১১২ সূরাঃ আল-ইখলাস | Al-Ikhlas | سورة الإخلاص - আয়াতঃ ৪
১১২:৪ وَ لَمۡ یَكُنۡ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ﴿۴﴾
و لم یكن لهٗ كفوا احد ﴿۴﴾

আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। আল-বায়ান

তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়। তাইসিরুল

এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। মুজিবুর রহমান

Nor is there to Him any equivalent." Sahih International

৪. এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।(১)

(১) মূলে বলা হয়েছে ‘কুফু’। এর মানে হচ্ছে, নজীর, সদৃশ, সমান, সমমর্যাদা সম্পন্ন ও সমতুল্য। আয়াতের মানে হচ্ছে, সারা বিশ্ব-জাহানে আল্লাহর সমকক্ষ অথবা তাঁর সমমর্যাদাসম্পন্ন কিংবা নিজের গুণাবলী, কর্ম ও ক্ষমতার ব্যাপারে তাঁর সমান পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে এমন কেউ কোন দিন ছিল না এবং কোন দিন হতেও পারবে না। এবং আকার-আকৃতিতেও কেউ তাঁর সাথে সামঞ্জস্য রাখে না। এক হাদীসে এসেছে, বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন এক লোক সালাত আদায় করছে এবং বলছে, اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ بِأَنِّى أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الَّذِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِى لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, এ লোকটি আল্লাহকে তাঁর এমন মহান নামে ডাকল যার অসীলায় চাইলে তিনি প্ৰদান করেন। আর যার দ্বারা দোআ করলে তিনি কবুল করেন” [আবু দাউদ: ১৪৯৩, তিরমিযী: ৩৪৭৫, ইবনে মাজহ: ৩৮৫৭, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৫০]

মুশরিকরা প্রতি যুগে মাবুদদের ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করে এসেছে যে, মানুষের মতো তাদেরও একটি জাতি বা শ্রেণী আছে। তার সদস্য সংখ্যাও অনেক। তাদের মধ্যে বিয়ে-শাদী এবং বংশ বিস্তারের কাজও চলে। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেও এ জাহেলী ধারণা মুক্ত রাখেনি। তাঁর জন্য সন্তান সন্ততিও ঠিক করে নিয়েছে। তারা ফেরেশতাদেরকে মহান আল্লাহর কন্যা গণ্য করতো। যদিও তাদের কেউ কাউকে আল্লাহর পিতা গণ্য করার সাহস করেনি। কিন্তু তারা তাদের কোন কোন ব্যক্তি বা নবীকে আল্লাহর সন্তান মনে করতে দ্বিধা করেনি। এ সবের উত্তরেই এ সূরায় বলা হয়েছে, তিনি কাউকে জন্ম দেননি। আর তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। যদিও মহান আল্লাহকে “আহাদ” ও “আস-সামাদ” বললে এসব উদ্ভট ধারণা-কল্পনার মুলে কুঠারাঘাত করা হয়, তবুও এরপর “না তাঁর কোন সন্তান আছে, না তিনি কারো সন্তান” একথা বলায় এ ব্যাপারে আর কোন প্রকার সংশয় সন্দেহের অবকাশই থাকে না।

তারপর যেহেতু আল্লাহর মহান সত্তা সম্পর্কে এ ধরনের ধারণাকল্পনা শিরকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর অন্তর্ভুক্ত, তাই মহান আল্লাহ শুধুমাত্র সূরা ইখলাসেই এগুলোর দ্ব্যর্থহীন ও চূড়ান্ত প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। এভাবে লোকেরা সত্যকে পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নীচের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করা যেতে পারে, “আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। কেউ তাঁর পুত্র হবে, এ অবস্থা থেকে তিনি মুক্ত-পাক-পবিত্র। যা কিছু, আকাশসমূহের মধ্যে এবং যা কিছু যমীনের মধ্যে আছে, সবই তার মালিকানাধীন।” [সূরা আন-নিসা: ১৭১] “জেনে রাখো, এরা যে বলছে আল্লাহর সন্তান আছে, এটা এদের নিজেদের মনগড়া কথা। আসলে এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা।” [সূরা আস-সাফফাত: ১৫১–১৫২] “তারা আল্লাহ ও জিনদের মধ্যে বংশীয় সম্পর্কে তৈরি করে নিয়েছে অথচ জিনেরা ভালো করেই জানে এরা (অপরাধী হিসেবে) উপস্থাপিত হবে।” [সূরা আস-সাফফাত: ১৫৮] “লোকেরা তার বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে তার অংশ বনিয়ে ফেলেছে। আসলে মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।” [সূরা আয-যুখরুফ: ১৫]

“আর লোকেরা জিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছে। অথচ তিনি তাদের স্রষ্টা। আর তারা না জেনে বুঝে তার জন্য পুত্ৰ-কণ্যা বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তারা যে সমস্ত কথা বলে তা থেকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র এবং তার ঊর্ধ্বে তিনি অবস্থান করছেন। তিনি তো আকাশসমূহ ও পৃথিবীর নির্মাতা। তাঁর পুত্র কেমন করে হতে পারে যখন তাঁর কোন সঙ্গিনী নেই? তিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আল-আন’আম: ১০০–১০১] “আর তারা বললো, দয়াময় আল্লাহ কাউকে পুত্ৰ বানিয়েছেন। তিনি পাক-পবিত্র। বরং (যাদেরকে এরা তাঁর সন্তান বলছে) তারা এমন সব বান্দা যাদেরকে মৰ্যদা দান করা হয়েছে।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ২৬]

“লোকেরা বলে দিয়েছে, আল্লাহ কাউকে পুত্র বানিয়েছেন আল্লাহ পাক-পবিত্ৰ! তিনি তো অমুখাপেক্ষী। আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তার মালিকানাধীন। এ বক্তব্যের সপক্ষে তোমাদের প্রমাণ কি? তোমরা কি আল্লাহর সম্পর্কে এমন সব কথা বলছো, যা তোমরা জানো না?” [সূরা ইউনুস: ৬৮] “আর হে নবী! বলে দিন। সেই আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা যিনি না কাউকে পুত্র বানিয়েছেন না বাদশাহীতে কেউ তাঁর শরীক আর না তিনি অক্ষম, যার ফলে কেউ হবে তাঁর পৃষ্ঠপোষক।” [সূরা আল-ইসরা: ১১১] যারা আল্লাহর জন্য সন্তান গ্রহণ করার কথা বলে, এ আয়াতগুলোতে সর্বতোভাবে তাদের এহেন আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিবাদ করা হয়েছে। এ আয়াতগুলো এবং এ বিষয়বস্তু সম্বলিত অন্য যে সমস্ত আয়াত কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, সেগুলো সূরা ইখলাসের অতি চমৎকার ব্যাখ্যা।

তাফসীরে জাকারিয়া

৪। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ­ই নেই। [1]

[1] কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। ‘‘তাঁর মত কোন কিছুই নেই।’’ (সূরা শুরা ১১ নং আয়াত)

হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)

এই সূরা ঐ সকল লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করে, যারা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাসী, যারা মনে করে আল্লাহর সন্তান আছে, যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান