আর যদি তারা তাওরাত, ইনজীল ও তাদের নিকট তাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা কায়েম করত, তবে অবশ্যই তারা আহার করত তাদের উপর থেকে এবং তাদের পদতল থেকে। তাদের মধ্য থেকে সঠিক পথের অনুসারী একটি দল রয়েছে এবং তাদের অনেকেই যা করছে, তা কতইনা মন্দ! আল-বায়ান
তারা যদি তাওরাত ইঞ্জিল আর তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার নিয়ম-বিধান প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তাদের উপর থেকে আর তাদের পায়ের নীচ থেকে আহার্য পেত। তাদের মধ্যে একটি সত্যপন্থী দল আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই যা করে তা খারাপ। তাইসিরুল
আর যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের এবং যে কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) তাদের রবের পক্ষ হতে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, ওর থেকে যথারীতি ‘আমলকারী হত তাহলে তারা উপর (অর্থাৎ আকাশ) হতে এবং নিম্ন (অর্থাৎ যমীন) হতে প্রাচুর্যের সাথে আহার পেত; তাদের একদলতো সরল পথের অনুগামী; আর তাদের অধিকাংশই এরূপ যে, তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য। মুজিবুর রহমান
And if only they upheld [the law of] the Torah, the Gospel, and what has been revealed to them from their Lord, they would have consumed [provision] from above them and from beneath their feet. Among them are a moderate community, but many of them - evil is that which they do. Sahih International
৬৬. আর তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জীল ও তাদের রবের কাছ থেকে তাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত(১), তাহলে তারা অবশ্যই তাদের উপর থেকে ও পায়ের নীচ থেকে আহারদী লাভ করত(২)। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী; এবং তাদের অধিকাংশ যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট।(৩)
(১) যিয়াদ ইবনে লাবীদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা ব্যাপার উল্লেখ করে বললেনঃ ‘এটা ঐ সময়ই হবে যখন দ্বীনের জ্ঞান চলে যাবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, কিভাবে জ্ঞান চলে যাবে অথচ আমরা কুরআন পড়ছি, আমাদের সন্তানদেরকে কুরআন পড়াচ্ছি, তারা তাদের সন্তানদেরকে পড়াবে কেয়ামত পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমার আম্মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক যিয়াদ! (আরবি ভাষায় ভৎসনামূলক বাক্য) আমি তো মনে করেছিলাম তুমি মদীনার ফকীহদের অন্যতম। এই ইয়াহুদী এবং নাসারারা কি তাওরাত ও ইঞ্জীল পড়ে না, অথচ তারা এর থেকে কিছুই আমল করে না। [ইবন মাজাহঃ ৪০৪৮]
(২) এর সারমর্ম এই যে, যদি ইয়াহুদীরা আজও তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনুল কারীমের নির্দেশাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেগুলো পুরোপুরি পালন করে- ক্রটি এবং মনগড়া বিষয়াদিকে দ্বীন বলে আখ্যা দিয়ে বাড়াবাড়ি না করে, তবে তারা আখেরাতে প্রতিশ্রুত নেয়ামতরাজির যোগ্য হবে এবং দুনিয়াতেও তাদের সামনে রিযকের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ফলে উপর-নীচ সবদিক থেকে তাদের উপর রিযক বর্ষিত হবে। আল্লাহ্ তা'আলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করতেন। ফলে যমীন হতে ফসল উৎপাদিত হতো। আর এভাবেই তাদেরকে আসমান ও যমীনের বরকত প্রদান করা হতো। [ইবন কাসীর]
(৩) আয়াতের শেষাংশে ইনসাফ প্রদর্শনার্থে এ কথা বলা হয়েছে যে, ইয়াহুদীদের যেসব বক্রতা ও কুকর্ম বর্ণনা করা হয়েছে, তা সমস্ত ইয়াহুদীদের অবস্থা নয়; বরং তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি দল সৎপথের অনুসারীও রয়েছে। সৎ পথের অনুসারী বলে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা পূর্বে ইয়াহুদী অথবা নাসারা ছিল, এরপর কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছে। অথবা তাদেরকে যারা ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সঠিক মত পোষণ করে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ছিলেন। তিনি ইলাহ বা ইলাহের সন্তান ছিলেন না। [তাবারী] তারপর বলা হয়েছে যে, যদিও তাদের অধিকাংশই কুকর্মী। কারণ, তাদের অধিকাংশই ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে হয় বাড়াবাড়ি নতুবা মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরও ঈমান আনে না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) আর যদি তারা তওরাত, ইঞ্জীল ও যা তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকত,[1] তাহলে তারা তাদের উপর দিক (আকাশ) ও পায়ের নিচের দিক (পৃথিবী) হতে খাদ্য লাভ করত।[2] তাদের মধ্যে এক দল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী, কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে, তা নিকৃষ্ট! [3]
[1] তাওরাত ও ইঞ্জীলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার বিধানের অনুসরণ করা, যা তাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। আর সেই বিধানের মধ্যে একটা এও ছিল যে, শেষ নবীর প্রতি তারা ঈমান আনয়ন করবে। وما أنزل এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত আসমানী গ্রন্থের উপর ঈমান আনয়ন করা; আর এর মধ্যে কুরআন কারীমও শামিল। সুতরাং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা যেন ইসলাম গ্রহণ করে।
[2] ‘উপর-নীচের’ কথা অতিশয়োক্তি রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, বেশী বেশী এবং বিভিন্ন ধরনের রুযী আল্লাহ তাদেরকে দান করতেন। অথবা ‘উপর’ বলতে আসমানকে বুঝানো হয়েছে, আর তার অর্থ হচ্ছে, সময় মত আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণ করতেন। আর ‘পায়ের নিচে’ বলতে যমীনকে বুঝানো হয়েছে, আর তার অর্থ হচ্ছে; যমীন এই পানি নিজের মধ্যে শোষণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি উৎপাদন করত। পরিণামে তাদের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। যেমন মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, {وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ} অর্থাৎ, জনপদবাসীরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের উপর আসমান ও যমীনের বরকত নাযিল করতাম। (সূরা আ’রাফ ৯৬ আয়াত)
[3] কিন্তু তাদের বেশীর ভাগ মানুষ ঈমানের রাস্তা অবলম্বন করল না এবং তারা কুফরীর উপরেই অটল থাকল, আর রিসালাতে মুহাম্মাদীকে অস্বীকার করার ব্যাপারে অবিচল থাকল। এই অটল থাকা ও অস্বীকার করাকে ‘নিকৃষ্ট কর্ম’ বলে আখ্যায়ন করা হয়েছে। মধ্যপন্থী দল থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে, আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) এর মত ৮-৯ জন সাহাবা, যাঁরা মদীনার ইয়াহুদীদের মধ্য হতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান