এমনিভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির নিকট, যার পূর্বে অনেক জাতি গত হয়েছে, যেন আমি তোমার প্রতি যে ওহী প্রেরণ করেছি, তা তাদের নিকট তিলাওয়াত কর। অথচ তারা রহমানকে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনি আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই দিকে আমার প্রত্যাবর্তন’। আল-বায়ান
(পূর্বে যেমন পাঠিয়েছিলাম) এভাবেই আমি তোমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছি যার পূর্বে অনেক সম্প্রদায় গত হয়ে গেছে, যাতে তুমি তাদের কাছে তেলাওয়াত কর যা আমি তোমার প্রতি ওয়াহী করি, তবুও তারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনি আমার প্রতিপালক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি আর তিনিই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ তাইসিরুল
এভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এক জাতির প্রতি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে, তাদের নিকট আবৃত্তি করার জন্য, যা আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি; তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে। তুমি বলঃ তিনিই আমার রাব্ব! তিনি ছাড়া অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে। মুজিবুর রহমান
Thus have We sent you to a community before which [other] communities have passed on so you might recite to them that which We revealed to you, while they disbelieve in the Most Merciful. Say, "He is my Lord; there is no deity except Him. Upon Him I rely, and to Him is my return." Sahih International
৩০. এভাবে আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি যাদের আগে বহু জাতি গত হয়েছে, যাতে আমরা আপনার প্রতি যা ওহী করেছি, তা তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন। তথাপি তারা রহমানকে অস্বীকার করে।(১) বলুন, তিনিই আমার রব; তিনি ছাড়া অন্য কোন হক্ক ইলাহ নেই। তারই উপর আমি নির্ভর করি এবং তারই কাছে আমার ফিরে যাওয়া।
(১) অর্থাৎ তাঁর বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে। তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছে। তাঁর দানের জন্য অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তারা নতুন কিছু করছে না, তাদের পূর্বেও আমরা অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি। তারা যেভাবে দয়াময় প্রভুকে ভুলে শাস্তির অধিকারী হয়েছে তেমনিভাবে আপনার জাতির কাফেররাও রহমান তথা দয়াময় প্রভুকে অস্বীকার করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের শাস্তি অনিবার্য। [এ সংক্রান্ত আরো আয়াত দেখুন, সূরা আন-নাহলঃ ৬৩, সূরা আল-আনআমঃ ৩৪]
আয়াতে বলা হয়েছে, যে তারা “রাহমান”কে অস্বীকার করছে। এখানে মূলতঃ তারা আল্লাহ তা'আলাকে “রাহমান” বা অত্যন্ত দয়ালু এ গুণে গুণান্বিত করতে অস্বীকার করছিল। এটা ছিল আল্লাহর নাম ও গুণের সাথে শির্ক করা। কুরআনের অন্যত্র স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তারা এ নামটি অস্বীকার করত। যেমন, “যখনই তাদেরকে বলা হয়, সিজদাবনত হও রহমান এর প্রতি, তখন তারা বলে, রহমান আবার কে? তুমি কাউকেও সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ৬০] হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়ও কাফেররা আল্লাহর এ গুণটি লিখা নিয়ে আপত্তি করেছিল এবং বলেছিলঃ আমরা রহমানকে চিনি না। [বুখারীঃ ২৭৩১-২৭৩২]
অথচ এ নামটি এমন এক নাম যে নাম একমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবহার হতে পারে। আর কাউকে কোনভাবেই রহমান নাম বা গুণ হিসেবে ডাকা যাবে না। আর এজন্যই আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তারা যদিও গোয়ার্তুমি করে এ নামটি অস্বীকার করছে আপনি তাদেরকে এ নামটি যে আমার তা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তুলে ধরুন এবং বলুনঃ তিনিই আমার রব; তিনি ছাড়া অন্য কোন হক্ক ইলাহ নেই। তারই উপর আমি নির্ভর করি এবং তারই কাছে আমার ফিরে যাওয়া। তোমাদের অস্বীকার তার এ নামকে তার জন্য সাব্যস্ত করতে কোন ভাবেই ব্যাহত করতে পারবে না।
অন্যত্র বলা হয়েছে, “বলুন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক বা রাহমান নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। তোমরা সালাতে স্বর উচ্চ করো না এবং খুব ক্ষীণও করো না; দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করো। [সূরা আল-ইসরাঃ ১১০] আল্লাহ আরো বলেনঃ বলুন, তিনিই দয়াময়, আমরা তার প্রতি বিশ্বাস করি ও তারই উপর নির্ভর করি। [সূরা আল-মুলকঃ ২৯] আর এ নামটি সবচেয়ে বেশী মহিমান্বিত নাম হওয়াতে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে 'আবদুল্লাহ ও আব্দুররাহমান।” [মুসলিমঃ ২১৩২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) এইভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে;[1] যাতে আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তাদের নিকট তা আবৃত্তি কর। তারা পরম দয়াময়কে অস্বীকার করে।[2] তুমি বল, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই।[3] তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।’
[1] যেমন আমি তোমাকে আমার বার্তা পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করেছি, অনুরূপ তোমার পূর্ববর্তী উম্মতদের মাঝেও রসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদেরকেও তেমনই মিথ্যাজ্ঞান করা হয়েছিল যেমন তোমাকে করা হয়েছে এবং যেমন উক্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে আযাবগ্রস্ত হয়েছিল, এদেরও সেই পরিণাম থেকে নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়।
[2] মক্কার মুশরিকরা ‘রাহমান’ শব্দে চরম চকিত হত। হুদাইবিয়া সন্ধির সময় যখন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এর শব্দাবলী লেখা হয়েছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘রাহমান রাহীম’ কি আমরা জানি না। (ইবনে কাসীর)
[3] অর্থাৎ, ‘রাহমান’ আমার সেই প্রতিপালক, যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান