হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান থাক, কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে তোমরা ইনসাফ করা ত্যাগ করবে, সুবিচার কর, এটা তাক্বওয়ার নিকটবর্তী, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে বিধানসমূহ পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠাকারী ও ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হয়ে যাও, কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের শক্রতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবেনা। তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটা আল্লাহ-ভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, be persistently standing firm for Allah, witnesses in justice, and do not let the hatred of a people prevent you from being just. Be just; that is nearer to righteousness. And fear Allah; indeed, Allah is Acquainted with what you do. Sahih International
৮. হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষাদানে তোমরা অবিচল থাকবে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শক্ৰতা তোমাদেরকে যেন সুবিচার বুর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করবে(১), এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।(২)
(১) এমনকি সন্তানদের মধ্যেও সুবিচার করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। নুমান ইবন বাশীর বলেন, তার পিতা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বললেন, আমি আমার এ সন্তানকে একটি দাস উপঢৌকন দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এ রকম উপঢৌকন দিয়েছ? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল বললেন, তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও। [বুখারী ২৫৮৬; মুসলিম: ১৬২৩]
(২) এ আয়াতের বিষয়বস্তু প্রায় এসব শব্দেই অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে। পার্থক্য এতটুকু যে, সেখানে বলা হয়েছিলঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ) [সূরা আন-নিসাঃ ১৩৫] আর এখানে বলা হচ্ছেঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ)। সাধারণতঃ দুটি কারণ মানুষকে ন্যায় ও সুবিচারে বাধা-প্রদান এবং অন্যায় ও অবিচারে প্ররোচিত করে। (এক) নিজের অথবা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব। (দুই) কোন ব্যক্তির প্রতি শক্রতা ও মনোমালিন্য। সূরা আন-নিসার আয়াতে প্রথমোক্ত কারণের উপর ভিত্তি করে সুবিচারের আদেশ দেয়া হয়েছে আর সূরা আল-মায়েদার আলোচ্য আয়াতে শেষোক্ত কারণ হিসেবে বক্তব্য রাখা হয়েছে।
সূরা আন-নিসার আয়াতের সারমর্ম এই যে, ন্যায় ও সুবিচারের ক্ষেত্রে নিজের এবং পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনেরও পরওয়া করো না। যদি ন্যায় বিচার তাদের বিরুদ্ধে যায়, তবে তাতেই কায়েম থাক। সূরা আল-মায়েদার আয়াতের সারমর্ম এই যে, ন্যায় ও সুবিচারের ক্ষেত্রে কোন শক্রর শক্রতার কারণে পশ্চাদপদ হওয়া উচিত নয় যে, শক্রর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে সুবিচারের পরিবর্তে অবিচার শুরু করবে। [বাহরে-মুহীত] তাছাড়া সত্য সাক্ষ্য দিতে ত্রুটি না করার প্রতি পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত বিভিন্ন ভঙ্গিতে জোর দিয়েছে। এক আয়াতে অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “সাক্ষ্য গোপন করো না। যে সাক্ষ্য গোপন করে, তার অন্তর পাপী” [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৮৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (হকের উপর) দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত (এবং) ন্যায়পরায়ণতার সাথে সাক্ষ্যদাতা হও।[1] কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার না করাতে প্ররোচিত না করে।[2] সুবিচার কর, এটা আত্মসংযমের নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন।
[1] প্রথম অংশের ব্যাখ্যা সূরা নিসার ১৩৫নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী (সাঃ)-এর নিকট ন্যায্য সাক্ষীর কত বড় গুরুত্ব ছিল, তা এই ঘটনার দ্বারা অনুমান করা যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আমাকে কিছু হাদিয়া (দান) দিলেন, তা দেখে আমার মাতা বললেন, ‘এই হাদিয়া বা দানের উপর যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে সাক্ষী না রাখবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হব না।’ সুতরাং আমার পিতা রসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে, (ঘটনা বর্ণনা করলেন।) তখন রসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন; ‘‘তুমি তোমার সমস্ত সন্তানদেরকে অনুরূপভাবে হাদিয়া বা উপঢৌকন দিয়েছ কি?’’ প্রতি উত্তরে (আমার আব্বা) বললেন, ‘না।’ অতঃপর রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে সমদৃষ্টিসম্পন্ন সুবিচার কর।’’ তিনি আরো বললেন, ‘‘আমি যুলুমের (অন্যায়ের) সাক্ষী হতে পারব না।’’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম / কিতাবুল হিবা বা দানপত্র নামক অধ্যায়)
[2] এ অংশের ব্যাখ্যা সূরা মায়িদার ২নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান