১৬ সূরাঃ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل - আয়াতঃ ৩২
১৬:৩২ الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىهُمُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ طَیِّبِیۡنَ ۙ یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡكُمُ ۙ ادۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۳۲﴾
الذین تتوفىهم الملٓئكۃ طیبین یقولون سلم علیكم ادخلوا الجنۃ بما كنتم تعملون ﴿۳۲﴾

ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তম অবস্থায়, তারা বলে, ‘তোমাদের উপর সালাম। জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে। আল-বায়ান

ফেরেশতা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই ব’লে যে, ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে ‘আমাল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাইসিরুল

মালাইকা/ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়, (তাদেরকে) বলবেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর। মুজিবুর রহমান

The ones whom the angels take in death, [being] good and pure; [the angels] will say, "Peace be upon you. Enter Paradise for what you used to do." Sahih International

৩২. ফিরিশতাগণ(১) যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তমভাবে। ফিরিশতাগণ বলবেন, তোমাদের উপর সালাম! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।(২)

(১) এ আয়াত এবং এর পরবর্তী যে আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাকী ও ফেরেশতাদের আলাপ আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। সূরা আল-মুমিনের ৪৫–৪৬ আয়াতে এসবের চাইতে বেশী সুস্পষ্ট ভাষায় বর্‌যখের আযাবের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহ ফিরআউন ও ফিরআউনের পরিবারবর্গ সম্পর্কে বলেছেন, একটি কঠিন আযাব তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। সকাল-সাঁঝে তাদেরকে আগুনের সামনে নিয়ে আসা হয়। তারপর যখন কিয়ামতের সময় এসে যাবে তখন হুকুম দেয়া হবে- ফিরআউনের পরিবারবর্গকে কঠিনতম আযাবের মধ্যে ফেলে দাও। এখানে এটা বিশ্বাস করা জরুরী যে, কবরের শাস্তি শুধু রূহের উপর হবে না। বরং রূহ এবং দেহ উভয়টির উপরই হবে। কিয়ামতের মাঠে এবং এর পরবর্তী জীবন হবে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের যার সাথে দুনিয়ার জীবনের কোন তুলনাই চলে না। সেখানে সবকিছুর গতি প্রকৃতি ভিন্ন হবে।

(২) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মৃত্যুর সময় ঈমানদারগণের যে অবস্থা হয় এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে কিভাবে সাদর সম্ভাষণ জানায় তা বর্ণনা করছেন। অনুরূপ আয়াত কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এসেছে। [দেখুনঃ সূরা ফুসসিলাতঃ ৩০–৩২] তবে একথা জানা আবশ্যক যে, সৎকাজ করা জান্নাতে যাওয়ার কারণ। কিন্তু শুধুমাত্র সৎকাজই মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না, যতক্ষন তার সাথে আল্লাহর রহমত না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের বিনিময়ে নাজাত পাবে না। লোকেরা বললঃ আপনিও পাবেন না? তিনি বললেনঃ না, আমিও না। তবে আল্লাহ যদি তার রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রাখেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদত করো। এসব কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো। মধ্যম পন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [বুখারীঃ ৬৪৬৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফিরিশতাগণ প্রাণ হরণ করে; ফিরিশতাগণ (তাদেরকে) বলে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি![1] তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ [2]

[1] এই আয়াতগুলিতে যালেম মুশরিকদের বিপরীতে ঈমানদার ও মুত্তাকীদের চরিত্র এবং তাদের উত্তম পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদের দলভুক্ত করুন। আমীন।

[2] সূরা আ’রাফের ৪৩নং আয়াতের টীকায় এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নিজ আমলের জোরে জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ তার প্রতি আল্লাহর দয়া না হবে। কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে যে, তোমরা নিজ আমলের বিনিময়ে বা ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর। আসলে এর মধ্যে কোন পরস্পর-বিরোধিতা নেই। কারণ আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে সৎকর্ম একান্ত জরুরী। সৎকর্ম আল্লাহর রহমত পাওয়ার একমাত্র উপায়। অতএব আমলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। আমল ছাড়া পরকালে আল্লাহর রহমত কোনক্রমেই সম্ভব নয়। সুতরাং উক্ত হাদীসের অর্থ নিজ জায়গায় সঠিক এবং আমলের প্রয়োজনীয়তাও স্বস্থানে বহাল। সেই কারণে অন্য এক হাদীসে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদ দেখবেন না, বরং তিনি দেখবেন তোমাদের হৃদয় ও কর্ম।’’ (মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান