তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, তুমি যা বল, তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না। আর তোমাকে তো আমরা আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখতে পাচ্ছি। যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন না থাকত, তবে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করতাম। আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও’। আল-বায়ান
তারা বলল, ‘হে শু‘আয়ব! তুমি যা বল তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না, আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে অবশ্যই দুর্বল দেখছি, তোমার গোত্র না থাকলে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর নিক্ষেপ ক’রে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতাই নেই। তাইসিরুল
তারা বললঃ হে শু‘আইব! তোমার বর্ণিত অনেক কথা আমাদের বুঝে আসেনা এবং আমরা নিজেদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল দেখছি, আর যদি তোমার প্রতি তোমার স্বজনবর্গের লক্ষ্য না থাকতো তাহলে আমরা তোমাকে প্রস্তরাঘাতে চূর্ণ করে ফেলতাম, আর আমাদের নিকট তোমার কোনই মর্যাদা নেই। মুজিবুর রহমান
They said, "O Shu'ayb, we do not understand much of what you say, and indeed, we consider you among us as weak. And if not for your family, we would have stoned you [to death]; and you are not to us one respected." Sahih International
৯১. তারা বলল, হে শু’আইব! তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না(১) এবং আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতাম, আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও।(২)
(১) শু'আইব কোন বিদেশী ভাষায় কথা বলছিলেন তাই তারা বুঝতে পারছিল না, এমন কোন ব্যাপার ছিল না। অথবা তাঁর কথা কঠিন, সূক্ষ্ম বা জটিলও ছিল না। কথা সবই সোজা ও পরিষ্কার ছিল। সেখানকার প্রচলিত ভাষায়ই কথা বলা হতো। তাহলে তারা কেন বুঝলো না? এর দুটি কারণ হতে পারে। এক. তাদের মানসিক কাঠামো এত বেশী বেঁকে গিয়েছিল যে, শু'আইব আলাইহিস সালামের সোজা সরল কথাবার্তা তার মধ্যে কোন প্রকারেই প্রবেশ করতে পারতো না। তাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্নতর কিছু শোনার কারণে তারা বলতে থাকে যে, এসব আবার কেমন ধারার কথা! তারা বলল যে, আমরা বুঝিনা। তারা এটা অপমানসূচক তাদের নবীকে বলেছিল। দুই. অথবা তারা সত্যি সত্যিই বুঝতে চেষ্টা করছিল না। তাদের বক্তব্য হলো, আপনি আমাদেরকে পুনরুত্থান, ও হাশর-নশরের মত গায়েবী বিষয় বলছেন, এমন কিছুর উপদেশ দিচ্ছেন যা আগে আমরা বুঝিনি। [কুরতুবী]
(২) একথা অবশ্য সামনে থাকা দরকার যে, এ আয়াতগুলো যখন নাযিল হয় তখন হুবহু একই রকম অবস্থা মক্কাতেও বিরাজ করছিল। সে সময় কুরাইশরাও একই ভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছিল। তারা তাঁর জীবননাশ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু শুধু বনী হাশেম তাঁর পেছনে ছিল বলেই তাঁর গায়ে হাত দিতে ভয় পাচ্ছিল। কাজেই শু'আইব আলাইহিস সালাম ও তার কওমের এ ঘটনাকে যথাযথভাবে কুরাইশ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে দিয়ে বর্ণনা করা হচ্ছে এবং সামনের দিকে শু'আইব আলাইহিস সালামের যে চরম শিক্ষণীয় জবাব উদ্ধৃত করা হয়েছে তার মধ্যে এ অর্থ লুকিয়ে রয়েছে যে, হে কুরাইশের লোকেরা! তোমাদের জন্যও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে এ একই জবাব দেয়া হলো।
তাফসীরে জাকারিয়া(৯১) তারা বলল, ‘হে শুআইব! তুমি যা বল, তার অনেক কথা আমাদের বুঝে আসে না[1] এবং আমরা অবশ্যই নিজেদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল দেখছি।[2] তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতাম।[3] আর তুমি আমাদের উপর পরাক্রমশালীও নও।’ [4]
[1] এই কথা তারা হয় ঠাট্টা-বিদ্রূপ স্বরূপ বলেছিল। কারণ প্রকৃতপক্ষে তাঁর কথা যে তারা বুঝতো না -তা নয়। সুতরাং এই অবস্থাতে এখানে বুঝতে না পারার কথা রূপকার্থে হবে। অথবা তাদের উদ্দেশ্য গায়েব সম্পর্কিত কথা বুঝতে না পারার ওজর প্রকাশ করা। যেমন মরণের পর পুনর্জীবন, হাশর, জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি। এই হিসাবে বুঝতে না পারার কথা প্রকৃতার্থে ধরা হবে।
[2] এ দুর্বলতা শারীরিক দুর্বলতা ছিল, যেমন অনেকের মতে শুআইব (আঃ) চোখে কম দেখতেন অথবা তিনি শারীরিক দিক থেকে শীর্ণকায় ও পাতলা ছিলেন অথবা এই জন্য তাঁকে দুর্বল বলেছে যে, তিনি নিজে একা বিরোধীদের সাথে মুকাবিলা করার ক্ষমতা রাখতেন না।
[3] বলা হয় যে, শুআইব (আঃ)-এর স্বগোত্র থেকে তাঁর কোন সমর্থক ছিল না, কিন্তু সে গোত্র যেহেতু কুফর ও শিরকের দিক থেকে তাঁর জাতির সাথে ছিল, ফলে একই ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে সেই গোত্রের খেয়াল শুআ’ইব (আঃ)-এর সাথে কঠিন দুর্ব্যবহার করা এবং তাঁর ক্ষতি সাধন করাতে বাধা হয়ে ছিল।
[4] যেহেতু তোমার গোত্রের মর্যাদা আমাদের অন্তরে আছে, সেহেতু আমরা ক্ষমার চোখে দেখছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান