৩৮ সূরাঃ সোয়াদ | Ṣād | سورة ص - আয়াতঃ ৩৪
৩৮:৩৪ وَ لَقَدۡ فَتَنَّا سُلَیۡمٰنَ وَ اَلۡقَیۡنَا عَلٰی كُرۡسِیِّهٖ جَسَدًا ثُمَّ اَنَابَ ﴿۳۴﴾
و لقد فتنا سلیمن و القینا علی كرسیهٖ جسدا ثم اناب ﴿۳۴﴾

আর আমি তো সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর রেখেছিলাম একটি দেহ*, অতঃপর সে আমার অভিমুখী হল। আল-বায়ান

আমি সুলাইমানকে পরীক্ষা করলাম (তার রাজত্ব কেড়ে নিয়ে) আর তার সিংহাসনের উপর রাখলাম একটি দেহ (শয়তানকে, কাজেই সুলাইমান কিছু সময়ের জন্য তার রাজত্ব হারাল) অতঃপর সে (আনুগত্য নিয়ে অনুশোচনা করে আল্লাহর পানে) প্রত্যাবর্তন করল (আর আল্লাহর অনুগ্রহে ফিরে পেল তার রাজত্ব ও সিংহাসন)। তাইসিরুল

আমি সুলাইমানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি দেহ; অতঃপর সুলাইমান আমার অভিমুখী হল। মুজিবুর রহমান

And We certainly tried Solomon and placed on his throne a body; then he returned. Sahih International

* আবু হুরাইরা সূত্রে বুখারী শরীফের বর্ণনা মতে হযরত সুলাইমান একদা তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার দীপ্ত কামনা ব্যক্ত করে বলেন যে, এর ফলে তাদের গর্ভে যেসব সন্তান আসবে তারা সব আল্লাহর পথে লড়াকু মুজাহিদ হবে। তবে তিনি ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে যান। ফলে একমাত্র এক স্ত্রীর গর্ভেই একটি সন্তান হয়, যে ছিল বিকলাঙ্গ নিষ্প্রাণ প্রায়। ভূমিষ্ট হবার পর এ সন্তানকে সুলাইমানের দরবারে তার সিংহাসনে এনে রাখা হলে তিনি স্বীয় ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং তওবা করেন।

৩৪. আর অবশ্যই আমরা সুলাইমানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি ধড়(১); তারপর সুলাইমান আমার অভিমুখী হলেন।

(১) এখানে 'ধড়' বলে কি বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দু'টি মত রয়েছে। এক. এখানে ধড় বলে একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান বোঝানো হয়েছে। কারণ, সুলাইমান আলাইহিস সালাম শপথ করে বলেছিলেন, আমি আমার স্ত্রীদের সাথে সহবাস করলে প্রত্যেকেই একটি সন্তান নিয়ে আসবে, যাতে করে তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে পারে, কিন্তু তিনি ইনশাল্লাহ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, তারপর তিনি তার স্ত্রীদের সাথে সহবাস করলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেবল একজনই একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিল। তারপর সুলাইমান আলাইহিস সালাম তার রবের দিকে ফিরে আসলেন এবং তাওবাহ করলেন। [মুয়াস্‌সার] দুই. এখানে ধড় বলে সে জিনকে বোঝানো হয়েছে যে সুলাইমান আলাইহিস সালামের অবর্তমানে তার সিংহাসনে আরোহন করেছিল এবং কিছুদিন রাজ্য শাসন করেছিল। তারপর সুলাইমান আলাইহিস সালাম আল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন এবং তাওবাহ করলেন। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) আমি সুলাইমানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি দেহ; অতঃপর সুলাইমান আমার অভিমুখী হল। [1]

[1] এই পরীক্ষা কি ছিল, সিংহাসনে রাখা নিষ্প্রাণ দেহটি কিসের ছিল? তা সিংহাসনে রাখার অর্থ কি? এসব বিবরণ কুরআন পাকে বা কোন সহীহ হাদীসে বিদ্যমান নেই। তবে কোন কোন তফসীরবিদ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত একটি ঘটনাকে আলোচ্য আয়াতের তফসীর বলে সাব্যস্ত করেছেন। ঘটনার সারমর্ম হল যে, একবার সুলাইমান (আঃ) স্বীয় মনোভাব ব্যক্ত করলেন যে, আজ রাত্রে আমি আমার (৭০ বা ৯০ জন) সকল স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করব যাতে প্রত্যেকের গর্ভ থেকে এক একটি সন্তান জ্বমগ্রহণ করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। কিন্তু এ মনোভাব ব্যক্ত করার সময় তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ তদবীরের উপর পূর্ণ ভরসা করে বসলেন।) যাতে ফল এই দাঁড়ালো যে, স্ত্রীগণের মধ্যে মাত্র একজন গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর গর্ভ থেকে একটি মৃত ও অসম্পূর্ণ সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যদি সুলাইমান (আঃ) ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতেন, তাহলে তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর গর্ভ থেকে (তাঁর আশানুরূপ এক একটি) মুজাহিদ সন্তান ভূমিষ্ঠ হত।’’ (বুখারী, মুসলিম) এই সকল তফসীরবিদদের মতে সম্ভবতঃ ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলা বা শুধু নিজ তদবীরের উপর ভরসা করাটাই ফিতনা বা পরীক্ষা ছিল, যে ফিতনায় সুলাইমান (আঃ)-কে ফেলা হয়েছিল। আর সিংহাসনের উপর নিক্ষিপ্ত দেহ ঐ অসম্পূর্ণ বাচ্চা। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান