হে নবী, আল্লাহ তোমার জন্য যা হালাল করেছেন তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কেন তা হারাম করছ? আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন হারাম করছ? (এর দ্বারা) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি পেতে চাও, (আল্লাহ তোমার এ ত্রুটি ক্ষমা করে দিলেন কেননা) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল
হে নাবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান
O Prophet, why do you prohibit [yourself from] what Allah has made lawful for you, seeking the approval of your wives? And Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International
১. হে নবী! আল্লাহ্ আপনার জন্য যা বৈধ করেছেন আপনি তা নিষিদ্ধ করছেন কেন? আপনি আপনার স্ত্রীদের সস্তুষ্টি চাচ্ছেন(১); আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যহ নিয়মিতভাবে আসরের পর দাঁড়ানো অবস্থায়ই সকল স্ত্রীর কাছে কুশল জিজ্ঞাসার জন্যে গমন করতেন। একদিন যায়নব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে একটু বেশি সময় অতিবাহিত করলেন এবং মধু পান করলেন। এতে আমার মনে ঈর্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এবং আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সাথে পরামর্শ করে স্থির করলাম যে, তিনি আমাদের মধ্যে যার কাছে আসবেন, সেই বলবেঃ আপনি “মাগাফার” পান করেছেন। (মাগাফীর এক প্রকার বিশেষ দুৰ্গন্ধযুক্ত আঠাকে বলা হয়।) সেমতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, আমি তো মধু-পান করেছি। সেই বিবি বললেনঃ সম্ভবত কোন মৌমাছি মাগাফীর বৃক্ষে বসে তার রস চুষেছিল। এ কারণেই মধু দুৰ্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুৰ্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে সযত্নে বেঁচে থাকতেন। তাই অতঃপর মধু খাবেন না বলে কসম খেলেন। যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা মনঃক্ষুন্ন হবেন চিন্তা করে তিনি বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যেও বলে দিলেন। কিন্তু সেই স্ত্রী বিষয়টি অন্য স্ত্রীর গোচরীভূত করে দিল। ফলে এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী: ৪৯১২, ৫২৬৭, ৬৬৯১, মুসলিম: ১৪৭৪]
কোন কোন বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন দাসীর সাথে থাকতেন বিধায় আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা রাসূলকে এমনভাবে কথাবার্তা বললেন যে, রাসূল সে দাসীর কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, ফলে এ আয়াত নাযিল হয়। [নাসায়ী: ৭/৭১, ৭২, নং ৩৯৫৯, দ্বিয়া আল-মাকদেসী: আল-আহাদিসুল মুখতারাহ: ১৬৯৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৯৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, তুমি তা অবৈধ করছ কেন?[1] তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] নবী করীম (সাঃ) যে জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন তা কি ছিল? যার কারণে মহান আল্লাহ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে, যা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা হল, তিনি যয়নাব বিনতে জাহশ্ (রাঃ)র কাছে কিছুক্ষণ থাকতেন এবং সেখানে মধু পান করতেন। হাফসা এবং আয়েশা (রায্বিয়াল্লাহু আনহুমা) স্বাভাবিকতার অধিক সময় তাঁর সেখানে থাকার পথ বন্ধ করার জন্য ফন্দি আঁটলেন যে, তাঁদের কারো কাছে যখন তিনি আসবেন, তখন তাঁরা বলবেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ‘মাগাফীর’ খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে ‘মাগাফীর’এর গন্ধ আসছে। (‘মাগাফীর’ এক প্রকার গাছের মিষ্ট আঠা, যা খেলে মুখে এক প্রকার গন্ধ সৃষ্টি হয়।) সুতরাং তাঁরা পরিকল্পনা অনুযায়ী তা-ই করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো যয়নাবের ঘরে কেবল মধু পান করেছি। এখন আমি শপথ করছি যে, আর কখনও তা পান করব না। তবে এ কথা তোমরা অন্য কাউকে বলো না।’’ (বুখারীঃ সূরা তাহরীমের তফসীর) সুনানে নাসাঈর বর্ণনায় এসেছে যে, তা ছিল একটি ক্রীতদাসী যাকে তিনি নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। (সুনানে নাসায়ী ৩/৮৩)
পক্ষান্তরে কিছু অন্য আলেমগণ নাসাঈর এ বর্ণনাকে দুর্বল গণ্য করেছেন। এর বিশদ বর্ণনা অন্যান্য কিতাবে এইভাবে এসেছে যে, তিনি ছিলেন মারিয়া ক্বিবত্বিয়া (রাঃ)। যাঁর গর্ভে নবী করীম (সাঃ)-এর পুত্র ইবরাহীম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একদা হাফসা (রাঃ) র ঘরে এসেছিলেন। তখন হাফসা (রাঃ) ঘরে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের (নবী (সাঃ) ও মারিয়া ক্বিবত্বিয়ার) উপস্থিতিতেই হাফসা (রাঃ) এসে যান। তাঁকে নবী (সাঃ)-এর সাথে নিজের ঘরে নির্জনে দেখে তিনি বড়ই নাখোশ হলেন। নবী (সাঃ)ও এ কথা অনুভব করলেন এবং তিনি হাফসা (রাঃ) কে খোশ করার জন্য কসম খেয়ে মারিয়া ক্বিবত্বিয়া (রাঃ) কে নিজের উপর হারাম করে নিলেন। আর হাফসা (রাঃ) কে তাকীদ করলেন যে, তিনি যেন এ কথা অন্য কাউকে না বলেন। ইমাম ইবনে হাজার প্রথমতঃ বলেন যে, এ ঘটনা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যা একে অপরকে বলিষ্ঠ করে। দ্বিতীয়তঃ তিনি বলেন যে, হতে পারে একই সময়ে উভয় ঘটনাই এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হয়েছে। (ফাতহুল বারী, সূরা তাহরীমের তাফসীর) ইমাম শওকানীও এ কথার সমর্থন করে উভয় ঘটনাকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহর হালাল করা জিনিসকে হারাম করার অধিকার কারো নেই। এমন কি রসূল (সাঃ)-এরও ছিল না।