অতঃপর তোমাদের অন্তরসমূহ এর পরে কঠিন হয়ে গেল যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। আর নিশ্চয় পাথরের মধ্যে কিছু আছে, যা থেকে নহর উৎসারিত হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা চূর্ণ হয়। ফলে তা থেকে পানি বের হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। আর আল্লাহ তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে গাফেল নন। আল-বায়ান
এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর কিংবা তদপেক্ষা কঠিন। কতক পাথরও এমন আছে যে তা হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয় এবং কতক এরূপ যে, ফেটে যাওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে এবং তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে বেখেয়াল নন। তাইসিরুল
অতঃপর তোমাদের হৃদয় প্রস্তরের ন্যায় কঠিন, বরং ওর চেয়েও কঠিনতর হল এবং নিশ্চয়ই প্রস্তর হতেও প্রস্রবন নির্গত হয় এবং নিশ্চয়ই ওগুলির মধ্যে কোন কোনটি বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা হতে পানি নির্গত হয় এবং নিশ্চয়ই ঐগুলির মধ্যে কোনটি আল্লাহর ভয়ে পতিত হয় এবং তোমরা যা করছ তৎপ্রতি আল্লাহ অমনোযোগী নন। মুজিবুর রহমান
Then your hearts became hardened after that, being like stones or even harder. For indeed, there are stones from which rivers burst forth, and there are some of them that split open and water comes out, and there are some of them that fall down for fear of Allah. And Allah is not unaware of what you do. Sahih International
৭৪. এরপরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল, যেন পাথর কিংবা তার চেয়েও কঠিন। অথচ কোন কোন পাথর তো এমন যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, আর কিছু এরূপ যে, বিদীর্ণ হওয়ার পর তা হতে পানি নির্গত হয়, আবার কিছু এমন যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে(১), আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।
১. এখানে পাথরের তিনটি ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছেঃ
(১) পাথর থেকে বেশী পানি প্ৰসরণ,
(২) কম পানির নিঃসরণ। এ দুটি প্রভাব সবারই জানা।
(৩) নীচে গড়িয়ে পড়া।
মুজাহিদ বলেন, এ সবগুলিই আল্লাহর ভয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, পাথরের উপর যে ক্রিয়াগুলো সংঘটিত হয় সেগুলো বাস্তব ঘটনা। প্রাণহীন জড়বস্তুর মধ্যেও আল্লাহ তা'আলা এ অবস্থা সৃষ্টি করে দেন। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এটা উহুদ পাহাড়, সে আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।” [মুসলিম: ১৩৬৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “আমি মক্কায় এক পাথরকে চিনি, যে পাথর আমি নবী হওয়ার পূর্ব হতেই আমাকে সালাম করত, আমি এখনও সেটাকে চিনি।” [মুসলিম: ২২৭৭] তবে পাথরের উপর সংঘটিত উপরোক্ত তিনটি অবস্থার মধ্যে তৃতীয় ক্রিয়াটি কারো কারো অজানা থাকতে পারে। অর্থাৎ কতক পাথরের প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা এত প্রবল যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে যায় এবং তা দ্বারা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধিত হয়। কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এমন নয় যে, সৃষ্ট জীবের দুঃখ-দুর্দশায় অশ্রুসজল হবে। কতক পাথরের মধ্যে প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে সেগুলোর দ্বারা উপকারও কম হয়। এ ধরনের পাথর প্রথম ধরনের পাথরের তুলনায় কম নরম হয়।
কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এ দ্বিতীয় ধরনের পাথরের চেয়েও বেশী শক্ত। কতক পাথরের মধ্যে উপরোক্তরূপ প্রভাব না থাকলেও এতটুকু প্রভাব অবশ্যই আছে যে, আল্লাহর ভয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ে। এ পাথর উপরোক্ত দুই প্রকার পাথরের তুলনায় বেশী দুর্বল। কিন্তু ইয়াহুদীদের অন্তর এ দুর্বলতম প্রভাব থেকেও মুক্ত। উদ্দেশ্য এই যে, তারা এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ ও স্বার্থন্বেষী যে, তারা অন্যের সদুপদেশে কখনো মন্দ কাজ থেকে বিরত হবে না। আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে তাদের ‘কঠিন হৃদয়’ হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়নি। তবে অন্যান্য আয়াতে সেটা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, “সুতরাং তাদের অঙ্গীকার ভংগের জন্য আমরা তাদেরকে লা'নত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠিন করেছি, তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গেছে।” [সূরা আল-মায়েদাহঃ ১৩] “আর তারা যেন তাদের মত না হয় যাদেরকে আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল--- অতঃপর বহু কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদের অন্তর সমূহ কঠিন হয়ে পড়েছিল। [সূরা আল-হাদীদ: ১৬]
তাফসীরে জাকারিয়া৭৪। এর পরও তোমাদের হূদয় কঠিন হয়ে গেল; (1) তা পাষাণ কিংবা তার থেকেও কঠিনতর, কিছু পাথর এমন আছে যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং কিছু পাথর এমন আছে যে, বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার কিছু পাথর এমন আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ে। (2) বস্তুতঃ তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ উদাসীন নন।
(1) অর্থাৎ, বিগত মুজিযাসমূহ এবং হতকে পুনরায় জীবিত করার এই জলজ্যান্ত ঘটনা দেখার পরও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনের উৎসাহ এবং তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার আগ্রহ সৃষ্টি না হয়ে উলটো তোমাদের হূদয় পাথরের মত কঠিন বরং তার চেয়েও শক্ত হয়ে গেল! আর হূদয় কঠিন হয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও উম্মতের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। অন্তর কঠিন হওয়া এই কথারই নিদর্শন যে, সেই অন্তর থেকে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার যোগ্যতা এবং সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। এরপর তার সংশোধনের আশা কম, বরং সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ারই আশঙ্কা বেশী থাকে। এই জন্যই ঈমানদারদেরকে তাগিদ করা হয়েছে যে, {وَلا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ} ‘‘তারা (ঈমানদারগণ) তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলে তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে।’’ (সূরা আল-হাদীদ : ১৬)
(2) এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পাথর কঠিন ও শক্ত হওয়া সত্ত্বেও তা থেকে উপকার পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং এক প্রকার চেতনা ও অনুভূতি শক্তি তার মধ্যেও বিদ্যমান থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
{تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ} (الاسراء:৪৪)
অধিক জানার জন্য সূরা বানী-ইস্রাঈলের ৪৪নং আয়াতের পাদটীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান