মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। আল-বায়ান
মানুষের হিসাব গ্রহণের কাল ক্রমশঃ ঘনিয়ে আসছে কিন্তু তারা গাফলতিতে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তাইসিরুল
মানুষের হিসাব নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। মুজিবুর রহমান
[The time of] their account has approached for the people, while they are in heedlessness turning away. Sahih International
১. মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন(১), অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।(২)
(১) অর্থাৎ মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এখানে পৃথিবীর বিগত বয়সের অনুপাতে ঘনিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। লোকদের নিজেদের কাজের হিসেব দেবার জন্য তাদের রবের সামনে হাজির হবার সময় আর দূরে নেই। মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন একথারই আলামত যে, মানব জাতির ইতিহাস বর্তমানে তার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এখন সে তার সূচনাকালের পরিবর্তে পরিণামের বেশী নিকটবর্তী হয়ে গেছে। সূচনা ও মধ্যবর্তীকালীন পর্যায় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং এবার শেষ পর্যায়ে শুরু হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর একটি হাদীসে একথাই বলেছেন। তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেনঃ “আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে। যখন আমি ও কেয়ামত এ দুটি আঙ্গুলের মতো অবস্থান করছি।” [বুখারীঃ ৪৯৯৫] অর্থাৎ আমার পরে শুধু কেয়ামতই আছে, মাঝখানে অন্য কোন নবীর আগমনের অবকাশ নেই। যদি সংশোধিত হয়ে যেতে চাও তাহলে আমার দাওয়াত গ্ৰহণ করে সংশোধিত হও।
(২) অর্থাৎ কোন সতর্কসংকেত ও সতর্কবাণীর প্রতি দৃষ্টি দেয় না। দুনিয়া নিয়ে তারা এতই মগ্ন যে, আখেরাতের কথা ভুলে গেছে। আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে যে আল্লাহর উপর ঈমান, তাঁর ফরায়েযগুলো আদায় করতে হয়, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে হয় সেটার জন্য তারা প্ৰস্তুতি নিচ্ছে না। [ফাতহুল কাদীর] আর যে নবী তাদেরকে সর্তক করার চেষ্টা করছেন তার কথাও শোনে না। তাদের রাসূলের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ওহী এসেছে তারা সেটার প্রতি দৃষ্টি দেয় না। এ নির্দেশটি প্রাথমিকভাবে কুরাইশ ও তাদের মত যারা কাফের তাদেরকে করা হচ্ছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, [1] অথচ ওরা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। [2]
[1] হিসাবের সময় বলতে কিয়ামত; যা প্রতি সেকেন্ড নিকটবর্তী হয়ে চলেছে। আর প্রতিটি আগমনকারী জিনিসই নিকটবর্তী এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যু স্বস্থানে তার নিজের জন্য কিয়ামত। তাছাড়া বিগত যুগসমূহের তুলনায় কিয়ামত নিকটে; কারণ (বিশ্বসৃষ্টির পর হতে) যে সকল যুগ পার হয়ে গেছে তা অপেক্ষা অবশিষ্ট যুগ অতি অল্প।
[2] অর্থাৎ, ওর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হতে অমনোযোগী, পৃথিবীর চাকচিক্যে নিমজ্জিত (যা সেদিনকার জন্য ক্ষতিকর) এবং ঈমানের চাহিদা হতে উদাসীন (যা সেদিনকার জন্য কল্যাণকর)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান