আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন। আল-বায়ান
আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন কর ও তার প্রতি অটুট থাকার তাওফীক দান কর। তাইসিরুল
আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। মুজিবুর রহমান
Guide us to the straight path - Sahih International
৬. আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। (১)
১. স্নেহ ও করুণা এবং কল্যাণ কামনাসহ কাউকে মঙ্গলময় পথ দেখিয়ে দেয়া ও মনজিলে পৌছিয়ে দেয়াকে আরবী পরিভাষায় ‘হেদায়াত’ বলে। হেদায়াত’ শব্দটির দুইটি অর্থ। একটি পথ প্রদর্শন করা, আর দ্বিতীয়টি লক্ষ্য স্থলে পৌছিয়ে দেয়া। যেখানে এই শব্দের পর দুইটি object থাকবে إلى থাকবে না, সেখানে এর অর্থ হবে লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়া। আর যেখানে এ শব্দের পর إلى শব্দ আসবে, সেখানে অর্থ হবে পথ-প্রদর্শন। যেমন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলেছেন, إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয়ই আপনি লক্ষ্যস্থলে—মনজিলে পৌঁছিয়ে দিতে পারবেন না যাকে আপনি পৌছাতে চাইবেন। বরং আল্লাহই লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন [সূরা আল-কাসাস ৫৬] এ আয়াতে হেদায়েত শব্দের পর إلى ব্যবহৃত হয়নি বলে লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়া অর্থ হয়েছে এবং তা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাধ্যায়ত্ত নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে পথ প্রদর্শন রাসূলে করীমের সাধ্যায়ত্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ “হে নবী। আর আপনি অবশ্যই সরল সঠিক দৃঢ় ঋজু পথ প্রদর্শন করেন [সূরা আশ-শূরা: ৫২]
কিন্তু লক্ষ্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়ার কাজ কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। তাই তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, وَلَهَدَيْنَاهُمْ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا “আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে সরল সোজা সুদৃঢ় পথে পৌছিয়ে দিতাম।[সূরা আন-নিসা: ৬৮] সূরা আল-ফাতিহা’র আলোচ্য আয়াতে হেদায়েত শব্দের পর إلى শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। ফলে এর অর্থ হবে সোজা সুদৃঢ় পথে মনজিলের দিকে চালনা করা। অর্থাৎ যেখানে বান্দাহ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে শুধু এতটুকু বলে না যে, হে আল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে সোজা সুদৃঢ় পথের সন্ধান দিন। বরং বলে, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সরল সুদৃঢ় পথে চলবার তাওফীক দিয়ে মনজিলে পৌছিয়ে দিন। কেননা শুধু পথের সন্ধান পাইলেই যে সে পথ পাওয়া ও তাতে চলে মনজিলে পোঁছা সম্ভবপর হবে তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু সিরাতে মুস্তাকীম কি? সিরাত শব্দের অর্থ হচ্ছে, রাস্তা বা পথ। আর মুস্তাকীম হচ্ছে, সরল সোজা। সে হিসেবে সিরাতে মুসতাকীম হচ্ছে, এমন পথ, যা একেবারে সোজা ও ঋজু, প্রশস্ত ও সুগম; যা পথিককে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেয়; যে পথ দিয়ে লক্ষ্যস্থল অতি নিকটবর্তী এবং মনযিলে মাকছুদে পৌছার জন্য যা একমাত্র পথ, যে পথ ছাড়া লক্ষ্যে পৌছার অন্য কোন পথই হতে পারে না।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমারও রব তোমাদেরও রব, অতএব একমাত্র তারই দাস হয়ে থাক। এটাই হচ্ছে সিরাতুম মুস্তাকীম-সঠিক ও সুদৃঢ় ঋজু পথ [সূরা মারইয়াম: ৩৬] অর্থাৎ আল্লাহকে রব স্বীকার করে ও কেবল তারই বান্দাহ হয়ে জীবন যাপন করলেই সিরাতুম মুস্তাকীম অনুসরণ করা হবে। অন্যত্র ইসলামের জরুরী বিধি-বিধান বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর এটাই আমার সঠিক দৃঢ় পথ, অতএব তোমরা এই পথ অনুসরণ করে চল। এছাড়া আরও যত পথ আছে, তাহার একটিতেও পা দিও না; কেননা তা করলে সে পথগুলো তোমাদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে-ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন এ উদ্দেশ্যে, যেন তোমরা ধ্বংসের পথ হতে আত্মরক্ষা করতে পার [সূরা আল-আনআমঃ ১৫৩] একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে যে পথ ও বিধি-বিধান পাওয়া যাবে, তাই মানুষের জন্য সঠিক পথ। আল্লাহ বলেন, “প্রকৃত সত্য-সঠিক-ঋজু-সরল পথ প্রদর্শন করার দায়িত্ব আল্লাহর উপর, যদিও আরও অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। আর আল্লাহ চাইলে তিনি সব মানুষকেই হেদায়াতের পথে পরিচালিত করতেন [সূরা আন-নাহ্ল: ৯]
সিরাতে মুসতাকীমের তাফসীর কোন কোন মুফাসসির করেছেন, ইসলাম। আবার কারও কারও মতে, কুরআন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] বস্তুত: আল্লাহর প্রদত্ত বিশ্বজনীন দ্বীনের অন্তর্নিহিত প্রকৃত রূপ ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ শব্দ হতে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ্ তা'আলার দাসত্ব কবুল করে তারই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করার পথই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীম এবং একমাত্র এই পথে চলার ফলেই মানুষ আল্লাহর নিয়ামত ও সন্তোষ লাভ করতে পারে। সে একমাত্র পথই মানব জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য একান্ত অপরিহার্য। তাই সে একমাত্র পথে চলার তওফীক প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে এই আয়াতটিতে। কিন্তু আল্লাহর নিকট হতে এই পথ কিরূপে পাওয়া যেতে পারে? সে পথ ও পন্থা নির্দেশ করতে গিয়ে আল্লাহ এর তিনটি সুস্পষ্ট পরিচয় উল্লেখ করেছেনঃ
১. এই জীবন কিভাবে যাপন করতে হবে তা তাদের নিকট হতে গ্রহণ করতে হবে, যারা উক্ত বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে আল্লাহর নিকট হতে নিয়ামত ও অসীম অনুগ্রহ লাভ করেছে।
২. এই পথের পথিকদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হয় নি, অভিশপ্তও তারা নয়।
৩, তারা পথভ্রান্ত লক্ষ্যভ্রষ্টও নয়। পরবর্তী আয়াতসমূহে এ কথা কয়টির বিস্তারিত আলোচনা আসছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও;
اهدِنَا (হিদায়াত) শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, পথের দিক নির্দেশ করা, পথে পরিচালনা করা এবং গন্তব্যস্থানে পৌঁছিয়ে দেওয়া। আরবীতে এটাকে ‘ইরশাদ’, ‘তাওফীক্ব’, ‘ইলহাম’ এবং ‘দালালাহ’ ইত্যাদি শব্দে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থ হল, আমাদেরকে সঠিক পথের দিকে দিক নির্দেশ কর, এ পথে চলার তাওফীক্ব দাও এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ, যাতে আমরা (আমাদের অভীষ্ট) তোমার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। পক্ষান্তরে সরল-সঠিক পথ কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত হয় না। এই সরল-সঠিক পথ হল সেই ‘ইসলাম’ যা নবী করীম (সাঃ) বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেছেন এবং যা বর্তমানে ক্বুরআন ও সহীহ হাদীসের মধ্যে সুরক্ষিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান