আর তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন কসম না করে যে, তারা নিকটাত্মীয়দের, মিসকীনদের ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কিছুই দেবে না। আর তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন এবং আল্লাহর পথে হিজরাতকারীদেরকে সাহায্য করবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে ও তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন? আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল
তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবেনা। তারা যেন তাদের দোষ-ক্রটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাওনা যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান
And let not those of virtue among you and wealth swear not to give [aid] to their relatives and the needy and the emigrants for the cause of Allah, and let them pardon and overlook. Would you not like that Allah should forgive you? And Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International
২২. আর তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্ৰহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্থকে ও আল্লাহ্র রাস্তায় হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে।(১) তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন?(২) আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(১) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার প্রতি অপবাদের ঘটনায় মুসলিমদের মধ্যে মিসতাহ ও হাসসান জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত নাযিল হওয়ার পর তাদের প্রতি অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করেন। তারা উভয়েই বিশিষ্ট সাহাবী এবং বদর-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্যতম ছিলেন। কিন্তু তাদের দ্বারা একটি ভুল হয়ে যায় এবং তারা খাঁটি তাওবাহর তাওফীক লাভ করেন। আল্লাহ্ তা'আলা যেমন আয়েশার দোষমুক্ততা প্রকাশ্যে আয়াত নাযিল করেন, এমনিভাবে এই মুসলিমদের তাওবাহ কবুল করা ও ক্ষমা করার কথাও ঘোষণা করে দেন।
মিসতাহ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মীয় ও নিঃস্ব ছিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে আর্থিক সাহায্য করতেন। যখন অপবাদের ঘটনার সাথে তার জড়িত থাকার কথা প্রমাণিত হল, তখন কন্যা-বৎসল পিতা আবু বকর সিদ্দীক কন্যাকে এমন কষ্টদানের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মিসতাহর প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি কসম করে বসলেন, ভবিষ্যতে তাকে কোনরূপ আর্থিক সাহায্য করবেন না। বলাবাহুল্য, কোন বিশেষ ফকীরকে আর্থিক সাহায্য নির্দিষ্টভাবে কোন বিশেষ মুসলিমের উপর ওয়াজিব নয়।
কেউ কাউকে আর্থিক সাহায্য করার পর যদি বন্ধ করে দেয়, তবে গোনাহর কোন কারণ নেই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের দলকে আল্লাহ তা'আলা বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ দিলরূপে গঠন করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তাই একদিকে বিচ্যূতিকারীদেরকে খাঁটি তাওবাহ এবং ভবিষ্যত সংশোধনের নেয়ামত দ্বারা ভূষিত করেছেন এবং অপরদিকে যারা স্বাভাবিক মনোকষ্টের কারণে গরীবদের সাহায্য ত্যাগ করার কসম করেছিলেন, তাদেরকেও আদর্শ চরিত্রের শিক্ষা আলোচ্য আয়াতে দান করেছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, তারা যেন কসম ভঙ্গ করে কাফফারা দিয়ে দেয়। গরীবদের আর্থিক সাহায্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া তাদের উচ্চমর্যাদার পক্ষে সমীচীন নয়। আল্লাহ তা'আলা যেমন তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তেমনি তাদেরও ক্ষমা ও মার্জনা প্রদর্শন করা উচিত। [দেখুন: কুরতুবী]
(২) আয়াতের শেষ বাক্যে বলা হয়েছেঃ তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন? আয়াত শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেনঃ بَلىٰ وَاللهِ يَا رَبَّنَا إنَّا لَنُحِبُّ أنْ تَغْفِرَ لَنَا অর্থাৎ আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে মাফ করুন, আমি অবশ্যই তা পছন্দ করি। এরপর তিনি মিসতাহর আর্থিক সাহায্য পুনর্বহাল করে দেন এবং বলেনঃ এ সাহায্য কোনদিন বন্ধ হবে না। [বুখারীঃ ৪৭৫৭, মুসলিম ২৭৭০]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন? [1] আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
[1] মিসত্বাহ, যিনি আয়েশা (রাঃ) -র চরিত্রে অপবাদ রটনার ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, তিনি একজন গরীব মুহাজির ছিলেন। আত্মীয়তার দিক দিয়ে আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খালাতো ভাই ছিলেন। এই জন্য তিনি তাঁর তত্তাবধায়ক ও ভরণপোষণের দায়িত্বশীল ছিলেন। যখন তিনিও (কন্যা) আয়েশা (রাঃ) -র বিরুদ্ধে চক্রান্তে শরীক হয়ে পড়েন, তখন আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত হন; আর তা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। সুতরাং পবিত্রতার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি কসম করে বসলেন যে, আগামীতে তিনি মিসত্বাহকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবেন না। আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর এই শপথ যদিও মানব প্রকৃতির অনুকূলই ছিল, তবুও সিদ্দীকের মর্যাদা এর চাইতে উচ্চ চরিত্রের দাবীদার ছিল। সুতরাং তা আল্লাহর পছন্দ ছিল না। যার কারণে তিনি এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে অত্যন্ত স্নেহ-বাৎসল্যের সাথে তাঁর শীঘ্রতাপ্রবণ মানবীয় আচরণের উপর সতর্ক করলেন যে, তোমাদের ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। আর তোমরা চাও যে, মহান আল্লাহ তোমাদের সে ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেন। তাহলে তোমরা অন্যের সাথে ক্ষমা-সুন্দর আচরণ কর না কেন? তোমরা কি চাও না যে, মহান আল্লাহ তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন? কুরআনের এই বর্ণনা-ভঙ্গি এতই প্রভাবশালী ছিল যে, তা শোনার সাথে সাথে সহসা আবু বাকর (রাঃ)-এর মুখ হতে বের হল, ‘কেন নয়? হে আমাদের প্রভু! আমরা নিশ্চয় চাই যে, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর।’ এরপর তিনি কসমের কাফফারা দিয়ে পূর্বের ন্যায় মিসত্বাহকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন। (ফাতহুল কাদীর, ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান