রাসূল, রিসালাত ও ওহী বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৪৮ টি
আলে-ইমরান
৩:১৪৪ وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِهِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِكُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡهِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰهَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰهُ الشّٰكِرِیۡنَ ﴿۱۴۴﴾

আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে ? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন। আল-বায়ান

মুহাম্মাদ হচ্ছে একজন রসূল মাত্র, তাঁর পূর্বে আরও অনেক রসূল গত হয়েছে; কাজেই যদি সে মারা যায় কিংবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা উল্টাদিকে ঘুরে দাঁড়াবে? এবং যে ব্যক্তি উল্টাদিকে ফিরে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে অতিশীঘ্র বিনিময় প্রদান করবেন। তাইসিরুল

এবং মুহাম্মাদ রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয়ই তার পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়েছে, অনন্তর যদি তার মৃত্যু হয় অথবা সে নিহত হয় তাহলে কি তোমরা পশ্চাদপদে ফিরে যাবে? এবং যে কেহ পশ্চাদপদে ফিরে যায় তাতে সে আল্লাহর কোনই অনিষ্ট করবেনা এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞগণকে পুরস্কার প্রদান করেন। মুজিবুর রহমান

Muhammad is not but a messenger. [Other] messengers have passed on before him. So if he was to die or be killed, would you turn back on your heels [to unbelief]? And he who turns back on his heels will never harm Allah at all; but Allah will reward the grateful. Sahih International

১৪৪. আর মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছেন। কাজেই যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? আর কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করবে না; আর আল্লাহ্‌ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন।(১)

(১) এ আয়াতে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম একদিন না একদিন দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন। তার পরও মুসলিমদের দ্বীনের উপর অটল থাকতে হবে। এতে আরো বুঝা যায় যে, সাময়িক বিপর্যয়ের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহত হওয়া এবং তার মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার পেছনে যে রহস্য ছিল, তা হলো তাঁর জীবদ্দশাতেই তার মৃত্যু-পরবর্তী সাহাবায়ে-কেরামের সম্ভাব্য অবস্থার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা- যাতে তাদের মধ্যে কোন ক্রটি-বিচূতি পরিলক্ষিত হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তা সংশোধন করে দেন এবং পরে সত্যসত্যই যখন তার মৃত্যু হবে, তখন যেন সম্বিত হারিয়ে না ফেলেন। বাস্তবে তাই হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের সময় যখন প্রধান প্রধান সাহাবীগণও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন, তখন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াত তেলাওয়াত করেই তাদের সান্তুনা দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ১২৪১, ১২৪২, ৪৪৫৩, ৪৪৫৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪৪) মুহাম্মাদ রসূল ব্যতীত কিছু নয়,[1] তার পূর্বে বহু রসূল গত হয়ে গেছে। সুতরাং সে যদি মারা যায় অথবা নিহত হয়, তাহলে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ যে পশ্চাদপসরণ করবে, সে কখনও আল্লাহর কিছু ক্ষতি করতে পারবে না।[2] আর অচিরেই আল্লাহ কৃতজ্ঞ ব্যক্তিবর্গকে পুরস্কৃত করবেন। [3]

[1] ‘মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ অন্য কিছুই নয়।’ অর্থাৎ, রিসালাতের গুণে গুণান্বিত হওয়াই তাঁর বড় বৈশিষ্ট্য। তিনি মানব গুণের ঊর্ধ্বে নন এবং এমনও নন যে, তিনি আল্লাহর গুণের কোন কিছু প্রাপ্ত হয়েছেন ফলে তাঁকে মৃত্যু গ্রাস করবে না।

[2] উহুদের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ এও ছিল যে, কাফেররা রটিয়ে দিয়েছিল যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করে দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের কাছে এ খবর পৌঁছলে, তাঁদের অনেকের মনোবল দমে যায় এবং তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ করে বলা হয় যে, কাফেরদের হাতে নবী করীম (সাঃ)-এর হত্যা হওয়া এবং তাঁর উপর মৃত্যু আসা কোন নতুন কথা নয়। পূর্বের সকল নবীকেই নিহত হতে হয়েছে এবং মৃত্যু তাঁদেরকে গ্রাস করেছে। কাজেই নবী করীম (সাঃ)ও যদি মৃত্যুর হাতে ধরা পড়েন, তাহলে তোমরা কি দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাবে? কিন্তু মনে রেখো! যে দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে, এতে আল্লাহর কোন কিছু এসে যাবে না। নবী করীম (সাঃ)-এর মর্মান্তিক মৃত্যুর সময় উমার (রাঃ) চরম উত্তেজনার শিকার হয়ে তাঁর মৃত্যুকে অস্বীকার করে বসেন। আবূ বাকর (রাঃ) বড়ই কৌশল অবলম্বন করে রসূল (সাঃ)-এর মিম্বারে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাঅত করে শোনান। যাতে উমার (রাঃ) প্রভাবিত হন এবং তাঁর অনুভব হয় যে, যেন এই আয়াত এখনই অবতীর্ণ হল।

[3] অর্থাৎ, যারা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে দৃঢ়পদ থেকে আল্লাহর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতার বাস্তব নমুনা পেশ করেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৬১ وَ مَا كَانَ لِنَبِیٍّ اَنۡ یَّغُلَّ ؕ وَ مَنۡ یَّغۡلُلۡ یَاۡتِ بِمَا غَلَّ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ۚ ثُمَّ تُوَفّٰی كُلُّ نَفۡسٍ مَّا كَسَبَتۡ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۱۶۱﴾

আর কোন নবীর জন্য উচিত নয় যে, সে খিয়ানত করবে। আর যে খিয়ানত করবে, কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে তা নিয়ে যা সে খিয়ানত করেছে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুরোপুরি দেয়া হবে যা সে উপার্জন করেছে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না। আল-বায়ান

কোন নাবী খিয়ানাত করতে পারে না, যে ব্যক্তি খিয়ানাত করবে, সে খিয়ানাতকৃত বস্তুসহ ক্বিয়ামাতের দিন উপস্থিত হবে, অতঃপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পুরোপুরি দেয়া হবে, কারও প্রতি কোন প্রকার যুলম করা হবে না। তাইসিরুল

আর কোন নাবীর পক্ষে কোন বিষয় গোপন করা শোভনীয় নয়; এবং যে কেহ গোপন করবে তাহলে সে যা গোপন করেছে তা উত্থান দিনে আনয়ন করা হবে; অনন্তর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা নির্যাতিত হবেনা। মুজিবুর রহমান

It is not [attributable] to any prophet that he would act unfaithfully [in regard to war booty]. And whoever betrays, [taking unlawfully], will come with what he took on the Day of Resurrection. Then will every soul be [fully] compensated for what it earned, and they will not be wronged. Sahih International

১৬১. আর কোন নবী ‘গলুল’(১) (অন্যায়ভাবে কোন বস্তু গোপন) করবে, এটা অসম্ভব। এবং কেউ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করলে, যা সে অন্যায়ভাবে গোপন করবে কেয়ামতের দিন সে তা সাথে নিয়ে আসবে(২)। তারপর প্রত্যেককে, যা সে অর্জন করেছে তা পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।(৩)

(১) গলুলের এক অর্থ হয় খেয়ানত করা, জোর করে দখল করে নেয়া। সে হিসেবেই এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট বড় গলুল তথা খেয়ানত হল এক বিঘত যমীন নেয়া। তোমরা দু'জন লোককে কোন যমীনের বা ঘরের প্রতিবেশী দেখতে পাবে। তারপর তাদের একজন তার সাথীর অংশের এক বিঘত যমীন কেটে নেয়। যদি কেউ এভাবে যমীন কেটে নেয় সে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সাত যমীন গলায় পেচিয়ে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৪১]

(২) غلول ‘গলুল’ এর অন্য অর্থ সরকারী সম্পত্তি থেকে কোন কিছু গোপন করা। গনীমতের মালও সরকারী সম্পদ। সুতরাং তা থেকে চুরি করা মহাপাপ। কোন নবীর পক্ষে এমন পাপের সম্ভাব্যতা নেই। আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গনীমতের মাল চুরি করার বিষয়টিও এসে গেছে। ঘটনাটি ছিল এই যে, বদরের যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ গনীমতের মালের মধ্যে থেকে একটি চাদর খোয়া যায়। কোন কোন লোক বলল, হয়ত সেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে থাকবেন। [তিরমিযীঃ ৩০০৯, আবু দাউদঃ ৩৯৭১] এসব কথা যারা বলত তারা যদি মুনাফেক হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। আর তা কোন অবুঝ মুসলমানের পক্ষে বলাও অসম্ভব নয়।

তবে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে, সে হয়ত মনে করে থাকবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়, যাতে غلول বা গনীমতের মালের ব্যাপারে অনধিকার চর্চার ভয়াবহতা এবং কেয়ামতের দিন সে জন্য কঠিন শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, কোন নবী সম্পর্কে এমন ধারণা করা যে, তিনিই এহেন পাপ কাজ করে থাকবেন, একান্তই অনর্থক ধৃষ্টতা। কারণ, নবীগণ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত।

(৩) এখানে একটা বিষয় জানা আবশ্যক যে, গনীমতের মাল চুরি করা কিংবা তাতে খেয়ানত করা বা সরকারী সম্পদ থেকে কোন কিছু আত্মসাৎ করা, সাধারণ চুরি অথবা খেয়ানত অপেক্ষা বেশী পাপের কাজ। কারণ, এ সম্পদের সাথে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সংযুক্ত থাকে। কাজেই যে লোক এতে চুরি করবে, সে চুরি করবে শত-সহস্ৰ লোকের সম্পদ। যদি কখনো কোন সময় তার মনে তা সংশোধন করার খেয়াল হয়, তখন সবাইকে তাদের অধিকার প্রত্যাপন করা কিংবা সবার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়া একান্তই দুরূহ ব্যাপার।

পক্ষান্তরে অন্যান্য চুরি মালের মালিক সাধারণতঃ পরিচিত ও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। কখনও কোন সময় আল্লাহ যদি তওবাহ করার তাওফীক দান করেন, তবে তার হক আদায় করে কিংবা তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিয়ে মুক্ত হতে পারে। সে কারণেই কোন এক যুদ্ধে এক লোক যখন কিছু পশম নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল, গনীমতের মাল বন্টন করার কাজ শেষ হয়ে গেলে যখন তার মনে হল, তখন সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে উপস্থিত হল। তিনি রহমাতুললিল আলামীন এবং উম্মতের জন্য পিতা-মাতা অপেক্ষা সদয় হওয়া সত্বেও তাকে এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, এখন এগুলো কেমন করে আমি সমস্ত সেনাবাহিনীর মাঝে বন্টন করব? কাজেই কেয়ামতের দিনই তুমি এগুলো নিয়ে উপস্থিত হয়ো। [সহীহ্ ইবনে হিব্বানঃ ৪৮৫৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/২১৩, ৬/৪২৮]

তাছাড়া গনীমতের মাল বা সরকারী সম্পদ আত্মসাৎ করার ব্যাপারটি অন্যান্য চুরি অপেক্ষা কঠিন পাপ হওয়ার আরও একটি কারণ এই যে, হাশরের ময়দানে যেখানে সমগ্র সৃষ্টি সমবেত হবে, সবার সামনে তাকে সেখানে এমনভাবে লাঞ্ছিত করা হবে যে, চুরি করা বস্তু-সামগ্রী তার কাঁধে চাপানো থাকবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “দেখ, কেয়ামতের দিন কারো কাঁধে একটি উট চাপানো অবস্থায় থাকবে এবং ঘোষণা করা হবে যে, এ লোক গনীমতের মালের উট চুরি করেছিল, এমন যেন না হয়। যদি সে লোক আমার শাফা’আত কামনা করে, তবে আমি তাকে পরিস্কার ভাষায় জবাব দিয়ে দেব যে, আমি আল্লাহর যা কিছু নির্দেশ পেয়েছিলাম, তা সবই পৌছে দিয়েছিলাম, এখন আমি কিছুই করতে পারব না” [বুখারীঃ ৩০৭৩]

মনে রাখা আবশ্যক যে, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং ওয়াকফের মালের অবস্থাও একই রকম, যাতে হাজার-হাজার মুসলিমের চাঁদা বা দান অন্তর্ভুক্ত ক্ষমাও যদি করাতে হয়, তবে কার কাছ থেকে ক্ষমা করাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সরকারী কর্মচারীদের প্রাপ্ত হাদীয়া বা উপটৌকণ গলুলের শামিল। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৪২৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ইবনুল্লতুবিয়্যাহ নামক এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োগ দেন। সে ফিরে এসে বললঃ এগুলো তোমাদের আর এগুলো আমাকে হাদীয়া দেয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ কি হলো কর্মচারীর তাকে আমরা কোন কাজে পাঠাই পরে সে এসে বলে, এগুলো তোমাদের আর ওগুলো আমাকে হাদীয়া দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে দেখে না তার জন্য হাদীয়া আসে কি না? যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার শপথ করে বলছি, যে কেউ এর থেকে কিছু নিবে কিয়ামতের দিন সেটাই সে তার কাঁধে নিয়ে আসবে। [বুখারীঃ ৬৯৭৯, মুসলিমঃ ১৮৩২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ “হে মানুষ সকল! তোমাদের কাউকে কোন কাজে লাগালে যদি সে আমাদের থেকে কিছু লুকায় তবে সে তা কেয়ামতের দিন সাথে নিয়ে আসবে [মুসলিমঃ ১৮৩৩] আবদুল্লাহ ইবন আমর বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিনিসপত্রের দায়িত্বে এক লোক ছিল, তাকে কারকারাহ বলা হতো, হঠাৎ করে সে মারা গেল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামে গেছে। লোকেরা তার জিনিসপত্র তল্লাশী করে দেখতে পেল যে, সে একটি জামা চুরি করেছে”। [বুখারী: ৩০৭৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬১) কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, সে আত্মসাৎ করবে। [1] আর যে কেউ কিছু আত্মসাৎ করবে, সে তার আত্মসাৎ করা বস্তু নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। অতঃপর (সেদিন) প্রত্যেকে যে যা অর্জন করেছে, তা পূর্ণ মাত্রায় প্রদত্ত হবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।

[1] উহুদ যুদ্ধের সময় যে তীরন্দাজরা ঘাঁটি ছেড়ে গনীমতের মাল একত্রিত করার জন্য চলে এসেছিলেন, তাঁদের ধারণা ছিল, আমরা যদি (মাল জমা করার জন্য) পৌঁছতে না পারি, তাহলে সমস্ত গনীমতের মাল অন্যরা নিয়ে নিবেন। তাই তাঁদেরকে চেতনা দেওয়া হচ্ছে যে, গনীমতের মালে তোমাদের কোন অংশ থাকবে না এ রকম ধারণা তোমরা কিভাবে করে নিলে? তোমাদের কি মহান নেতা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আমানতদারী ও তাঁর বিশ্বস্ততার উপর ভরসা নেই? মনে রেখো, একজন নবীর দ্বারা কোন প্রকারের খেয়ানত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, খেয়ানত হল নবুঅত-পরিপন্থী জিনিস। যদি নবীই খেয়ানতকারী ও আত্মসাৎকারী হয়ে যান, তাহলে তাঁর নবুঅতের উপর বিশ্বাস কিভাবে করা যেতে পারে? খেয়ানত করা হল মহাপাপ; হাদীসসমূহে কঠোরভাবে তার নিন্দা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৬৪ لَقَدۡ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ ۚ وَ اِنۡ كَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۱۶۴﴾

অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল। আল-বায়ান

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শুনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) শিক্ষা দিচ্ছে, যদিও তারা পূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তাঁর নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করে এবং নিশ্চয়ই তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল। মুজিবুর রহমান

Certainly did Allah confer [great] favor upon the believers when He sent among them a Messenger from themselves, reciting to them His verses and purifying them and teaching them the Book and wisdom, although they had been before in manifest error. Sahih International

১৬৪. আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।(১)

(১) এ আয়াতে বর্ণিত বিষয়বস্তুর প্রায় অনুরূপ বিষয় সূরা আল-বাক্কারার ১২৯ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ আয়াতে একটি শব্দ অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো, (لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ) এ প্রসঙ্গে প্রথম লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কুরআনুল কারীমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সমগ্র বিশ্বের জন্য সবচাইতে বড় নেয়ামত ও মহাঅনুগ্রহ। কিন্তু এখানে এই আয়াতে শুধুমাত্র মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট করাটা কুরআনের অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে কুরআন সমগ্র বিশ্বের জন্য হেদায়াত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত থাকা সত্ত্বেও (هُدًى لِلْمُتَّقِينَ) বা “মুত্তাকীনদের জন্য হেদায়াত” বলারই অনুরূপ যে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাকে মুত্তাকীনদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

তার কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই এক। তা হল এই যে, যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অস্তিত্ব মুমিন-কাফের নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্বের জন্যই মহা নেয়ামত এবং বিরাট অনুগ্রহ, তেমনিভাবে কুরআনুল কারীমও সমগ্র বিশ্ব-মানবের জন্য হেদায়াত, কিন্তু যেহেতু এই হেদায়াত ও নেয়ামতের ফল শুধু মুমিন-মুত্তাকীরাই উপভোগ করছে, সেহেতু কোন কোন স্থানে একে তাদেরই সাথে সম্পূক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৪) আল্লাহ অবশ্যই বিশ্বাসীদের প্রতি তাদের নিজেদের মধ্যে হতে রসূল প্রেরণ করে অনুগ্রহ করেছেন। [1] সে (নবী) তার আয়াতগুলি তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা[2] শিক্ষা দেয়। আর অবশ্যই[3] তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল।

[1] নবীর মানুষ হওয়া এবং মানব-জাতিভুক্ত হওয়াকে মহান আল্লাহ একটি অনুগ্রহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর বাস্তবিকই এটা একটি মহা অনুগ্রহ। কারণ, প্রথমতঃ তিনি তাঁর জাতির স্থানীয় ভাষায় আল্লাহর পায়গাম পৌঁছাতে পারবেন যা বুঝা প্রত্যেক মানুষের জন্য সহজ হবে। দ্বিতীয়তঃ একই জাতিভুক্ত হওয়ার কারণে মানুষ তাঁর ঘনিষ্ঠ হবে এবং তাঁর কাছ ঘেঁসবে। তৃতীয়তঃ মানুষের জন্য মানুষ হওয়াটাই সব দিক দিয়ে সমীচীন। কেননা, মানুষের পক্ষে মানুষের অনুসরণ করা সম্ভব, কিন্তু তাদের পক্ষে ফিরিশতাদের অনুসরণ করা সম্ভব নয়। অনুরূপ ফিরিশতাকুল মানুষের আবেগ ও অনুভূতির গভীরতা ও সূক্ষ্ণতা অনুধাবন করতে সক্ষম নন। কাজেই পয়গম্বর যদি ফিরিশতাদের মধ্য থেকে হতেন, তাহলে তিনি সেই সমূহ গুণাবলী থেকে বঞ্চিত হতেন, যা দ্বীনের দাওয়াতের জন্য অতি প্রয়োজন। আর এই জন্যই দুনিয়াতে যত নবী এসেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন মানুষ। কুরআন তাঁদের মানুষ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, [وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي] ‘‘তোমার পূর্বে আমি যতজনকে রসূল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষ ছিল, তাদের প্রতি আমি অহী করেছি।’’ (সূরা ইউসুফ ১০৯ আয়াত) তিনি আরো বলেন,[وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ] ‘‘তোমার পূর্বে যত রসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।’’ (সূরা ফুরকান ২০ আয়াত) অনুরূপ তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর পবিত্র জবান দ্বারা ঘোষণা করলেন যে, [قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ] ‘‘বল, আমিও তোমাদের মত একজন মানুষ আমার প্রতি অহী আসে।’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৬ আয়াত) বর্তমানে বহু মানুষ এই (রসূলের মানুষ হওয়া) বিষয়টিকে মানতে না পেরে বিপথগামী হয়েছে।

[2] উক্ত আয়াতে নবী প্রেরণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। যথা, (ক) আয়াতের তেলাঅত ও আবৃত্তি, (খ) পবিত্র ও পরিশুদ্ধকরণ, (গ) এবং কিতাব ও হিকমতের কথা শিক্ষা দেওয়া। কিতাবের শিক্ষায় তেলাঅত আপনা আপনিই এসে যায়। তেলাঅতের সাথেই শিক্ষা দেওয়া সম্ভব। তেলাঅত ব্যতীত শিক্ষার কথা ভাবাই যায় না। তা সত্ত্বেও তেলাঅতকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া যে, তেলাঅত করাও একটি পবিত্র ও সৎ কাজ, তাতে তেলাঅতকারী তার অর্থ বুঝুক বা না-ই বুঝুক। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কুরআনের অর্থ ও লক্ষ্য বুঝার চেষ্টা করা নিঃসন্দেহে একটি জরুরী বিষয়। তবুও তার অর্থ বুঝতে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত তা তেলাঅত করতে বৈমুখ থাকা বা তাতে অবহেলা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। পবিত্রকরণ বলতে, আকীদা, আমল এবং নৈতিকতার সংশোধন। যেমন, নবী করীম (সাঃ) তাদেরকে শিরক থেকে বের করে তাওহীদের পথে প্রতিষ্ঠিত করেন। তদনুরূপ নেহাতই হীন চরিত্র ও জঘন্য আচরণে আলিপ্ত জাতিকে উচ্চ নৈতিকতার অধিকারী ও মহান কর্ম সম্পাদনকারী জাতি হিসাবে গড়ে তুলেন। ‘হিকমত’ (প্রজ্ঞা)র অর্থ অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট হাদীস।

[3] إِنْ এখানে الْمُثَقَّلَةِ থেকে مُخَفَّفَةٌ রূপে ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, إِنَّ ছিল। এর অর্থ হল, অবশ্যই, নিঃসন্দেহে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৮৪ فَاِنۡ كَذَّبُوۡكَ فَقَدۡ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِكَ جَآءُوۡ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ وَ الۡكِتٰبِ الۡمُنِیۡرِ ﴿۱۸۴﴾

অতএব যদি তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তোমার পূর্বে রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। তারা স্পষ্ট প্রমাণসমূহ, সহীফা ও আলোকময় কিতাবসহ এসেছিল। আল-বায়ান

তারপরও যদি কাফিরগণ তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তোমার পূর্বেও রসূলগণকে অস্বীকার করা হয়েছিল যারা স্পষ্ট নিদর্শন, অনেক সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাব নিয়ে এসেছিল। তাইসিরুল

অতঃপর যদি তারা তোমার প্রতি অসত্যারোপ করে তাহলে তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে অবিশ্বাস করা হয়েছিল, যারা প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী ও ক্ষুদ্র পুস্তিকা এবং উজ্জ্বল গ্রন্থসহ আগমন করেছিল। মুজিবুর রহমান

Then if they deny you, [O Muhammad] - so were messengers denied before you, who brought clear proofs and written ordinances and the enlightening Scripture. Sahih International

১৮৪. তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে, আপনার আগে যে সব রাসূল স্পষ্ট নিদর্শন, আসমানী সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাবসহ এসেছিলেন তাদের প্রতিও তো মিথ্যারোপ করা হয়েছিল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৪) অতঃপর তারা যদি তোমাকে মিথ্যাজ্ঞান করে, তবে তোমার পূর্বে যেসব রসূল স্পষ্ট নিদর্শনাবলী, অবতীর্ণ সহীফাসমূহ এবং দীপ্তিমান কিতাবসহ এসেছিল, তাদেরকেও তো মিথ্যাজ্ঞান করা হয়েছিল। [1]

[1] নবী করীম (সাঃ)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে যে, তুমি ইয়াহুদীদের অসার কাট-হুজ্জতির কারণে দুঃখিত হবে না। কারণ, এই ধরনের আচরণ তারা যে কেবল তোমার সাথেই করছে তা নয়, বরং তোমার পূর্বে আগত নবীদের সাথেও এই ধরনের আচরণ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৩ تِلۡكَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ یُدۡخِلۡهُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۳﴾

এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা । আল-বায়ান

এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরবাসী হবে এবং এটা বিরাট সাফল্য। তাইসিরুল

এটাই আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমাসমূহ; এবং যে কেহ আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের অনুগত হয় তিনি তাকে এরূপ জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন যার নিম্নে স্রোতস্বিনীসমূহ প্রবাহিতা, তম্মধ্যে তারা সদা অবস্থান করবে; এবং এটাই বড় সফলতা। মুজিবুর রহমান

These are the limits [set by] Allah, and whoever obeys Allah and His Messenger will be admitted by Him to gardens [in Paradise] under which rivers flow, abiding eternally therein; and that is the great attainment. Sahih International

১৩. এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। কেউ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা সেখানে স্থায়ী হবে আর এটাই হলো মহাসাফল্য।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর যে আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হয়ে চলবে আল্লাহ তাকে বেহেশ্তে স্থান দান করবেন; যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এ মহা সাফল্য।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৪ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ یَتَعَدَّ حُدُوۡدَهٗ یُدۡخِلۡهُ نَارًا خَالِدًا فِیۡهَا ۪ وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ ﴿۱۴﴾

আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব। আল-বায়ান

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নাফরমানী করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন, সে তাতে চিরবাসী হবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে। তাইসিরুল

আর যে কেহ আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে অমান্য করে এবং তাঁর নির্দিষ্ট সীমাসমূহ অতিক্রম করে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তন্মধ্যে সে সদা অবস্থান করবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। মুজিবুর রহমান

And whoever disobeys Allah and His Messenger and transgresses His limits - He will put him into the Fire to abide eternally therein, and he will have a humiliating punishment. Sahih International

১৪. আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।(১)

(১) অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা তথা ওয়ারিশী নীতির ব্যাপারে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা লঙ্ঘন করবে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। কেননা সে আল্লাহর হুকুমকে পরিবর্তন করেছে, আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করেছে। তখনই কেউ এরূপ করতে পারে যখন সে আল্লাহর নির্দেশের উপর অসন্তুষ্ট থাকে। এজন্য আল্লাহ তাকে চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা দ্বারা শাস্তি দিবেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) পক্ষান্তরে যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা-দায়ক শাস্তি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৫৯ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡكُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا ﴿۵۹﴾

হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। আল-বায়ান

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের; যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রসূলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের জন্য যারা বিচারক তাদের; অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে কোন মতবিরোধ হয় তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক; এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, obey Allah and obey the Messenger and those in authority among you. And if you disagree over anything, refer it to Allah and the Messenger, if you should believe in Allah and the Last Day. That is the best [way] and best in result. Sahih International

৫৯. হে ঈমাদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের(১), অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।

(১) ‘উলুল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ ও হাসান বসরী রাহিমাহুমাল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণ ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে ‘উলুল আমর’ সাব্যস্ত করেছেন। তারাই হচ্ছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নায়েব বা প্রতিনিধি ৷ তাদের হাতেই দ্বীনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত। মুফাসসিরীনের অপর এক জামা'আত-যাদের মধ্যে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন-বলেছেন যে, ‘উলুল আমর’ এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। ইমাম সুদ্দী এ মত পোষণ করেন। এছাড়া তাফসীরে ইবন কাসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা (ওলামা ও শাসক) উভয় শ্রেণীকেই বোঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। আল্লামা আবু বকর জাসসাস এতদুভয় মত উদ্ধৃত করার পর বলেছেন, সঠিক ব্যাপার হলো এই যে, এতদুভয় অর্থই ঠিক। কারণ, ‘উলুল আমর’ শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অবশ্য এতে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন যে, উলুল আমর বলতে ফকীহগণকে বোঝানো যেতে পারে না। তার কারণ, أُولُو الْأَمْر (উলুল আমর) শব্দটি তার শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে সে সমস্ত লোককে বোঝায়, যাদের হুকুম বা নির্দেশ চলতে পারে। বলাবাহুল্য, এ কাজটি ফকীহগণের নয়। প্রকৃত বিষয় হলো এই যে, হুকুম চলার দুটি প্রেক্ষিত রয়েছে। (এক) জবরদস্তিমূলক। এটা শুধুমাত্র শাসকগোষ্ঠী বা সরকার দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। (দুই) বিশ্বাস ও আস্থার দরুন হুকুম মান্য করা। আর সেটা ফকীহগণই অর্জন করতে পেরেছিলেন এবং যা সর্বযুগে মুসলিমদের অবস্থার দ্বারা প্রতিভাত হয়। দ্বীনী ব্যাপারে সাধারণ মুসলিমগণ নিজের ইচ্ছা ও মতামতের তুলনায় আলেম সম্প্রদায়ের নির্দেশকে অবশ্য পালনীয় বলে সাব্যস্ত করে থাকে। তাছাড়া শরীআতের দৃষ্টিতেও সাধারণ মানুষের জন্য আলেমদের হুকুম মান্য করা ওয়াজিবও বটে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রেও ‘উলুল আমর’-এর প্রয়োগ যথার্থ হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) হে বিশ্বাসিগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (ও উলামা)দের অনুগত হও।[1] আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। এটিই হল উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।[2]

[1] اُولُو الأمر (উলুল আম্র) বলতে কেউ বলেছেন, নেতা ও শাসকগণ। কেউ বলেছেন, উলামা ও ফুক্বাহাগণ। অর্থের দিক দিয়ে উভয় শ্রেণীর মান্যবরদেরকেই বুঝানো যেতে পারে। উদ্দেশ্য এই যে, প্রকৃত আনুগত্য তো আল্লাহর প্রাপ্য। কারণ তিনি বলেছেন, أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ‘‘জেনে রাখো, সৃষ্টি করা এবং নির্দেশদান তাঁরই কাজ।’’ (আ’রাফঃ ৫৪) [اِنِ الْحُكْمُ إلاَّ للهِ] ‘‘বিধান দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই।’’ (ইউসুফঃ ৪০) কিন্তু রসূল (সাঃ) যেহেতু মহান আল্লাহর ইচ্ছার এক নিষ্ঠাবান প্রকাশক এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথগুলো (মানুষের কাছে) তুলে ধরার ব্যাপারে তিনি তাঁর প্রতিনিধি, এ জন্যই মহান আল্লাহর স্বীয় আনুগত্যের সাথে সাথে রসূল (সাঃ)-এর আনুগত্য করাকেও ওয়াজেব করে দেন এবং বলেন যে, রসূলের আনুগত্য করলে প্রকৃতপক্ষে তাঁরই আনুগত্য করা হয়। [مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ] ‘‘যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল।’’ (নিসাঃ ৮০) এ থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হাদীসও কুরআনের মত দ্বীনের দলীল। এ ছাড়া আমীর ও শাসকের আনুগত্য করাও জরুরী। কারণ, হয় তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশের বাস্তবায়ন করেন অথবা সকল মানুষের কল্যাণ সাধনের ব্যবস্থাপনা ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা জরুরী হলেও তা একেবারে শর্তহীনভাবে নয়, বরং তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের শর্তসাপেক্ষ। আর এই কারণেই أَطِيْعُوا الله এর পরই أَطِيْعُوا الرَّسُوْل বলেছেন। কেননা, এই উভয় আনুগত্যই স্বতন্ত্র ও ওয়াজেব। পক্ষান্তরে وَأَطِيْعُوا أُولِي الأَمْر বলেননি, কারণ উলুল আম্র বা শাসকদের আনুগত্য স্বতন্ত্র নয়। আর হাদীসে বলা হয়েছে যে, (لا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الخَالِقِ) ‘‘আল্লাহর অবাধ্যাচরণে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।’’ (মিশকাত ৩৬৯৬, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।) মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই।’’ (মুসলিম ১৮৪০নং) বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, (إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوْفِ) ‘‘আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে।’’ (বুখারী ৭১৪৫) ‘শাসকের কথা শুনতে হবে ও তাঁর আনুগত্য করতে হবে যতক্ষণ না (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের) অবাধ্যতা হবে।’ আলেম-উলামার ব্যাপারটাও অনুরূপ। (যদি তাঁদেরকে শাসকদের মধ্যে শামিল করা হয়) অর্থাৎ, তাঁদের আনুগত্য এই জন্যই করতে হবে যে, তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যাবতীয় বিধি-বিধান বর্ণনা করেন এবং তাঁর দ্বীনের জন্য পথ-প্রদর্শকের কাজ করেন। বুঝা গেল যে, দ্বীনি বিষয়ে এবং দ্বীন সম্পর্কীয় কার্যকলাপে আলেম-উলামা শাসকদের মতই এমন কেন্দ্রীয়-মর্যাদাসম্পন্ন যে, জনসাধারণ তাঁদের প্রতি রুজু করে থাকে। তবে তাঁদের আনুগত্য ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা জনসাধারণকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা শুনাবেন। কিন্তু তাদের বিপথগামী (বা কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীতগামী) হওয়ার কথা স্পষ্ট হলে তাঁদের আনুগত্য করা যাবে না। বরং এই অবস্থায় তাঁদের আনুগত্য করলে বড় অপরাধ ও গুনাহ হবে।

[2] আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ, কুরআনের দিকে রুজু করা এবং এখন রসূলের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, (সহীহ) হাদীসের দিকে রুজু করা। বিবাদী সমস্যার সমাধানের জন্য এটা হল অতি উত্তম এক মৌলিক নীতি। আর এই মৌলিক নীতি থেকে এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তৃতীয় কোন ব্যক্তিত্বের আনুগত্য ওয়াজেব নয়। যেমন, ব্যক্তি অনুকরণ অথবা নির্দিষ্ট করে কারো অন্ধানুকরণ করার সমর্থকরা তৃতীয় আর এক আনুগত্যকে জরুরী সাব্যস্ত করেছে। আর কুরআনের আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী তৃতীয় এই আনুগত্য মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ এক উম্মতে পরিণত করার পরিবর্তে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন উম্মতে পরিণত করেছে এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৬৪ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اَنَّهُمۡ اِذۡ ظَّلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ جَآءُوۡكَ فَاسۡتَغۡفَرُوا اللّٰهَ وَ اسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ الرَّسُوۡلُ لَوَجَدُوا اللّٰهَ تَوَّابًا رَّحِیۡمًا ﴿۶۴﴾

আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত। আল-বায়ান

আমি রসূল এ উদ্দেশেই প্রেরণ করেছি, যেন আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হয়। যখন তারা নিজেদের উপর যুলম করেছিল, তখন যদি তোমার নিকট চলে আসত আর আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হত এবং রসূলও তাদের পক্ষে ক্ষমা চাইত, তাহলে তারা আল্লাহকে নিরতিশয় তাওবাহ কবূলকারী ও পরম দয়ালুরূপে পেত। তাইসিরুল

আমি এতদ্ব্যতীত কোনই রাসূল প্রেরণ করিনি যে, আল্লাহর আদেশে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করবে, এবং যদি তারা স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচার করার পর তোমার নিকট আগমন করত, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত আর রাসূলও তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইত তাহলে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবাহ কবূলকারী, করুণাময় দেখতে পেত। মুজিবুর রহমান

And We did not send any messenger except to be obeyed by permission of Allah. And if, when they wronged themselves, they had come to you, [O Muhammad], and asked forgiveness of Allah and the Messenger had asked forgiveness for them, they would have found Allah Accepting of repentance and Merciful. Sahih International

৬৪. আল্লাহর অনুমতিক্রমে কেবলমাত্র আনুগত্য করার জন্যই আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি। যখন তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তারা আপনার কাছে আসলে ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।(১)

(১) ৬১ নং আয়াত থেকে এ আয়াত পর্যন্ত মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে হেদায়াত দেয়া হয়েছে। তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে আরও বলা হয়েছে যে, রাসূল যদি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে আল্লাহকে তারা ক্ষমাশীল পাবে। এ আয়াতটি মুনাফিকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং রাসূলের জীবদ্দশায়ই তার পক্ষে তাদের কথা শোনা ও তাদের জন্য দো'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা সম্ভব। রাসূলের মৃত্যুর পর তার কবরের কাছে এসে এ আয়াত তেলাওয়াত করে রাসূলের কাছে দোআ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও শির্ক। অনুরূপভাবে রাসূলের মৃত্যুর পর তার কবরের কাছে এসে আল্লাহর কাছে তার জন্য দো'আ করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আহবান করা বেদ’আত ও শির্কের মাধ্যম। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, হেদায়াতের ইমামগণ যেমন ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ্ সহ কেউই এ ধরনের কাজ করেন নি। তারা এটাকে জায়েয মনে করতেন না। কোন কোন কবরপূজারী কিছু কাহিনী রটনা করে এর সপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে চেষ্টা করে মানুষের ঈমান নষ্ট করার পায়তারা করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকা উচিত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৪) রসূল এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে। আর যখন তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে (পাপ করে)ছিল, তখন যদি তারা তোমার নিকট আসত ও আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করত এবং রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত,[1] তাহলে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালুরূপে পেত।

[1] তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা তো আল্লাহর কাছেই করতে হয় এবং কেবল তাঁর কাছে করাই জরুরী ও যথেষ্ট। কিন্তু এখানে বলা হল যে, হে নবী! তারা তোমার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তুমিও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। এটা এই জন্য যে, তারা বিবাদের ফায়সালা গ্রহণের জন্য অন্যের শরণাপন্ন হয়ে রসূল (সাঃ)-এর অসম্মান করেছিল। এটা দূর করার জন্য তাঁর কাছে আসার তাকীদ করা হয়।

(প্রকাশ থাকে যে, ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য কারো রসূল (সাঃ)-এর নিকট আসা এবং তার জন্য তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা করার কথা তাঁর পার্থিব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর তিরোধানের পর এই শ্রেণীর ক্ষমাপ্রার্থনা বা তাঁর অসীলায় দু’আ করা আর সম্ভব নয়। এ মর্মে ইবনে কাসীরে বর্ণিত উতবীর গল্পটি ভিত্তীহীন আজগুবি গল্পমাত্র। (সংক্ষিপ্ত ইবনে কাসীর দ্রষ্টব্য -সম্পাদক)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৬৫ فَلَا وَ رَبِّكَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَكِّمُوۡكَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ﴿۶۵﴾

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। আল-বায়ান

কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে। তাইসিরুল

অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে। মুজিবুর রহমান

But no, by your Lord, they will not [truly] believe until they make you, [O Muhammad], judge concerning that over which they dispute among themselves and then find within themselves no discomfort from what you have judged and submit in [full, willing] submission. Sahih International

৬৫. কিন্তু না, আপনার রবের শপথ তারা মুমিন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের(১) বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে(২) এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।(৩)

(১) আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের বলেন, আনসারী এক ব্যক্তির সাথে খেজুর গাছে পানি দেয়া নিয়ে তার ঝগড়া হয়। আনসারী বলল, পানির পথ পরিস্কার করে দাও যাতে তা আমার জমির উপর যায়। যুবায়ের তা দিতে অস্বীকার করলে তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শালিসের জন্য আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে বললেনঃ যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তোমার পড়শীর জমিতে পানি দিয়ে দিও। লোকটি তা শুনে বলল, আপনার ফুফাত ভাই তো তাই। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করল এবং তিনি বললেন, যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তা দেয়াল পর্যন্ত আটকে রাখ। যুবায়ের বলেন, আল্লাহর শপথ, আমার মনে হয় এ আয়াতটি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাযিল হয়েছে। [বুখারীঃ ২৩৫৯, ২৩৬০, মুসলিমঃ ২৩৫৭]

এ দ্বারা এ বিষয়ও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূলের আদেশ-নিষেধ নিদ্বিধায় মেনে নেয়া শুধু আচার অনুষ্ঠান কিংবা অধিকারের সাথেই সম্পৃক্ত নয়; আকীদা এবং অপরাপর বৈষয়িক বিষয়েও ব্যাপক। অতএব, কোন সময় কোন বিষয়ে পারস্পারিক মতবিরোধ দেখা দিলে বিবাদ পরিহার করে উভয় পক্ষকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এবং তার অবর্তমানে তার প্রবর্তিত শরীআতের আশ্রয়ে গিয়ে মীমাংসা অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয।

(২) এতে এ কথাও জানা গেল যে, যে কাজ বা বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কথা বা কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত, তা সম্পাদন করতে গিয়ে মনে কোন রকম সংকীর্ণতা অনুভব করাও ঈমানের দূর্বলতার লক্ষণ। উদাহারণতঃ যে ক্ষেত্রে শরীআত তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করার অনুমতি দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি কেউ সম্মত না হয় তবে একে পরহেযগারী বলে মনে করা যাবে না, বরং এটা একান্তই মানসিক ব্যাধি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা কেউ বেশী পরহেযগার হতে পারে না। যে অবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং নিজেও বসে সালাত আদায় করেছেন, কারো মন যদি এতে সম্মত না হয় এবং অসহনীয় পরিশ্রম ও কষ্ট সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তবে তার জেনে রাখা উচিত যে, তার মন ব্যাধিগ্রস্ত।

(৩) এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও সুউচ্চ মর্যাদার বিষয় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে কুরআনের অসংখ্য আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের অপরিহার্যতার বিষয়টি সবিস্তারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা শপথ করে বলেছেন যে, কোন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন কিংবা মুসলিম হতে পারে না যতক্ষণ না সে ধীরস্থির মস্তিস্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে স্বীকার করে নেবে যাতে রাসূলের কোন সিদ্ধান্তেই মনে কোন রকম সংকীর্ণতা না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল হিসেবে গোটা উম্মতের শাসক এবং যে কোন বিবাদের মীমাংসার যিম্মাদার। তার শাসন ও সিদ্ধান্ত অপর কাউকে বিচারক সাব্যস্ত করার উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি শুধুমাত্র একজন শাসকই নন, বরং তিনি একজন নিষ্পাপ রাসূল, রাহমাতুল্লিল আলামীন এবং উম্মতের জন্য একান্ত দয়ালু ব্যক্তিত্ব। কাজেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যখনই কোন বিষয়ে, কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক সাব্যস্ত করে তার মীমাংসা করিয়ে নেয়া উচিত এবং অতঃপর তার মীমাংসাকে স্বীকার করে নিয়ে সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের উপর ফরয।

মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের বাণী ও রাসূলের হাদীসসমূহের উপর আমল করা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথেই সীমিত নয়। তার তিরোধানের পর তার পবিত্র শরীআতের মীমাংসাই হল তার মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবেই বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তার যুগে। তেমনি তার পরে তার প্রবর্তিত শরীআতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এটা প্রকৃতপক্ষে তারই অনুসরণ।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৫) কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মুমিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। [1]

[1] এই আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে সাধারণতঃ একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহুদীর মাঝে বিবাদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়। রসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে ফায়সালা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মুসলিম উমার (রাঃ)-এর কাছ থেকে ফায়সালা নেওয়ার জন্য যায়। ফলে উমার (রাঃ) এই মুসলিমের শিরচ্ছেদ করেন। কিন্তু সনদের দিক দিয়ে এ ঘটনা সঠিক নয়। ইমাম ইবনে কাসীরও এ (ঘটনা সঠিক না হওয়ার) কথা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সঠিক কারণ হল, রসূল ((সাঃ)-এর ফুফুতো ভাই যুবায়ের (রাঃ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যে জমি সেচার নালা ও পানিকে কেন্দ্র করে ঝাগড়ার সৃষ্টি হয়। ব্যাপার নবী করীম (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছে। তিনি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যে ফায়সালা দিলেন তাতে জিত যুবায়ের (রাঃ)-এরই হল। ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠল যে, রসূল (সাঃ) এই ফায়সালা এই জন্য করলেন যে, যুবায়ের (রাঃ) তাঁর ফুফুতো ভাই হয়। এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা নিসা) আয়াতের অর্থ হল, রসূল (সাঃ)-এর কোন কথা অথবা কোন ফায়সালার ব্যাপারে বিরোধিতা করা তো দূরের কথা সে ব্যাপারে অন্তরে কোন ‘কিন্তু’ রাখাও ঈমানের পরিপন্থী। কুরআনের এই আয়াত হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্য তো বটেই এবং সেই সাথে অন্য এমন লোকদের জন্যও চিন্তা ও চেতনার দ্বার উদ্ঘাটন করে, যাঁরা তাঁদের ইমামের উক্তির মোকাবেলায় সহীহ হাদীসকে মানতে কেবল সংকোচ বোধই করেন না, বরং হয় পরিষ্কার ভাষায় তা মানতে অস্বীকার করেন, নতুবা বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন অপব্যাখ্যা করেন, নতুবা বিশ্বস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-কে যয়ীফ বা দুর্বল আখ্যা দিয়ে হাদীস প্রত্যাখ্যান করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা চালান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৬৯ وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِكَ رَفِیۡقًا ﴿ؕ۶۹﴾

আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম। আল-বায়ান

যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে, তারা নাবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নি‘মাত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! তাইসিরুল

আর যে কেহ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নাবীগণ, সত্য সাধকগণ, শহীদগণ ও সৎ কর্মশীলগণ; এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী। মুজিবুর রহমান

And whoever obeys Allah and the Messenger - those will be with the ones upon whom Allah has bestowed favor of the prophets, the steadfast affirmers of truth, the martyrs and the righteous. And excellent are those as companions. Sahih International

৬৯. আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক(১) (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ(২) যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন- তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী!(৩)

(১) সিদ্দীক বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যে পরম সত্যনিষ্ঠ ও সত্যবাদী। তার মধ্যে সততা ও সত্যপ্রিয়তা পূর্ণমাত্রায় বিরাজিত থাকে। নিজের আচার আচরণ ও লেনদেনে সে হামেশা সুস্পষ্ট ও সরল-সোজা পথ অবলম্বন করে। সে সবসময় সাচ্চাদিলে হক ও ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে সে পর্বত সমান অটল অস্তিত্ব নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না। সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে, তার আত্মীয়অনাত্বীয়, বন্ধু-শক্র, আপন-পর কেউই তার কাছ থেকে নির্লজ্জ ও নিখাদ সত্যপ্রীতি, সত্য-সমর্থন ও সত্য-সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুরই আশংকা করে না। কোন রকম দ্বিধা-সংকোচ ও বিরোধিতা তাদের মনে কখনও স্থান পায় না। যেমন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ।

(২) সালেহীন বা সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তার নিজের চিন্তাধারা, আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা, সংকল্প, কথা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য-সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এর সাথে নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে। আর যারা প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্ষেত্রেই সৎকর্মসমূহের অনুবর্তী।

(৩) জান্নাতের পদমর্যাদাসমূহ আমলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। জান্নাতীদের পদমর্যাদা তাদেরই আমল তথা কৃতকর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। প্রথম শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা নবী-রাসূলগণের সাথে জান্নাতের উচ্চতর স্থানে জায়গা দেবেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদেরকে নবীগণের পরবর্তী মর্যাদার লোকদের সাথে স্থান দেবেন। তাদেরকেই বলা হয় সিদ্দীকীন। অতঃপর তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা থাকবেন শহীদগণের সাথে। আর চতুর্থ শ্রেণীর লোকেরা থাকবেন সালেহীনদের সাথে। সারকথা, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যশীল বান্দাগণ সে সমস্ত মহান ব্যক্তিদের সাথে থাকবেন, যারা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ও মকবুল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “জান্নাতবাসীরা নিজেদের জানালা দিয়ে উপরের শ্রেণীর লোকদেরকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে, যেমন পৃথিবীতে তোমরা সূদুর দিগন্তে নক্ষত্রকে দেখ। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি শুধু নবী-রাসূলগণ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই না, এমন কিছু লোক যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নবী-রাসূলদের সত্যায়ন করেছে।” [বুখারীঃ ৩২৫৬, মুসলিমঃ ২৮৩১] তাই যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভে ধন্য হতে চাইবে, তাদেরকে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসার মাধ্যমেই লাভ করতে হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল যে, সে লোকটির মর্যাদা কেমন হবে, যে লোক কোন গোষ্ঠীর ভালবাসা পোষণ করে, কিন্তু আমলের বেলায় এ দলের নির্ধারিত মান পর্যন্ত পৌছতে পারেনি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রতিটি লোকই যার সাথে তার ভালবাসা, তার সাথে থাকবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, পৃথিবীতে কোন কিছুতেই আমি এতটা আনন্দিত হইনি যতটা এ হাদীসের কারণে আনন্দিত হয়েছি। কারণ, এ হাদীসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যাদের গভীর ভালবাসা রয়েছে তারা হাশরের মাঠেও তার সাথেই থাকবেন। [বুখারীঃ ৬১৬৭, মুসলিমঃ ২৬৩৯]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আপনি আমার কাছে আমার নিজের আত্মার চেয়েও প্রিয়। আপনি আমার নিকট আমার পরিবার-পরিজন, সম্পদ, সন্তানসন্তুতিদের থেকেও প্রিয়। আমি আমার ঘরে অবস্থানকালে আপনার কথা স্মরণ হলে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে না দেখি ততক্ষণ স্থির থাকতে পারি না। যখন আমি আমার ও আপনার মৃত্যুর কথা স্মরণ করি তখন বুঝতে পারি যে, আপনি নবীদের সাথে উচু স্থানে অবস্থান করবেন। আর আমি যদি জান্নাতে প্রবেশ করি তবে আপনাকে দেখতে না পাওয়ার আশংকা করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীর কথার তাৎক্ষনিক কোন জওয়াব দিলেন না। শেষ পর্যন্ত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ আয়াত নাযিল করলেন। [আল-মু’জামুস সাগীর লিত তাবরানী ১/২৬; মাজমাউদ যাওয়ায়িদ ৭/৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি শুনেছিলাম যে, নবীদেরকে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়া ও আখেরাত যে কোন একটি বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থতার পর মারা গেলেন, সে অবস্থায় তার মুখ থেকে এ আয়াত শুনতে পেলাম। তখন আমি বুঝলাম যে, তাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। আর তিনি আখেরাত বেছে নিয়েছেন।” [বুখারী ৪৪৩৫; মুসলিম: ২৪৪৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) আর যে কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে, (শেষ বিচারের দিন) সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক (নবীর সহচর), শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম। [1]

 [1] আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার প্রতিদানের কথা বলা হচ্ছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, (المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ) "মানুষ তার সাথে থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে।" (বুখারী ৬১৬৮, মুসলিম ২৬৪১নং) আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ)-এর এই কথা শুনে সাহাবাগণ যত আনন্দিত হয়েছিলেন এত আনন্দিত আর কখনও হন নি। কারণ, তাঁরা জান্নাতেও রসূল (সাঃ)-এর সঙ্গ লাভ চাইতেন। আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কোন কোন সাহাবী নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন যে, মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে সর্বোচ্চ স্থান দান করবেন। আর আমরা তার থেকে নিম্নস্তরের স্থানই লাভ করব এবং এইভাবে আমরা আপনার সঙ্গ-সংসর্গ এবং আপনার দর্শন লাভ থেকে বঞ্চিত থাকব, যা দুনিয়াতে আমরা পাই। তাই আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করে তাঁদেরকে সান্ত্বনা দিলেন। (ইবনে কাসীর) কোন কোন সাহাবী তো বিশেষভাবে রসূল (সাঃ)-এর সাথে জান্নাতে থাকার দরখাস্ত করেছিলেন। (أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الجَنَّةِ) আর এর জন্য রসূল (সাঃ) তাদেরকে বেশী বেশী নফল নামায পড়ার তাকীদ করেছিলেন। (فَأَعِنِّي عَلى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُوْدِ) ‘‘তুমি বেশী বেশী সিজদা করে আমার সাহায্য কর।’’ (মুসলিম ৪৮৯নং) এ ছাড়া আরো একটি হাদীসে এসেছে যে, (التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الْأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ ) ‘‘সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী আম্বিয়া, সিদ্দীক এবং শহীদদের সাথে থাকবে।’’ (তিরমিযী ১২০৯নং) সিদ্দীকত্ব (সত্য-নিষ্ঠা) হল পূর্ণ ঈমান ও পূর্ণ আনুগত্যের নাম। নবুঅতের পর এর মান। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের মধ্যে আবূ বাকার সিদ্দীক (রাঃ) এই স্থান লাভ করার ব্যাপারে ছিলেন সবার ঊর্ধে। আর এই জন্যই সকলের ঐকমত্যে নবীগণ ছাড়া অন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে নবী করীম (সাঃ)-এর পর তিনিই হলেন সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সৎকর্মশীল বা নেক লোক তাঁকে বলা হয়, যিনি আল্লাহ এবং তাঁর বান্দাদের অধিকারসমূহ পূর্ণরূপে আদায় করেন এবং তাতে কোন প্রকার ত্রুটি করেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৭৯ مَاۤ اَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَۃٍ فَمِنَ اللّٰهِ ۫ وَ مَاۤ اَصَابَكَ مِنۡ سَیِّئَۃٍ فَمِنۡ نَّفۡسِكَ ؕ وَ اَرۡسَلۡنٰكَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیۡدًا ﴿۷۹﴾

তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট। আল-বায়ান

তোমার কোন কল্যাণ হলে তা হয় আল্লাহর তরফ হতে এবং তোমার যে কোন অকল্যাণ হলে তা হয় তোমার নিজের কারণে এবং আমি তোমাকে মানুষের জন্য রসূলরূপে প্রেরণ করেছি, (এ কথার) সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তাইসিরুল

তোমার নিকট যে কল্যাণ উপস্থিত হয় তা আল্লাহর সন্নিধান হতে এবং তোমার উপর যে অকল্যাণ নিপতিত হয় তা তোমার নিজ হতে হয়ে থাকে, এবং আমি তোমাকে মানবমন্ডলীর জন্য রাসূল রূপে প্রেরণ করেছি; এবং আল্লাহর সাক্ষীই যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান

What comes to you of good is from Allah, but what comes to you of evil, [O man], is from yourself. And We have sent you, [O Muhammad], to the people as a messenger, and sufficient is Allah as Witness. Sahih International

৭৯. যাকিছু কল্যাণ আপনার হয় তা আল্লাহর কাছ থেকে(১) এবং যাকিছু অকল্যাণ আপনার হয় তা আপনার নিজের কারণে(২) এবং আপনাকে আমরা মানুষের জন্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছি(৩); আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।

(১) আয়াতে ‘হাসানাহ’-এর দ্বারা নেয়ামতকে বোঝানো হয়েছে। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মানুষ যে সমস্ত নেয়ামত লাভ করে তা তাদের প্রাপ্য নয়, বরং একান্ত আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহেই প্রাপ্ত হয়। মানুষ যত ইবাদাত-বন্দেগীই করুক না কেন, তাতে সে কোন নেয়ামত লাভের অধিকারী হতে পারে না। কারণ, ইবাদাত করার যে সামর্থ্য, তাও আল্লাহর পক্ষ থেকেই লাভ হয় তদুপরি আল্লাহ তা'আলার অসংখ্য নেয়ামত তো রয়েছেই। এ সমস্ত নেয়ামত সীমিত ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে কেমন করে সম্ভব? বিশেষ করে আমাদের ইবাদাত-বন্দেগী যদি আল্লাহ্ তা'আলার শান মোতাবেক না হয়? অতএব, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ্ তা'আলার রহমত ব্যতীত কোন একটি লোকও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হল, আপনিও কি যেতে পারবেন না? তিনি বললেন, না আমিও না। [বুখারীঃ ৫৩৪৯, মুসলিমঃ ২৮১৬]

(২) বিপদাপদ যদিও আল্লাহ তা'আলাই সৃষ্টি করেন, কিন্তু তার কারণ হয় মানুষের কৃত অসৎকর্ম। মানুষটি যদি কাফের হয়ে থাকে, তবে তার উপর আপতিত বিপদাপদ তার জন্য সে সমস্ত আযাবের একটা সামান্য নমুনা হয়ে থাকে যা আখেরাতে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ আখেরাতের আযাব এর চাইতেও বহুগুণ বেশী। আর যদি লোকটি ঈমানদার হয়, তবে তার উপর আপতিত বিপদাপদ হয় তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত, যা আখেরাতে তার মুক্তির কারণ। অথবা তার জন্য পদমর্যাদা বৃদ্ধির সোপান। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের উপর যে বিপদই আপতিত হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তার গোনাহের কাফফারা করে দেন। এমনকি যে কাটাটি পায়ে ফোটে তাও। [বুখারীঃ ৫৩২৪, মুসলিমঃ ২৫৭২]

(৩) আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র মানবমণ্ডলীর জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি শুধু আরবদের জন্যই রাসূল ছিলেন না, বরং তার রেসালাত ছিল সমগ্র বিশ্বমানবের জন্য ব্যাপক। তারা তখন উপস্থিত থাকুক বা না-ই থাকুক। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত মানুষই এর আওতাভুক্ত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৯) তোমার যা কল্যাণ হয়, তা আল্লাহর নিকট থেকে[1] এবং যা অকল্যাণ হয়, তা নিজের কারণে।[2] আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রসূলরূপে প্রেরণ করেছি। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।

[1] অর্থাৎ, তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ স্বরূপ। কোন নেকী অথবা আনুগত্যের প্রতিদান স্বরূপ নয়। কেননা, নেকী করার তওফীকদাতাও মহান আল্লাহ। তাছাড়া তাঁর নিয়ামত ও অনুদান এত বেশী যে, কোন মানুষের ইবাদত-আনুগত্য তার তুলনায় কিছুই নয়। এই জন্য একটি হাদীসে রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘জান্নাতে যে-ই যাবে, সে আল্লাহর রহমতে যাবে (অর্থাৎ, নিজের আমলের বিনিময়ে নয়)।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনিও কি আল্লাহর রহমত ব্যতীত জান্নাতে যেতে পারবেন না?’ তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ না তাঁর রহমতের আঁচল আমাকে আবৃত করে নেবে।’’ (বুখারী ৫৬৭৩নং)

[2] এই অকল্যাণ ও অনিষ্ট যদিও আল্লাহর পক্ষ হতেই আসে যেমন كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللهِ বাক্যের দ্বারা তা পরিষ্কার, কিন্তু যেহেতু এই অকল্যাণ কোন পাপের শাস্তি অথবা তার বদলা হয়, তাই বলা হল, এটা তোমাদের পক্ষ হতে। অর্থাৎ, এটা তোমাদের ভুল, অবহেলা এবং পাপের ফল। যেমন, অন্যত্র বলেছেন, [وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ] ‘‘তোমাদের যেসব বিপদ-আপদ আপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’’ (শূরাঃ ৩০)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:৮০ مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰهَ ۚ وَ مَنۡ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ عَلَیۡهِمۡ حَفِیۡظًا ﴿ؕ۸۰﴾

যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি। আল-বায়ান

যে রসূলের আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (জোরপূর্বক তাকে সৎপথে আনার জন্য) আমি তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাইনি। তাইসিরুল

যে কেহ রাসূলের অনুগত হয় নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই অনুগত হয়ে থাকে, এবং যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে রক্ষক রূপে প্রেরণ করিনি। মুজিবুর রহমান

He who obeys the Messenger has obeyed Allah; but those who turn away - We have not sent you over them as a guardian. Sahih International

৮০. কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল(১) আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আপনাকে তো আমরা তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠাই নি।

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সকল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু যে অস্বীকার করেছে (সে জান্নাতবাসী হতে পারবে না)। জিজ্ঞাসা করা হলঃ কে অস্বীকার করেছে, হে রাসূল! উত্তরে বললেনঃ যে আমার অনুসরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল না, সে অস্বীকার করল। [বুখারীঃ ৭২৮০]

অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে আমার আনুগত্য করল সে অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্য হলো সে আল্লাহর অবাধ্য হল। অনুরূপভাবে যে ক্ষমতাসীনের আনুগত্য করল সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ক্ষমতাসীনের অবাধ্য হলো সে আমার নাফরমানী করলো। ইমাম বা শাসক তো ঢালস্বরূপ, যার পিছনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করা যায় এবং যার দ্বারা বাঁচা যায়। যদি ইমাম বা শাসক আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেন এবং ইনসাফ করেন তা হলে সেটা তার জন্য সওয়াবের কাজ হবে। আর যদি অন্য কিছু করেন তবে সেটা তার উপরই বর্তাবে। [বুখারীঃ ২৯৫৭, মুসলিমঃ ১৮৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮০) যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল, আমি তাদের উপর তোমাকে প্রহরীরূপে প্রেরণ করিনি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১১৫ وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الۡهُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا ﴿۱۱۵﴾

আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ। আল-বায়ান

যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস! তাইসিরুল

আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, তাহলে সে যাতে অভিনিবিষ্ট আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব; এবং ওটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল। মুজিবুর রহমান

And whoever opposes the Messenger after guidance has become clear to him and follows other than the way of the believers - We will give him what he has taken and drive him into Hell, and evil it is as a destination. Sahih International

১১৫. আর কারো নিকট সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস!(১)

(১) এ আয়াত থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা বের হয়। এক. আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতাকারী জাহান্নামী। দুই. কোন ব্যাপারে হক তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত প্রকাশিত হওয়ার পর সেটার বিরোধিতা করাও জাহান্নামীদের কাজ। তিন. এ উম্মতের ইজমা বা কোন বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছার পর সেটার বিরোধিতা করা অবৈধ। কারণ, তারা পথভ্রষ্টতায় একমত হবে না। মুমিনদের মত ও পথের বিপরীতে চলার কোন সুযোগ নেই।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৫) আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং বিশ্বাসীদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। [1] আর তা কত মন্দ আবাস!

[1] হিদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর রসূল (সাঃ)-এর বিরোধিতা এবং মু’মিনদের পথ ত্যাগ করে অন্য পথের অনুসরণ করা ইসলাম থেকে খারিজ গণ্য হয় এবং এ ব্যাপারেই জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মু’মিনীন বলতে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের বুঝানো হয়েছে। যাঁরা হলেন সর্বপ্রথম ইসলামের অনুসারী এবং ইসলামী শিক্ষার পরিপূর্ণ নমুনা। এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার সময় তাঁরা ব্যতীত অন্য কোন মু’মিনীন বিদ্যমানও ছিলেন না যে তাঁরা লক্ষ্য হতে পারেন। কাজেই রসূল (সাঃ)-এর বিরোধিতা এবং সাহাবা (রাঃ)-দের পথ ত্যাগ করে অন্য পথের অনুসরণ করা দুটোই প্রকৃতপক্ষে একই জিনিসের নাম। এই জন্য সাহাবায়ে কেরামদের পথ থেকে বিচ্যুতিও কুফরী ও ভ্রষ্টতা। কোন কোন উলামা মু’মিনীনদের পথ বলতে উম্মতের ঐক্য (ইজমা বা সর্ববাদিসম্মতি)-কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, উম্মতের কোন বিষয়ে ঐকমত্য প্রত্যাখ্যান করাও কুফরী। আর উম্মতের ঐকমত্যের অর্থ হল, কোন মসলায় উম্মতের সমস্ত আলেম ও ফিক্বাহবিদের ঐকমত্য প্রকাশ করা। অথবা কোন বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ঐক্য হওয়া। উভয় অবস্থায়ই উম্মতের ঐক্য বলে গণ্য এবং এই উভয় ঐক্যের অথবা তার কোন একটির অস্বীকার করা হবে কুফরী। তবে সাহাবায়ে কেরামদের ঐকমত্য তো অনেক মসলায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই প্রকারের ঐক্য তো লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু সাহাবায়ে কেরামদের ঐক্যের পর সমস্ত উম্মতের বহু বিষয়ে ঐকমত্যের দাবী করা হলেও বাস্তবে এ রকম মাসলা-মাসায়েলের সংখ্যা অনেক কম, যে ব্যাপারে উম্মতের সমস্ত উলামা ও ফুক্বাহা (ফিক্বাহ শাস্ত্রের পন্ডিতগণ) ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। স্বল্প সংখ্যায় হলেও যে ব্যাপারে উম্মতের ঐক্য হয়েছে তার অস্বীকৃতিও সাহাবায়ে কেরামদের ঐক্যের অস্বীকৃতির মতই কুফরী। কারণ, সহীহ হাদীসে এসেছে যে, ‘‘মহান আল্লাহ আমার উম্মতকে ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না এবং জামাআতের উপর থাকে আল্লাহর হাত।’’ (সহীহ তিরমিযী, আলবানী ১৭৫৯নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৩৬ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ الۡكِتٰبِ الَّذِیۡ نَزَّلَ عَلٰی رَسُوۡلِهٖ وَ الۡكِتٰبِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنۡ قَبۡلُ ؕ وَ مَنۡ یَّكۡفُرۡ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا ﴿۱۳۶﴾

হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে। আল-বায়ান

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূলের, তাঁর রসূলের নিকট তিনি অবতীর্ণ করেছেন সেই কিতাবের এবং পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে, তাঁর রসূলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করে সে সীমাহীন পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং এই কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল, এবং যে কেহ আল্লাহ, তদ্বীয় ফেরেশ্তা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং পরকাল সম্বন্ধে অবিশ্বাস করে, নিশ্চয়ই সে সুদূর বিপথে বিভ্রান্ত হয়েছে। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, believe in Allah and His Messenger and the Book that He sent down upon His Messenger and the Scripture which He sent down before. And whoever disbelieves in Allah, His angels, His books, His messengers, and the Last Day has certainly gone far astray. Sahih International

১৩৬. হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ তার রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ, তার ফিরিশতাগণ, তার কিতাবসমূহ, তার রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি কুফর করে(১) সে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হলো।

(১) কুফরী করার দুটি অর্থ হয়। (এক) সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অস্বীকার করা। (দুই) মুখে মেনে নেয়া কিন্তু মনে মনে অস্বীকার করা। অথবা নিজের মনের ভাবের মাধ্যমে একথা প্রমাণ করা যে, সে যে জিনিষটি মেনে নেয়ার দাবী করছে আসলে সেটিকে মানে না। এখানে কুফর শব্দটি দুটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৬) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহতে, তাঁর রসূলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস কর; [1] আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ এবং পরকালকে অবিশ্বাস করে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে সুদূরে চলে যায়।

[1] বিশ্বাসীদেরকে বিশ্বাস করা ও ঈমানদারদেরকে ঈমান আনার প্রতি তাকীদ করা, অর্জিত জিনিস অর্জন করার ব্যাপার নয়; বরং এই তাকীদের মাধ্যমে ঈমানকে পরিপূর্ণ করার এবং তার উপর সুদৃঢ় ও অবিচল থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন [اِهْدِنَا الصِّراطَ المُسْتَقِيْمَ] এর ভাবার্থ। (এ ছাড়া হাদীসে এসেছে যে, ঈমান পুরাতন হয় এবং তার নবায়নের জন্য দু’আ করতে হয়। সিলসিলাহ সহীহাহ ১৫৮৫নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৬৩ اِنَّاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡكَ كَمَاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی نُوۡحٍ وَّ النَّبِیّٖنَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ ۚ وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ عِیۡسٰی وَ اَیُّوۡبَ وَ یُوۡنُسَ وَ هٰرُوۡنَ وَ سُلَیۡمٰنَ ۚ وَ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ زَبُوۡرًا ﴿۱۶۳﴾ۚ

নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবূর। আল-বায়ান

আমি তোমার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছি যেমন নূহ ও তার আগের নাবীগণের নিকট ওয়াহী পাঠিয়েছিলাম, আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধর আর ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওয়াহী পাঠিয়েছিলাম আর আমি দাঊদকে যাবূর প্রদান করেছিলাম। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি, যেরূপ আমি নূহ ও তৎপরবর্তী নাবীগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তদ্বংশীয়গণের প্রতি এবং ঈসা, আইযুব, ইউনুস, হারূণ, সুলাইমানের প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এবং আমি দাঊদকে যাবুর প্রদান করেছিলাম। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have revealed to you, [O Muhammad], as We revealed to Noah and the prophets after him. And we revealed to Abraham, Ishmael, Isaac, Jacob, the Descendants, Jesus, Job, Jonah, Aaron, and Solomon, and to David We gave the book [of Psalms]. Sahih International

১৬৩. নিশ্চয় আমরা আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম(১) যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম(২)। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে প্রদান করেছিলাম যাবূর।

(১) নবীগণের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ্ তা'আলার বিশেষ নির্দেশ ও বাণীকে ওহী বলা হয়। হারিস ইবন হিশাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অহী কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত আমার নিকট আসে। আর ওটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টদায়ক অহী, এরপর ফেরেশতা আমার থেকে পৃথক হতো এমতাবস্থায় যে, তিনি যা বলেন তা শেষ হতেই তার কাছ থেকে আমি তা আয়ত্ব করে ফেলি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকারে এসে আমাকে যে অহী বলেন, আমি তা সাথে সাথে আয়ত্ব করে নেই। [বুখারীঃ ২]

(২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, পূর্ববতী নবীগণের প্রতি যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়েছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তেমনি আল্লাহ্ তা'আলা ওহী নাযিল করেছেন। অতএব, পূর্ববর্তী নবীগণকে যারা মান্য করে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও মান্য করতে বাধ্য। আর যারা তাকে অস্বীকার করে তারা যেন অন্যসব নবীকে এবং তাদের প্রতি প্রেরিত ওহীকেও অস্বীকার করলো।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৩) নিশ্চয় আমি তোমার নিকট অহী প্রেরণ করেছি, যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারূন এবং সুলায়মানের নিকট আমি অহী প্রেরণ করেছিলাম[1] এবং দাউদকে যবূর দান করেছিলাম।

[1] ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কিছু মানুষ মনে করে যে, মূসা (আঃ)-এর পর আল্লাহ আর কোন মানুষের উপর অহী বা প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেননি, এমনকি তারা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি অহী বা প্রত্যাদেশকেও অস্বীকার করে। তারই প্রেক্ষাপটে মহান আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করে ওদের ধারণার খন্ডন করেছেন এবং রসূল (সাঃ)-এর রিসালাত ও অহীকে প্রমাণ করেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৬৪ وَ رُسُلًا قَدۡ قَصَصۡنٰهُمۡ عَلَیۡكَ مِنۡ قَبۡلُ وَ رُسُلًا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَیۡكَ ؕ وَ كَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَكۡلِیۡمًا ﴿۱۶۴﴾ۚ

আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা তোমাকে দেইনি আর আল্লাহ মূসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। আল-বায়ান

আমি সেই রসূলদের প্রতিও ওয়াহী পাঠিয়েছি যাদের সম্পর্কে আমি তোমাকে আগেই বলেছি, আর অনেক রসূল যাদের কথা আমি তোমাকে বলিনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন সরাসরি। তাইসিরুল

আর নিশ্চয়ই আমি তোমার পূর্বের বহু রাসূলের প্রসঙ্গ তোমাকে বর্ণনা করেছি এবং অনেক রাসূল যাদের কথা তোমাকে বলিনি; আল্লাহ মূসার সাথে প্রত্যক্ষ কথা বলেছেন। মুজিবুর রহমান

And [We sent] messengers about whom We have related [their stories] to you before and messengers about whom We have not related to you. And Allah spoke to Moses with [direct] speech. Sahih International

১৬৪. আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে দেইনি(১)। আর অবশ্যই আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন।

(১) এ আয়াতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর পরে যেসব নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাদের সম্পর্কে প্রথমে সাধারণভাবে বলার পর তন্মধ্যে বিশিষ্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে যে, এরা সবাই আল্লাহর রাসূল এবং তাদের নিকটও বিভিন্ন পস্থায় ওহী প্রেরিত হয়েছে। কখনো ফিরিশতাদের মাধ্যমে ওহী পৌছেছে, কখনো লিপিবদ্ধ কিতাব আকারে এসেছে, আবার কখনো আল্লাহ তা'আলা রাসূলের সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথোপকথন করেছেন। যে কোন পস্থায়ই ওহী পৌছুক না কেন, তদানুযায়ী আমল করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। অতএব, ইয়াহুদীদের এরূপ আবদার করা যে, তাওরাতের মত লিখিত কিতাব নাযিল হলে আমরা মান্য করবো, অন্যথায় নয়- সম্পূর্ণ আহম্মকী ও স্পষ্ট কুফরী। আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র শরীআতের অধিকারী রাসূলের সংখ্যা ছিল তিনশ’ তের জন। [সহীহ ইবন হিব্বানঃ ৩৬১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৪) নিশ্চয় আমি অনেক রসূলের কথা পূর্বে তোমার নিকট বর্ণনা করেছি[1] এবং অনেক রসূলের কথা তোমার নিকট বর্ণনা করিনি। [2] আর মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছেন।[3]

[1] যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও তাঁদের ঘটনাবলী কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে ,তাঁদের সংখ্যা ২৪ অথবা ২৫ যথাঃ (১) আদম (আঃ) (২) ইদরীস (আঃ) (৩) নূহ (আঃ) (৪) হূদ (আঃ) (৫) সালেহ (আঃ) (৬) ইবরাহীম (আঃ) (৭) লূত (আঃ) (৮) ইসমাঈল (আঃ) (৯) ইসহাক (আঃ) (১০) ইয়াক্বূব (আঃ) (১১) ইউসুফ (আঃ) (১২) আইউব (আঃ) (১৩) শুআইব (আঃ) (১৪) মূসা (আঃ) (১৫) হারূন (আঃ) (১৬) ইউনুস (আঃ) (১৭) দাউদ (আঃ) (১৮) সুলাইমান (আঃ) (১৯) ইলয়্যাস (আঃ) (২০) আল-য়্যাসা’ (আঃ) (২১) যাকারিয়া (আঃ) (২২) ইয়াহইয়া (আঃ) (২৩) ঈসা (আঃ) (২৪) যুল কিফল (আঃ) (অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকটে) (২৫) মুহাম্মাদ (সাঃ)।

[2] যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও ঘটনাবলী কুরআনে উল্লেখ হয়নি তাঁদের সংখ্যা কত? এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। তবে একটি হাদীস পাওয়া যায় যেটা আম জনতার নিকট খুবই প্রসিদ্ধ, তাতে নবী ও রসূলগণের সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার এবং অন্য এক হাদীসে আট হাজার উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু এই হাদীসগুলি অত্যন্ত দুর্বল। অথচ কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে শুধু এতটুকু বুঝা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলায় যুগে যুগে মহান আল্লাহ নবী ও রসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবুঅতের সেই ধারাবাহিকতা শেষ হয় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে। কিন্তু শেষনবী (সাঃ)-এর পূর্বে নবী ও রসূলের সংখ্যা কত? এর সঠিক উত্তর আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। পক্ষান্তরে শেষনবী (সাঃ)-এর পরে যত নবুঅতের দাবী করেছে বা করবে, তারা সকলেই দাজ্জাল ও মিথ্যুক। আর তাদের মিথ্যা নবুঅতের অনুসারীগণ ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ। যারা উম্মতে মুহাম্মাদিয়া হতে পৃথক এক প্রতিদ্বন্দ্বী উম্মত। যেমন, বাবিয়াহ, বাহাইয়াহ, মীর্যাইয়াহ বা ক্বাদিয়ানী ফির্কা প্রভৃতি। অনুরূপভাবে মির্যা ক্বাদিয়ানীকে প্রতিশ্রুত ‘মাসীহ’ বলে বিশ্বাসী লাহোরী মির্যায়ী ফির্কাও।

[3] (অদৃশ্য থেকে গায়বীভাবে অথবা স্পষ্টভাবে।) এটি মূসা (আঃ)-এর পৃথক বৈশিষ্ট্য; যার ফলে তিনি অন্যান্য নবীদের তুলনায় পৃথক মর্যাদার অধিকারী। সহীহ ইবনে হিব্বানের এক বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম ইবনে কাসীর আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথনে আদম (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কেও মূসা (আঃ)-এর শরীক বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাক্বারার ২৫৩নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৬৫ رُسُلًا مُّبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ لِئَلَّا یَكُوۡنَ لِلنَّاسِ عَلَی اللّٰهِ حُجَّۃٌۢ بَعۡدَ الرُّسُلِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیۡزًا حَكِیۡمًا ﴿۱۶۵﴾

আর (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় । আল-বায়ান

রসূলগণ ছিলেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী যাতে রসূলদের আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অযুহাতের সুযোগ না থাকে। আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়। তাইসিরুল

আমি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শক রূপে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলগণের পরে লোকদের মধ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে কোন অপবাদ দেয়ার অবকাশ না থাকে এবং আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান

[We sent] messengers as bringers of good tidings and warners so that mankind will have no argument against Allah after the messengers. And ever is Allah Exalted in Might and Wise. Sahih International

১৬৫. সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি(১), যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) আল্লাহ তা'আলা ঈমানদারদের ঈমান ও সৎকর্মশীলতার পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ দান করার জন্য এবং কাফের, বেঈমান ও দূরাচারদের কুফর ও অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন কিয়ামতের শেষ বিচারের দিনে অবাধ্য ব্যক্তিরা অজুহাত উত্থাপন করতে না পারে যে, হে আল্লাহ! কোন কাজে আপনি সন্তুষ্ট আর কোন কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। জানতে পারলে অবশ্যই আমরা আপনার সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করতাম। অতএব, আমাদের অনিচ্ছাকৃত ক্রটি মার্জনীয় এবং আমরা নিরপরাধ।

পথভ্রষ্ট লোকেরা যাতে এহেন অজুহাত পেশ করতে বা বাহানার আশ্রয় নিতে না পারে, তজ্জন্য আল্লাহ তা'আলা স্পষ্ট নিদর্শনসহ নবীগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তারা সর্বস্ব উৎসর্গ করে সত্য পথ প্রদর্শন করেছেন। অতএব, এখন আর সত্য দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোন অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না, কোন বাহানারও অবকাশ নেই। আল্লাহর ওহী এমন এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ যার মোকাবেলায় অন্য কোন প্রমাণই কার্যকর হতে পারে না। কুরআনুল কারীম এমন এক অকাট্য দলীল যার সামনে কোন অযুক্তি টিকতে পারে না। এ আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য সূরা ত্বা-হা এর ১৩৪ এবং সূরা আল-কাসাস এর ৪৭নং আয়াত দেখা যেতে পারে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৫) আমি সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী[1] রসূল প্রেরণ করেছি; যাতে রসূল (আসার) পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে।[2] আর আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।

[1] বিশ্বাসী বান্দাদেরকে জান্নাত ও জান্নাতের সুখ-সম্পদের সুসংবাদবাহী এবং অবিশ্বাসী বা কাফেরদেরকে আল্লাহর আযাব এবং জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুন থেকে ভীতি-প্রদর্শন ও সতর্ককারী।

[2] অর্থাৎ, নবুঅত অথবা সুসংবাদ দান ও ভীতি প্রদর্শনের ধারাকে এই জন্যেই অব্যাহত রেখেছেন, যাতে শেষ বিচারের দিনে কেউ এ ওজর পেশ করতে না পারে যে, আমাদের নিকট তোমার কোন বার্তা পৌঁঁছেনি। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, {وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُم بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَى} অর্থাৎ, যদি আমি ওদেরকে তার পূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম তাহলে ওরা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই তোমার নিদর্শন মেনে নিতাম। (সূরা ত্বা-হা ১৩৪ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৭০ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَكُمُ الرَّسُوۡلُ بِالۡحَقِّ مِنۡ رَّبِّكُمۡ فَاٰمِنُوۡا خَیۡرًا لَّكُمۡ ؕ وَ اِنۡ تَكۡفُرُوۡا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا ﴿۱۷۰﴾

হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি কুফরী কর, তবে নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা রয়েছে, তা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

হে মানুষ! রসূল তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য বিধান নিয়ে এসেছে, কাজেই তোমরা ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে, আর যদি কুফরী কর (তাহলে জেনে রেখ) আকাশসমূহে আর যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহা কুশলী। তাইসিরুল

হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালকের সন্নিধান হতে সত্যসহ রাসুল আগমন করেছেন, অতএব বিশ্বাস স্থাপন কর- তোমাদের কল্যাণ হবে, আর যদি অবিশ্বাস কর তবে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডেলে যা কিছু আছে তা আল্লাহর এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

O Mankind, the Messenger has come to you with the truth from your Lord, so believe; it is better for you. But if you disbelieve - then indeed, to Allah belongs whatever is in the heavens and earth. And ever is Allah Knowing and Wise. Sahih International

১৭০. হে লোকসকল! অবশ্যই রাসূল তোমাদের রবের কাছ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সুতরাং তোমরা ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে(১) আর যদি তোমরা কুফরী কর তবে আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্যেই হেদায়াত সীমাবদ্ধ; তার অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণ করা চরম গোমরাহী। অতএব, ইয়াহুদীদের ধ্যান-ধারণা, ধর্ম-কর্ম ভ্রান্ত ও বাতিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭০) হে মানব! রসূল তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য এনেছে, সুতরাং তোমরা বিশ্বাস কর, তোমাদের কল্যাণ হবে। আর তোমরা অবিশ্বাস করলেও আকাশ ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই[1] এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ তোমাদের কুফরী করার কারণে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। যেমন মূসা (আঃ) তাঁর স্বজাতিকে বলেছিলেন, {إِن تَكْفُرُواْ أَنتُمْ وَمَن فِي الأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ} অর্থাৎ, তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ কাফের হয়ে যাও; তবুও নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সর্বপ্রশংসিত। (সূরা ইবরাহীম ৮) আর হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন; হে আমার বান্দা সকল! তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন বৃদ্ধি লাভ হবে না। আর তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সব থেকে বড় অবাধ্য, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন হ্রাস বা ঘাটতি হবে না। হে আমার বান্দা সকল! তোমরা সকলেই যদি একটি ময়দানে একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে আমার নিকট চাও এবং প্রত্যেক মানুষকে যদি তার কামনা মোতাবেক দান করি, তাহলে তা আমার ভান্ডার ঐ পরিমাণ হ্রাস পাবে, একটি সূচ সাগরে ডুবানোর পর তার ডগায় লেগে যে পরিমাণ সাগরের পানি হ্রাস পায়। (সহীহ মুসলিমঃ বির্র অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১৭১ یٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِكُمۡ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ اِلَّا الۡحَقَّ ؕ اِنَّمَا الۡمَسِیۡحُ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ رَسُوۡلُ اللّٰهِ وَ كَلِمَتُهٗ ۚ اَلۡقٰهَاۤ اِلٰی مَرۡیَمَ وَ رُوۡحٌ مِّنۡهُ ۫ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ ۚ۟ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا ثَلٰثَۃٌ ؕ اِنۡتَهُوۡا خَیۡرًا لَّكُمۡ ؕ اِنَّمَا اللّٰهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ سُبۡحٰنَهٗۤ اَنۡ یَّكُوۡنَ لَهٗ وَلَدٌ ۘ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ وَكِیۡلًا ﴿۱۷۱﴾

হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, 'তিন'। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আল-বায়ান

ওহে কিতাবধারীগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, আর আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলো না, ঈসা মাসীহ তো আল্লাহর রসূল আর তাঁর বানী যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন, আর তাঁর পক্ষ হতে নির্দেশ, কাজেই তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান আনো, আর বলো না ‘তিন’ (জন ইলাহ আছে), নিবৃত্ত হও, তা হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আল্লাহ তো একক ইলাহ, তিনি পবিত্র এত্থেকে যে, তাঁর সন্তান হবে। আসমানসমূহে আর যমীনে যা আছে সব কিছু তাঁরই, আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তাইসিরুল

হে আহলে কিতাব! তোমরা স্বীয় ধর্মে সীমা অতিক্রম করনা এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে সত্য ব্যতীত বলনা; নিশ্চয়ই মারইয়াম নন্দন ঈসা মাসীহ্ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বাণী - যা তিনি মারইয়ামের প্রতি সঞ্চারিত করেছিলেন এবং তাঁর আদিষ্ট আত্মা; অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আর ‘‘আল্লাহ তিন জনের একজন’’- এ কথা বলা পরিহার কর। তোমাদের কল্যাণ হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহই একমাত্র ইলাহ; তিনি কোন সন্তান হওয়া হতে পুতঃ, মুক্ত। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা আছে তা তাঁরই এবং আল্লাহই কার্য সম্পাদনে যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান

O People of the Scripture, do not commit excess in your religion or say about Allah except the truth. The Messiah, Jesus, the son of Mary, was but a messenger of Allah and His word which He directed to Mary and a soul [created at a command] from Him. So believe in Allah and His messengers. And do not say, "Three"; desist - it is better for you. Indeed, Allah is but one God. Exalted is He above having a son. To Him belongs whatever is in the heavens and whatever is on the earth. And sufficient is Allah as Disposer of affairs. Sahih International

১৭১. হে কিতাবীরা স্বীয় দ্বীনের মধ্যে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না(১) এবং আল্লাহর উপর সত্য ব্যতীত কিছু বলো না। মারইয়াম-তনয় ঈসা মসীহ কেবল আল্লাহ্‌র রাসূল এবং তার বাণী(২), যা তিনি মারইয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন ও তার পক্ষ থেকে রূহ। কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলদের উপর ঈমান আন এবং বলো না, তিন(৩)! নিবৃত্ত হও, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহই তো এক ইলাহ; তার সন্তান হবে---তিনি এটা থেকে পবিত্ৰ-মহান। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; আর কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।(৪)

(১) غُلُوّ শব্দের অর্থ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার অর্থ তার ন্যায়সঙ্গত সীমারেখা অতিক্রম করা। আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী-নাসারা উভয় জাতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ বাড়াবাড়ি করো না। কারণ এ বাড়াবাড়ি রোগে উভয় জাতিই আক্রান্ত হয়েছে। নাসারারা ঈসা 'আলাইহিস্ সালাম-কে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। তাকে স্বয়ং আল্লাহ, আল্লাহর পুত্র অথবা তিনের এক আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে ইয়াহুদীরা তাকে অমান্য ও প্রত্যাখ্যান করার দিক দিয়ে বাড়াবাড়ি পথ অবলম্বন করেছে। তারা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর নবী হিসেবে স্বীকার করেনি। বরং তার মাতা মারইয়াম 'আলাইহাস সালাম-এর উপর মারাত্মক অপবাদ আরোপ করেছে এবং তার নিন্দাবাদ করেছে। দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবড়ি ও সীমালংঘনের কারণে ইয়াহুদী ও নাসারাদের গোমরাহী ও ধ্বংস হওয়ার শোচনীয় পরিণতি বারবার প্রত্যক্ষ হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সংযত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জিত করো না, যেমন নাসারারা ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিমুস সালাম-এর ব্যাপারে করেছে। স্মরণ রাখবে যে, আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল বলবে।” [বুখারীঃ ৩৪৪৫] অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা ও মানুষ হিসেবে আমিও অন্য লোকদের সমপর্যায়ের। তবে আমার সবচেয়ে বড় মর্যাদা এই যে, আমি আল্লাহর রাসূল। এর চেয়ে অগ্রসর করে আমাকে আল্লাহ তা'আলার কোন বিশেষণে বিশেষিত করা বাড়াবাড়ি বৈ নয়। তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের মতো বাড়াবাড়ি করো না। হাদীসে এসেছে যে, হজের সময় ‘রমীয়ে জামারাহ’ অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-কে কংকর আনতে আদেশ করলেন। তিনি মাঝারি আকারের পাথরকুচি নিয়ে এলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত পছন্দ করলেন এবং বললেন, “এ ধরণের মাঝারী আকারের কংকর নিক্ষেপ করাই পছন্দনীয়। বাক্যটি তিনি দু’বার বললেন। তারপর বললেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থেকে। কারণেই ধ্বংস হয়েছে। [ইবন মাজাহ: ৩০২৯]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন একটি কাজ করলেন যাতে রুখসত বা ছাড় ছিল। কিন্তু কিছু লোক সেটা করতে অপছন্দ করল। সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌছলে তিনি আল্লাহর হামদ ও প্রশংসার পর বললেন, কিছু লোকের এ কি অবস্থা হয়েছে যে, তারা আমি যা করছি তা করা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়? আল্লাহর শপথ, আল্লাহর ব্যাপারে আমি তাদের থেকে সবচেয়ে বেশী জানি এবং তাদের থেকেও বেশী আল্লাহর ভয় করি। [বুখারী: ৭৩০১]

(২) এখানে ‘কালেমাতুহু’ শব্দে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালেমা। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন

(১) ‘কালেমাতুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর সুসংবাদ। এর দ্বারা ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ব্যক্তি-সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। ইতোপূর্বে আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতার মাধ্যমে মারইয়াম 'আলাইহাস সালামকে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে সুসংবাদ দান করেছিলেন সেখানে ‘কালেমা’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, (إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ) “যখন ফিরিশতারা বললো, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন এক কালেমার” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৪৫]

(২) কারো মতে এখানে ‘কালেমা’ অর্থ নিদর্শন। যেমন অন্য এক আয়াতে শব্দটি নিদর্শন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: (وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا) [সূরা আত-তাহরীম: ১২] তাই আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক মারইয়ামের প্রতি কালেমা পাঠাবার অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা মারইয়াম 'আলাইহাস সালামের গর্ভাধারকে কোন পুরুষের শুক্ৰকীটের সহায়তা ছাড়াই গর্ভধারণের হুকুম দিলেন। সে হিসেবে ঈসা আলাইহিস সালাম শুধু আল্লাহর কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

(৩) কাতাদা বলেন, কালেমা দ্বারা كُنْ বা ‘হও’ শব্দ বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বলার কারণ হচ্ছে এই যে, ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারটি জাগতিক কোন মাধ্যম বাদেই আল্লাহর কালেমা দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এখানে তাকে 'আল্লাহর কালাম' বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহর কালেমার মাধ্যমেই হয়। তার কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না। আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে তার নিদর্শন ও আশ্চর্যতম সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে মারইয়ামের নিকট পাঠালেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম তার জামার ফাঁকে ফুঁ দিলেন। এ পবিত্র ফেরেশতার পবিত্র ফুঁ মারইয়ামের গর্ভে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা'আলা সে ফুঁকটিকে পবিত্র রুহ হিসেবে পরিণত করলেন। আর এ জন্যই তাঁকে সম্মানিত করে ‘রুহুল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে। [তাফসীরে সা’দী]

(৩) কুরআন নাযিলের সমসাময়িক কালে খৃষ্টানরা যেসব উপদলে বিভক্ত ছিল, তন্মধ্যে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে তাদের ধর্মবিশ্বাস তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক দল মনে করতো-মসীহই আল্লাহ। স্বয়ং আল্লাহই মসীহরূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বিতীয় দল বলতো - মসীহ পুত্র। তৃতীয় দলের বিশ্বাস ছিল - তিন সদস্যের সমন্বয়ে আল্লাহর একক পরিবার। এ দলটি আবার দুটি উপদলে বিভক্ত ছিল। এক দলের মতে পিতা, পুত্র ও মারইয়াম এ তিনের সমন্বয়ে এক আল্লাহ। অন্য একদলের মতে মারইয়াম 'আলাইহিস সালাম-এর পরিবর্তে রূহুল কুদুস বা পবিত্র আত্মা জিবরীল আলাইহিস সালাম ছিলেন তিন আল্লাহর একজন।

মোটকথা, খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে তিনের এক আল্লাহ মনে করতো। তাদের ভ্রান্তি অপনোদনের জন্য কুরআনুল কারীমে প্রত্যেকটি উপদলকে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্বোধন করা হয়েছে এবং সম্মিলিতভাবেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের সামনে স্পষ্ট ও জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, সত্য একটিই। আর তা হলো ঈসা মসীহ আলাইহিস সালাম তার মাতা মারইয়াম আলাইহিস সালাম এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী একজন মানুষ ও আল্লাহ্ তা'আলার সত্য রাসূল। এর অতিরিক্ত তার সম্পর্কে যা কিছু বলা বা ধারণা করা হয়, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বাতিল। তার প্রতি ইয়াহুদীদের মত অবজ্ঞা বা ঈর্ষা পোষণ করা অথবা খৃষ্টানদের মত অতিভক্তি প্রদর্শন করা সমভাবে নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কুরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াতে একদিকে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের পথভ্রষ্টতা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, অপরদিকে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর উচ্চ মর্যাদা ও বিশেষ সম্মানের অধিকারী হওয়ার কথাও জোরালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে অবজ্ঞা ও অতিভক্তি দুটি পরস্পর বিরোধী ভ্রান্ত মতবাদের মধ্যবর্তী সত্য ও ন্যায়ের সঠিক পথ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

(৪) অর্থাৎ আকাশ ও যমীনের উপর হতে নীচে পর্যন্ত যাকিছু আছে সবই আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি ও তার বান্দা। অতএব, তার কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা একাই সর্বকার্য সম্পাদনকারী এবং সকলের কার্য সম্পাদনের জন্য তিনি একাই যথেষ্ট; অন্য কারো সাহায্য-সহযোগীতার প্রয়োজন নেই। তিনি একক, তার কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন থাকতে পারে না। সারকথা, কোন সৃষ্ট ব্যক্তিরই স্রষ্টার অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা নেই। আল্লাহ তা'আলার পবিত্র সত্তার জন্য এর অবকাশও নেই, প্রয়োজনও নেই। অতএব, একমাত্র বিবেকবর্জিত, ঈমান হতে বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্ট কোন জীবকে তার অংশীদার বা পুত্র বলা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭১) হে গ্রন্থধারিগণ! তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না[1] এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া (মিথ্যা) বলো না। মারয়্যাম-তনয় ঈসা মসীহ তো আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী; যা তিনি মারয়্যামের মাঝে প্রক্ষেপ করেছিলেন ও তাঁরই তরফ হতে সমাগত আত্মা।[2] সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস কর এবং বলো না যে, ‘(আল্লাহ) তিনজন।’[3] তোমরা নিবৃত্ত হও, তোমাদের মঙ্গল হবে। আল্লাহই তো একমাত্র উপাস্য, তাঁর সন্তান হবে --এ হতে তিনি পবিত্র। আকাশ ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সব তাঁরই। আর কর্মবিধায়ক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।

[1] غُلُوْ (অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি) শব্দের তাৎপর্য হল, কোন বস্তুকে তার নির্ধারিত সীমা থেকে বাড়িয়ে দেওয়া। যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে করতে তাঁদেরকে রিসালাত ও বান্দার স্থান থেকে উপরে তুলে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছে এবং যথারীতি তাঁদের ইবাদত করছে। ঠিক এমনিভাবেই ঈসা (আঃ)-এর শিষ্য ও সহচরদের ব্যাপারেও তারা অতিরঞ্জিত করেছে, তাঁদেরকে নিষ্পাপ বলেছে এবং কোন জিনিসকে হারাম ও হালাল করার ব্যাপারে পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, {اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّه} অর্থাৎ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (সূরা তাওবাহ ৩১) আল্লাহর আসনে বসানোর সারকথা হচ্ছে, তাদের (পুরোহিতগণ কর্তৃক) হালালকৃত জিনিসকে হালাল এবং হারামকৃত জিনিসকে হারাম বলে মেনে নেওয়া। অথচ এ বিষয়ে পরিপূর্ণ অধিকার একমাত্র আল্লাহর। কিন্তু আহলে কিতাবরা এই অধিকারও তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রদান করেছে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদেরকে ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ মহানবী (সাঃ)ও খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ব্যাপারে অতিরঞ্জন করা দেখে স্বীয় উম্মতকে এহেন ভয়াবহ মহামারীর কবল হতে রক্ষা করার জন্য পূর্ণ সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জন করবে না, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা বিন মারয়্যামের ব্যাপারে করেছে। যেহেতু আমি আল্লাহর বান্দাই, সেহেতু তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল বল। (বুখারীঃ আম্বিয়া অধ্যায়, আহমাদ ১/২৩, ১/১৫৩) কিন্তু বড় পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় এই যে, (সতর্কবাণী থাকতেও) উম্মতে মুহাম্মাদীর দাবীদারগণও এই মহামারীর কবল থেকে রেহাই পেল না; যাতে খ্রিষ্টানরা আক্রান্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ উম্মত তার নবীর ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করে ক্ষান্ত হয়নি; বরং নেক বান্দাদেরকেও আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করেছে; যা আসলে খ্রিষ্টানদেরই আচরণ ছিল। অনুরূপভাবে উলামা ও ফুক্বাহাগণ, যাঁরা দ্বীনের ব্যাখ্যাতা ও ভাষ্যকার ছিলেন, তাঁদেরকে শরীয়ত রচনার অধিকার প্রদান করেছে। (فإنا لله وإنا إليه راجعون) মহানবী (সাঃ) সত্যই বলেছেন, ‘‘যেমন একটি জুতার অপর জুতার সাথে অবিকল মিল থাকে, অনুরূপ তোমরাও পূর্ববর্তী উম্মতের অবিকল অনুকরণ ও অনুসরণ করবে।’’ অর্থাৎ প্রত্যেক কাজে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।

[2] كلمة الله (আল্লাহর বাণী বা শব্দ)এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, كن (হও) শব্দ। যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশে বিনা পিতায় ঈসা (আঃ) জন্মলাভ করেন। মহান আল্লাহ এ শব্দটি জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর কাছে পৌঁঁছে দিয়েছিলেন। روح الله এর অর্থ হচ্ছে, সেই ‘ফুঁক’ যা আল্লাহর নির্দেশে জিবরীল (আঃ)মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর কামীসের গলার নিকট খোলা অংশে ফুঁকেছিলেন, যেটাকে মহান আল্লাহ তাঁর অসীম শক্তিতে পিতার বীর্যের বিকল্প উপাদানে পরিণত করেন। সুতরাং ঈসা (আঃ) হচ্ছেন আল্লাহর কালেমা (বাণী); যা ফিরিশতা দ্বারা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর নিকট পৌঁছে দেন এবং তিনি তাঁর ‘রূহ’ বা ফুঁকও; যা জিবরীল (আঃ) মারফৎ মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর নিকট পৌঁছে দেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

[3] খ্রিষ্টানরা বিভিন্ন ফির্কায় বিভক্ত ছিল। কোন ফির্কা ঈসা (আঃ)-কে স্বয়ং আল্লাহ বলে বিশ্বাস করে, কোন ফির্কা তাঁকে আল্লাহর অংশীদার মনে করে, আবার কোন ফির্কা তাঁকে আল্লাহর পুত্র মনে করে। তারপর যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী, তারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। তাদের মতে পিতা, পুত্র ও মারয়্যাম তিনজনই ঈশ্বর। তারা ঈসা (আঃ)-কে তিনের এক ঈশ্বর মনে করে থাকে। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা ‘আল্লাহ তিনজন’ বলা হতে বিরত হও। কারণ আল্লাহ হচ্ছেন একক, অদ্বিতীয়, (যাঁর কোন শরীক নেই)।’’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-মায়েদা
৫:১৫ یٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلُنَا یُبَیِّنُ لَكُمۡ كَثِیۡرًا مِّمَّا كُنۡتُمۡ تُخۡفُوۡنَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِیۡرٍ ۬ؕ قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّ كِتٰبٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۙ۱۵﴾

হে কিতাবীগণ, তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসেছে, কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। আল-বায়ান

হে কিতাবধারীগণ! তোমাদের কাছে আমার রসূল এসে গেছে, সে তোমাদেরকে অনেক বিষয় বর্ণনা করে কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে আর অনেক বিষয় উপেক্ষা করে। তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। তাইসিরুল

হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছে, তোমরা কিতাবের যে সব বিষয় গোপন কর তন্মধ্য হতে বহু বিষয় সে তোমাদের সামনে পরিস্কারভাবে ব্যক্ত করে, আর বহু বিষয় (প্রকাশ করা) বর্জন করে, তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এক আলোকময় বস্ত্ত এসেছে এবং তা একটি স্পষ্ট কিতাব (কুরআন)। মুজিবুর রহমান

O People of the Scripture, there has come to you Our Messenger making clear to you much of what you used to conceal of the Scripture and overlooking much. There has come to you from Allah a light and a clear Book. Sahih International

১৫. হে কিতাবীরা! আমাদের রাসূল তোমাদের নিকট এসেছেন(১) তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে তিনি সে সবের অনেক কিছু তোমাদের নিকট প্রকাশ করছেন এবং অনেক কিছু ছেড়ে দিচ্ছেন। অবশ্যই আল্লাহর নিকট থেকে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের কাছে এসেছে।(২)

(১) অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি তাদের মধ্যকার মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ বলে দেবার পাশাপাশি তারা যে সমস্ত বিষয় গোপন করেছে সেগুলোর অনেকটাই প্রকাশ করে দেন। [ইবন কাসীর] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে ব্যক্তি ‘রাজম’ তথা বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যার কথা অস্বীকার করবে, সে কুরআনের সাথে এমনভাবে কুফরী করল যে সে তা বুঝতেই পারছে না। আল্লাহ্ তা'আলার বাণী, হে কিতাবীরা আমাদের রাসূল তোমাদের নিকট এসেছেন, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে তিনি সে সবের অনেক কিছু তোমাদের নিকট প্রকাশ করছেন। তারা যে সমস্ত জিনিস গোপন করেছিল, রজমের বিধান ছিল তার একটি। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৪/৩৫৯]

(২) এ আয়াতে উল্লিখিত ‘নুর’ সম্পর্কে আলেমদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। যা মূলত পরস্পর সম্পূরক, বিপরীত নয়। কারও কারও মতে, এখানে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারও কারও মতে, কিতাব বা কুরআন। বস্তুত রাসূল ও কিতাব একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই রাসূল ও কিতাব উভয় ক্ষেত্রেই নুর বিশেষণ ব্যবহার হয়। এখানে নূর দ্বারা উদ্দেশ্য, ইসলামের দিকে আহবানকারী রাসূল, ইসলামের বিধানসম্বলিত কিতাব, অথবা রাসূল ও কিতাব উভয়ই।

আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় রাসূল ও কিতাব উভয়কে নূর বিশেষণে বিশেষিত করেছেন। যেমন সূরা আহযাবের ৪৫-৪৬ নং আয়াতে ‘নূর’ ধাতু থেকে উদগত কর্তাবাচক বিশেষ্য ‘মুনীর’ শব্দ দ্বারা রাসূলকে বিশেষিত করা হয়েছে। আবার একাধিক জায়গায় আল্লাহ্ তা'আলা তার কিতাব কুরআনকে নূর দ্বারা বিশেষিত করেছেন। যেমন, সূরা আশ-শূরাঃ ৫২; সূরা আল-আরাফ: ১৫৭; সূরা আত-তাগাবুন: ৮; সূরা আন-নিসা ১৭৪। এসব জায়গায় ‘নূর’ দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তার অহী তথা শুধু কুরআনুল কারীমকে বুঝিয়েছেন। অন্যত্র অনুরূপভাবে অন্যান্য নবীদের উপর নাযিলকৃত কিতাবকেও তিনি নূর আখ্যা দিয়েছেন। যেমন, সূরা আল-আনআমঃ ৯১; সূরা আল-মায়িদাহ ৪৪, ৪৬৷

কুরআনের এসব আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আসমান থেকে নাযিলকৃত আল্লাহর সকল কিতাবই নূর। লক্ষণীয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যেরূপ ‘নুর’ শব্দের কর্তাবাচক শব্দ মুনীর বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে, অনুরূপ বিশেষণ আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের জন্য ব্যবহার করেছেন। যেমন, সূরা আলে ইমরান: ১৮৫। এ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল, নাযিলকৃত অহী এবং সকল আসমানী কিতাব ‘নূর’; যা বান্দাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে আগমন করেছে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তাকেই হিদায়াত করেন, যে তার সন্তুষ্টির অনুসরণ করে, অর্থাৎ তার মনোনীত দ্বীনের আলোকে চলে। কুরআনের অন্যত্র এ ঘোষণা এসেছে, যেমন সূরা আল-মায়িদাহ ৩; সূরা আয-যুমার: ২২; সূরা আল-আনআমঃ ১২২।

অতএব এ নূর হচ্ছে অহীর নূর। এর মাধ্যমে বান্দা তার রবের ইবাদাত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা লাভ করে। মানুষের সাথে সম্পর্কের নীতিমালা অর্জন করে। এ নুরই তার সঙ্গীতে পরিণত হয় এবং পথহারা অবস্থায় এ নুর দ্বারাই সে পথের সঠিক দিশা লাভ করে। মোদ্দাকথা নুর অর্থ অহী, এ অহী যেহেতু রাসূলের উপর নাযিল হয়েছে, তাই কখনো তাকে নূর হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে, কখনো কুরআনকে, কখনো তাওরাত ও ইঞ্জলকে। অতএব আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী সম্বলিত রাসূল ও স্পষ্ট কিতাব আগমন করেছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) হে ঐশীগ্রন্থধারিগণ! আমার রসূল তোমাদের নিকট এসেছে, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে, সে তার অনেক অংশ তোমাদের নিকট প্রকাশ করে[1] এবং অনেক কিছু (প্রকাশ না করে) উপেক্ষা করে থাকে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট হতে জ্যোতি ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।[2]

[1] অর্থাৎ, তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের মধ্যে যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করেছে, রসূল (সাঃ) তা উদঘাটন করেছেন এবং যা তারা গোপন করেছিল, তা তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন। যেমন, বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর ছুঁড়ে মারার শাস্তিকে তারা গোপন করেছিল; যার বিস্তারিত বিবরণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

[2] (نُورٌ وَّكِتَابٌ مُبِين) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ‘নূর ও কিতাবুন মুবীন’ (জ্যোতি ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ) একই সাথে উল্লেখ করেছেন এবং এই দুইয়েরই উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন কারীম। কেননা এই দুইয়ের মধ্যে وَ সংযোজক অব্যয়টি পাশাপাশি দুই বিশেষ্যের ভিন্নতা বুঝাতে ব্যবহূত হয়নি; বরং অর্থের ভিন্নতা বুঝাতে ব্যবহূত হয়েছে। এই অব্যয়টি আসলে ব্যাখ্যাকারী সংযোজক অব্যয়। যার স্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের পরবর্তী আয়াত, যেখানে বলা হচ্ছে يَهدِي بِهِ الله অর্থাৎ তার দ্বারা আল্লাহ হিদায়াত করেন বা সুপথ দেখান। যদি نور كتاب আলাদা আলাদা জিনিস হত, তাহলে কুরআনের এই বাক্যটি এইরূপ হত, يَهدِي بِهِمَا الله অর্থাৎ, সর্বনামটি একবচন না হয়ে দ্বিবচন হত ه একবচন না হয়ে هما দ্বিবচন হত এবং অনুবাদ ‘এ দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন’ না হয়ে) ‘উভয় দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন’ হত। কুরআনের এই বাক্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়ে গেল যে, ‘নূর’ ও ‘কিতাবে মুবীন’ উভয় থেকে উদ্দেশ্য ‘কুরআন কারীম’। এ নয় যে, ‘নূর’ থেকে উদ্দেশ্য মুহাম্মাদ (সাঃ) আর ‘কিতাবে মুবীন’ থেকে উদ্দেশ্য কুরআন মাজীদ; যেমনটি বিদআত পন্থীদের ধারণা; যারা এই আকীদায় বিশ্বাসী যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর নূরের অংশ বিশেষ এবং যারা অস্বীকার করে যে, তিনি একজন মানুষ। (অথচ ‘নূর’ বলতে যে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সূরা তাগাবুনের ৮নং আয়াতে। সেখানে মহান আল্লাহ বলেন, {فَآمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا} অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং সেই ‘নূর’ বা জ্যোতির প্রতি, যা আমি অবতীর্ণ করেছি।) অনুরূপ এই মনগড়া আকীদাকে সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্যে তারা একটি হাদীসও বর্ণনা করে থাকে, "আল্লাহ সর্বপ্রথম নবী (সাঃ)-এর নূরকে সৃষ্টি করেন, তারপর তাঁর নূর থেকে সারা জগৎ সৃষ্টি করেন।" অথচ নির্ভরযোগ্য কোন হাদীসগ্রন্থে এই হাদীসটির উল্লেখ নেই। উপরন্তু এই হাদীসটি ঐ সহীহ হাদীসের পরিপন্থী, যাতে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, إن أول ماخلق الله القلم অর্থাৎ, সর্বপ্রথম আল্লাহ যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। (তিরমিযী ও আবু দাউদ) (এ যুগের শ্রেষ্ঠ) মুহাদ্দিস আল্লামা আলবানী (রঃ) বলেন, হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ এবং এটি সেই প্রসিদ্ধ হাদীস বাতিল হওয়ার প্রকাশ্য প্রমাণ, যাতে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন হে জাবের!’’ (হাদীসটি বাতিল। দেখুনঃ তা’লীক্বাতে মিশকাত ১/৩৪)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৪৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »