২২ সূরাঃ আল-হজ্জ | Al-Hajj | سورة الحج - আয়াতঃ ৭৩
২২:৭৩ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ لَنۡ یَّخۡلُقُوۡا ذُبَابًا وَّ لَوِ اجۡتَمَعُوۡا لَهٗ ؕ وَ اِنۡ یَّسۡلُبۡهُمُ الذُّبَابُ شَیۡئًا لَّا یَسۡتَنۡقِذُوۡهُ مِنۡهُ ؕ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَ الۡمَطۡلُوۡبُ ﴿۷۳﴾
یایها الناس ضرب مثل فاستمعوا لهٗ ان الذین تدعون من دون الله لن یخلقوا ذبابا و لو اجتمعوا لهٗ و ان یسلبهم الذباب شیىا لا یستنقذوه منه ضعف الطالب و المطلوب ۷۳

হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল। আল-বায়ান

হে মানুষ! একটা দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে, সেটা মনোযোগ দিয়ে শোন। আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা কক্ষনো একটা মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, এজন্য তারা সবাই একত্রিত হলেও। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা তার থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না, প্রার্থনাকারী আর যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়েই দুর্বল। তাইসিরুল

হে লোকসকল! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারাতো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবেনা, এ উদ্দেশে তারা সবাই একত্রিত হলেও; এবং মাছি যদি তাদের নিকট হতে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওটাও তারা ওর নিকট হতে উদ্ধার করতে পারবেনা। পূজারী ও পূজিত কতই না দুর্বল! মুজিবুর রহমান

O people, an example is presented, so listen to it. Indeed, those you invoke besides Allah will never create [as much as] a fly, even if they gathered together for that purpose. And if the fly should steal away from them a [tiny] thing, they could not recover it from him. Weak are the pursuer and pursued. Sahih International

৭৩. হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগের সাথে তা শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্র হলেও (১) এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের কাছ থেকে, এটাও তারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও অন্বেষণকৃত কতই না দুর্বল(২);

(১) অর্থাৎ সাহায্যপ্ৰাথী তো দুর্বল হবার কারণেই তার চাইতে উচ্চতর কোন শক্তির কাছে সাহায্য চাচ্ছে। কিন্তু এ উদ্দেশ্যে সে যাদের কাছে সাহায্য চাচ্ছে তাদের দুর্বলতার অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা একটি মাছির কাছেও হার মানে। এখন তাদের দুর্বলতার অবস্থা চিন্তা করো যারা নিজেরাও দুর্বল এবং যাদের উপর নির্ভর করে তাদের আশা-আকাংখা-কামনা-বাসনাগুলো দাঁড়িয়ে আছে তারাও দুর্বল। আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের ইবাদত করে, এরা সবাই যদি একত্রিত হয়ে একটি মাছি বানাতে চেষ্টা করে তবে তাতেও সমর্থ হবে না।

যেমন এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আর তার চেয়ে বড় যালেম আর কে, যে আমার সৃষ্টির মত সৃষ্টি করতে চায়? তাহলে সে একটি পিপড়া বা ছোট বস্তু তৈরী করে দেখাক, অথবা একটি মাছি তৈরী করুক, অথবা একটি দানা তৈরী করে দেখাক।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৯১] অন্য বর্ণনায় আরও এসেছে, “সে যেন একটি যবের দানা তৈরী করে দেখায়।” [বুখারী: ৫৯৫৩, ৭৫৫৯] অপর বর্ণনায় এসেছে, “সে যেন একটি মশা তৈরী করে দেখায়।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/২৫৯] বস্তুত তারা একটি মাছি তৈরী করতেও সক্ষম নয়। বরং তার চেয়েও তাদের অবস্থা আরও অধম। [ইবন কাসীর]

(২) বলা হয়েছে, যে মূর্তিদেরকে তোমরা কার্যোদ্ধারকারী মনে কর, তারা এতই অসহায় ও শক্তিহীন যে, সবাই একত্রিত হয়ে একটি মাছির ন্যায় নিকৃষ্ট বস্তুও সৃষ্টি করতে পারে না। সৃষ্টি করা তো বড় কথা, তোমরা রোজই তাদের সামনে মিষ্টান্ন, ফল-মূল ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য রেখে দাও। মাছিরা এসে সেগুলো খেয়ে ফেলে। মাছিদের কাছ থেকে নিজেদের ভোগের বস্তুকে বাঁচিয়ে রাখার শক্তিও তাদের হয় না। অতএব, তারা তোমাদেরকে বিপদ থেকে কিরূপে উদ্ধার করবে? এ কারণেই আয়াতের শেষে (ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ) বলে তাদের মূর্খতা ও বোকামী ব্যক্ত করা হয়েছে; অর্থাৎ যাদের উপাস্যই এমন শক্তিহীন সেই উপাস্যের উপাসক আরো বেশী শক্তিহীন হবে। ইবন আব্বাস বলেন, মূর্তি ও মাছি উভয়ই দুর্বল। [দেখুন: কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] 

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৩) হে লোক সকল! একটি উপমা দেওয়া হচ্ছে, তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, যদিও তারা এই উদ্দেশ্যে সবাই একত্রিত হয়।[1] আর মাছি যদি তাদের নিকট হতে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে সেটাও তারা ওর নিকট হতে উদ্ধার করতে পারে না; [2] পূজারী ও দেবতা কতই না দুর্বল। [3]

[1] অর্থাৎ, এই সব বাতিল উপাস্যরা যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত সাহায্যের জন্য আহবান কর, এরা সকলে সম্মিলিত হয়ে একটি সামান্য ছোট মাছি সৃষ্টি করতে চাইলে তাও তারা পারবে না। এ সত্ত্বেও যদি তোমরা তাদেরকে নিজেদের অভাব-অভিযোগ দূর করার মালিক মনে কর, তাহলে তোমাদের জ্ঞানের অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। এখান হতে পরিষ্কার হয় যে, আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হত তারা শুধুমাত্র পাথরের প্রাণহীন প্রতিমাই ছিল না; (যেমন বর্তমানের কবরপূজারীরা বলে থাকে) বরং তারা ছিল জ্ঞানের অধিকারী। অর্থাৎ, তারা আল্লাহর নেক বান্দা ছিল, যাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদেরকে (মূর্তি বানিয়ে) আল্লাহর অংশীদার বানিয়ে নিয়েছিল। সেই জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এরা সকলে একত্রিত হলেও একটি সামান্য মাছি পর্যন্ত সৃষ্টি করায় সক্ষম নয়।’ এই চ্যালেঞ্জ কেবলমাত্র পাথরের প্রাণহীন মূর্তিদেরকে দেওয়া যেতে পারে না।

[2] এখানে তাদের অধিক অক্ষমতা ও অসহায়তার কথা প্রকাশ পেয়েছে। আর তা এই যে, সৃষ্টি করা তো দূরের কথা; তাদের নিকট হতে মাছির ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া খাবারটুকুও উদ্ধার করার ক্ষমতা পর্যন্ত তারা রাখে না।

[3] طالب বলতে মনগড়া দেবতা আর مطلوب বলতে মাছিকে বুঝানো হয়েছে। আবার অনেকের নিকট طالب বলতে পূজারী ও مطلوب বলতে দেবতাকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে কুদসীতে বাতিল উপাস্যদের অক্ষমতার কথা এইভাবে বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তার চাইতে বড় অত্যাচারী কে হতে পারে, যে আমার (সৃষ্টি করার) মত সৃষ্টি করতে চায়। যদি সত্যিকারে কারো মধ্যে এ শক্তি থাকে, তাহলে সে যেন একটি পিঁপড়ে বা একটি যব সৃষ্টি করে দেখাক।’’ (বুখারীঃ লেবাস অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান