প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও, আল-বায়ান
আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কুরবানীর) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিযক্ দেয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন), কারণ তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে- তাইসিরুল
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুস্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মা‘বূদ একই মা‘বূদ, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পন কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতজনদেরকে, মুজিবুর রহমান
And for all religion We have appointed a rite [of sacrifice] that they may mention the name of Allah over what He has provided for them of [sacrificial] animals. For your god is one God, so to Him submit. And, [O Muhammad], give good tidings to the humble [before their Lord] Sahih International
৩৪. আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য মানাসাক(১) এর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেসবের উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(২) তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, কাজেই তারই কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।(৩)
(১) আরবী ভাষায় منسك ও نسك কয়েক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, জন্তু যবেহ করা, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম, ঈদের জন্য একত্রিত হওয়া ইত্যাদি। তাফসীরকারক মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ সহ অনেকে এখানে منسك এর অর্থ হাদঈর প্রাণী যবেহ করা নিয়েছেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, এই উম্মতকে হাদঈ যবেহ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, তা কোন নতুন আদেশ নয়, পূর্ববর্তী উম্মতদেরকেও এ ধরনের আদেশ দেয়া হয়েছিল। [ইবন কাসীর] পক্ষান্তরে কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহর মতে আয়াতের অর্থ এই যে, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম যেমন এই উম্মতের উপর আরোপ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও হজ্জ ফরয করা হয়েছিল। তখন মক্কার সাথে এটি সুনির্দিষ্ট হবে। হজ্জের জায়গা মক্কা ছাড়া আর কোথাও ছিল না। তখন منسك শব্দের অর্থ হবে হজ্জ এর স্থান। [কুরতুবী] তবে প্রথম মতটি বেশী বিশুদ্ধ। পরবর্তী আয়াতাংশ এর উপর প্রমাণবাহ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(২) أنعام বলে উট, গরু, ছাগল, মেষ, দুম্বা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। এগুলোকে যবেহ করার সময় আল্লাহর কথা স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরং যবেহ যেন একমাত্র তাঁরই উদ্দেশ্যে হয় সেটার খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে, কারণ, তিনিই তো এ রিযিক তাদেরকে দিয়েছেন। [কুরতুবী] এ প্রসংগে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর হালাল হওয়ার কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা প্রমাণ করা যে, হাদঈ বা কুরবানী কেবল চতুস্পদ জন্তু দ্বারাই সম্ভব। অন্য কিছু দ্বারা সম্ভব নয়। [ফাতহুল কাদীর]
(৩) মূলে এসেছে, الْمُخْبِتِينَ। আরবী ভাষায় خبت শব্দের অর্থ নিম্নভূমি। [ফাতহুল কাদীর] এ কারণে এমন ব্যক্তিকে خبيت বলা হয়, যে নিজেকে হেয় মনে করে। [ফাতহুল কাদীর] এ কারণেই কাতাদাহ ও দাহহাক مخبتين এর অর্থ করেছেন বিনয়ী। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ সন্তুষ্টচিত্ত মানুষ। আমর ইবন আউস বলেনঃ এমন লোকদেরকে مخبتين বলা হয়, যারা অন্যের উপর যুলুম করে না। কেউ তাদের উপর যুলুম করলে তারা তার প্রতিশোধ নেয় না। সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ যারা সুখে-দুঃখে, স্বাচ্ছন্দ্যে ও অভাবঅনটনে আল্লাহর ফায়সালা ও তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকে, তারাই مخبتين । [ইবন কাসীর] মূলতঃ কোন একটিমাত্র শব্দের সাহায্যে এর অন্তরনিহিত অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি অর্থঃ অহংকার ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয়াবনত ভোব অবলম্বন করা। তার বন্দেগী ও দাসত্বে একাগ্র ও একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। তার ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া। পরবর্তী আয়াতই এর সবচেয়ে সুন্দর তাফসীর। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি[1] সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর। আর সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে;
[1] مَنسَك শব্দটি نَسك يَنسك এর ক্রিয়ামূল। অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা। ذَبِيحَة (যবেহকৃত পশুকে)ও نَسِيكَة বলা হয়, যার বহুবচন نُسُك । এর একটি অর্থঃ আনুগত্য ও ইবাদত করাও বটে। যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় পশু কুরবানী করাও তাঁর এক প্রকার ইবাদত। আর সেই জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় জন্তু যবেহ করলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত (বা শিরক) করা হয়। অথবা مَنسَِك (সীনে যবর বা যের দিয়ে) স্থানবাচক শব্দ। অর্থঃ যবেহ বা ইবাদত করার জায়গা। এখান হতেই مَنَاسِك الحَجّ বলা হয়; অর্থাৎ ঐ সমস্ত জায়গা যেখানে হজ্জের কার্যাদি সমাধা করা হয়। যেমন আরাফাত, মুযদালিফা, মিনা ও মক্কা। সাধারণভাবে শুধু হজ্জের কার্যসমূহকেও مَنَاسِك الحَج বলা হয়ে থাকে। আয়াতের অর্থ হল, আমি পূর্বেও প্রত্যেক জাতির জন্য যবেহ বা ইবাদতের নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে এসেছি, যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করত। এর মধ্যে হিকমত এই যে, তারা আমার নাম নিবে; অর্থাৎ, ‘বিসমিল্লাহ, অল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করবে। অথবা আমাকে স্মরণে রাখবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান