২৭ সূরাঃ আন-নামাল | An-Naml | سورة النمل - আয়াতঃ ৫৯
২৭:৫৯ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ وَ سَلٰمٌ عَلٰی عِبَادِهِ الَّذِیۡنَ اصۡطَفٰی ؕ آٰللّٰهُ خَیۡرٌ اَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿ؕ۵۹﴾
قل الحمد لله و سلم علی عباده الذین اصطفی آلله خیر اما یشركون ﴿۵۹﴾

বল, ‘সকল প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্তে। আর শান্তি তাঁর বান্দাদের প্রতি যাদের তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, না কি যাদের এরা শরীক করে তারা’? আল-বায়ান

বল, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই জন্য এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, না তা যার শরীক করে তারা? তাইসিরুল

বলঃ প্রশংসা আল্লাহই এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি। শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ, নাকি তারা যাদেরকে শরীক করা হয়? মুজিবুর রহমান

Say, [O Muhammad], "Praise be to Allah, and peace upon His servants whom He has chosen. Is Allah better or what they associate with Him?" Sahih International

৫৯. বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহরই(১) এবং শান্তি তার মনোনীত বান্দাদের প্রতি!(২) শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ, নাকি তারা যাদেরকে শরীক করে তারা?(৩)

(১) এ ভূমিকার মাধ্যমে মুসলিমরা কিভাবে তাদের বক্তৃতা শুরু করবে তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরই ভিত্তিতে সঠিক ইসলামী চিন্তা ও মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরা সব সময় আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার দো'আ করে তাদের বক্তৃতা শুরু করে থাকেন। [কুরতুবী] কিন্তু আজকাল কোন কোন মুসলিম বক্তারা তো এর মাধ্যমে বক্তৃতা শুরু করার কথা কল্পনাই করতে পারেন না অথবা এভাবে বক্তৃতা শুরু করতে তারা লজ্জা অনুভব করেন।

(২) পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতদের আযাব ও ধ্বংসের কিছু অবস্থা বর্ণনা করার পর এই বাক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, আপনি আল্লাহ্ তা'আলার সপ্ৰশংস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ, আপনার উম্মতকে দুনিয়ার ব্যাপক আযাব থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী নবী ও আল্লাহর মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম প্রেরণ করুন। এখানে ‘আল্লাহর মনোনীত বান্দাহ’ বলে সে সমস্ত ঈমানদার লোকদেরকেই বুঝানো হবে যারা আল্লাহর সাথে কোন প্রকার শির্ক করেনি। কোন ধরনের কুফরীতে লিপ্ত হয়নি। নিঃসন্দেহে তারা হলেন নবী-রাসূলগণ। যারা তাওহীদ বাস্তবায়ণ করেছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর শান্তি বৰ্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি!” [সূরা আস-সাফফাত: ১৮১]

তাছাড়া নবী-রাসূলদের অনুসারীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেছেন তারাও নবী-রাসূলদের অনুগামী হয়ে এ ‘সালাম’ বা শান্তি লাভের দো’আর আওতায় পড়বেন। আমাদের নবীর উম্মতদের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম এদের অগ্রভাগে রয়েছেন। আর এ জন্যই কোন কোন মুফাসসির এখানে “আল্লাহর মনোনীত বান্দাহ’’’ বলে সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে বলেও মত প্ৰকাশ করেছেন। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আর যদি ‘আল্লাহর মনোনীত বান্দাহ’ বলে সাহাবায়ে কেরামদের বোঝানো হয়ে থাকে তবে এ আয়াত দ্বারা এটা সাব্যস্ত হবে যে, নবীদের প্রতি ‘আলাইহিস সালাম’ বলে সালাম প্রেরণের সাথে সাথে তাদের অনুসারীদের জন্য সেটি ব্যবহার জয়েয। কিন্তু নবীদের প্রতি সালাম প্রেরণ ব্যতীত অন্যান্যদের উপর সরাসরি ‘আলাইহিস সালাম’ বলার সপক্ষে কোন যুক্তি নেই। বরং সেটা বিদা আত হিসেবে বিবৃত হবে। যেমন, আলী আলাইহিস সালাম বলা বা হুসাইন আলাইহিস সালাম বলা। তাই এ ধরনের ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে। [দেখুন: ইবন কাসীর: ৬/৪৭৮; তাফসীরুল আলূসী: ৬/৭, ১১/২৬১]

(৩) মুশরিকদের একজনও একথার জবাবে বলতে পারতো না, একাজ আল্লাহর নয়, অন্য কারো অথবা আল্লাহর সাথে অন্য কেউ তাঁর একাজে শরীক আছে। কুরআন মজীদে অন্যান্য স্থানে মক্কার কাফের সমাজ ও আরব মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, মহা পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী সত্তাই এসব সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আয-যুখরুফঃ ৯] আরো এসেছে, “আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ্‌।” [সূরা আয-যুখরুফঃ ৮৭] আরো বলেছেনঃ “আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছে এবং মৃত পতিত জমিকে জীবিত করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।” [সূরা আল-আনকাবূতঃ ৬৩] আল্লাহ আরো বলেছেনঃ “তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করেন? এ শ্রবণ ও দর্শনের শক্তি কার নিয়ন্ত্রণাধীন? কে সজীবকে নির্জীব এবং নির্জীবকে সজীব করেন? কে এ বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন? তারা নিশ্চয়ই বলবে। আল্লাহ।” [সূরা ইউনুসঃ ৩১]

আরবের মুশরিকরা এবং সারা দুনিয়ার মুশরিকরা সাধারণত একথা স্বীকার করতো এবং আজো স্বীকার করে যে, আল্লাহই বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনাকারী। তাই কুরআন মজীদের এ প্রশ্নের জবাবে তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি নিতান্ত হঠকারিতা ও গোয়াতুমীর আশ্রয় নিয়ে ও নিছক বিতর্কের খাতিরেও বলতে পারতো না যে, আমাদের উপাস্য দেবতারা আল্লাহর সাথে এসব কাজে শরীক আছে। কারণ যদি তারা একথা বলতো তাহলে তাদের নিজেদের জাতির হাজার হাজার লোক তাদেরকে মিথ্যুক বলতো এবং তারা পরিষ্কার বলে দিতো, এটা আমাদের আকীদা নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই এবং তার মনোনীত দাসদের প্রতি শান্তি![1] আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, নাকি ওরা যাদেরকে শরীক করে তারা?’ [2]

[1] যাদেরকে আল্লাহ বাণীবাহক ও মানুষের পথ-প্রদর্শকরূপে নির্বাচিত করেছেন; যাতে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে।

[2] এখানে প্রশ্ন স্বীকৃতিসূচক। অর্থাৎ, আল্লাহই উত্তম। যখন তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রুযীদাতা ও মালিক তখন তিনি ছাড়া অন্য কেউ কি শ্রেষ্ঠ হতে পারে, যে না সৃষ্টিকর্তা, না রুযীদাতা, আর না মালিক? خَير (শ্রেষ্ঠতর) যদিও ‘ইসমে তাফয্বীল’ যা দুই বা ততোধিক জিনিসের মধ্যে তুলনামূলক আধিক্য ও উৎকর্ষ বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু এখানে তা ‘শ্রেষ্ঠ’ অর্থে ব্যবহার হয়েছে কোন তুলনা ছাড়াই। কারণ, বাতিল মা’বূদদের মধ্যে কোন প্রকার خَير (শ্রেষ্ঠত্ব)ই নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান