উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল। আল-বায়ান
যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা উত্তম; বস্তুতঃ আল্লাহ অভাবমুক্ত ও পরম সহিষ্ণু। তাইসিরুল
যে দানের পশ্চাতে থাকে ক্লেশ, সেই দান অপেক্ষা উত্তম বাক্য ও ক্ষমাই উৎকৃষ্ট এবং আল্লাহ মহা সম্পদশালী, সহিষ্ণু। মুজিবুর রহমান
Kind speech and forgiveness are better than charity followed by injury. And Allah is Free of need and Forbearing. Sahih International
২৬৩. যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা উত্তম। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬৩) যে দানের পশ্চাতে (যাচ্ঞাকারীকে) কষ্ট দেওয়া হয়, তার চেয়ে (তাকে) মিষ্টি কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম। [1] আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।
[1] ভিক্ষুকের সাথে নম্রভাবে ও দয়ামাখা স্বরে কথা বলা অথবা দু’আ-বাক্য (আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে ও আমাকে তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা দানে ধন্য করুন! ইত্যাদি) দ্বারা তাকে উত্তর দেওয়াই হল ‘মিষ্টি বা উত্তম কথা’। আর ‘ক্ষমা করা’র অর্থ হল, ভিক্ষুকের অভাব-অনটন ও তার প্রয়োজনের কথা মানুষের সামনে প্রকাশ না করে তা গোপন করা। অনুরূপ ভিক্ষুকের মুখ দিয়ে যদি কোন অনুচিত কথা বেরিয়ে যায়, তা ক্ষমা করে দেওয়াও এর আওতাভুক্ত। অর্থাৎ, ভিক্ষুকের সাথে নম্রভাবে দয়ামাখা স্বরে কথা বলা, তাকে ক্ষমা করা এবং তার (ব্যাপার) গোপন করা সেই সাদাকার চেয়ে উত্তম, যে সাদাকা করার পর (যাকে সাদাকা দেওয়া হয়) তাকে মানুষের সামনে অপমানিত করে কষ্ট দেওয়া হয়। এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘উত্তম কথা সাদাকার সমতুল্য।’’ (মুসলিম ১০০৯নং) অনুরূপ নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তুমি কোনও নেকীর কাজকে তুচ্ছ ভেবো না, যদিও তা তোমার কোন ভায়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে হয়।’’ (মুসলিম ২৬২৬নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্ত্ত, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্ত্তর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপার্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তাত্থেকে ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার নিয়ত করো না, বস্তুতঃ তোমরা তা গ্রহণ কর না, যদি না তোমাদের চক্ষু বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি যা তোমাদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি, তা হতে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত খরচ কর এবং তা হতে এরূপ নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করতে মনস্থ করনা যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ করনা; এবং তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহ মহা সম্পদশালী, প্রশংসিত। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, spend from the good things which you have earned and from that which We have produced for you from the earth. And do not aim toward the defective therefrom, spending [from that] while you would not take it [yourself] except with closed eyes. And know that Allah is Free of need and Praiseworthy. Sahih International
২৬৭. হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর(১) এবং আমরা যা যমীন থেকে তোমাদের জন্য উৎপাদন করি(২) তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর; এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করো না, অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
(১) এ থেকে কোন কোন আলেম মাসআলা চয়ন করেছেন যে, পিতা পুত্রের উপার্জন ভোগ করতে পারে, এটা জায়েয। কেননা, মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের উপার্জনের একটি অংশ। অতএব, তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে সন্তান-সন্ততির উপার্জন ভক্ষণ কর।” [আবু দাউদঃ ৩৫২৮, ৩৫২৯, ইবনে মাজাহঃ ২১৩৮]
(২) أَخْرَجْنَا শব্দ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ওশরী জমিতে (যে জমিনের উৎপন্ন শষ্যের এক-দশমাংশ ইসলামী বিধান অনুযায়ী সরকারী তহবিলে জমা দিতে হয়) যে ফসল উৎপন্ন হয়, তার এক-দশমাংশ দান করা ওয়াজিব। ‘ওশর’ ও ‘খারাজ’ ইসলামী শরীআতের দুটি পারিভাষিক শব্দ। এ দুয়ের মধ্যে একটি বিষয় অভিন্ন। উভয়টিই ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভূমির উপর আরোপিত কর। পার্থক্য এই যে, ‘ওশর’ শুধু কর নয়, এতে আর্থিক ইবাদাতের দিকটিই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ; যেমন- যাকাত। এ কারণেই ওশরকে যাকাতুল-আরদ বা ‘ভূমির যাকাত’ও বলা হয়। পক্ষান্তরে খারাজ শুধু করকে বোঝায়। এতে ইবাদাতের কোন দিক নেই। মুসলিমরা ইবাদাতের যোগ্য ও অনুসারী।
তাই তাদের কাছ থেকে ভূমির উৎপন্ন ফসলের যে অংশ নেয়া হয়, তাকে ‘ওশর’ বলা হয়। অমুসলিমরা ইবাদাতের যোগ্য নয়। তাই তাদের ভূমির উপর যে কর ধাৰ্য্য করা হয়, তাকে ‘খারাজ’ বলা হয়। যাকাত ও ওশরের মধ্যে আরও পার্থক্য এই যে, স্বর্ণ, রৌপ্য ও পণ্য সামগ্রীর উপর বছরান্তে যাকাত ওয়াজিব হয়, কিন্তু ওশর জমিতে উৎপাদনের সাথে সাথেই ওশর ওয়াজিব হয়ে যায়। দ্বিতীয় পার্থক্য এই যে, জমিনে ফসল উৎপন্ন না হলে ওশর দিতে হয় না। কিন্তু পণ্য দ্রব্যে ও স্বর্ণ-রৌপ্যে মুনাফা না হলেও বছরান্তে যাকাত ফরয হবে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬৭) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট, তা দান কর। [1] এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না। [2] আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
[1] সাদাকা কবুল হওয়ার জন্য যেমন জরুরী হল যে, তা অনুগ্রহ প্রকাশ, কষ্ট দেওয়া এবং কপটতা থেকে পাক হতে হবে, (যেমন পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে) অনুরূপ এটাও জরুরী যে, তা হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে হতে হবে। তাতে তা ব্যবসা-বাণ্যিজের মাধ্যমে হোক অথবা জমি ও বাগান থেকে উৎপন্ন ফসল ও ফলাদির মাধ্যমে হোক। আর ‘‘মন্দ জিনিস--’’ কথার প্রথম অর্থ হল, এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা কবুল করেন না। হাদীসে এসেছে, ‘‘আল্লাহ পবিত্র। তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন।’’ এর দ্বিতীয় অর্থ হল, খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস। নষ্ট হয়ে যাওয়া খারাপ জিনিসও যেন আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় না করা হয়। আর {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} আয়াতের দাবীও তা-ই। এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মদীনার কোন কোন আনসার সাহাবী খারাপ হয়ে যাওয়া নিম্নমানের খেজুরগুলো সাদাকা স্বরূপ মসজিদে দিয়ে যেতেন। যার ফলে এই আয়াত নাযিল হয়। (ফাতহুল ক্বাদীরঃ তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ইত্যাদি)
[2] অর্থাৎ, যেমন তুমি নিজের জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়া খারাপ জিনিস নিতে পছন্দ করো না, অনুরূপ আল্লাহর পথেও ভাল ছাড়া খারাপ জিনিস ব্যয় করো না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। আল-বায়ান
তাতে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে (যেমন) মাক্বামে ইবরাহীম(ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গা)। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে নিরাপদ হবে। আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হাজ্জ করা লোকেদের উপর আবশ্যক যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে এবং যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের মুখাপেক্ষী নন। তাইসিরুল
ওর মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে ওর মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর উদ্দেশে এই গৃহের হাজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে এবং যদি কেহ অস্বীকার করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে প্রত্যাশামুক্ত। মুজিবুর রহমান
In it are clear signs [such as] the standing place of Abraham. And whoever enters it shall be safe. And [due] to Allah from the people is a pilgrimage to the House - for whoever is able to find thereto a way. But whoever disbelieves - then indeed, Allah is free from need of the worlds. Sahih International
৯৭. তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে(১), যেমন মাকামে ইবরাহীম(২)। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ(৩)। আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ(৪) করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য(৫)। আর যে কেউ কুফরী করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ্ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।(৬)
(১) এ আয়াতে কা'বা গৃহের তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। প্রথমতঃ এতে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন রয়েছে, আর তা হচ্ছে মাকামে ইবরাহীম। দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ ও বিপদমুক্ত হয়ে যায়; তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। তৃতীয়তঃ সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য এতে হজ্জ পালন করা ফরয; যদি এ গৃহ পর্যন্ত পৌছার শক্তি ও সামর্থ্য থাকে। কা'বা গৃহ নির্মিত হওয়ার দিন থেকে অদ্যাবধি আল্লাহ তা'আলা এর বরকতে শত্রুর আক্রমণ থেকে মক্কাবাসীদের নিরাপদে রেখেছেন। বাদশাহ আবরাহা বিরাট হস্তীবাহিনীসহ কা'বা গৃহের প্রতি ধাবিত হয়েছিল। আল্লাহ স্বীয় কুদরতে পক্ষীকূলের মাধ্যমে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেন। মক্কার হারামে প্রবেশকারী মানুষ, এমনকি জীবজন্তু পর্যন্ত বিপদমুক্ত হয়ে যায়।
(২) কা'বাগৃহের বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শনাবলীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মাকামে ইবরাহীম। যা একটি বড় নিদর্শন হওয়ার কারণেই কুরআনে একে স্বতন্ত্রভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মাকামে ইবরাহীম একটি পাথরের নাম। এর উপরে দাঁড়িয়েই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কা'বা গৃহ নিৰ্মাণ করতেন। এ পাথরের গায়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের গভীর পদচিহ্ন অদ্যাবধি বিদ্যমান। একটি পাথরের উপর পদচিহ্ন পড়ে যাওয়া আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন এবং এতে কা'বা গৃহের শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণিত হয়। এ পাথরটি কা'বা গৃহের নীচে দরজার নিকটে অবস্থিত ছিল।
যখন কুরআনে মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করার আদেশ নাযিল হয় তখন তওয়াফকারীদের সুবিধার্থে পাথরটি সেখান থেকে সরিয়ে কা'বা গৃহের সামনে সামান্য দূরে যমযম কুপের নিকট স্থাপন করা হয়। বর্তমানে মাকামে- ইবরাহীমকে সরিয়ে নিয়ে একটি কাঁচ-পাত্রে সংরক্ষিত করে দেয়া হয়েছে। তাওয়াফ-পরবর্তী নামায এর আশে পাশে পড়া উত্তম। কিন্তু শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে মাকামে ইবরাহীম সমগ্র মসজিদে হারামকেও বুঝায়। এ কারণেই ফিকহবিদগণ বলেনঃ মসজিদে হারামের যে কোন স্থানে তওয়াফ পরবর্তী সালাত পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে।
(৩) কা'বা গৃহের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। এ নিরাপত্তা মুলতঃ সৃষ্টিগতভাবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিগতভাবেই প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তরে কা'বা গৃহের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ নিহিত রেখেছেন। জাহেলিয়াত যুগের আরব ও তাদের বিভিন্ন গোত্র অসংখ্য পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্বেও কা'বা গৃহের সম্মান রক্ষার জন্যে প্রাণ উৎসর্গ করতেও কুষ্ঠিত ছিল না। হারামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে তারা পিতার হত্যাকারীকে দেখেও কিছুই বলত না।
মক্কা বিজয়ের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হারামের অভ্যন্তরে কিছুক্ষণ যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল কা'বা গৃহকে পবিত্র করা। বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন যে, এ অনুমতি কা'বা গৃহকে পবিত্রকরণের উদ্দেশ্যে কয়েক ঘন্টার জন্যেই ছিল। এরপর পূর্বের ন্যায় চিরকালের জন্যে কাবার হারামে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেনঃ আমার পূর্বে কারো জন্যে হারামের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করা হালাল ছিল না, আমার পরেও কারো জন্যে হালাল নয়। আমাকেও মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়েছিল, পরে আবার হারাম করে দেয়া হয়েছে। [বুখারী: ১৩৪৯; মুসলিম: ১৩৫৫]
তবে কাতাদা বলেন, হাসান বাসরী বলেছেন, হারাম শারীফ কাউকে আল্লাহ্র সুনির্দিষ্ট হদ বা শাস্তি বাস্তবায়নে বাধা দেয় না। যদি কেউ হারামের বাইরে অন্যায় করে হারামে প্রবেশ করে তবে তার উপর হদ বা শাস্তি কায়েম করতে কোন বাধা নেই। যদি কেউ হারামে চুরি করে কিংবা ব্যভিচার করে বা হত্যা করে তার উপর শরীআতের আইন অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে [তাবারী]।
(৪) হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায় কা'বা গৃহ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মকে হজ বলা হয়। হজের বিস্তারিত নিয়ম-পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌখিক উক্তি ও কর্মের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।
(৫) আয়াতে কা'বা গৃহের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাআলা মানব জাতির জন্য শর্তসাপেক্ষে কা'বা গৃহের হজ ফরয করেছেন। শর্ত এই যে, সে পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য থাকতে হবে। সামর্থ্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সং ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা সে কা'বা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। এছাড়া গৃহে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। দৈহিক দিক দিয়ে হাত পা ও চক্ষু কর্মক্ষম হতে হবে। কারণ, যাদের এসব অঙ্গ বিকল, তাদের পক্ষে স্বীয় বাড়ী ঘরে চলাফেরাই দুস্কর।
এমতাবস্থায় সেখানে যাওয়া ও হজের অনুষ্ঠানাদি পালন করা তার পক্ষে কিরূপে সম্ভব হবে? মহিলাদের পক্ষে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া সফর করা শরীয়ত মতে নাজায়েয। কাজেই মহিলাদের সামর্থ্য তখনই হবে, যখন তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ হজে থাকবে; নিজ খরচে করুক অথবা মহিলাই তার খরচ বহন করুক। এমনিভাবে কা'বা গৃহে পৌছার জন্যে রাস্তা নিরাপদ হওয়াও সামর্থ্যের একটি অংশ। যদি রাস্তা বিপজ্জনক হয় এবং জানমালের ক্ষতির প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে হজের সামর্থ্য নাই বলে মনে করা হবে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আয়াতে সামর্থ বলতে, বান্দার শারীরিক সুস্থতা এবং নিজের উপর কোন প্রকার কমতি না করে পাথেয় ও বাহনের খরচ থাকা বুঝায়। [তাবারী]
(৬) ইবনে আব্বাস বলেন, আয়াতে কুফর বলতে বোঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তির কাজকে, যে হজ করাকে নেককাজ হিসেবে নিল না আর হজ ত্যাগ করাকে গোনাহের কাজ মনে করল না। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, কুফরী করার অর্থ, আল্লাহ ও আখেরাতকে অস্বীকার করল। [তাবারী] মোটকথা বান্দা বড়-ছোট যে ধরনের কুফরই করুক না কেন তার জানা উচিত যে, আল্লাহ তার মুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তার সৃষ্টির কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নয়। যদি সমস্ত লোকই কাফের হয়ে যায় তবুও এতে তার রাজত্বে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না।
পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেমন, “তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ্ অভাবমুক্ত ও প্রশংসার যোগ্য।” [সূরা ইবরাহীম: ৮] আরও বলেন, “অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল। আল্লাহও (তাদের ঈমানের ব্যাপারে) ভ্রুক্ষেপহীন হলেন; আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।” [সূরা আত-তাগাবুন: ৬] সুতরাং তার বান্দাদেরকে আনুগত্য করা এবং অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ বান্দাদের উপকারার্থেই দিয়ে থাকেন। এ জন্যে দেন না যে, বান্দার আনুগত্য বা অবাধ্যতা আল্লাহর কোন ক্ষতি বা উপকার করবে। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৭) ওতে বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, (যেমন) মাক্বামে ইব্রাহীম (পাথরের উপর ইব্রাহীমের পদচিহ্ন)। যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তা লাভ করে।[1] মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ্ব করা তার (পক্ষে) অবশ্য কর্তব্য।[2] আর যে অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ জগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী। [3]
[1] যেহেতু এখানে যুদ্ধ, খুনাখুনি এবং শিকার করা --এমনকি গাছ কাটাও নিষিদ্ধ। (বুখারী-মুসলিম)
[2] ‘যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে’ অর্থাৎ, সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মত যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। অনুরূপ রাস্তার ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। মহিলার জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোন লোক) থাকাও জরুরী। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই আয়াত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল। হাদীস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হজ্জ জীবনে একবারই ফরয। (ইবনে কাসীর)
[3] সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে কুরআন ‘কুফরী’ (অস্বীকার) বলে আখ্যায়িত করেছে। এ থেকে হজ্জ ফরয হওয়ার এবং তা যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বহু হাদীসেও সাহাবীদের উক্তিতে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ্জ করে না, তার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহর জন্যই রয়েছে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে। আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরী কর তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে সব আল্লাহরই। আর আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত। আল-বায়ান
যা কিছু আকাশসমূহে ও ভূমন্ডলে আছে সমস্ত আল্লাহরই এবং অবশ্যই আমি তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আর তোমাদেরকেও আদেশ দিয়েছি যে, আল্লাহকে ভয় কর আর যদি অমান্য কর তবে আকাশসমূহে যা আছে ও ভূমন্ডলে যা আছে তা আল্লাহরই। আল্লাহ অভাবমুক্ত, অতিশয় প্রশংসিত। তাইসিরুল
নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু রয়েছে তা আল্লাহরই জন্য; এবং নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে যাদেরকে গ্রন্থ প্রদত্ত হয়েছিল - আমি তাদেরকে ও তোমাদেরকে আদেশ করেছিলাম যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এবং যদি অবিশ্বাস কর তাহলে নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই এবং আল্লাহ মহাসম্পদশালী, প্রশংসিত। মুজিবুর রহমান
And to Allah belongs whatever is in the heavens and whatever is on the earth. And We have instructed those who were given the Scripture before you and yourselves to fear Allah. But if you disbelieve - then to Allah belongs whatever is in the heavens and whatever is on the earth. And ever is Allah Free of need and Praiseworthy. Sahih International
১৩১. আসমানে যা আছে ও যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই(১); তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।(২) আর তোমরা কুফরী করলেও আসমানে যা আছে ও যমীনে যা আছে তা সবই আল্লাহর এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসাভাজন।
(১) অর্থাৎ আসমান ও জমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তা'আলার। এখানে এই উক্তিটির তিনবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। প্রথমবার বোঝানো হয়েছে, আল্লাহর সচ্ছলতা, প্রাচুর্য ও তার দরবারে অভাবহীনতা। তিনি অভাবীর কথা শুনেন ও অভাব দুর করবেন। কারও অভাব তার অজানা নয়। তিনিই সবাইকে তার আরাধ্য বিষয় দিতে সামর্থ। দ্বিতীয়বার বোঝানো হয়েছে যে, কারো অবাধ্যতায় আল্লাহ তা'আলার কোনই ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় না। তৃতীয়বার আল্লাহ্ তা'আলার অপার রহমত ও সহায়তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তোমরা যদি আল্লাহভীতি ও আনুগত্য কর, তবে তিনি তোমাদের সব কাজে সহযোগিতা করবেন, এবং অনায়াসে তা সু-সম্পন্ন করে দেবেন। তৃতীয় আয়াতে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা অপরিসীম ক্ষমতাবান। তিনি ইচ্ছা করলে এক মুহুর্তে সবকিছু পরিবর্তন করে দিতে পারেন। তোমাদের সবাইকে ধরাপৃষ্ঠ থেকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে তোমাদের স্থলে অন্যদেরকে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম। অবাধ্যদের পরিবর্তে তিনি অনুগত ও বাধ্য লোক অনায়াসে সৃষ্টি করতে পারেন। এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলার স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও অনির্ভরতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং অবাধ্যদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
(২) এ আয়াত মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ ওসিয়্যত। আগের ও পরের যাবতীয় মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ওসিয়ত। যার বড় আর কোন অসিয়্যত হতে পারে না। বিভিন্ন নবী-রাসূলগণও যুগে যুগে তাদের উম্মতদেরকে এ ওসিয়ত করেছেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও তার কাছে কেউ ওসিয়্যতের অনুরোধ জানালে এ ওসিয়্যতটি প্রথমে করতেন। হাদীসে এসেছে, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ওসিয়্যত চাইলে তিনি বললেন, তোমার কর্তব্য হবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা। আর তুমি প্রতিটি উঁচুস্থানে উঠা বা উল্লেখযোগ্য স্থানে তাকবীর বা আল্লাহর শ্ৰেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা। [তিরমিযী: ৩৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৩৩] তাছাড়া যখনই কোন সেনাদল পাঠাতেন, তাদেরকে তাকওয়ার ওসিয়্যত করতেন। [মুসলিম ১৭৩১; আবু দাউদ: ২৬১২]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩১) আকাশমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে ও তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা অবিশ্বাস করলেও আকাশমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসাভাজন।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার রব অমুখাপেক্ষী, দয়ালু। যদি তিনি চান, তোমাদেরকে সরিয়ে নেবেন এবং তোমাদের পরে যা ইচ্ছে স্থলাভিষিক্ত করবেন, যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য কওমের বংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন। আল-বায়ান
তোমার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, অত্যন্ত দয়াশীল। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং যাকে ইচ্ছে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য সম্প্রদায়ের বংশ হতে সৃষ্টি করেছেন। তাইসিরুল
তোমার রাব্ব অমুখাপেক্ষী ও দয়াশীল, তাঁর ইচ্ছা হলে তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং তোমাদের পরে তোমাদের স্থানে যাকে ইচ্ছা স্থলাভিষিক্ত করবেন, যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য এক জাতির বংশধর হতে সৃষ্টি করেছেন। মুজিবুর রহমান
And your Lord is the Free of need, the possessor of mercy. If He wills, he can do away with you and give succession after you to whomever He wills, just as He produced you from the descendants of another people. Sahih International
১৩৩. আর আপনার রব অভাবমুক্ত, দয়াশীল(১)। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসারিত করতে এবং তোমাদের পরে যাকে ইচ্ছে তোমাদের স্থানে আনতে পারেন, যেমন তোমাদেরকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন।
(১) আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, নবী ও আসমানী কিতাবসমূহের অব্যাহত ধারা এজন্য ছিল না যে, বিশ্ব পালনকর্তা আমাদের ইবাদাত ও আনুগত্যের মুখাপেক্ষী কিংবা তার কোন কাজ আমাদের আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল নয়, তিনি সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। তবে পরিপূর্ণ অমুখাপেক্ষী হওয়ার সাথে সাথে তিনি দয়া গুণেও গুনান্বিত। সমগ্র বিশ্বকে অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব দান করা এবং বিশ্ববাসীর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব প্রয়োজন অযাচিতভাবে মেটানোর কারণও তার এ দয়াগুণ। নতুবা মানুষ তথা গোটা সৃষ্টি নিজের প্রয়োজনাদি নিজে সমাধা করার যোগ্য হওয়া তো দূরের কথা, সে স্বীয় প্রয়োজনাদি চাওয়ার রীতি-নীতিও জানে না।
বিশেষতঃ অস্তিত্বের যে নেয়ামত দান করা হয়েছে, তা যে চাওয়া ছাড়াই পাওয়া গেছে, তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। কোন মানুষ কোথাও নিজের সৃষ্টির জন্য দোআ করেনি এবং অস্তিত্ব লাভের পূর্বে দোআ করা কল্পনাও করা যায় না। এমনিভাবে অন্তর এবং যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে মানুষের সৃষ্টি হাত, পা, মন-মস্তিস্ক প্রভৃতি এগুলো কোন মানব চেয়েছিল কি?
মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে (وَرَبُّكَ الْغَنِيُّ) শব্দ দ্বারা বিশ্বপালকের অমুখাপেক্ষিতা বর্ণনা করার সাথেই (ذُو الرَّحْمَةِ) যোগ করে বলা হয়েছে যে, তিনি করুণাময়ও বটে। অমুখাপেক্ষিতা আল্লাহ্ তা'আলারই বিশেষ গুণ। মানুষের মধ্যে এ গুণ নেই, কেননা, মানুষ অপরের প্রতি অমুখাপেক্ষি হয়ে গেলে সে অপরের লাভলোকসান ও সুখ-দুঃখের প্রতি মোটেই ক্ৰক্ষেপ করত না বরং অপরের প্রতি অত্যাচার ও উৎপীড়ন করতে উদ্যত হত। আল্লাহ্ তা'আলা অন্য এক আয়াতে বলেন, “মানুষ যখন নিজেকে অমুখাপেক্ষি দেখতে পায়, তখন অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যে মেতে উঠে।” [সূরা আল-আলাক ৬–৭] তাই আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে এমন প্রয়োজনাদির শিকলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দিয়েছেন, যেগুলো অপরের সাহায্য ব্যতিরেকে পূর্ণ হতে পারে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩৩) তোমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, দয়াশীল।[1] তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারিত করতে এবং তোমাদের পরে যাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন; যেমন তোমাদেরকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ হতে সৃষ্টি করেছেন। [2]
[1] তিনি তাঁর সৃষ্টির মুখাপেক্ষী নন। না তিনি তাদের (শক্তি বা অর্থের) মুখাপেক্ষী, আর না তাদের ইবাদতের তাঁর প্রয়োজন। না তাদের ঈমান তাঁর জন্য ফলপ্রসূ, আর না তাদের কুফরী তাঁর জন্য ক্ষতিকর। তবে অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়ালু। তাঁর অমুখাপেক্ষিতা স্বীয় সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়া করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না।
[2] এ হল তাঁর বিশাল শক্তি এবং সীমাহীন কুদরতের প্রকাশ। যেভাবে পূর্বের কয়েকটি সম্প্রদায়কে তিনি নিঃশেষ করে দিয়েছেন এবং তাদের স্থানে নতুন জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তিনি এখনও এই সামর্থ্য রাখেন যে, যখন ইচ্ছা তোমাদেরকে বিনাশ করবেন এবং তোমাদের স্থানে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা তোমাদের মত হবে না।
(আরো দেখুন! সূরা নিসার ১৩৩নং আয়াত, সূরা ইবরাহীমের ১৯-২০নং আয়াত, সূরা ফাত্বিরের ১৫-১৭নং আয়াত এবং সূরা মুহাম্মাদের ৩৮নং আয়াত।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। তিনি পবিত্র মহান। তিনি অমুখাপেক্ষী। আসমানসমূহ ও যমীনে যা রয়েছে তা তাঁরই। তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। তোমরা কি আল্লাহর উপর এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না? আল-বায়ান
ওরা বলে-‘‘আল্লাহ পুত্র গ্রহণ করেছেন’’। মহান পবিত্র তিনি, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, আসমানসমূহে ও যমীনে যা আছে সবই তাঁর মালিকানাধীন, (আল্লাহ পুত্র গ্রহণ করেছেন) এ ব্যাপারে তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই, তাহলে তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোনই জ্ঞান নেই? তাইসিরুল
তারা বলেঃ আল্লাহর সন্তান আছে, সুবহানাল্লাহ! তিনিতো কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁরই অধীনে রয়েছে যা কিছু আসমানসমূহে আছে এবং যা কিছু যমীনে আছে। তোমাদের কাছে এর (উক্ত দাবীর) কোন প্রমাণও নেই; আল্লাহ সম্বন্ধে কি তোমরা এমন কথা আরোপ করছো যা তোমাদের জানা নেই? মুজিবুর রহমান
They have said, "Allah has taken a son." Exalted is He; He is the [one] Free of need. To Him belongs whatever is in the heavens and whatever is in the earth. You have no authority for this [claim]. Do you say about Allah that which you do not know? Sahih International
৬৮. তারা বলে, 'আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি মহান পবিত্র!(১) তিনি অভাবমুক্ত!(২) যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যা কিছু আছে যমীনে তা তাঁরই। এ বিষয়ে তোমাদের কাছে কোন সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহর উপর এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?(৩)
(১) অর্থাৎ “আল্লাহ সকল দোষ-ত্রুটি মুক্ত।” উদ্দেশ্য, আল্লাহ তো ক্রটিমুক্ত, কাজেই তাঁর সন্তান আছে একথা বলা কেমন করে সঠিক হতে পারে। এখানে আল্লাহ তাঁর জন্য স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, অংশীদার ও সমকক্ষ নির্ধারণ করা থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন। [কুরতুবী] তিনি এ সব থেকে মুক্ত, তিনি অমুখাপেক্ষী, আর সবাই তার মুখাপেক্ষী। [ইবন কাসীর]
(২) সন্তানের সাথে অভাবমুক্তির সম্পর্ক হচ্ছে, মানুষ চায় সন্তান সন্তুতির মাধ্যমে দুনিয়াতে তার কাজ-কারবারে সাহায্য হবে। আর মৃত্যুর পর সে বেঁচে থাকবে এবং তার না থাকা জনিত অভাব কিছুটা প্রশমিত হবে। আল্লাহ তো সর্বক্ষম এবং সর্বদা আছেন। সুতরাং সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে তাঁর কোন সাহায্যের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তাঁর অবর্তমানে অভাব ঘুচানোর ব্যাপারটি আসছে না। [তাবারী]
(৩) এটা দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মারাত্মক ভয়প্রদর্শন করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপর না জেনে কিভাবে কথা বলছ? এর পরিণতি কি হতে পারে তোমরা কি ভেবে দেখেছ? তোমাদেরকে কি তিনি এমনিতে ছেড়ে দিবেন? পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও একই পদ্ধতিতে আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলার উপর প্রচণ্ড ধমকি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, “তারা বলে, দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ। যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন এবং কিয়ামতের দিন তাদের সবাই তার কাছে আসবে একাকী অবস্থায়। [সূরা মারইয়ামঃ ৮৮–৯৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৮) তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র। তিনিই অমুখাপেক্ষী।[1] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তাঁরই।[2] এ বিষয়ে তোমাদের কাছে কোন প্রমাণও নেই। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলছ, যা তোমাদের জানা নেই?
[1] আর যিনি কারোর মুখাপেক্ষী নন, তাঁর সন্তানেরও প্রয়োজন নেই। কারণ সন্তান সাহায্য-সহযোগিতার জন্যই প্রয়োজন হয়। আর তিনি যখন সহযোগিতার মুখাপেক্ষী নন, তখন তাঁর সন্তানের প্রয়োজনই বা কি?
[2] আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তু যখন তাঁরই, তখন সকল বস্তু তাঁরই দাস ও গোলাম। তার পরেও তাঁর সন্তানের আর কি প্রয়োজন আছে? সন্তানের প্রয়োজন তারই হয়, যার কোন সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আর যাঁর আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তুর উপর কর্তৃতত্ত্ব চলে, তাঁর প্রয়োজনই বা কি হতে পারে? তাছাড়া ঐ ব্যক্তি সন্তানের প্রয়োজন অনুভব করে, যে ব্যক্তি নিজের মৃত্যুর পর সম্পদের ওয়ারিস দেখতে বা বানাতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ তাআলার সত্তা কখনো ধ্বংস হবে না। সুতরাং তাঁর সন্তান নির্ধারণ করা এত বড় অপরাধ যে, সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, (تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا، أَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا) অর্থাৎ, এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা পরম দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারয়্যাম ৯০-৯১)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর মূসা বলল, ‘যদি তোমরা ও যমীনের সকলে কুফরী কর, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত’। আল-বায়ান
মূসা বলেছিল, তোমরা আর দুনিয়ার সকল লোক যদি অকৃতজ্ঞ হও (তাতে কিছুই যায় আসে না) কারণ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। তাইসিরুল
মূসা বলেছিলঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেও যদি অকৃতজ্ঞ হও তথাপি আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং প্রশংসা । মুজিবুর রহমান
And Moses said, "If you should disbelieve, you and whoever is on the earth entirely - indeed, Allah is Free of need and Praiseworthy." Sahih International
৮. আর মূসা বলেছিলেন, তোমরা এবং যমীনের সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ্ অভাবমুক্ত ও সর্বপ্রশংসিত।(১)
(১) অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে বললেনঃ যদি তোমরা এবং পৃথিবীতে যারা বসবাস করে, তারা সবাই আল্লাহ্ তা’আলার নেয়ামতসমূহের নাশোকরী করো, তবে স্মরণ রেখো, এতে আল্লাহ তা'আলার কোন ক্ষতি নেই। তিনি সবার তারিফ, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার উর্ধ্বে। তিনি আপন সত্তায় প্রশংসনীয়। তোমরা তার প্রশংসা না করলেও সব ফিরিশতা এবং সৃষ্টজগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু তার প্রশংসায় মুখর। কৃতজ্ঞতার উপকার সবটুকু তোমাদের জন্যই।
তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার জন্য তাকীদ দেয়া হয়, তা নিজের জন্য নয়; বরং দয়াবশতঃ তোমাদেরই উপকার করার জন্য। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জিন একত্রিত হয়ে তাকওয়ার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে এক জনের অন্তরে পরিণত হও তবুও তা আমার রাজত্বের সামান্যতম কিছুও বৃদ্ধি করবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জীন একত্রিত হয়ে অন্যায়ের দিক থেকে একজনের অন্তরে পরিণত হও তবুও তা আমার রাজত্বের সামান্যতম অংশও কমাতে পারবে না...”। [মুসলিমঃ ২৫৭৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) মূসা বলেছিল, ‘তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ হও; তবুও নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সর্বপ্রশংসিত।’[1]
[1] ভাবার্থ এই যে মানুষ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাতে তারই লাভ রয়েছে, আর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাতে আল্লাহর কি ক্ষতি? তিনি তো অমুখাপেক্ষী। সারা বিশ্ব অকৃতজ্ঞ হয়ে গেলে তাঁর কি আসে যায়? যেমন হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী একজন ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের একটুও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক বড় পাপী একজন ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের কিছুই কম হবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্বের ও পরের মানব ও দানব যদি একটি জায়গাতে সমবেত হয় এবং প্রত্যেকেই আমার নিকট প্রার্থনা করে, আর আমি প্রত্যেকের চাহিদা পূরণ করি, তাহলে আমার সাম্রাজ্যের ততটুকু পরিমাণ কম হবে, যতটুকু সমুদ্রে সুচ ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তা থেকে কমে যায়। (মুসলিম, কিতাবুল বির্র) সুতরাং তিনি পূত-পবিত্র, মহিমান্বিত, অভাবমুক্ত ও সর্বপ্রশংসনীয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। আর নিশ্চয় আল্লাহই তো অভাবমুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী। আল-বায়ান
আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর, আর আল্লাহ, তিনি যাবতীয় অভাব থেকে মুক্ত, যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী। তাইসিরুল
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং আল্লাহই তো অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
To Him belongs what is in the heavens and what is on the earth. And indeed, Allah is the Free of need, the Praiseworthy. Sahih International
৬৪. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তারই। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো অভাবমুক্ত, পরম প্রশংসিত।(১)
(১) এ আয়াতের শেষেও মহান রাব্বুল আলমীনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গুণবাচক নামের সমাহার আমরা লক্ষ্য করি। বলা হয়েছে যে, তিনি (لْغَنِيُّ الْحَمِيدُ) অর্থাৎ তিনি “অমুখাপেক্ষী” সবকিছুরই তিনি মালিক, আর সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী, তারই বান্দা। [ইবন কাসীর] আর তিনিই “প্রশংসার্হ” অৰ্থাৎ প্রশংসা ও স্তব-স্তুতি একমাত্র তাঁরই জন্য এবং কেউ প্ৰশংসা করুক বা না করুক সর্বাবস্থায় তিনি প্ৰশংসিত। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই।[1] আর নিশ্চয় আল্লাহ; তিনিই অভাবমুক্ত, সর্বপ্রশংসনীয়।
[1] সৃষ্টির দিক দিয়ে, মালিকানার দিক দিয়ে এবং নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দিক দিয়ে। কারণ সকল সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। যেহেতু তিনি অভাবশূন্য অমুখাপেক্ষী। সেই সত্তা সকল পরিপূর্ণতা ও ক্ষমতার অধিকারী, সকল অবস্থায় প্রশংসার যোগ্যও একমাত্র তিনিই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’। আল-বায়ান
যার কাছে কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান ছিল সে বলল- ‘আপনার দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব।’ সুলাইমান যখন তা তার সামনে রক্ষিত দেখতে পেল তখন সে বলল- ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য- আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ।’ তাইসিরুল
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বললঃ আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি ওটা আপনাকে এনে দিব। সুলাইমান যখন ওটা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন সে বললঃ এটা আমার রবের অনুগ্রহ যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় সে জেনে রাখুক যে, আমার রাব্ব অভাবমুক্ত, মহানুভব। মুজিবুর রহমান
Said one who had knowledge from the Scripture, "I will bring it to you before your glance returns to you." And when [Solomon] saw it placed before him, he said, "This is from the favor of my Lord to test me whether I will be grateful or ungrateful. And whoever is grateful - his gratitude is only for [the benefit of] himself. And whoever is ungrateful - then indeed, my Lord is Free of need and Generous." Sahih International
৪০. কিতাবের জ্ঞান যার ছিল(১), সে বলল, আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলাইমান যখন তা সামনে স্থির অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, এ আমার রব-এর অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, সে জেনে রাখুক যে, আমার রব অভাবমুক্ত, মহানুভব।(২)
(১) বলা হয়েছেঃ ‘কিতাবের জ্ঞান যার কাছে ছিল সে বলল’ এখানে কিতাবের জ্ঞান কার কাছে ছিল তার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এ ব্যক্তি কে ছিল, তার কাছে কোন বিশেষ ধরনের জ্ঞান ছিল এবং যে কিতাবের জ্ঞান তার আয়ত্ত্বাধীন ছিল সেটি কোন কিতাব ছিল, এ সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত ও নিশ্চিত কথা বলা সম্ভবপর নয়। কুরআনে বা কোন সহীহ হাদীসে এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করা হয়নি। তাফসীরকারদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলেন, সে ছিল একজন ফেরেশতা আবার কেউ কেউ বলেন, একজন মানুষই ছিল। তারপর সে মানুষটিকে চিহ্নিত করার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এভাবে কিতাব সম্পর্কেও মুফাস্সিরগণের বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করেছেন।
কেউ বলেন, এর অর্থ লাওহে মাহফুজ এবং কেউ বলেন, শরীআতের কিতাব। কিন্তু এগুলো সবই নিছক অনুমান। আর কিতাব থেকে ঐ অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কেও বিনা যুক্তি-প্রমাণে ঐ একই ধরনের অনুমানের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে এমন সম্ভাবনাও আছে যে, স্বয়ং সুলাইমান আলাইহিস সালামই তিনি। কেননা, আল্লাহর কিতাবের সর্বাধিক জ্ঞান তারই বেশী ছিল। এমতাবস্থায় গোটা ব্যাপারটাই একটা মু'জিযা এবং সাবার রাণীকে নবীসুলভ মু'জিযা দেখানোই উদ্দেশ্য ছিল। কাজেই এ ব্যাপারে আপত্তির কোন কিছু নেই। কিন্তু অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে, এ লোক সুলাইমান আলাইহিস সালামের সহচর ছিলেন, যার নাম ছিলঃ আসেফ ইবন বরখিয়া। সে হিসেবে এটা একটি কারামত ছিল। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]।
এখানে মু'জিযা ও কারামাতের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বর্ণনা করছিঃ
১. মু'জিযা নবুওয়তের দাবীর সাথে সম্পৃক্ত। আর কারামতের ব্যাপারে এ দাবী থাকতে পারে না।
২. মু'জিযা নবীর ইচ্ছাধীন। তিনি সেটা দেখাতে ও প্রকাশে সমর্থ হন। পক্ষান্তরে কারামত দেখাবার ব্যাপার নয়। আল্লাহ্ তা'আলা কারামতের মাধ্যমে নবীর উম্মতের মধ্যে যাকে ইচ্ছে সম্মানিত করেন। তারা প্ৰকাশ্য সৎকর্মশীল লোকই হয়ে থাকেন।
৩. নবীদের মু'জিযার উপরে তার উম্মাতের কারো কারামত প্রাধান্য পেতে পারে না। অর্থাৎ নবীর মু'জিযা জাতীয় হবে। নবীকে ছাড়িয়ে কেউ কারামত দেখাতে পারে না।
৪. কারামত মূলতঃ নবীর মু'জিযারই অংশ। নবীর অনুসরণ না করলে কারামত কখনো হাসিল হতে পারে না। যারা নবীর অনুসরণ করবে না তারা যদি এ ধরণের কিছু দেখায় তবে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, সেটা কোন যাদু বা সম্মোহনী অথবা ধোঁকার অংশ। [ইমাম আল-লালকায়ী, কারামাতু আওলিয়ায়িল্লাহ এর ভূমিকা; ইবন তাইমিয়্যাহ, আন-নুবুওয়াত ৫০৩; উমর সুলাইমান আল-আশকার; আর-রুসুল ওয়ার রিসালাহ]
(২) অর্থাৎ তিনি কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মুখাপেক্ষী নন। কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফলে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সামান্য পরিমাণও বৃদ্ধি পায় না। আবার কারো অকৃতজ্ঞতার ফলে তাতে এক চুল পরিমাণ কমতিও হয় না। তিনি নিজস্ব শক্তি বলে সর্বময় কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। বান্দাদের মানা না মানার উপর তাঁর কর্তৃত্ব নির্ভরশীল নয়। কুরআন মজীদে একথাটিই এক জায়গায় মূসার মুখ দিয়ে উদ্ধৃত করা হয়েছেঃ “যদি তোমরা এবং সারা দুনিয়াবাসীরা মিলে কুফরী করো তাহলেও তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না, তিনি অমুখাপেক্ষী এবং আপনি সত্তায় আপনি প্রশংসিত।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৮]
অনুরূপভাবে, নিম্নোক্ত হাদীসে কুদসীতেও এ একই বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছেঃ “মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী ব্যক্তির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে তার ফলে আমার বাদশাহী ও শাসন কর্তৃত্বে কিছুমাত্র বৃদ্ধি ঘটে না। হে আমার বান্দারা! যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী বদকার ব্যক্তিটির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে এর ফলে আমার বাদশাহীতে কোন কমতি দেখা যাবে না। হে আমার বান্দারা! এগুলো তোমাদের নিজেদেরই কর্ম, তোমাদের হিসেবের খাতায় আমি এগুলো গণনা করি, তারপর এগুলোর পুরোপুরি প্রতিদান আমি তোমাদের দিয়ে থাকি। কাজেই যার ভাগ্যে কিছু কল্যাণ এসেছে তার উচিত। আল্লাহর শোকরগুজারী করা এবং যে অন্যকিছু লাভ করেছে সে যেন নিজেকেই ভর্ৎসনা করে।” [মুসলিমঃ ২৫৭৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) গ্রন্থের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা এনে দেব।’[1] সুতরাং সুলাইমান যখন তা সম্মুখে উপস্থিত দেখল, তখন সে বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ, না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণের জন্য করে এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।’
[1] যে এ কথা বলল, সে কে ছিল? কিতাব কি ছিল? আর জ্ঞানই বা কি ছিল? যার জোরে সে এ দাবী করেছিল? এ ব্যাপারে তফসীরকারদের মাঝে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই তিনের বাস্তব একমাত্র আল্লাহই জানেন। এখানে কুরআনের শব্দ থেকে যা বুঝা যায় তা হল, সে ছিল মানুষ। তার নিকট ছিল আল্লাহর কোন কিতাবের জ্ঞান। আল্লাহ তাকে কারামত বা মু’জিযাস্বরূপ এ শক্তি দান করলেন এবং চোখের পলকে সিংহাসন এনে উপস্থিত করল। কারামত বা মু’জিযা নামই এমন কাজের যা বাহ্যিক কারণ ও নৈসর্গিক কাজের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর তা একমাত্র আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই জন্য ঐ ব্যক্তির শক্তিতে বিস্ময় প্রকাশের কিছু নেই এবং তার ঐ কিতাবী জ্ঞান কি ছিল তা নিয়ে গবেষণারও কোন প্রয়োজন নেই; যা এখানে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এ ছিল সেই ব্যক্তির পরিচয় যার দ্বারা এই কাজ সম্পাদিত হয়েছে। তাছাড়া বাস্তবে এ শুধু আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন, যিনি চোখের পলকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সুলাইমান (আঃ)ও এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। সেই জন্য তিনি যখন দেখলেন যে, সিংহাসন উপস্থিত, তখন তিনি এ ঘটনাকে প্রভুর অনুগ্রহ ও কৃপা বলেই ব্যক্ত করলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যে চেষ্টা করে সে তো তার নাফ্সের জন্য চেষ্টা করে। নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিকুল থেকে প্রয়োজনমুক্ত। আল-বায়ান
যে লোক (আল্লাহর পথে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, সে তার নিজের কল্যাণেই প্রচেষ্টা চালায়, আল্লাহ সৃষ্টিজগত থেকে অবশ্যই বে-পরওয়া। তাইসিরুল
যে কেহ (কঠোর) সাধনা করে, সে তা করে নিজেরই জন্য; আল্লাহতো বিশ্বজগত হতে অনপেক্ষ। মুজিবুর রহমান
And whoever strives only strives for [the benefit of] himself. Indeed, Allah is free from need of the worlds. Sahih International
৬. আর যে কেউ প্রচেষ্টা চালায়, সে তো নিজের জন্যই প্রচেষ্টা চালায়(১); আল্লাহ তো সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।(২)
(১) “মুজাহাদা” শব্দটির মূল অর্থ হচ্ছে, কোন বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় দ্বন্দ্ব, প্রচেষ্টা চালানো। আর যখন কোন বিশেষ বিরোধী শক্তি চিহ্নিত করা হয় না বরং সাধারণভাবে “মুজাহাদা” শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় একটি সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী দ্বন্দ্ব-সংঘাত। মুমিনকে এ দুনিয়ায় যে দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম করতে হয় তা হচ্ছে এ ধরনের। তাকে নাফস, শয়তান ও কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। [সা'দী] তাকে শয়তানের সাথে লড়াই করতে হয়, কারণ সে তাকে সর্বক্ষণ সৎকাজের ক্ষতির ভয় দেখায় এবং অসৎকাজের লাভ ও স্বাদ উপভোগের লোভ দেখিয়ে বেড়ায়। তাকে নিজের নফসের বা কুপ্রবৃত্তির সাথেও লড়তে হয়, যে তাকে সর্বক্ষণ নিজের খারাপ ইচ্ছা-আকাংখার দাসে পরিণত করে রাখার জন্য জোর দিতে থাকে।
নিজের গৃহ থেকে নিয়ে বিশ্ব-সংসারের এমন সকল মানুষের সাথে তাকে লড়তে হয় যাদের আদর্শ, মতবাদ, মানসিক প্রবণতা, চারিত্রিক নীতি, রসম-রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ধারা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিধান সত্য দ্বীনের সাথে সংঘর্ষিক। তাকে কাফেরদের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। [দেখুন: সা’দী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এ প্রচেষ্টা এক-দুদিনের নয়, সারাজীবনের। দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতি মুহুর্তের। কোন একটি ময়দানে নয়, বরং জীবনের প্রত্যেকটি ময়দানে ও প্রতি দিকে। হাসান বসরী বলেন, একজন মানুষ প্রতিনিয়ত জিহাদ করে যাচ্ছে অথচ একদিনও তরবারী ব্যবহার করেনি। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ আল্লাহ এ জন্য তোমাদের কাছে এ দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের দাবী করছেন না যে, নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার ও প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন, বরং এটিই তোমাদের উন্নতি ও অগ্রগতির পথ, তাই তিনি তোমাদের এ দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে লিপ্ত হবার নির্দেশ দিচ্ছেন। এ পথে অগ্রসর হয়ে তোমরা এমন শক্তির অধিকারী হতে পারো যার ফলে দুনিয়ায় তোমরা কল্যাণ ও সুকৃতির ধারক এবং আখেরাতে আল্লাহর জান্নাতের অধিকারী হবে। এ যুদ্ধ চালিয়ে তোমরা আল্লাহর কোন উপকার করবে না বরং তোমরা নিজেরাই উপকৃত হবে। তাছাড়া এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পার যার কথা সূরার শুরুতে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা’দী, ইবনুল কাইয়্যেম, শিফাউল আলীল: ২৪৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) যে কেউ সংগ্রাম করে, সে তো নিজের জন্যই সংগ্রাম করে; আল্লাহ অবশ্যই বিশ্বজগতের ওপর নির্ভরশীল নন। [1]
[1] এর অর্থ {مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا} এর মত। (সূরা জাসিয়াহ ১৫ আয়াত) অর্থাৎ, যে ভাল কাজ করবে তার ফল সে নিজেই ভোগ করবে। তাছাড়া আল্লাহ বান্দাদের কোন কাজের মুখাপেক্ষী নন। যদি পৃথিবীর সবাই আল্লাহর পরহেযগার বান্দা হয়ে যায়, তাহলে তার ফলে তাঁর রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধি হবে না। আর যদি সকল মানুষই আল্লাহর নাফরমান ও অবাধ্য হয়ে যায়, তাহলেও তাঁর রাজ্যে কোন প্রকার কমি আসবে না। শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে এতে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদও শামিল। কারণ, এটিও অন্যতম সৎকর্ম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি তো লুকমানকে হিকমাত* দিয়েছিলাম (এবং বলেছিলাম) যে, ‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। আর যে শুকরিয়া আদায় করে সে তো নিজের জন্যই শুকরিয়া আদায় করে এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত’। আল-বায়ান
আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম। (তাকে বলেছিলাম) যে, তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণেই করে। আর কেউ অকৃতজ্ঞ হলে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। তাইসিরুল
আমি অবশ্যই লুকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেতো তা করে নিজের জন্য এবং কেহ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহতো অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
And We had certainly given Luqman wisdom [and said], "Be grateful to Allah." And whoever is grateful is grateful for [the benefit of] himself. And whoever denies [His favor] - then indeed, Allah is Free of need and Praiseworthy. Sahih International
১২. আর অবশ্যই আমরা লুকমান(১) কে হিকমত(২) দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা করে নিজেরই জন্য এবং কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত।(৩)
(১) কোন কোন তাবে’ঈ আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত লুকমানকে আইয়্যুব আলাইহিস সালাম এর ভাগ্নে বলেছেন। আবার কেউ কেউ তার খালাতো ভাই বলে বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন তফসীরে রয়েছে যে, তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেছিলেন এবং দাউদ আলাইহিস সালাম-এর সময়েও বেঁচে ছিলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, লুকমান ছিলেন একজন হাবশী গোলাম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, মুজাহিদ, ইকরিমাহ ও খালেদ আর-রাবাঈও একথাই বলেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি ছিলেন নূবার অধিবাসী। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, লুকমান চেপ্টা নাকবিশিষ্ট, বেঁটে আকারের হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন।
সাঈদ ইবনে মুসাইয়েবের উক্তি হচ্ছে, তিনি মিসরের কালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মুজাহিদ বলেন, তিনি ফাটা পা ও পুরু ঠোঁটবিশিষ্ট হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন। এ বক্তব্যগুলো প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছে। কারণ আরবের লোকেরা কালো বর্ণের মানুষদেরকে সেকালে প্রায়ই হাবশী বলতো। আর নূবা হচ্ছে মিসরের দক্ষিণে এবং সুদানের উত্তরে অবস্থিত একটি এলাকা। তাই উক্ত বক্তব্যগুলোতে একই ব্যক্তিকে নূবী, মিসরীয় ও হাবশী বলা কেবলমাত্র শাব্দিক বিরোধ ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থের দিক দিয়ে এখানে কোন বিরোধ নেই। এ ব্যক্তি আসলে বাসিন্দা ছিলেন মাদয়ান ও আইল (বর্তমান আকাবাহ) এলাকার। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বর্ণনা অনুযায়ী লুকমান কাঠ চেরার কাজ করতেন। আবার কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি দর্জি ছিলেন।
কোন কোন গবেষক লুকমানকে আদ জাতির অন্তর্ভুক্ত ইয়ামনের বাদশাহ মনে করতো। তাদের মতে আদ জাতির ওপর আল্লাহর আযাব নাযিল হবার পর হূদ আলাইহিস সালামের সাথে তাদের যে ঈমানদার অংশটি বেঁচে গিয়েছিল লুকমান ছিলেন তাঁদেরই বংশোদ্ভূত। ইয়ামনে এ জাতির যে শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তিনি ছিলেন তার অন্যতম শাসক ও বাদশাহ। কিন্তু প্ৰবীণ সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্য বর্ণনাগুলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সম্ভবত: এর কারণ হচ্ছে, ইতিহাসে লুকমান ইবন আদ নামক এক ব্যক্তি প্ৰসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। কোন কোন গবেষক তাকে এই লুকমান হাকীমই ধরে নিয়েছেন। আল্লামা সুহাইলী এ সন্দেহ অপনোদন করে বলেছেন যে, লুকমান হাকীম ও লুকমান ইবনে আদ দু'জন আলাদা ব্যক্তি। তাদেরকে এক ব্যক্তি মনে করা ঠিক নয়।
লুকমান কোন নবী ছিলেন না; বরং ওলী, প্রজ্ঞাবান ও বিশিষ্ট মনীষী ছিলেন। ইবনে কাসীর বলেন যে, প্রাচীন ইসলামী মনীষীবৃন্দ এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি নবী ছিলেন না। কেবল ইকরিমা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু এর বর্ণনাসূত্র বা সনদ দুর্বল। ইমাম বগবী বলেন, একথা সর্বসম্মত যে, তিনি বিশিষ্ট ফকীহ ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন, নবী ছিলেন না। ইবনে কাসীর আরো বলেন, তার সম্পর্কে কাতাদাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ লুকমানকে নবুওয়ত ও হেকমত বা প্রজ্ঞা-দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেন। তিনি হেকমতই গ্ৰহণ করেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, তাকে নবুওয়ত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তিনি আরয করলেন যে, “যদি আমার প্রতি এটা গ্ৰহণ করার নির্দেশ হয়ে থাকে, তবে তা শিরোধার্য। অন্যথায় আমাকে ক্ষমা করুন।”
কাতাদাহ্ থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, লুকমানের নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আপনি হেকমতকে নবুওয়ত থেকে সমধিক গ্রহণযোগ্য কেন মনে করলেন, যখন আপনাকে যে কোন একটা গ্ৰহণ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেন যে, নবুওয়ত বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদ। যদি তা আমার ইচ্ছা ব্যতীত প্রদান করা হতো, তবে স্বয়ং মহান আল্লাহ তার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন যাতে আমি সে কর্তব্যসমূহ পালন করতে সক্ষম হই। কিন্তু যদি আমি তা স্বেচ্ছায় চেয়ে নিতাম, তবে সে দায়িত্ব আমার উপর বর্তাতো। বর্ণিত আছে যে, দাউদ আলাইহিস সালাম-এর আবির্ভাবের পূর্বে লুকমান শরীয়তী মাসআলাসমূহ সম্পর্কে জনগণের নিকট ফতোয়া দিতেন। দাউদ আলাইহিস সালাম-এর নবুওয়ত প্ৰাপ্তির পর তিনি এ ফতোয় প্রদান কার্য পরিত্যাগ করেন এই বলে যে, এখন আর তার প্রয়োজন নেই।
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি ইসরাঈল গোত্রের বিচারপতি ছিলেন। লুকমানের বহু জ্ঞানগর্ভ বাণী লিপিবদ্ধ আছে। কোন কোন তাবেয়ী বলেন, আমি লুকমানের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দশ হাজারের চাইতেও বেশী অধ্যায় অধ্যায়ন করেছি। একদিন লুকমান এক বিরাট সমাবেশে উপস্থিত জনমণ্ডলীকে বহু জ্ঞানগর্ভ কথা শোনাচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলো যে, আপনি কি সে ব্যক্তি -যে আমার সাথে অমুক বনে ছাগল চরাতো? লুকমান বলেন, হ্যাঁ-আমিই সে লোক। অতঃপর লোকটি বললো, তবে আপনি এ মর্যাদা কিভাবে লাভ করলেন যে, আল্লাহর গোটা সৃষ্টিকুল আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং আপনার বাণী শোনার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে এসে জমায়েত হয়? উত্তরে লুকমান বললেন যে, এর কারণ আমার দুটি কাজ-[এক] সর্বদা সত্য বলা, [দুই] অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, লুকমান বলেছেন, এমন কতগুলো কাজ আছে যা আমাকে এর স্তরে উন্নীত করেছে। যদি তুমি তা গ্রহণ কর, তবে তুমিও এ মর্যাদা ও স্থান লাভ করতে পারবে। সে কাজগুলো এইঃ নিজের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখা এবং মুখ বন্ধ করা, হালাল জীবিকাতে তুষ্ট থাকা, নিজের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা, সত্য কথায় অটল থাকা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা, মেহমানের আদর-আপ্যায়ন ও তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, প্রতিবেশীর প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় কাজ ও কথা পরিহার করা। [ইবন কাসীর: আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ]
(২) হেকমত অর্থ প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, পাণ্ডিত্য, যুগ ও সময়োপযোগী কথা বলা ও কাজ করার যোগ্যতা ইত্যাদি। [তাবারী, ইবন কাসীর বাগভী]
(৩) অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফারী তার নিজের জন্য ক্ষতিকর। এতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না। তিনি অমুখাপেক্ষী। কারো কৃতজ্ঞতার মুখাপেক্ষী নন। কারো কৃতজ্ঞতা তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বে কোন বৃদ্ধি ঘটায় না। বান্দার যাবতীয় নিয়ামত যে একমাত্র তাঁরই দান, কারো অকৃতজ্ঞতা ও কুফৱী এ জাজ্জ্বল্যমান সত্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। কেউ তাঁর প্রশংসা করুক বা নাই করুক তিনি আপনা আপনিই প্রশংসিত। বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি অণু-কণিকা তাঁর পূর্ণতা ও সৌন্দর্য এবং তাঁর স্রষ্টা ও অন্নদাতা হবার সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং প্রত্যেকটি সৃষ্ট বস্তু নিজের সমগ্র সত্তা দিয়ে তাঁর প্রশংসা গেয়ে চলছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম[1] (আর বলেছিলাম), ‘তুমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[2] যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা নিজেরই জন্য করে এবং কেউ অকৃতজ্ঞতা করলে নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।’
[1] লুকমান আল্লাহর একজন নেক বান্দা ছিলেন, যাঁকে আল্লাহ তাআলা হিকমত অর্থাৎ, সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি এবং দ্বীনী ইলমে উচ্চ স্থান দান করেছিলেন। একদা তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসা করল যে, ‘আপনি এই জ্ঞান-বুদ্ধি কিভাবে অর্জন করলেন?’ তার উত্তরে তিনি বললেন, ‘সত্যবাদিতা ব্যবহার করে, আমানত রক্ষা করে, বাজে কথা থেকে দূরে থেকে এবং নীরবতা অবলম্বন করে।’ তাঁর প্রজ্ঞা ও হিকমত পূর্ণ একটি ঘটনা এ রকমও প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি একজন দাস ছিলেন। একদা তাঁকে তাঁর মালিক বললেন, ‘ছাগল যবেহ করে তার মধ্য হতে সর্বোৎকৃষ্ট দুই টুকরো কেটে নিয়ে এস।’ সুতরাং তিনি জিভ ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে এসে দিলেন। অন্য এক দিন তাঁর মালিক তাঁকে ছাগল যবেহ করে তার মধ্য হতে সব থেকে নিকৃষ্ট দুই টুকরো নিয়ে আসার আদেশ করলে তিনি পুনরায় জিভ ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে উপস্থিত হলেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘জিভ ও হৃৎপিণ্ড যদি ঠিক থাকে, তাহলে তা সর্বোৎকৃষ্ট জীব। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার চেয়ে নিকৃষ্ট জীব আর কিছু হতে পারে না। (ইবনে কাসীর)
[2] কৃতজ্ঞতা বা শুক্র এর অর্থ হল, আল্লাহর নিয়ামতের উপর তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর আদেশ মেনে চলা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা আল্লাহর; নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। আল-বায়ান
আকাশমন্ডলী আর যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তিনি সকল অভাব-মুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী। তাইসিরুল
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
To Allah belongs whatever is in the heavens and earth. Indeed, Allah is the Free of need, the Praiseworthy. Sahih International
২৬. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই; নিশ্চয় আল্লাহ, তিনি তো অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত।(১)
(১) অর্থাৎ কেবল এতটুকুই সত্য নয় যে, পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর স্রষ্টা আল্লাহ বরং পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যেসব জিনিস পাওয়া যায় তিনিই এসবের মালিক। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা আল্লাহরই।[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত,[2] প্রশংসার্হ। [3]
[1] অর্থাৎ, সে সবের সৃষ্টিকর্তাও তিনি, মালিকও তিনি এবং বিশ্ব-জগতের পরিচালকও তিনি।
[2] সকল কিছু হতে অমুখাপেক্ষী। অর্থাৎ, সকল সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
[3] তাঁর সকল প্রকার সৃষ্ট বস্তুতে। সুতরাং তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং যে আহ্কাম অবতীর্ণ করেছেন, তার উপর আকাশ ও পৃথিবীর সকল প্রশংসার অধিকারী একমাত্র তিনিই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মানুষ, তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী আর আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত। আল-বায়ান
হে মানুষ! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ তিনি তো অভাবহীন, প্রশংসিত। তাইসিরুল
হে লোক সকল! তোমরাতো আল্লাহর মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
O mankind, you are those in need of Allah, while Allah is the Free of need, the Praiseworthy. Sahih International
১৫. হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী; আর আল্লাহ, তিনিই অভাবমুক্ত, প্ৰশংসিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) হে মানুষ! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী,[1] কিন্তু আল্লাহ; তিনিই অভাবমুক্ত,[2] প্রশংসার্হ। [3]
[1]ناس (মানুষ) শব্দটি সাধারণ অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যাতে সাধারণ ও বিশেষ ব্যক্তি; এমনকি আম্বিয়া ও স্বালেহীন সকলকে বোঝানো হয়েছে। সকলেই আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।
[2] তিনি এমন অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত যে, যদি সকল মানুষ তাঁর অবাধ্য হয়ে যায়, তাহলে তাঁর রাজত্বে বিন্দুমাত্র হ্রাস পাবে না। আর যদি সকলে তাঁর অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাঁর শক্তিতে কোন বৃদ্ধি হবে না। বরং অবাধ্যতা করাতে মানুষের নিজেরই ক্ষতি এবং ইবাদত ও আনুগত্য করাতে মানুষের নিজেরই উপকার সাধন হয়।
[3] অর্থাৎ, তিনি আপন নিয়ামতের কারণে প্রশংসার্হ। সুতরাং তিনি বান্দাগণকে যে সকল নিয়ামত প্রদান করেছেন তার ফলে তিনি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার অধিকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমরা যদি কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী; আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না এবং তোমরা যদি শোকর কর তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন; আর কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করে না। তারপর তোমাদের রবের দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে। তখন তোমরা যে আমল করতে তিনি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তা তিনি সম্যক অবগত। আল-বায়ান
তোমরা যদি কুফুরী কর তবে (জেনে রেখ), আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর বান্দাহদের জন্য কুফুরী আচরণ পছন্দ করেন না, তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে তোমাদের জন্য তা তিনি পছন্দ করেন। একের (পাপের) বোঝা অন্যে বহন করবে না। শেষমেষ তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার কাছেই ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন তোমরা যা করছিলে। তিনি তো অন্তরের খবর পর্যন্ত জানেন। তাইসিরুল
তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন, তিনি তাঁর বান্দাদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেননা। যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তাহলে তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। একের বোঝা অন্যে বহন করবেনা। অতঃপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তোমরা যা করতে তিনি তোমাদেরকে তা অবগত করাবেন। অন্তরে যা আছে তা তিনি সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান
If you disbelieve - indeed, Allah is Free from need of you. And He does not approve for His servants disbelief. And if you are grateful, He approves it for you; and no bearer of burdens will bear the burden of another. Then to your Lord is your return, and He will inform you about what you used to do. Indeed, He is Knowing of that within the breasts. Sahih International
৭. যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন।(১) আর তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে তিনি তোমাদের জন্য তা-ই পছন্দ করেন। আর কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের রবের কাছেই তোমাদের ফিরে যাওয়া। তখন তোমরা যা আমল করতে তা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তিনি তা সম্যক অবগত।
(১) অর্থাৎ তোমাদের কুফরীর কারণে তাঁর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। তোমাদের ঈমান দ্বারাও আল্লাহর কোন উপকার হয় না তোমরা মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ আছেন এবং থাকবেন। তাঁর নিজের ক্ষমতায় তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। তোমাদের মানা বা না মানাতে কিছু আসে যায় না। হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা, যদি তোমরা আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার কোন সর্বাধিক পাপিষ্ঠ ব্যক্তির মত হয়ে যাও তাতেও আমার বাদশাহীর কোন ক্ষতি হবে না।” [মুসলিম: ২৫৭৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন।[1] তিনি তাঁর দাসদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না। যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তাহলে তিনি তোমাদের কৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন।[2] আর একের ভার অন্যে বহন করবে না। অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে এবং তোমরা যা করতে, তিনি তোমাদেরকে তা অবগত করাবেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরে যা আছে তা সম্যক অবগত।
[1] এর ব্যখ্যার জন্য সূরা ইবরাহীমের ৮নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
[2] অর্থাৎ, মানুষ যদিও কুফর (অকৃতজ্ঞতা) আল্লাহর (সৃষ্টিগত) ইচ্ছায় করে, কারণ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ব্যতিরেকে কোন কাজই হয় না এবং হওয়া সম্ভবও নয়; তবুও তিনি কুফরীকে পছন্দ করেন না। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র পথ শুকরের পথ, কুফরের নয়। অর্থাৎ তাঁর ইচ্ছা ও তাঁর সন্তুষ্টি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। এর পূর্বেও এ বিষয়টির বর্ণনা কোন কোন স্থানে করা হয়েছে। সূরা বাক্বারার ২৫৩নং আয়াতের শেষাংশের টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমরাই তো তারা, তোমাদের আহবান করা হচ্ছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কার্পণ্য করছে। তবে যে কার্পণ্য করছে সে তো নিজের প্রতিই কার্পণ্য করছে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য কোন কওমকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর তারা তোমাদের অনুরূপ হবে না। আল-বায়ান
দেখ, তোমরা তো তারাই, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য ডাক দেয়া হচ্ছে, তখন তোমাদের কিছু লোক কৃপণতা করছে। যে কৃপণতা করে, সে কৃপণতা করে কেবল নিজের আত্মার সাথে। আল্লাহ তো অভাবহীন আর তোমরাই অভাবী। তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে নিয়ে আসবেন, তখন তারা তোমাদের মত হবে না। তাইসিরুল
দেখ, তোমরাইতো তারা যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছ; যারা কার্পণ্য করে তারাতো কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত, যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মত হবেনা। মুজিবুর রহমান
Here you are - those invited to spend in the cause of Allah - but among you are those who withhold [out of greed]. And whoever withholds only withholds [benefit] from himself; and Allah is the Free of need, while you are the needy. And if you turn away, He will replace you with another people; then they will not be the likes of you. Sahih International
৩৮. দেখ, তোমরাই তো তারা যাদেরকে আল্লাহ্র পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের কেউ কেউ কার্পণ্য করছে। তবে যে কার্পণ্য করেছে সে তো কার্পণ্য করছে নিজেরই প্রতি।(১) আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্ৰস্ত। আর যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারপর তারা তোমাদের মত হবে না।(২)
(১) অর্থাৎ তোমাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদের কিছু অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করার দাওয়াত দেয়া হলে তোমাদের কেউ কেউ এতে কৃপণতা করে। যে ব্যক্তি এতেও কৃপণতা করে, সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করে না; বরং এর মাধ্যমে সে নিজেরই ক্ষতি করে। [ফাতহুল কাদীর, সা'দী]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামের সামনে এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন, তখন তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্, তারা কোন জাতি, যাদেরকে আমাদের স্থলে আনা হবে, অতঃপর আমাদের মত শরীয়তের বিধানাবলীর প্রতি বিমুখ হবে না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মজলিসে উপস্থিত সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উরুতে হাত মেরে বললেনঃ সে এবং তার জাতি। যদি সত্য দ্বীন সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ নক্ষত্রেও থাকত, (যেখানে মানুষ পৌছতে পারে না।) তবে পারস্যের কিছু সংখ্যক লোক সেখানেও পৌঁছে সত্যদ্বান হাসিল করতো এবং তা মেনে চলত। [সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১২৩, তিরমিযী: ৩২৬০, ৩২৬১]
এখানে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোন সম্প্রদায় আল্লাহর দ্বীন থেকে, রাসূলের সুন্নাত থেকে দূরে সরে যায়, রাসূলের দ্বীনের সাহায্য করতে পিছপা হয়, তবে আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে এর স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারা হতে পারে আরব, হতে পারে অনারব, হতে পারে কাছে কিংবা দূরের কোন জাতি। ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে তাঁর দ্বীনের জন্য এ খেদমত নিয়েছেন। তারা সবাই পারস্য কিংবা কোন সুনির্দিষ্ট এক জাতি ছিল না।
পারস্যের লোকদের মধ্য থেকে যারা এ কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন তাদের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছেন, ইমাম বুখারী, তিরমিযী, ইবন মাজাহ, নাসায়ী সহ আরও অনেকে। তারা সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী ছিলেন। এ ব্যাপারে শী’আ, রাফেযী, মু'তাযিলা কিংবা খারেজীদের কোন সামান্যতমও খেদমত ছিল না। বরং তাদের মতবাদ খণ্ডন করতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের যে সমস্ত ইমাম পরিশ্রম করেছেন এ আয়াত তাদেরকেও শামিল করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) তোমরাই তো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে[1] অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে; যারা কার্পণ্য করে, তারা তো কার্পণ্য করে নিজেদের প্রতি।[2] আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।[3] যদি তোমরা বিমুখ হও,[4] তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না। [5]
[1] অর্থাৎ, কিয়দংশ যাকাত হিসেবে এবং কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় কর।
[2] অর্থাৎ, নিজেকেই আল্লাহর পথে ব্যয় করার পুণ্য থেকে বঞ্চিত রাখে।
[3] অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যয় করার উৎসাহ এই কারণে দেন না যে, তিনি তোমাদের ধন-সম্পদের মুখাপেক্ষী। তা আদৌ নয়। তিনি তো ধনী ও অমুখাপেক্ষী। তিনি তোমাদেরই লাভের জন্য তোমাদেরকে এই নির্দেশ দেন। যাতে প্রথমতঃ তোমাদের নাফসের পবিত্রতা সাধন হয়। দ্বিতীয়তঃ তোমাদেরই অভাবী ভাইদের প্রয়োজন পূরণ হয়। আর তৃতীয়তঃ তোমরা শত্রুদের উপর বিজয়ী ও উন্নত থাক। কাজেই আল্লাহর রহমত ও তাঁর সাহায্যের মুখাপেক্ষী তোমরাই। তিনি তোমাদের মুখাপেক্ষী নন।
[4] অর্থাৎ, ইসলাম থেকে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন কর।
[5] বরং তোমাদের চেয়েও বেশী আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যশীল এবং আল্লাহর পথে অনেক ব্যয়কারী হবে। নবী করীম (সাঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সালমান ফারসী (রাঃ)-এর কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘‘এ থেকে লক্ষ্য এই (সালমান) এবং তাঁর গোত্রের লোক। শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যদি ঈমান ‘সুরাইয়া’ তারকাগুচ্ছের সাথে ঝুলে থাকত, তবুও তা পারস্যের কিছু মানুষ অর্জন করে নিত। (তিরমিযী, আল্লামা আলবানী তাঁর সহীহাতেও উল্লেখ করেছেন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ নিশ্চয় অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। আল-বায়ান
যারা কৃপণতা করে আর মানুষকে কৃপণতা করার আদেশ দেয় এবং যে ব্যক্তি (আল্লাহর পথ হতে) মুখ ফিরিয়ে নেয় (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত। তাইসিরুল
যারা কার্পন্য করে এবং মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়; যে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহতো অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
[Those] who are stingy and enjoin upon people stinginess. And whoever turns away - then indeed, Allah is the Free of need, the Praiseworthy. Sahih International
২৪. যারা কার্পণ্য করে ও মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয় এবং যে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে জেনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) যারা কার্পণ্য করে এবং মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়; যে মুখ ফিরিয়ে নেয়[1] (সে জেনে রাখুক যে), নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে। কেননা, প্রকৃত কার্পণ্য তো এটাই।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে* উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। আল-বায়ান
তোমরা যারা আল্লাহ (’র রহমত) ও শেষ দিবসের (সাফল্যের) প্রত্যাশী তাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে তাদের [অর্থাৎ ইবরাহীম (আঃ) তাঁর অনুসারীদের] মধ্যে। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। তাইসিরুল
তোমরা যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রত্যাশা কর নিশ্চয়ই তাদের জন্য তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। কেহ মুখ ফিরিয়ে নিলে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহতো অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
There has certainly been for you in them an excellent pattern for anyone whose hope is in Allah and the Last Day. And whoever turns away - then indeed, Allah is the Free of need, the Praiseworthy. Sahih International
*ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে
৬. যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে ওদের মধ্যে(১) উত্তম আদর্শ। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয় আল্লাহ্, তিনি অভাবমুক্ত, সপ্ৰশংসিত।
(১) অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদের মধ্যে। [কুরতুবী, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নিশ্চয়ই তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রত্যাশা কর,[1] তাদের জন্য তাদের মধ্যে[2] রয়েছে উত্তম আদর্শ। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে[3] সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।
[1] কেননা, এই ধরনের লোকরাই আল্লাহকে এবং আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। এরাই অবস্থাসমূহ ও ঘটনাবলী থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।
[2] অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর অনুসারী সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে। এর পুনরাবৃত্তি তাকীদ স্বরূপ করা হয়েছে।
[3] অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ)-এর আদর্শ হতে মুখ ফিরিয়ে নিলে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএটি এ জন্য যে, তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসত, অথচ তারা বলত, মানুষই কি আমাদের পথ প্রদর্শন করবে? অতঃপর তারা কুফরী করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ বে-পরওয়াই দেখালেন এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত পরম, প্রশংসিত। আল-বায়ান
এর কারণ এই যে, তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘(আমাদের মতই) মানুষ কি আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে?’ কাজেই তারা অস্বীকার করল আর মুখ ফিরিয়ে নিল। তখন আল্লাহও তাদের ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে গেলেন, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত। তাইসিরুল
তা এ জন্য যে, তাদের নিকট যখন তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসহ আসতো তখন তারা বলতঃ মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দিবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল; কিন্তু এতে আল্লাহর কিছু আসে যায়না। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান
That is because their messengers used to come to them with clear evidences, but they said, "Shall human beings guide us?" and disbelieved and turned away. And Allah dispensed [with them]; and Allah is Free of need and Praiseworthy. Sahih International
৬. তা এজন্য যে, তাদের কাছে তাদের রাসূলগন সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আসত তখন তারা বলত, মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দেবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল। আল্লাহ্ও (তাদের ঈমানের ব্যাপারে) ভ্রুক্ষেপহীন হলেন; আর আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তা এ জন্য যে,[1] তাদের নিকট তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ আসত, তখন তারা বলত, ‘মানুষই কি আমাদেরকে পথের সন্ধান দেবে?’[2] অতঃপর তারা অবিশ্বাস করল[3] ও মুখ ফিরিয়ে নিল[4] এবং আল্লাহও কোন পরোয়া করলেন না।[5] আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, [6] প্রশংসার্হ। [7]
[1] ذَلِكَ এ থেকে ইঙ্গিত হল সেই আযাবের প্রতি যা দুনিয়াতে তারা পেয়েছে। আর আখেরাতেও তা পাবে।
[2] এটা হল তাদের কুফরী করার কারণ। তারা এই কুফরী যা তাদের ইহকাল ও পরকালের আযাবের কারণ হয়ে দাঁড়াল তা এই জন্য অবলম্বন করেছিল যে, তারা একজন মানুষকে তাদের পথপ্রদর্শক মানতে অস্বীকার করল। অর্থাৎ, একজন মানুষের রসূল হয়ে লোকদের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য আসার ব্যাপারটা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। যেমন, আজও বিদআতীদের কাছে রসূলকে মানুষ মনে করা বড়ই কষ্টকর মনে হয়। هَدَاهُمُ اللهُ تَعَالَى।
[3] সুতরাং উক্ত কারণে তারা রসূলদেরকে ‘রসূল’ বলে মেনে নিতে এবং তাঁদের উপর ঈমান আনতে অস্বীকার করল।
[4] অর্থাৎ, তাঁদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং যে দাওয়াত তাঁরা পেশ করতেন, সে ব্যাপারে তারা ভাবনা-চিন্তা করেও দেখল না।
[5] অর্থাৎ, তাদের ঈমান ও ইবাদতের।
[6] কারো ইবাদতে তাঁর লাভ কি এবং কেউ তাঁর ইবাদত না করলে তাঁর ক্ষতিই বা কি?
[7] অর্থাৎ, তিনি সকল সৃষ্টির কাছে প্রশংসনীয়। অর্থাৎ, সকল সৃষ্টিকুলের জবান সদা-সর্বদা তাঁর প্রশংসায় সিক্ত থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান