আমি তাদের কিছু শ্রেণীকে যে ভোগ-উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি দু’চোখ প্রসারিত করো না। আর তাদের জন্য দুঃখিত হয়ো না এবং মুমিনদের জন্য তোমার বাহু অবনত কর। আল-বায়ান
তুমি দুনিয়ার দ্রব্য সামগ্রীর প্রতি চোখ তুলে তাকিও না যা আমি তাদের বিভিন্ন লোকেদের দিয়েছি। (তারা ভুল চিন্তা ও ভুল কর্মের মাধ্যমে নিজেদের ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনছে, এমতাবস্থায়) তাদের জন্য তুমি দুঃখ করো না, আর মু’মিনদের জন্য তোমার (অনুকম্পার) ডানা মেলে দাও। তাইসিরুল
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করনা; তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে সেই জন্য তুমি ক্ষোভ করনা; তুমি মু’মিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত কর। মুজিবুর রহমান
Do not extend your eyes toward that by which We have given enjoyment to [certain] categories of the disbelievers, and do not grieve over them. And lower your wing to the believers Sahih International
৮৮. আমরা তাদের বিভিন্ন শ্রেনীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি আপনি কখনো আপনার দুচোখ প্রসারিত করবেন না।(১) তাদের জন্য আপনি দুঃখ করবেন না।(২); আপনি মুমিনদের জন্য আপনার বাহু নত করুন,
(১) একথাটিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথীদেরকে সান্তনা দেবার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথীরা চরম দুরবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন। অন্যদিকে কুরাইশ সরদাররা পার্থিব অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে সবরকমের সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, আপনার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? আপনাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ। আপনাকে কুরআন প্রদান করে আমরা মানুষের হাতে যা আছে তা থেকে অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছি।
(২) এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাফেরদের অবাধ্যতায় হতাশ ও পেরেশান না হতে বলা হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদেরকে দাওয়াত দিয়েই যাচ্ছিলেন কিন্তু তারা নিজেদের সম্পদ ও প্রতিপত্তিতে এতই মগ্ন ছিল যে, হকের বাণী তাদের কানে প্রবেশ করতো না। তারা ঈমান আনছিল না। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারপরনাই পেরেশান হয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীকে সান্তনা দিচ্ছেন যে, আপনার এত পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আপনি সাথে নিয়ে এগিয়ে চলুন এবং বলুন যে, আমি তো প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শনকারী মাত্র। হেদায়েতের চাবিকাঠি তো আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে চান হেদায়াত দান করবেন।
পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ্ তা'আলা তার নবীকে উম্মতের হেদায়াতের জন্য ঐকান্তিক আগ্রহের কারণে নিজেকে আফসোস করে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন। [দেখুন, সূরা আল-কাহফঃ ৬, সূরা আশ-শু'আরাঃ ৩, সূরা ফাতিরঃ ৮, সূরা আন-নাহলঃ ১২৭, সূরা আল-মায়িদাহঃ ৬৮] তারপরও তারা যে নিজেদের কল্যাণকামীকে নিজেদের শক্ৰ মনে করছে, নিজেদের ভ্রষ্টতা ও নৈতিক ক্রটিগুলোকে নিজেদের গুণাবলী মনে করছে, নিজেরা এমন পথে এগিয়ে চলছে এবং নিজেদের সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যার নিশ্চিত পরিণাম ধ্বংস এবং যে ব্যক্তি তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথ দেখাচ্ছে তার সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম চালাচ্ছে, তাদের এ অবস্থা দেখে মনঃক্ষুন্ন হবেন না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৮) আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য তুমি ক্ষোভ করো না। আর বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।[1]
[1] অর্থাৎ, আমি তোমাকে মহা কুরআন সূরা ফাতিহার মত নিয়ামত দান করেছি, সেই কারণে পৃথিবী ও তার ভোগ-বিলাসের শোভা-সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন শ্রেণীর দুনিয়াদারদের প্রতি তুমি দৃকপাত করবে না, আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের বিলাস-উপকরণ। আর যারা তোমাকে মিথ্যা ভাবছে তাদের ব্যাপারে দুঃখ করো না। মু’মিনদের জন্য তোমার বাহুকে অবনমিত রাখো। অর্থাৎ তাদের জন্য নমনীয়তা ও ভালবাসা প্রকাশ করো। (বাহু অবনমিত রাখা) এই পরিভাষার মূল হল, পাখি যখন তার বাচ্চাদেরকে স্নেহ-ছায়ায় স্থান দিতে চায়, তখন সে তাদেরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেয়। সেই জন্য এই পরিভাষা স্নেহ-ভালবাসা ও মায়া-মমতা প্রকাশের অর্থে প্রয়োগ হয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান