয়ক আয়াতসমূহ ৬৯ টি
আল-বাকারা
২:৩২ قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۳۲﴾

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। আল-বায়ান

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞানই নেই, নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’। তাইসিরুল

তারা বলেছিলঃ আপনি পরম পবিত্র! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তদ্ব্যতীত আমাদের কোনই জ্ঞান নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

They said, "Exalted are You; we have no knowledge except what You have taught us. Indeed, it is You who is the Knowing, the Wise." Sahih International

৩২. তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৩২। তারা বলল, ‘আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:১২৯ رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۱۲۹﴾

‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। আল-বায়ান

‘হে আমাদের প্রতিপালক! এদের কাছে একজন রসূল এদের মধ্য হতে প্রেরণ কর, যে এদেরকে তোমার আয়াতগুলো পড়ে শুনাবে এবং এদেরকে কিতাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেবে এবং এদেরকে বিশুদ্ধ করবে, নিশ্চয় তুমি ক্ষমতাশালী, প্রজ্ঞাময়।’ তাইসিরুল

হে আমাদের রাব্ব! তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদেরকে আপনার নিদর্শনাবলী পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করবেন ও তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

Our Lord, and send among them a messenger from themselves who will recite to them Your verses and teach them the Book and wisdom and purify them. Indeed, You are the Exalted in Might, the Wise." Sahih International

১২৯. হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান(১), যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন(২); তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন(৩) এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন(৪) আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।

(১) হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দোআ, ঈসা 'আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৬২] ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদের অর্থ তার এ উক্তি (وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ) “আমি এমন এক নবীর সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তার নাম আহমাদ”। [সূরা আস-সাফঃ ৬] তার জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তার পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে। কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসংগে দু’জায়গায়, সূরা আলে-ইমরানের ১৬৪তম আয়াতে এবং সূরা জুমুআয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দোআয় উল্লেখিত ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইংগিত করা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে নবীর জন্য দোআ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

(২) ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোআর কারণে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য তিনটি। তন্মধ্যে প্রথম হচ্ছে, আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াতের আসল অর্থ অনুসরণ করা। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় এ শব্দটি কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, যে লোক এসব কালাম পাঠ করে, এর অনুসরণ করাও তার একান্ত কর্তব্য। আসমানী গ্রন্থ ঠিক যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়, হুবহু তেমনিভাবে পাঠ করা জরুরী। নিজের পক্ষ থেকে তাতে কোন শব্দ অথবা স্বরচিহ্নটিও পরিবর্তন পরিবর্ধন করার অনুমতি নেই। ইমাম রাগেব বলেন, “আল্লাহর কালাম ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থ অথবা কালাম পাঠ করাকে সাধারণ পরিভাষায় তিলাওয়াত বলা যায় না’। [মুফরাদাতুল কুরআন]

(৩) ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দো’আ অনুসারে নবী রাসূলগন বিশেষ করে আমাদের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দান। এখানে কিতাব বলে আল্লাহর কিতাব বুঝানো হয়েছে। ‘হিকমত’ শব্দটি আরবী অভিধানে একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা– সত্যে উপনীত হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। ইমাম রাগেব বলেন, এ শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয় সকল বস্তুর পূর্ণজ্ঞান ও সুদৃঢ় উদ্ভাবন। অন্যের জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয়, বিদ্যমান বস্তুসমূহের বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম, ন্যায়, সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। এখন লক্ষ্য করা দরকার যে, আয়াতে হিকমতের অর্থ কি? মূলত: এখানে হিকমত শব্দের অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ। ইবনে কাসীর ও ইবনে জরীর রাহিমাহুল্লাহ কাতাদাহ থেকে এ ব্যাখ্যাই উদ্ধৃত করেছেন। হিকমত অর্থ কেউ কুরআনের তাফসীর, কেউ দ্বীনের গভীর জ্ঞান, কেউ শরীআতের বিধি-বিধানের জ্ঞান, কেউ এমন বিধিবিধানের জ্ঞান অর্জন বলেছেন, যা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণনা থেকেই জানা যায়। নিঃসন্দেহে এসব উক্তির সারমর্ম হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ।

(৪) ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোআ অনুসারে নবী-রাসূলগণ বিশেষ করে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তৃতীয় কর্তব্য হচ্ছে পরিশুদ্ধি ও পবিত্রকরণ। আয়াতে উল্লেখিত يُزَكِّيهِمْ শব্দটি زكاة শব্দ থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ পবিত্রতা। বাহ্যিক ও আত্মিক সকল প্রকার পবিত্রতার অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাহ্যিক না-পাকী সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমরাও ওয়াকিফহাল। আত্মিক না-পাকী হচ্ছে কুফর, শির্ক, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উপর ভরসা করা, অহংকার, হিংসা, শক্রতা, দুনিয়াপ্রীতি ইত্যাদি। কুরআন ও সুন্নাহতে এসব বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এ আয়াত থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হেদায়াত ও সংশোধনের ধারা দুটি, আল্লাহর রাসূল ও আল্লাহর গ্রন্থ। এ দুটি ব্যতীত কারও হেদায়াত লাভ হতে পারে না। এ আয়াতসমূহে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম অনেকগুলো দোআ করেছিলেন,

১) “আপনার নির্দেশে আমি এই জনমানবহীন প্রান্তরে নিজ পরিবার-পরিজনকে রেখে যাচ্ছি। আপনি একে একটি শান্তিপূর্ণ শহর বানিয়েদিন-যাতে এখানে বসবাস করা আতংকজনক না হয় এবং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহজলভ্য হয়।” আল্লাহ্ তা'আলা কবুল করেছেন এবং সে উষর মরু প্রান্তর মক্কা নগরীতে পরিণত হয়েছে।

২) “হে রব! শহরটিকে শান্তির ভূমি করে দিন”। অর্থাৎ হত্যা, লুন্ঠন, কাফেরদের অধিকার স্থাপন, বিপদাপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখুন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর এই দোআও কবুল হয়েছে। মক্কা মুকাররামা শুধু একটি জনবহুল নগরীই নয়, সারা বিশ্বের প্রত্যাবর্তনস্থলও বটে। বিশ্বের চারদিক থেকে মুসলিমগণ এ নগরীতে পৌছাকে সর্ববৃহৎ সৌভাগ্য মনে করে। নিরাপদ ও সুরক্ষিতও এতটুকু হয়েছে যে, আজ পর্যন্ত কোন শক্রজাতি অথবা শক্রসম্রাট এর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। আল্লাহ তা'আলা হারাম শরীফের চতুঃসীমানায় জীব-জন্তুকেও নিরাপত্তা দান করেছেন। এই এলাকায় শিকার করা জায়েয নয়।

৩) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর তৃতীয় দোআ এই যে, এ শহরের অধিবাসীদের উপজীবিকা হিসেবে যেন ফল-মূল দান করা হয়। মক্কা-মুকাররমা ও পাশ্ববর্তী ভূমি কোনরূপ বাগ-বাগিচার উপযোগী ছিল না। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছিল না পানির নাম -নিশানা। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা ইবরাহীমের দোআ কবুল করেন। মক্কার কাছেই তায়েফে যাবতীয় ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় যা মক্কার বাজারেই বেচা-কেনা হয়। এখনো সারা বিশ্ব থেকে ফলমূল মক্কায় নিয়ে আসা হয়।

৪) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর চতুর্থ দোআ হচ্ছে, “হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আমাদেরকে ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। এ দোআটিও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান ও আল্লাহভীতিরই ফল, আনুগত্যের অদ্বিতীয় কীর্তি স্থাপন করার পরও তিনি এরূপ দো'আ করেন যে, আমাদের উভয়কে আপনার আজ্ঞাবহ করুন। কারণ, আল্লাহ সম্পর্কিত জ্ঞান যার যত বৃদ্ধি পেতে থাকে সে তত বেশী অনুভব করতে থাকে যে, যথার্থ আনুগত্য তার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। এ দোআতে স্বীয় সন্তান-সন্ততিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, যিনি আল্লাহর পথে নিজের সন্তান-সন্ততিকে বিসর্জন দিতেও এতটুকু কুন্ঠিত নন, তিনিও সন্তানদের প্রতি কতটুকু আন্তরিকতা ও ভালবাসা রাখেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শারিরিকের চাইতে আত্মিক ও জাগতিকের চাইতে পরলৌকিক আরামের জন্য চিন্তা করেন বেশী। এ কারণেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দোআ করলেন - “আমার সন্তানদের মধ্য থেকে একটি দলকে পূর্ণ আনুগত্যশীল কর”।

৫) ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম ভবিষ্যত বংশধরদের দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক মংগলের জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করেছেন যে, আমার বংশধরের মধ্যে একজন নবী প্রেরণ করুন - যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের তিলাওয়াত করে শোনাবেন, কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। দোআয় নিজের বংশধরের মধ্য থেকেই নবী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর কারণ প্রথমতঃ এই যে, এটা তার সন্তানদের জন্য গৌরব-এর বিষয়। দ্বিতীয়তঃ এতে তাদের কল্যাণও নিহিত রয়েছে। কারণ স্বগোত্র থেকে নবী হলে তার চাল-চলন ও অভ্যাস-আচরণ সম্পর্কে তারা উত্তমরূপে অবগত থাকবে। ধোঁকাবাজি ও প্রবঞ্চনার সম্ভাবনা থাকবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

১২৯। হে আমাদের প্রতিপালক! আর তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রসূল প্রেরণ কর, [1] যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করবে; তাদেরকে কিতাব (ধর্মগ্রন্থ) ও হিকমত (জ্ঞান ও প্রজ্ঞা) [2] শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে (শিরক থেকে) পবিত্র করবে। [3] নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’

[1] এটা ইবরাহীম (আঃ)-এর শেষ দু'আ। তাঁর এ দু'আও আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তানের মধ্য থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করেন। আর এই জন্যই রসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি হলাম আমার পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর দু'আ, ঈসা (আঃ)-এর সুসংবাদ এবং আমার জননীর স্বপ্ন । (ফাতহুররাব্বানী ২০/১৮১-১৮৯)

[2] 'কিতাব' বলতে কুরআন মাজীদ, আর 'হিকমত' বলতে হাদীস। আয়াতসমূহ তেলাঅত বা আবৃত্তি করার পর কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কুরআন মাজীদের কেবল তেলাঅতও উদ্দিষ্ট ও বাঞ্ছিত এবং তা সওয়াব ও নেকী লাভের মাধ্যম। তবে তার অর্থ ও তাৎপর্যও যদি বুঝা যায়, তাহলে তা হবে সোনার উপর সোহাগা। কিন্তু যদি কেউ কুরআনের তরজমা ও অর্থ না জানে, তবুও তার জন্য তেলাঅতের ব্যাপারে উদাসীনতা জায়েয নয়। কারণ, তেলাঅত করাই পৃথক একটি নেকীর কাজ। তবে যথাসম্ভব তার অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করা উচিত।

[3] তেলাঅত এবং কিতাব ও হিকমতের শিক্ষার পর রসূল (সাঃ)-এর আগমনের এটা হল চতুর্থ উদ্দেশ্য। আর তা হল, তাদেরকে শিরক ও কুসংস্কারের আবর্জনা থেকে এবং চরিত্র ও কর্মের সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:২০৯ فَاِنۡ زَلَلۡتُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡکُمُ الۡبَیِّنٰتُ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۰۹﴾

অতএব তোমরা যদি পদস্খলিত হও, তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর, তবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট হুকুম পৌঁছার পরেও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তবে জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

অতঃপর স্পষ্ট দলীল প্রমাণাদী তোমাদের নিকট সমাগত হওয়ার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হয়ে যাও তাহলে জেনে রেখ, আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

But if you deviate after clear proofs have come to you, then know that Allah is Exalted in Might and Wise. Sahih International

২০৯. অতঃপর তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পর যদি তোমাদের পদস্থলন ঘটে, তবে জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০৯) অতঃপর প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে, তবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:২২০ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡیَتٰمٰی ؕ قُلۡ اِصۡلَاحٌ لَّهُمۡ خَیۡرٌ ؕ وَ اِنۡ تُخَالِطُوۡهُمۡ فَاِخۡوَانُکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ الۡمُفۡسِدَ مِنَ الۡمُصۡلِحِ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَاَعۡنَتَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۲۰﴾

দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে ইয়াতীমদের সম্পর্কে। বল, সংশোধন করা তাদের জন্য উত্তম। আর যদি তাদেরকে নিজদের সাথে মিশিয়ে নাও, তবে তারা তোমাদেরই ভাই। আর আল্লাহ জানেন কে ফাসাদকারী, কে সংশোধনকারী এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, অবশ্যই তোমাদের জন্য (বিষয়টি) কঠিন করে দিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

দুনিয়া এবং আখিরাত সম্বন্ধে। আরও তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; বল, ‘তাদের উপকার করা উত্তম’ এবং যদি তাদের সঙ্গে তোমরা একত্রে থাক, তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। বস্তুতঃ আল্লাহ জানেন কে অনিষ্টকারী আর কে কল্যাণকামী এবং আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন, নিশ্চয়ই এ বিষয়ে তোমাদেরকে কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করতেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

পার্থিব ও পারলৌকিক বিষয়ে। তারা তোমাকে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলঃ তাদের হিত সাধন করাই উত্তম; এবং যদি তোমরা তাদেরকে সম্মিলিত করে নাও তাহলে তারা তোমাদের ভাই; আর কে অনিষ্টকারী, কে হিতাকাংখী আল্লাহ তা অবগত আছেন এবং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তিনি তোমাদেরকে বিপদে ফেলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

To this world and the Hereafter. And they ask you about orphans. Say, "Improvement for them is best. And if you mix your affairs with theirs - they are your brothers. And Allah knows the corrupter from the amender. And if Allah had willed, He could have put you in difficulty. Indeed, Allah is Exalted in Might and Wise. Sahih International

২২০. দুনিয়া এবং আখেরাতের ব্যাপারে। আর লোকেরা আপনাকে ইয়াতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলুন, তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম। তোমরা যদি তাদের সাথে একত্রে থাক তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ জানেন কে উপকারকারী এবং কে অনিষ্টকারী(১)। আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে এ বিষয়ে তোমাদেরকে অবশ্যই কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।

(১) ইবনে আব্বাস বলেন, যখন “তোমরা উত্তম পদ্ধতি ব্যতীত ইয়াতিমের সম্পদের কাছেও যেও না” [সূরা আল-আনআমঃ ১৫২, আল-ইসরা: ৩৪] নাযিল হল তখন অনেকেই ইয়াতিমদের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখে। ফলে ইয়াতিমরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন এ আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা'আলা ইয়াতিমদের সাথে কিভাবে চলতে হবে তা জানিয়ে দেন। [আবু দাউদ: ২৮৭১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২০) ইহকাল ও পরকাল সম্বন্ধে। লোকে তোমাকে পিতৃহীনদের সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করে;[1] বল, তাদের উপকারের চেষ্টা করাই উত্তম। আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলে-মিশে থাক, তাহলে তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ জানেন কে হিতকারী ও কে অনিষ্টকারী। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে পারতেন। [2] নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।

[1] অন্যায়ভাবে এতীমদের মাল ভক্ষণকারীদের প্রতি যখন তিরস্কার নাযিল হল, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ভয় পেয়ে গেলেন এবং এতীমদের মাল পৃথক করে দিলেন, এমন কি পানাহারের কোন কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেলে তাও এই ভয়ে ব্যবহার করতেন না যে, আমরাও যেন (আল্লাহ কর্তৃক) নাযিলকৃত শাস্তির উপযুক্ত ও তিরস্কারে শামিল না হয়ে যাই, ফলে তা খারাপ হয়ে যেত। এই কারণেই এই আয়াত নাযিল হল। (ইবনে কাসীর)

[2] অর্থাৎ, উপকারের চেষ্টা ও সৎ উদ্দেশ্যেও তাদের মালকে তোমাদের মালের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিতেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:২৪০ وَ الَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَ یَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا ۚۖ وَّصِیَّۃً لِّاَزۡوَاجِهِمۡ مَّتَاعًا اِلَی الۡحَوۡلِ غَیۡرَ اِخۡرَاجٍ ۚ فَاِنۡ خَرَجۡنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡ مَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِنَّ مِنۡ مَّعۡرُوۡفٍ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۴۰﴾

আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তারা তাদের স্ত্রীদের জন্য এক বছরের ভরণ-পোষণের ওসিয়ত করবে বের না করে দিয়ে; কিন্তু যদি তারা (স্বেচ্ছায়) বের হয়ে যায়, তাহলে তারা নিজদের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক যা করেছে, সে ব্যাপারে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

তোমাদের মধ্যে যারা বিবিদেরকে রেখে মারা যাবে, তারা বিবিদের জন্য অসিয়ত করবে যেন এক বৎসরকাল সুযোগ-সুবিধা পায় এবং গৃহ হতে বের ক’রে দেয়া না হয়, তবে যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায়, তবে তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই তারা নিজেদের ব্যাপারে বৈধভাবে কিছু করলে; আল্লাহ মহাশক্তিধর, সুবিজ্ঞ। তাইসিরুল

এবং তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় ও স্ত্রীগণকে ছেড়ে যায় তারা যেন স্বীয় স্ত্রীগণকে বহিস্কৃত না করে এক বছর পর্যন্ত তাদেরকে ভরণ-পোষণ প্রদান করার জন্য অসীয়াত করে যায়, কিন্তু যদি তারা (স্বেচ্ছায়) বের হয়ে যায় তাহলে নিজেদের সম্বন্ধে বিহিতভাবে তারা যে ব্যবস্থা করে তজ্জন্য তোমাদের কোন দোষ নেই, এবং আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

And those who are taken in death among you and leave wives behind - for their wives is a bequest: maintenance for one year without turning [them] out. But if they leave [of their own accord], then there is no blame upon you for what they do with themselves in an acceptable way. And Allah is Exalted in Might and Wise. Sahih International

২৪০. আর তোমাদের মধ্যে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রী রেখে যাবে, তারা যেন তাদের স্ত্রীদেরকে ঘর থেকে বের না করে তাদের এক বছরের ভরণ-পোষণের অসিয়াত করে(১) কিন্তু যদি তারা বের হয়ে যায়, তবে বিধিমত নিজেদের জন্য তারা যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।

(১) স্বামীর মৃত্যুর দরুন স্ত্রীর ইদ্দতকাল ছিল এক বছর। কিন্তু পরবর্তীতে এ সূরার ২৩৪ নং আয়াতের মাধ্যমে বছরের স্থলে চার মাস দশ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় জানা আবশ্যক যে, এ আয়াতটি এ সূরার ২৩৪ নং আয়াতের পূর্বে নাযিল হয়েছিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪০) তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তারা তাদের স্ত্রীদের জন্য এই অসিয়ত করবে যে, তাদেরকে যেন এক বছর পর্যন্ত ভরণপোষণ দেওয়া হয়[1] এবং গৃহ থেকে বের করে দেওয়া না হয়, কিন্তু যদি (স্বেচ্ছায়) তারা বেরিয়ে যায়, তবে নিয়মমত নিজেদের জন্য যা করবে, তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।

[1] এই আয়াত ক্রমানুসারে পরে উল্লিখিত হলেও তা মানসুখ (রহিত)। এর রহিতকারী (২৩৪নং) আয়াত পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে, যাতে স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত চার মাস দশদিন বলা হয়েছে। এ ছাড়াও উত্তরাধিকার সম্পর্কীয় আয়াত স্ত্রীদের অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই স্বামীকে স্ত্রীর জন্য কোন প্রকারের অসিয়ত (উইল) করার প্রয়োজন নেই। না বাসস্থানের, আর না খাওয়া-পরার।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:২৬০ وَ اِذۡ قَالَ اِبۡرٰهٖمُ رَبِّ اَرِنِیۡ کَیۡفَ تُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ؕ قَالَ اَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۡ ؕ قَالَ بَلٰی وَ لٰکِنۡ لِّیَطۡمَئِنَّ قَلۡبِیۡ ؕ قَالَ فَخُذۡ اَرۡبَعَۃً مِّنَ الطَّیۡرِ فَصُرۡهُنَّ اِلَیۡکَ ثُمَّ اجۡعَلۡ عَلٰی کُلِّ جَبَلٍ مِّنۡهُنَّ جُزۡءًا ثُمَّ ادۡعُهُنَّ یَاۡتِیۡنَکَ سَعۡیًا ؕ وَ اعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۶۰﴾

আর যখন ইবরাহীম বলল ‘হে, আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনি’? সে বলল, ‘অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। আল-বায়ান

যখন ইবরাহীম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি মৃতকে কীরূপে জীবিত করবে আমাকে দেখাও’। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কি বিশ্বাস কর না’? সে আরয করল, ‘নিশ্চয়ই, তবে যাতে আমার অন্তঃকরণ স্বস্তি লাভ করে (এজন্য তা দেখতে চাই)’। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখী নাও এবং তাদেরকে বশীভূত কর। তারপর ওদের এক এক টুকরো প্রত্যেক পাহাড়ের উপর রেখে দাও, অতঃপর সেগুলোকে ডাক দাও, তোমার নিকট দৌড়ে আসবে। জেনে রেখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

এবং যখন ইবরাহীম বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আপনি কিরূপে মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে প্রদর্শন করুন। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তুমি বিশ্বাস করনা? সে বললঃ হ্যাঁ অবশ্যই, কিন্তু তাতে আমার অন্তর পরিতৃপ্ত হবে। তিনি বললেনঃ তাহলে চারটি পাখী গ্রহণ কর, তারপর ওদেরকে টুকরা টুকরা করে মিশ্রিত কর, অনন্তর প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক খন্ড রেখে দাও, অতঃপর ওদেরকে আহবান কর, ওরা তোমার নিকট দৌড়ে আসবে; এবং জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

And [mention] when Abraham said, "My Lord, show me how You give life to the dead." [Allah] said, "Have you not believed?" He said, "Yes, but [I ask] only that my heart may be satisfied." [Allah] said, "Take four birds and commit them to yourself. Then [after slaughtering them] put on each hill a portion of them; then call them - they will come [flying] to you in haste. And know that Allah is Exalted in Might and Wise." Sahih International

২৬০. আর যখন ইবরাহীম বলল, “হে আমার রব! কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন আমাকে দেখান, তিনি বললেন, তবে কি আপনি ঈমান আনেন নি? তিনি বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু আমার মন যাতে প্রশান্ত হয়!(১) আল্লাহ্‌ বললেন, তবে চারটি পাখি নিন এবং তাদেরকে আপনার বশীভূত করুন। তারপর সেগুলোর টুকরো অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন করুন। তারপর সেগুলোকে ডাকুন, সেগুলো আপনার নিকট দৌড়ে আসবে। আর জেনে রাখুন, নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়(২)।

(১) আয়াতে বর্ণিত কাহিনীর সার-সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তা'আলার কাছে আরয করলেনঃ আপনি কিভাবে মৃতকে পুনজীবিত করবেন, তা আমাকে প্রত্যক্ষ করান। আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করলেনঃ ‘এরূপ আকাংখা ব্যক্ত করার কারণ কি? আমার সর্বময় ক্ষমতার প্রতি কি আপনার আস্থা নেই? ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজের আস্থা বিবৃত করে নিবেদন করলেনঃ আস্থা ও বিশ্বাস তো অবশ্যই আছে। কেননা, আপনার সর্বময় ক্ষমতার নিদর্শন সর্বদা, প্রতি মুহুর্তেই দেখতে পাচ্ছি এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই তার নিজের সত্তা থেকে শুরু করে এ বিশ্ব জাহানের প্রতিটি অণু-পরমাণুতে এর প্রমাণ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু মানব প্রকৃতির সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে যে, অন্তরের বিশ্বাস যতই দৃঢ় হোক, চোখে না দেখা পর্যন্ত অন্তরে পূর্ণ প্রশান্তি আসতে চায় না, প্রশ্নের পর প্রশ্ন জাগতে থাকে; এটা কি করে হবে, না জানি এর প্রক্রিয়াটা কেমন?

মনের মাঝে এ ধরনের প্রশ্ন উদয় হওয়ার ফলে পূর্ণ প্রশান্তি লাভ হতে চায় না। নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ কারণেই ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম এরূপ নিবেদন করেছিলেন, যাতে মৃত ব্যক্তিকে জীবিতকরণঃ সংক্রান্ত চিন্তা দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। অধিকন্তু মনে যাতে স্থিরতা আসে; নানা প্রশ্নের জাল যেন অন্তরে বাসা বাধতে না পারে এবং মনের দৃঢ়তা যাতে বজায় থাকে। আল্লাহ্ তা'আলা তার প্রার্থনা কবুল করলেন এবং বিষয়টি প্রত্যক্ষ করাবার জন্য একটি অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন, যাতে মুশরিকদের যাবতীয় সন্দেহ-সংশয়ও দূর হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটি ছিল এই যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে চারটি পাখি ধরে নিজের কাছে রেখে সেগুলোকে এমনভাবে লালন-পালন করতে নির্দেশ দেয়া হল, যাতে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে পোষ মেনে যায় এবং ডাকামাত্রই হাতের কাছে চলে আসে। তদুপরি তিনি যেন সেগুলোকে ভালভাবে চিনতেও পারেন।

পরে নির্দেশ হল, পাখীগুলোকে জবাই করে এগুলোর হাড়-মাংস, পাখা ইত্যাদির সবগুলোকেই কিমায় পরিণত করুন, তারপর সেগুলোকে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নিজের পছন্দমত কয়েকটি পাহাড়ে এক-একটি ভাগ রেখে দিন। তারপর এদেরকে ডাকুন। তখন এগুলো আল্লাহর কুদরতে জীবিত হয়ে উড়ে আপনার কাছে চলে আসবে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তা-ই করলেন। অতঃপর এদের যখন ডাকলেন, সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সাথে হাড়, পাখার সাথে পাখা, গোশতের সাথে গোশত, রক্তের সাথে রক্ত মিলে পূর্বের রূপ ধারণ করল এবং তার কাছে উড়ে এসে উপস্থিত হল। [তাফসীরে কুরতুবী: ৪/৩১৪]

(২) পরাক্রমশালী হওয়ার মধ্যে সর্বশক্তিমানতা বিধৃত হয়েছে; আর প্রজ্ঞাময় বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন বিশেষ হেকমতের কারণেই প্রত্যেককে মৃত্যুর পর পুনজীবন প্রত্যক্ষ করানো হয় না। নতুবা প্রত্যেককে এটা প্রত্যক্ষ করানো আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। সুতরাং প্রত্যক্ষ না করানোর মধ্যে ঈমান বিল-গায়েব বা গায়েবের উপর ঈমান স্থাপন করার বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬০) আরো (স্মরণ কর) যখন ইব্রাহীম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর, আমাকে দেখাও।’[1] তিনি বললেন, ‘তুমি কি এ বিশ্বাস কর না?’ সে বলল, ‘অবশ্যই (বিশ্বাস করি)। কিন্তু আমার মনকে প্রবোধ দানের জন্য (দেখতে চাই)!’ তিনি বললেন, ‘তবে চারটি পাখী ধর এবং ঐগুলিকে (পুষে) তোমার বশীভূত কর (তা যবেহর পর টুকরা-টুকরা করে সম্মিলিত কর)। তারপর তাদের এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। অতঃপর ঐগুলিকে ডাক দাও, (দেখবে,) ঐগুলি দ্রুতগতিতে তোমার নিকট এসে উপস্থিত হবে। আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’

[1] এটা মৃতকে জীবিত করার দ্বিতীয় ঘটনা, যা দেখানো হয়েছিল একজন অতীব সম্মানিত পয়গম্বর ইবরাহীম (আঃ)-এর আশা পূরণের এবং তাঁর আন্তরিক প্রশান্তি লাভের জন্য। চারটি কোন্ কোন্ পাখি ছিল? মুফাসসিরগণ বিভিন্ন নাম উল্লেখ করেছেন। তবে নাম নির্দিষ্টীকরণে কোন লাভ নেই। এই কারণেই মহান আল্লাহ তাদের নামের উল্লেখ করেননি। চারটি বিভিন্ন প্রকারের পাখি ছিল। فَصُرْهُنَّ এর একটি অর্থ করা হয়েছে, أَمِلْهُنَّ (আকৃষ্ট করে নাও) অর্থাৎ, পোষ মানিয়ে নাও। যাতে জীবিত হওয়ার পর সহজেই চিনে নিতে পারো যে, এগুলো সেই পাখিই এবং কোন প্রকারের সন্দেহের অবকাশ না থাকে। তবে এই অর্থে ثُمَّ قَطِّعْهنَ (অতঃপর সেগুলোকে টুকরা টুকরা কর) শব্দ ঊহ্য মেনে নিতে হবে। দ্বিতীয় অর্থ করা হয়েছে, قَطِّعْهُنَّ (সেগুলোকে টুকরা টুকরা করে নাও)। এই অর্থে কোন কিছু ঊহ্য না মেনেও মানে পরিষ্কার হয়ে যায়। অর্থাৎ, সেগুলোকে টুকরা টুকরা করে তাদের অংশগুলো একে অপরের সাথে মিশ্রিত করে বিভিন্ন পাহাড়ে রেখে দাও। অতঃপর সেগুলোকে ডাকো, দেখবে তারা জীবিত হয়ে তোমার কাছে চলে আসবে। ঠিক তা-ই হল। পূর্বের ও বর্তমানের কোন কোন মুফাসসিরগণ (যাঁরা সাহাবী ও তাবেঈনদের তাফসীরের এবং সালফে-সালেহীনদের তরীকার কোন গুরুত্ব দেন না তাঁরা) فَصُرْهُنَّ এর অনুবাদ কেবল ‘পোষ মানিয়ে নাও’ করেছেন। আর পাখিগুলোকে যবেহ করার পর টুকরা টুকরা করে পাহাড়ে তার অংশগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়ার, তারপর মহান আল্লাহর মহাশক্তি দ্বারা সেগুলোর আপোসে জোড়া লাগার কথা স্বীকার করেন না। বলা বাহুল্য এ অনুবাদ সঠিক নয়। এ রকম অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করলে ঘটনার সমস্ত অলৌকিকতাই শেষ হয়ে যায় এবং মৃতকে জীবিত করে দেখানোর প্রশ্ন থেকেই যায়। অথচ এই ঘটনাকে উল্লেখ করার উদ্দেশ্যই হল, মহান আল্লাহর মৃতকে জীবিত করার গুণ ও তাঁর মহাশক্তিকে প্রমাণ করা। একটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) ইবরাহীম (আঃ)-এর এই ঘটনার উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘আমরা ইবরাহীম (আঃ) অপেক্ষা সন্দেহ করার অধিকার বেশী রাখি।’’ (বুখারী ৩৩২৭নং) আর এর অর্থ এই নয় যে, ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কুদরতে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, অতএব সন্দেহ করার অধিকার তাঁর চেয়ে আমাদের বেশী; বরং উদ্দেশ্য হল, তাঁর যে সন্দেহ হতে পারে তার খন্ডন করা। অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ) মৃতকে জীবিত করার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ করেননি। যদি তিনি এ ব্যাপারে সন্দেহ করে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই সন্দেহ করার ব্যাপারে আমাদের অধিকার তাঁর চেয়ে বেশী হত। (অধিক জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:৬ هُوَ الَّذِیۡ یُصَوِّرُکُمۡ فِی الۡاَرۡحَامِ کَیۡفَ یَشَآءُ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۶﴾

তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে তিনি চান। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

তিনিই তোমাদেরকে মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছে আকৃতি দেন, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাশীল। তাইসিরুল

তিনিই স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোনই উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রান্তশালী, বিজ্ঞানময় । মুজিবুর রহমান

It is He who forms you in the wombs however He wills. There is no deity except Him, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

৬. তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।(১) তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই; (তিনি) প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) কাতাদা বলেন, আল্লাহর শপথ, আমাদের রব তার বান্দাদেরকে মায়ের গর্ভে যেভাবে ইচ্ছা গঠন করতে পারেন। ছেলে বা মেয়ে, কালো বা গৌরবর্ণ, পূর্ণসৃষ্টি অথবা অপূর্ণসৃষ্টি। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। [1] তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

[1] সুশ্রী অথবা কুশ্রী, ছেলে অথবা মেয়ে, সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগ্যবান এবং পূর্ণাঙ্গ অথবা বিকলাঙ্গ ইত্যাদি বিচিত্রময়তা মায়ের গর্ভে যখন এককভাবে আল্লাহই সৃষ্টি করেন, তখন ঈসা (আঃ) ইলাহ কিভাবে হতে পারেন? তিনি নিজেও তো সৃষ্টির নানা পর্যায় অতিক্রম করে দুনিয়াতে এসেছেন। মহান আল্লাহ তাঁরও সৃষ্টি সম্পাদন করেছেন তাঁর মায়ের গর্ভে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৮ شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ اُولُوا الۡعِلۡمِ قَآئِمًۢا بِالۡقِسۡطِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿ؕ۱۸﴾

আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, আর ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই এবং ফেরেশতাগণ ও ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও (সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,) তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী। তাইসিরুল

আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কেহ ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং মালাইকা/ফেরেশতা, জ্ঞানবানগণ ও সুবিচারে আস্থা স্থাপনকারীগণও সাক্ষ্য দেয় যে, এই মহা পরাক্রান্ত বিজ্ঞানময় ব্যতীত আর কোনই উপাস্য নেই। মুজিবুর রহমান

Allah witnesses that there is no deity except Him, and [so do] the angels and those of knowledge - [that He is] maintaining [creation] in justice. There is no deity except Him, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

১৮. আল্লাহ সাক্ষ্য দেন(১) যে, নিশ্চয় তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আর ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও, আল্লাহ ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, (তিনি) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ যে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের সমস্ত তত্ত্ব, সত্য ও রহস্যের প্রত্যক্ষ জ্ঞান রাখেন, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে আবরণহীন অবস্থায় দেখছেন এবং যার দৃষ্টি থেকে পৃথিবী ও আকাশের কোন একটি বস্তুও গোপন নেই এটি তার সাক্ষ্য। আর তার চেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য আর কে দিতে পারে? কারণ পৃথিবীতে ইলাহের স্বত্ব দাবী করার অধিকার ও যোগ্যতা কারও নেই। তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন হক্ক ইলাহ নেই। তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা যুলুম ও অন্যায়। আল্লাহ্ তা'আলার এ সাক্ষ্যের সাথে তিনি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদেরকেও শরীক করেছেন। তারাও এ মহৎ সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। তারপর আল্লাহ তা'আলা আলেম তথা দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানীদেরকেও এ সাক্ষ্য প্রদানের জন্য গ্রহণ করে সম্মানিত করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত: আলেম তথা দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানীদের সম্মান বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। [ইবনুল কাইয়্যেম: মিফতাহু দারিস সা’আদাহ; তাফসীরে সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আল্লাহ সাক্ষ্য দেন এবং ফিরিশতাগণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই।[1] তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই; তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

[1] ‘শাহাদাত’ (সাক্ষ্য) এর অর্থ বর্ণনা ও অবহিত করা। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, তার দ্বারা তিনি আমাদেরকে স্বীয় একত্ববাদের প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) ফিরিশতাগণ এবং জ্ঞানিগণও তাঁর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেন। এতে জ্ঞানী ব্যক্তিদের বড়ই ফযীলত ও মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। কেননা মহান আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদের পাশাপাশি তাঁদেরকে উল্লেখ করেছেন। তবে জ্ঞানী বলতে তাঁরা, যাঁরা কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞানার্জন করে ধন্য হয়েছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:৬২ اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡقَصَصُ الۡحَقُّ ۚ وَ مَا مِنۡ اِلٰهٍ اِلَّا اللّٰهُ ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۶۲﴾

নিশ্চয় এটি সত্য বিবরণ। আর আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই হলেন পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাপূর্ণ। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই এটা প্রকৃত ঘটনা। আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্য ইলাহ নেই। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই এটাই সত্য বিবরণ এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই, নিশ্চয়ই সেই আল্লাহ বিজ্ঞানময়, মহাপরাক্রান্ত। মুজিবুর রহমান

Indeed, this is the true narration. And there is no deity except Allah. And indeed, Allah is the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

৬২. নিশ্চয় এগুলো সত্য বিবরণ এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন হক ইলাহ নেই। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনি তো পরম পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) নিশ্চয়ই এ হল সত্য কাহিনী। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। আর নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রতাপশালী, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১২৬ وَ مَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشۡرٰی لَکُمۡ وَ لِتَطۡمَئِنَّ قُلُوۡبُکُمۡ بِهٖ ؕ وَ مَا النَّصۡرُ اِلَّا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَکِیۡمِ ﴿۱۲۶﴾ۙ

আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল-বায়ান

এটা আল্লাহ কেবলমাত্র তোমাদের সুসংবাদের জন্য এবং তা দ্বারা তোমাদের চিত্ত-প্রশান্তির জন্য করেছেন, মূলতঃ সাহায্য তো শুধু আল্লাহরই নিকট হতে, যিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

আর আল্লাহ এই সাহায্য শুধু এ জন্যই করেছেন যেন তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয় এবং তোমাদের অন্তরে শান্তি আসে। আর সাহায্য শুধু আল্লাহর পক্ষ হতেই হয়ে থাকে, যিনি পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

And Allah made it not except as [a sign of] good tidings for you and to reassure your hearts thereby. And victory is not except from Allah, the Exalted in Might, the Wise - Sahih International

১২৬. আর এটা তো আল্লাহ তোমাদের জন্য শুধু সুসংবাদ ও তোমাদের আত্মিক প্রশান্তির জন্য করেছেন। আর সাহায্য তো শুধু পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকেই হয়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৬) আর এ (সাহায্যকে) তো আল্লাহ তোমাদের জন্য সুসংবাদ করেছেন, যাতে তোমাদের মন শান্তি পায় এবং সাহায্য শুধু পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট থেকেই আসে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:২৬ یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُبَیِّنَ لَکُمۡ وَ یَهۡدِیَکُمۡ سُنَنَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ یَتُوۡبَ عَلَیۡکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۶﴾

আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের নিকট সবিস্তারে বর্ণনা করতে তোমাদের আগেকার লোকেদের নিয়মনীতি তোমাদের দেখানোর গ্রহণের জন্য, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করার জন্য; বস্তুতঃ আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত, পরম কুশলী। তাইসিরুল

আল্লাহ তোমাদের জন্য সবকিছু পরিস্কার বর্ণনা করতে এবং তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের আদর্শসমূহ প্রদর্শন করতে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

Allah wants to make clear to you [the lawful from the unlawful] and guide you to the [good] practices of those before you and to accept your repentance. And Allah is Knowing and Wise. Sahih International

২৬. আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের কাছে বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে।(১) আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মা ও কন্যাদের হারাম হওয়ার ব্যাপারটি বিস্তারিত বর্ণনা করতে চান। আর এটাও জানিয়ে দিতে চান যে, এটা পূর্বে কখনও হালাল ছিল না। সব শরীআতেই মা ও মেয়ে হারাম ছিল। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অনুরূপভাবে তিনি চান তোমাদেরকে হিদায়াত দিতে বা মিল্লাতে ইবরাহীমীর প্রতি দিকনির্দেশ করতে এবং বর্ণনা আসার পূর্বে তোমাদের কৃত এ জাতীয় গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিতে। [বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) আল্লাহ (তাঁর বিধান) তোমাদের নিকট বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শে পরিচালনা করতে এবং তোমাদের তওবা কবুল করতে চান। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৫৬ اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِیۡهِمۡ نَارًا ؕ کُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُوۡدُهُمۡ بَدَّلۡنٰهُمۡ جُلُوۡدًا غَیۡرَهَا لِیَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا ﴿۵۶﴾

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

যারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করব, যখন তাদের গায়ের চামড়া দগ্ধ হবে, আমি সেই চামড়াকে নতুন চামড়া দ্বারা বদলে দেব যেন তারা (শাস্তির পর) শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ নিশ্চয়ই পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়। তাইসিরুল

যারা আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই আমি জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাব। যখন তার চর্ম বিদগ্ধ হবে, আমি তৎপরিবর্তে তাদের চর্ম পরিবর্তন করে দিব, যেন তারা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রান্ত, হিকমাতের অধিকারী। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who disbelieve in Our verses - We will drive them into a Fire. Every time their skins are roasted through We will replace them with other skins so they may taste the punishment. Indeed, Allah is ever Exalted in Might and Wise. Sahih International

৫৬. নিশ্চয় যারা আমাদের আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে অবশ্যই তাদেরকে আমরা আগুনে পোড়াব; যখনই তাদের চামড়া পুড়ে পাকা দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চামড়া বদলে দেব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে(১)। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে মু'আয রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টে দেয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে, এক মুহুর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আগুন তাদের চামড়াকে একদিনে সত্তর হাজার বার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, অমনি সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সাথে সাথে সেগুলো পূর্বের মত হয়ে যাবে। [ইবন কাসীরঃ ১/৫১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করে তাদেরকে আমি অচিরেই আগুনে প্রবিষ্ট করব।[1] যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে, তখনই ওর স্থলে নূতন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকে।[2] নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ, জাহান্নামে কেবল কিতাবধারীদের অস্বীকারকারীরাই যাবে না, বরং অন্য সমস্ত কাফেরদের ঠিকানাও হবে জাহান্নাম।

[2] এখানে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ও আযাবের ভয়াবহতা, তাঁর বিরতিহীনতা এবং তার একাধারে অব্যাহত থাকার বর্ণনা। কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত উক্তিতে এসেছে যে, চামড়ার এই পরিবর্তনের কাজ দিনে কয়েক শতবার হবে। (যেহেতু উষ্ণতা ও দগ্ধের জ্বালা ত্বকেই বেশী অনূভূত হয়, তাই মহান আল্লাহর এই ব্যবস্থা।) বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনায় এসেছে যে, জাহান্নামীরা জাহান্নামে এত মোটা হয়ে যাবে যে, তাদের এক কাঁধ হতে অন্য কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী সওয়ারীর তিন দিনের পথ। তাদের চামড়ার স্থূলতা হবে সত্তর হাত এবং চোয়ালের দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের মত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১০৪ وَ لَا تَهِنُوۡا فِی ابۡتِغَآءِ الۡقَوۡمِ ؕ اِنۡ تَکُوۡنُوۡا تَاۡلَمُوۡنَ فَاِنَّهُمۡ یَاۡلَمُوۡنَ کَمَا تَاۡلَمُوۡنَ ۚ وَ تَرۡجُوۡنَ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا یَرۡجُوۡنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۱۰۴﴾

আর শত্রু সম্প্রদায় অনুসন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা ব্যথা পেয়ে থাক তাহলে তারাও তো ব্যথা পাচ্ছে, যেভাবে তোমরা ব্যথা পাচ্ছ। আর তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে আশা করছ যা তারা আশা করছে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

এ (শত্রু) কওমের পশ্চাদ্ধাবণে দুর্বলতা দেখাবে না, কেননা যদি তোমরা কষ্ট পাও, তবে তোমাদের মত তারাও তো কষ্ট পায়, আর তোমরা আল্লাহ হতে এমন কিছু আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। তাইসিরুল

এবং সেই সম্প্রদায়ের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করনা; যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাক তাহলে তারাও তোমাদের অনুরূপ কষ্ট ভোগ করেছে; এবং তৎসহ আল্লাহ হতে তোমাদের যে ভরসা আছে তাদের সেই ভরসা নেই; এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

And do not weaken in pursuit of the enemy. If you should be suffering - so are they suffering as you are suffering, but you expect from Allah that which they expect not. And Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International

১০৪. আর শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহর কাছে তোমরা যা আশা কর ওরা তা আশা করে না(১)। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ আল্লাহর কাছে তোমরা সওয়াব, রহমত ও উঁচু মর্যাদা আশা কর, যা তারা করে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত ও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও” [সূরা আলে ইমরান ১৩৯] আরও বলেন, “কাজেই তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না, যখন তোমরা প্রবল; আর আল্লাহ তোমাদের সংগে আছেন এবং তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো ক্ষুন্ন করবেন না।” [সূরা মুহাম্মাদ: ৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৪) আর শত্রুদলের সন্ধানে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলো না।[1] যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহর কাছে তোমরা যা আশা কর, তারা তা করে না।[2] বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ, নিজেদের শত্রুর পিছনে ধাওয়া করার ব্যাপারে দুর্বলতা না দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পুরো দমে প্রচেষ্টা চালাও এবং তাদের অপেক্ষায় ওৎ পেতে বসে থাক।

[2] অর্থাৎ, আহত তো তোমরাও হও এবং ওরাও হয়, কিন্তু তোমাদের সমূহ আঘাতের পরিবর্তে আল্লাহর নিকট নেকী পাওয়ার আশা আছে। তারা কিন্তু কোন কিছু পাওয়ার আশা রাখে না। ফলে আখেরাতে প্রতিদান পাওয়ার জন্য যে মেহনত ও পরিশ্রম তোমরা করতে পারবে তা কাফেররা পারবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১১১ وَ مَنۡ یَّکۡسِبۡ اِثۡمًا فَاِنَّمَا یَکۡسِبُهٗ عَلٰی نَفۡسِهٖ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۱۱۱﴾

আর যে পাপ কামাই করবে, বস্ত্তত, সেতো নিজের বিরুদ্ধেই তা কামাই করবে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

এবং যে ব্যক্তি কোন পাপকাজ করে, সে নিজের বিরুদ্ধেই তা করে, বস্তুতঃ আল্লাহ মহাবিজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

এবং যে কেহ পাপ অর্জন করে, বস্তুতঃ সে স্বীয় আত্মার প্রতিই এর প্রতিক্রিয়া পৌঁছিয়ে থাকে এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

And whoever commits a sin only earns it against himself. And Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International

১১১. আর কেউ পাপ কাজ করলে সে ওটা তার নিজের ক্ষতির জন্যই করে আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১১) আর যে কেউ পাপ কাজ করে, সে তা দিয়ে নিজের ক্ষতি করে।[1] আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] এই বিষয়ের আর একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, [وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى] (الاسراء: 15) অর্থাৎ "কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না।" (বানী ইসরাঈলঃ ১৫) অর্থাৎ, কিয়ামতে কেউ কারো দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। প্রত্যেক মানুষ তা-ই পাবে, যা সে কামিয়ে সাথে নিয়ে যাবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৬৫ رُسُلًا مُّبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ لِئَلَّا یَکُوۡنَ لِلنَّاسِ عَلَی اللّٰهِ حُجَّۃٌۢ بَعۡدَ الرُّسُلِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا ﴿۱۶۵﴾

আর (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় । আল-বায়ান

রসূলগণ ছিলেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী যাতে রসূলদের আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অযুহাতের সুযোগ না থাকে। আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়। তাইসিরুল

আমি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শক রূপে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলগণের পরে লোকদের মধ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে কোন অপবাদ দেয়ার অবকাশ না থাকে এবং আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান

[We sent] messengers as bringers of good tidings and warners so that mankind will have no argument against Allah after the messengers. And ever is Allah Exalted in Might and Wise. Sahih International

১৬৫. সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি(১), যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) আল্লাহ তা'আলা ঈমানদারদের ঈমান ও সৎকর্মশীলতার পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ দান করার জন্য এবং কাফের, বেঈমান ও দূরাচারদের কুফর ও অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন কিয়ামতের শেষ বিচারের দিনে অবাধ্য ব্যক্তিরা অজুহাত উত্থাপন করতে না পারে যে, হে আল্লাহ! কোন কাজে আপনি সন্তুষ্ট আর কোন কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। জানতে পারলে অবশ্যই আমরা আপনার সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করতাম। অতএব, আমাদের অনিচ্ছাকৃত ক্রটি মার্জনীয় এবং আমরা নিরপরাধ।

পথভ্রষ্ট লোকেরা যাতে এহেন অজুহাত পেশ করতে বা বাহানার আশ্রয় নিতে না পারে, তজ্জন্য আল্লাহ তা'আলা স্পষ্ট নিদর্শনসহ নবীগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তারা সর্বস্ব উৎসর্গ করে সত্য পথ প্রদর্শন করেছেন। অতএব, এখন আর সত্য দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোন অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না, কোন বাহানারও অবকাশ নেই। আল্লাহর ওহী এমন এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ যার মোকাবেলায় অন্য কোন প্রমাণই কার্যকর হতে পারে না। কুরআনুল কারীম এমন এক অকাট্য দলীল যার সামনে কোন অযুক্তি টিকতে পারে না। এ আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য সূরা ত্বা-হা এর ১৩৪ এবং সূরা আল-কাসাস এর ৪৭নং আয়াত দেখা যেতে পারে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৫) আমি সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী[1] রসূল প্রেরণ করেছি; যাতে রসূল (আসার) পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে।[2] আর আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।

[1] বিশ্বাসী বান্দাদেরকে জান্নাত ও জান্নাতের সুখ-সম্পদের সুসংবাদবাহী এবং অবিশ্বাসী বা কাফেরদেরকে আল্লাহর আযাব এবং জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুন থেকে ভীতি-প্রদর্শন ও সতর্ককারী।

[2] অর্থাৎ, নবুঅত অথবা সুসংবাদ দান ও ভীতি প্রদর্শনের ধারাকে এই জন্যেই অব্যাহত রেখেছেন, যাতে শেষ বিচারের দিনে কেউ এ ওজর পেশ করতে না পারে যে, আমাদের নিকট তোমার কোন বার্তা পৌঁঁছেনি। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, {وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُم بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَى} অর্থাৎ, যদি আমি ওদেরকে তার পূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম তাহলে ওরা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই তোমার নিদর্শন মেনে নিতাম। (সূরা ত্বা-হা ১৩৪ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৭০ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَکُمُ الرَّسُوۡلُ بِالۡحَقِّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ فَاٰمِنُوۡا خَیۡرًا لَّکُمۡ ؕ وَ اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۱۷۰﴾

হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

হে মানুষ! রসূল তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য বিধান নিয়ে এসেছে, কাজেই তোমরা ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে, আর যদি কুফরী কর (তাহলে জেনে রেখ) আকাশসমূহে আর যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহা কুশলী। তাইসিরুল

হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালকের সন্নিধান হতে সত্যসহ রাসুল আগমন করেছেন, অতএব বিশ্বাস স্থাপন কর- তোমাদের কল্যাণ হবে, আর যদি অবিশ্বাস কর তবে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডেলে যা কিছু আছে তা আল্লাহর এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

O Mankind, the Messenger has come to you with the truth from your Lord, so believe; it is better for you. But if you disbelieve - then indeed, to Allah belongs whatever is in the heavens and earth. And ever is Allah Knowing and Wise. Sahih International

১৭০. হে লোকসকল! অবশ্যই রাসূল তোমাদের রবের কাছ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সুতরাং তোমরা ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে(১) আর যদি তোমরা কুফরী কর তবে আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্যেই হেদায়াত সীমাবদ্ধ; তার অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণ করা চরম গোমরাহী। অতএব, ইয়াহুদীদের ধ্যান-ধারণা, ধর্ম-কর্ম ভ্রান্ত ও বাতিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭০) হে মানব! রসূল তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য এনেছে, সুতরাং তোমরা বিশ্বাস কর, তোমাদের কল্যাণ হবে। আর তোমরা অবিশ্বাস করলেও আকাশ ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই[1] এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ তোমাদের কুফরী করার কারণে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। যেমন মূসা (আঃ) তাঁর স্বজাতিকে বলেছিলেন, {إِن تَكْفُرُواْ أَنتُمْ وَمَن فِي الأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ} অর্থাৎ, তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ কাফের হয়ে যাও; তবুও নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সর্বপ্রশংসিত। (সূরা ইবরাহীম ৮) আর হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন; হে আমার বান্দা সকল! তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন বৃদ্ধি লাভ হবে না। আর তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সব থেকে বড় অবাধ্য, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন হ্রাস বা ঘাটতি হবে না। হে আমার বান্দা সকল! তোমরা সকলেই যদি একটি ময়দানে একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে আমার নিকট চাও এবং প্রত্যেক মানুষকে যদি তার কামনা মোতাবেক দান করি, তাহলে তা আমার ভান্ডার ঐ পরিমাণ হ্রাস পাবে, একটি সূচ সাগরে ডুবানোর পর তার ডগায় লেগে যে পরিমাণ সাগরের পানি হ্রাস পায়। (সহীহ মুসলিমঃ বির্র অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-মায়েদা
৫:৩৮ وَ السَّارِقُ وَ السَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا کَسَبَا نَکَالًا مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۳۸﴾

আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

আর চোর ও চোরনী তাদের হাত কেটে দাও, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল

আর যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে, তোমরা তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসাবে তাদের (ডান হাত) কেটে ফেল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি, আর আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, মহা প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

[As for] the thief, the male and the female, amputate their hands in recompense for what they committed as a deterrent [punishment] from Allah. And Allah is Exalted in Might and Wise. Sahih International

৩৮. আর পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও; তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে(১)। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) চুরির শাস্তি হচ্ছে, ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কর্তন করা। তবে কতটুকু চুরি করলে সেটা করা হবে এবং কিভাবে চুরি করলে এ শাস্তি প্রয়োগ করা হবে, এর বিস্তারিত আলোচনা ফিকহ এর কিতাবসমূহ থেকে জেনে নিতে হবে। শর্তপূরণ ও বাস্তবায়নের বাধা অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না। [বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীরে কুরতুবী দ্রষ্টব্য]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) চোর এবং চোরনীর হাত কেটে ফেলো,[1] এ তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর তরফ হতে শাস্তি। বস্তুতঃ আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

[1] কতক যাহেরিয়া মযহাবের ফিকহবিদদের অভিমত এই যে, চুরির এই বিধান সকল প্রকার চুরির জন্য ব্যাপক; চাহে তা অল্পই হোক, আর বেশীই হোক এবং সুরক্ষিত জায়গা থেকে চুরি করা হোক অথবা অরক্ষিত জায়গা থেকে চুরি করা হোক, সর্বাবস্থাতেই চোরের হাত কাটা যাবে। অথচ অন্যান্য ফিকহবিদদের অভিমত এই যে, তা সুরক্ষিত জায়গা থেকে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণের মাল চুরির শর্ত আছে। পরন্তু সেই নির্দিষ্ট পরিমাণের ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মুহাদ্দিসগণের অভিমত এই যে, এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা (দীনার) অথবা তিনটি রৌপ্যমুদ্রা (দিরহাম) অথবা ঐ পরিমাণ মূল্যের কোন জিনিস চুরি করলে চোরের হাত কাটা যাবে; অন্যথা এর থেকে কম পরিমাণ হলে হাত কাটা যাবে না। অনুরূপভাবে হাত কবজি পর্যন্ত কাটা হবে; কনুই বা কাঁধ পর্যন্ত নয়, যেমন অনেকের অভিমত। (বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন হাদীস, ফিকহ ও তফসীর গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-মায়েদা
৫:১১৮ اِنۡ تُعَذِّبۡهُمۡ فَاِنَّهُمۡ عِبَادُکَ ۚ وَ اِنۡ تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَاِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۱۱۸﴾

যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ আল-বায়ান

তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দাহ আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তুমি তো মহাপরাক্রান্ত মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী।’ তাইসিরুল

আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তাহলে ওরাতো আপনার বান্দা; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলেতো আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

If You should punish them - indeed they are Your servants; but if You forgive them - indeed it is You who is the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

১১৮. আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তে আপনারই বান্দা(১), আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(২)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয় কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে এবং কিছুসংখ্যক লোককে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবঃ আমার উম্মত! তখন আমাকে বলা হবেঃ আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি সব নতুন পদ্ধতির প্রচলন করেছে। তখন আমি বলবঃ যেমন নেক বান্দা বলেছেন, “এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী। আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [বুখারীঃ ৪৬২৬]

(২) অর্থাৎ আপনি বান্দাদের প্রতি যুলুম ও অন্যায় কঠোরতা করতে পারেন না। তাই তাদেরকে শাস্তি দিলে তা ন্যায়বিচার ও বিজ্ঞতা-ভিত্তিকই হবে। আর যদি ক্ষমা করে দেন, তবে এ ক্ষমাও অক্ষমতাপ্রসূত হবে না। কেননা, আপনি মহাপরাক্রান্ত ও প্রবল। তাই কোন অপরাধী আপনার শক্তির নাগালের বাইরে যেতে পারবে না। তাদের শাস্তির ব্যাপারে আপনার ক্ষমতাই চূড়ান্ত। মোটকথা, অপরাধীদের ব্যাপারে আপনি যে রায়ই দেবেন, তাই সম্পূর্ণ বিজ্ঞজনোচিত ও সক্ষমতাসুলভ হবে। ঈসা 'আলাইহিস সালাম হাশরের ময়দানে এসব কথা বলবেন। যাতে নাসারাদেরকে সৃষ্টিকুলের সামনে কঠোরভাবে ধমকি দেয়া উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর]

এর বিপরীতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে আল্লাহ্‌ তা’আলার দরবারে দো’আ করে বলেছিলেনঃ “হে রব, এ মূর্তিগুলো অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। তাদের মধ্যে যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার লোক এবং যে আমার অবাধ্যতা করে, আপনি স্বীয় রহমতে (তাওবাহ ও সত্যের প্রতি প্রত্যাবর্তনের শক্তিদান করে অতীত গোনাহ) ক্ষমা করতে পারেন।”

হাদীসে এসেছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এ আয়াতখানি পাঠ করে হাত উঠালেন এবং দোআ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত! এবং কাঁদতে থাকলেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা জিবরীলকে বললেনঃ মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর - যদিও তিনি সর্ববিষয়ে ভাল জানেন- কেন তিনি কাঁদছেন? জিবরীল তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আর রাসূলও তার উত্তর করলেন। তখন আল্লাহ আবার বললেনঃ হে জিবরীল, মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে বল, আমরা আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব; অসন্তুষ্ট করব না। [মুসলিমঃ ২০২]

হাদীসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার কিছু উম্মতকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, আমি তখন ‘আমার সাথী’ বলতে থাকব, তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনের মধ্যে নতুন কি কি পন্থা উদ্ভাবন করেছিল। আমি তখন সেই নেক বান্দার মত বলব, যিনি বলেছিলেন, আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [বুখারী: ৪৬২৫; মুসলিম: ৩০২৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৮) তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’[1]

[1] অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তাদের ব্যাপার তোমার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। কেননা, তোমার যা ইচ্ছা তাই করতে পার। আর তোমাকে কেউই প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে না, কেউ প্রতিবাদও করতে পারে না।  {لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ}তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (আম্বিয়া ২৩) সুতরাং এ আয়াতে আল্লাহর সামনে বান্দাদের অক্ষমতা ও অসহায়তার বহিঃপ্রকাশ হয় এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব এবং তাঁর সর্বশক্তিমান ও সকল এখতিয়ারের একচ্ছত্র অধিকারী হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়। আর উক্ত উভয় কথার বরাতে ক্ষমা ও মার্জনার আবেদনও প্রকাশ হয়। সুবহানাল্লাহ! একি বিস্ময়কর ও ভাষালঙ্কারসমৃদ্ধ আয়াত! (আর এ কথার বক্তাও কত বড় দয়াবান!) একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) এক রাতে এই আয়াত পাঠ করতে করতে তাঁর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তিনি এই আয়াত বার বার পড়তেই থাকেন। এমন কি পরিশেষে ফজর হয়ে যায়! (আহমাদ ৫/১৪৯)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-আন'আম
৬:১৮ وَ هُوَ الۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهٖ ؕ وَ هُوَ الۡحَکِیۡمُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۱۸﴾

আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত। আল-বায়ান

তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকারী, তিনি হলেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে ওয়াকিফহাল। তাইসিরুল

তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনিই মহাজ্ঞানী ও সর্ব বিষয়ে ওয়াকিফহাল। মুজিবুর রহমান

And He is the subjugator over His servants. And He is the Wise, the Acquainted [with all]. Sahih International

১৮. আর তিনিই আপন বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী(১), আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলাই সবার উপর পরাক্রান্ত ও শক্তিমান এবং সবাই তার ক্ষমতাধীন ও মুখাপেক্ষী। এ কারণেই দুনিয়ার জীবনে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন মহোত্তম ব্যক্তিগণও সব কাজে সাফল্য অর্জন করতে পারে না এবং তার সব মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় না; তিনি নৈকট্যশীল রাসূলই হোন কিংবা রাজা বাদশাহ। আর তিনি যা আদেশ, নিষেধ, সাওয়াব, শাস্তি, সৃষ্টি বা নির্ধারণ যাই করেন তাই প্রজ্ঞাময়। তিনি গোপন যাবতীয় কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত। এ সবকিছুই তার তাওহীদের প্রমাণ। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) তিনি নিজের দাসদের উপর পরাক্রমশালী[1] এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, (সর্ববিষয়ে) ওয়াকিফহাল।

[1] অর্থাৎ, সমস্ত মস্তক তাঁর সামনে অবনত। বড় বড় দুর্ধর্ষ তাঁর সামনে অক্ষম। তিনি সব কিছুর উপর বিজয়ী এবং সারা সৃষ্টি তাঁর অনুগত। তিনি তাঁর প্রতিটি কর্মে সুবিজ্ঞ সুকৌশলময় এবং প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে অবগত। অতএব তিনি ভালভাবেই জানেন যে, কে তাঁর অনুগ্রহ ও পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য এবং কে অযোগ্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-আন'আম
৬:৭৩ وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ؕ وَ یَوۡمَ یَقُوۡلُ کُنۡ فَیَکُوۡنُ ۬ؕ قَوۡلُهُ الۡحَقُّ ؕ وَ لَهُ الۡمُلۡکُ یَوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ ؕ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ ؕ وَ هُوَ الۡحَکِیۡمُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۷۳﴾

আর তিনিই, আসমানসমূহ ও যমীন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ তখন হয়ে যাবে। তাঁর কথাই যথার্থ। আর তাঁর জন্যই রয়েছে সেদিনের রাজত্ব, যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তিনি গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, অধিক অবহিত। আল-বায়ান

তিনি আসমান আর যমীনকে সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেলা-তামাশার জন্য নয়)। আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামাত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে, তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে। অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল, তিনি হিকমাতওয়ালা, সবকিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত। তাইসিরুল

সেই সত্তা আকাশমন্ডল ও ভূ-মন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ ‘হাশর হও‘ সেদিন হাশর হয়ে যাবে। তাঁর কথা খুবই যথার্থ বাস্তবানুগ। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন একমাত্র তাঁরই হবে বাদশাহী ও রাজত্ব। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। তিনি হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিদিত। মুজিবুর রহমান

And it is He who created the heavens and earth in truth. And the day He says, "Be," and it is, His word is the truth. And His is the dominion [on] the Day the Horn is blown. [He is] Knower of the unseen and the witnessed; and He is the Wise, the Acquainted. Sahih International

৭৩. তিনিই যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে। তার কথাই সত্য। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিনের কর্তৃত্ব তো তারই। গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে তিনি পরিজ্ঞাত। আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৩) তিনি যথাবিধি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।[1] আর যেদিন[2] তিনি বলবেন, ‘হও’ সেদিন তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায়[3] ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।

[1] অর্থাৎ, তিনি যথা উদ্দেশ্যে ও মহান লক্ষ্যে তা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, এগুলোকে অনর্থক-লাভহীন (খেল-তামাশার জন্য) সৃষ্টি করেননি। বরং এক বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, সেই আল্লাহকে স্মরণ এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন।

[2] يَوْمَ তে জবর এসেছে وَاذْكُرُوا অথবা واتَّقُوا ঊহ্য ক্রিয়ার কারণে। অর্থাৎ, সেই দিনকে স্মরণ কর অথবা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন তাঁর كُنْ (হও) শব্দ দ্বারা তিনি যা চাইবেন, তা-ই হয়ে যাবে। এর দ্বারা যে কথাটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা হল এই যে, হিসাব-কিতাবের এই কঠিন মুহূর্তগুলোও অতি সত্বর পার হয়ে যাবে। তবে কার জন্যে? ঈমানদারদের জন্যে। অন্যদেরকে তো এ দিনটা হাজার বছর অথবা পঞ্চাশ হাজার বছরের মত ভারী মনে হবে।

[3] صُوْرٌ বলতে সেই শিঙ্গাকে বুঝানো হয়েছে, যার ব্যাপারে হাদীসে এসেছে যে, ইস্রাফীল ফিরিশতা (আঃ) সেটাকে মুখে নিয়ে মস্তক নত করে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে বলা হবে, তুমি তাতে ফুঁ দাও। (ইবনে কাসীর) আবূ দাউদ এবং তিরমিযীতে আছে যে, ‘‘সূর একটি বাঁশি, যাতে ফুঁ দেওয়া হবে। (হাদীস নং ৪৭৪২-৩২৪৪) কোন কোন উলামার মতে শিঙ্গা তিনবার ফুঁকা হবে। نَفْخَةُ الصَّعْق (যাতে সমস্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الفَنَاء (যাতে সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الإِنْشَاء (যাতে সমস্ত মানুষ পুনর্জীবিত হয়ে যাবে)। আবার কোন কোন আলেম শেষোক্ত দু’টি ফুঁকের কথাই বলেছেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »