আর বাদশাহ বলল, ‘তোমরা তাকে আমার কাছে নিয়ে আস’। অতঃপর যখন দূত তার কাছে আসল তখন, সে বলল, তুমি তোমার মনিবের নিকট ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা কর, যে সব মহিলা নিজ নিজ হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কী? নিশ্চয় আমার রব তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত’। আল-বায়ান
রাজা বলল, ‘তোমরা তাকে (ইউসুফকে) আমার কাছে নিয়ে এসো।’ দূত যখন তার কাছে আসলো তখন ইউসুফ বলল, ‘তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, সেই মহিলাদের ব্যাপারটি কী যারা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল? আমার প্রতিপালক অবশ্যই তাদের কৌশল সম্পর্কে অবগত।’ তাইসিরুল
বাদশাহ বললঃ তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন সে বললঃ তুমি তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করঃ যে নারীরা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি? আমার রাব্ব তাদের ছলনা সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান
And the king said, "Bring him to me." But when the messenger came to him, [Joseph] said, "Return to your master and ask him what is the case of the women who cut their hands. Indeed, my Lord is Knowing of their plan." Sahih International
৫০. আর রাজা বলল, তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে আস(১)। অতঃপর যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মনিবের কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, যে নারীরা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! নিশ্চয় আমার রব তাদের ছলনা সম্পর্কে সম্যক অবগত।(২)
(১) ঘটনার গতিধারা দেখে বোঝা যায় যে, এ ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে এসেছে এবং বাদশাহকে তা অবহিত করেছে। [কুরতুবী] বাদশাহ বৃত্তান্ত নিশ্চিন্ত ও ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গুণ-গরিমায় মুগ্ধ হয়েছেন। [ইবন কাসীর] কিন্তু কুরআনুল কারীম এসব বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার মনে করেনি। কারণ, এগুলো আপনা থেকেই বোঝা যায়। পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ (وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ) অর্থাৎ বাদশাহ আদেশ দিলেন যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে আসো। অতঃপর বাদশাহর জনৈক দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌছল। [ইবন কাসীর]
(২) ইউসুফ আলাইহিস সালাম দীর্ঘ বন্দীজীবনের দুঃসহ যাতনায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং মনে মনে মুক্তি কামনা করছিলেন। কাজেই বাদশাহর প্রেরিত বার্তাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত হয়ে বের হয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাজের প্রশংসা করে বলেনঃ যদি ইউসুফের মত আমি এত বছর জেল খাটতাম, তারপর আমার কাছে বের হওয়ার আহবান আসত তাহলে আমি সে ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতাম। [বুখারীঃ ৬৯৯২, মুসলিমঃ ১৫১] এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলতঃ নিজেকে নম্রভাবে পেশ করে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এর চেয়ে বেশী কষ্টের শি'আবে আবী তালেবে কাটিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও আপোষ করেননি।
আল্লাহ তা'আলা নবীগণকে যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, তা অন্যের পক্ষে অনুধাবন করাও সম্ভব নয়। ইউসুফ আলাইহিস সালাম দূতকে উত্তর দিলেন, তুমি বাদশাহর কাছে ফিরে গিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস কর যে, আপনার মতে ঐ মহিলাদের ব্যাপারটি কিরূপ, যারা হাত কেটে ফেলেছিল? বাদশাহ এ ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করেন কি না এবং আমাকে দোষী মনে করেন কি না? এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম এখানে হস্তকৰ্তনকারিণী মহিলাদের কথা উল্লেখ করেছেন, আযীয-পত্নীর নাম উল্লেখ করেননি; অথচ সে-ই ছিল ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বলাবাহুল্য, এতে ঐ নিমকের কদর করা হয়েছে, যা ইউসুফ আলাইহিস সালাম আযীযের গৃহে লালিত-পালিত হয়ে খেয়েছিলেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) রাজা বলল, ‘তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এস।’[1] সুতরাং যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল, তখন সে বলল, ‘তুমি তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর, যে মহিলারা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল, তাদের অবস্থা কি?[2] আমার প্রতিপালক তাদের ছলনা সম্বন্ধে সম্যক অবগত।’
[1] উদ্দেশ্য এই যে, যখন সেই ব্যক্তি ব্যাখ্যা নিয়ে বাদশার নিকট গেল ও ব্যাখ্যা বর্ণনা করল, তখন সেই ব্যাখ্যা ও ইউসুফ (আঃ)-এর বলা তদবীর শ্রবণ করে বাদশাহ বড় প্রভাবিত হলেন এবং তিনি অনুমান করলেন যে, এই ব্যক্তি, যাঁকে বেশ কিছুদিন থেকে জেলে রাখা হয়েছে, তিনি অসাধারণ জ্ঞান, মর্যাদা ও উচ্চ যোগ্যতার অধিকারী। সুতরাং বাদশাহ তাঁকে দরবারে উপস্থিত করার জন্য আদেশ দিলেন।
[2] ইউসুফ (আঃ) যখন দেখলেন যে, এখন বাদশাহ সম্মান দিতে প্রস্তুত, তখন তিনি এইভাবে শুধু অনুগ্রহের পাত্র হয়ে জেল থেকে বের হওয়া পছন্দ করলেন না। বরং আপন চরিত্রকে উচ্চ এবং নিজের পবিত্রতাকে সাব্যস্ত করাকে প্রাধান্য দিলেন, যাতে পৃথিবীর সামনে তাঁর নির্মল চরিত্র ও সুউচ্চ মর্যাদা পরিষ্ফুটিত হয়ে যায়। কারণ একজন (দায়ী) আল্লাহর পথে আহবানকারীর জন্য এই পবিত্রতা ও মহান চরিত্র খুবই জরুরী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান