নিশ্চয় সে তোমাদেরকে আদেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলতে, যা তোমরা জান না। আল-বায়ান
সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না। তাইসিরুল
সে এতদ্ব্যতীত তোমাদেরকে আদেশ করে শাইতানী ও অশ্লীল কাজ করতে এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জাননা তা বলতে। মুজিবুর রহমান
He only orders you to evil and immorality and to say about Allah what you do not know. Sahih International
১৬৯. সে তো শুধু তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়(১) মন্দ ও অশ্লীল(২) কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলার যা তোমরা জান না(৩)।
(১) এখানে শয়তানের নির্দেশদান অর্থ হচ্ছে মনের মাঝে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহের উদ্ভব করা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের অন্তরে একাধারে শয়তানী প্রভাব এবং ফেরেশতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৩/৫৪৩] শয়তানী ওয়াসওয়াসার প্রভাবে অসৎ কাজের কল্যাণ এবং উপকারিতাগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং তাতে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পথগুলো উন্মুক্ত হয়। পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের ইলহামের প্রভাবে সৎ ও নেক কাজের জন্য আল্লাহ্ তাআলা যে কল্যাণ ও পুরস্কার দানের ওয়াদা করেছেন, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সত্য ও সঠিক পথে চলতে গিয়ে অন্তরে শান্তি লাভ হয়। [দেখুন, সহীহ ইবন হিব্বান: ৯৯৭]
(২) سُوْءٌ বলা হয় এমন বস্তু বা বিষয়কে যা দেখে রুচিজ্ঞানসম্পন্ন যে কোন বুদ্ধিমান লোক দুঃখবোধ করে। فَحْشَاءٌ অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ। আবার অনেকে বলেন যে, এ ক্ষেত্রে سُوْءٌ এবং فَحْشَاءٌ এর মর্ম যথাক্রমে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পাপ। অর্থাৎ সাধারণ গোনাহ এবং কবীরা গোনাহ।
(৩) না জেনে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন সম্পর্কে কথা বলা বড় গোনাহ। এ আয়াতে এবং পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন সম্পর্কে না জেনে কথা বলাকে বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। [যেমন, সূরা আল-বাকারাহ: ৮০, সূরা আল আরাফ: ২৮, ৩৩, সূরা ইউনুস: ৬৮] তবে এ আয়াতে না জেনে কোন কথা বলতে শয়তান মানুষকে নির্দেশ দেয় সেটা ব্যাখ্যা করে বলা হয় নি। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র সেটার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও সস্তুষ্টি বিধানের জন্য জন্তু-জানোয়ারকে ছেড়ে দেয়া, হালালকে হারাম করা ও হারামকে হালাল করা, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা, আল্লাহর জন্য এমন গুণাবলী সাব্যস্ত করা যা থেকে তিনি পবিত্র। যেমন আল্লাহ বলেন, “বাহীরাহ, সায়েবাহ, ওছলাহ ও হামী আল্লাহ প্রবর্তণ করেননি; কিন্তু কাফেররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করে না।” [সূরা আল-মায়েদাহঃ ১০৩]
“তারা জিনকে আল্লাহর শরীক করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র---মহিমান্বিত এবং ওরা যা বলে তিনি তার উর্ধ্বে।” [সূরা আল-আনআমঃ ১০০] “যারা নির্বুদ্ধিতার জন্য ও অজ্ঞানতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” [সূরা আল-আনআমঃ ১৪০] “বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ।” [সূরা ইউনুস: ৫৯]
“তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। তিনি মহান পবিত্র তিনি অভাবমুক্ত! যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে তা তারই। এ বিষয়ে তোমাদের কাছে কোন সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহর উপর এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?” [সূরা ইউনুস: ৬৮] “তোমাদের জিহবা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্য তোমরা বলো না, এটা হালাল এবং ওটা হারাম৷ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না।” [সূরা আন-নাহ্ল: ১১৬] “আর তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করেনি। অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তার হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাজ করা অবস্থায় তার ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।” [সূরা আয-যুমার: ৬৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬৯) সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কার্যের নির্দেশ দেয় এবং সে চায় যে, আল্লাহ সম্বন্ধে যা জান না, তোমরা তা বল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান