নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। আল-বায়ান
(রোযা) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে এবং শক্তিহীনদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদইয়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকীনকে অন্নদান করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশীতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরও উত্তম আর সে অবস্থায় রোযা পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। তাইসিরুল
ওটা নির্দিষ্ট কয়েক দিন। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ পীড়িত কিংবা প্রবাসী হয় তার জন্য অপর কোন দিন হতে গণনা করবে, আর যারা ওতে অক্ষম তারা তৎপরিবর্তে একজন দরিদ্রকে আহার্য দান করবে। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎ কাজ করে তার জন্য কল্যাণ এবং তোমরা যদি বুঝে থাক তাহলে সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। মুজিবুর রহমান
[Fasting for] a limited number of days. So whoever among you is ill or on a journey [during them] - then an equal number of days [are to be made up]. And upon those who are able [to fast, but with hardship] - a ransom [as substitute] of feeding a poor person [each day]. And whoever volunteers excess - it is better for him. But to fast is best for you, if you only knew. Sahih International
১৮৪. এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে(১) বা সফরে থাকলে(২) অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে(৩)। আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা(৪)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে।
(১) বাক্যে উল্লেখিত রুগ্ন সে ব্যক্তিকে বুঝায়, সাওম রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
(২) সফররত অবস্থায় সাওম না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে যেতেন। তাদের কেউ সাওম রাখতেন আবার কেউ রাখতেন না। উভয় দলের কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠাতেন না। [বুখারী: ১৯৪৭: মুসলিম: ১১১৬]
(৩) রুগ্ন বা মুসাফির ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় বা সফরে যে কয়টি সাওম রাখতে পারবে না, সেগুলো অন্য সময় হিসাব করে কাযা করা ওয়াজিব। এতে বলা উদ্দেশ্য ছিল যে, রোগজনিত কারণে বা সফরের অসুবিধায় পতিত হয়ে যে কয়টি সাওম ছাড়তে হয়েছে, সে কয়টি সাওম অন্য সময়ে পূরণ করে নেয়া তাদের উপর ফরয।
(৪) আয়াতের স্বাভাবিক অর্থ দাঁড়ায়, যেসব লোক রোগজনিত কারণে কিংবা সফরের দরুন নয়; বরং সাওম রাখার পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্বেও সাওম রাখতে চায় না, তাদের জন্যও সাওম না রেখে সাওমের বদলায় ফিদইয়া দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাথে সাথেই এতটুকু বলে দেয়া হয়েছে যে, সাওম রাখাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। উপরোক্ত নির্দেশটি ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের, যখন লক্ষ্য ছিল ধীরে ধীরে লোকজনকে সাওমে অভ্যস্ত করে তোলা। এরপর নাযিলকৃত আয়াত (فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ) এর দ্বারা প্রাথমিক এ নির্দেশ সুস্থ-সবল লোকদের ক্ষেত্রে রহিত করা হয়েছে। তবে যেসব লোক অতিরিক্ত বার্ধক্য জনিত কারণে সাওম রাখতে অপরাগ কিংবা দীর্ঘকাল রোগ ভোগের দরুন দূর্বল হয়ে পড়েছে, অথবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে একেবারেই নিরাশ হয়ে পড়েছে, সেসব লোকের বেলায় উপরোক্ত নির্দেশটি এখনো প্রযোজ্য রয়েছে।
সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত অভিমত তাই। সাহাবী সালামাহ ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু- বলেন, যখন (وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ) শীর্ষক আয়াতটি নাযিল হয়, তখন আমাদেরকে এ মর্মে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল যে, যার ইচ্ছা হয় সে সাওম রাখতে পারে এবং যে সাওম রাখতে চায় না, সে ফিদইয়া দিয়ে দেবে। এরপর যখন পরবর্তী আয়াত (فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ) নাযিল হল, তখন ফিদইয়া দেয়ার ইখতিয়ার রহিত হয়ে সুস্থ-সমর্থ লোকদের উপর শুধুমাত্র সাওম রাখাই জরুরী সাব্যস্ত হয়ে গেল। [বুখারী ৪৫০৭, মুসলিম: ১১৪৫, আবু দাউদ: ২৩১৫, ২৩১৬ ও তিরমিযী: ৭৯৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮৪) (রোযা) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে।[1] আর যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না [2] (যারা রোযা রাখতে অক্ষম), তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।[3] আর যদি তোমরা রোযা রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণপ্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।
[1] রোগী ও মুসাফিরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে যে, তারা রোগ ও সফরের কারণে যে কয়েক দিন রোযা রাখতে পারেনি, পরে সে দিনগুলো রোযা রেখে (২৯/৩০) সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
[2] (يُطِيْقُوْنَهُ) এর অর্থ নেওয়া হয়েছে (يَتَجَشَّمُوْنَهُ) অর্থাৎ, অতীব কষ্ট করে রোযা রাখে । (এটা ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী এই তরজমাকে পছন্দ করেছেন।) অর্থাৎ, যে ব্যক্তি বেশী বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ার কারণে অথবা আরোগ্য লাভের আশা নেই এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার কারণে রোযা রাখতে অত্যন্ত কষ্ট বোধ করে, সে এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এর অর্থ ‘রোযা রাখার সামর্থ্য রাখে’ করেছেন। আর এ অর্থে এর ব্যাখ্যা হল, ইসলামের প্রথম পর্যায়ে রোযা রাখার অভ্যাস না থাকার ফলে সামর্থ্যবানদেরকেও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যে, তারা রোযা রাখতে না পারলে এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরে {فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ} আয়াত অবতীর্ণ হলে আগের বিধান রহিত করে প্রত্যেক সামর্থ্যবানের উপর রোযা ফরয করা হয়। কেবল বৃদ্ধ ও চিররোগা ব্যক্তির জন্য এই বিধান অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তারা রোযার পরিবর্তে খাদ্য দান করবে। গর্ভিণী এবং দুগ্ধদাত্রী মহিলাদের রোযা রাখা কষ্টকর হলে, তারাও রোগীর বিধানের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ, তারা রোযা না রেখে পরে তার কাযা করবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী)
[3] যে সানন্দে একজন মিসকীনের স্থানে দুই বা তিনজন মিসকীনকে খাদ্য দান করে, তার জন্য এটা খুবই ভাল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান