তারা বলল, ‘হে লূত, আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা, তারা কখনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে রাতের কোন এক অংশে রওয়ানা হও, আর তোমাদের কেউ পিছে তাকাবে না। তবে তোমার স্ত্রী (রওয়ানা হবে না), কেননা তাকে তা-ই আক্রান্ত করবে যা তাদেরকে আক্রান্ত করবে। নিশ্চয় তাদের (আযাবের) নির্ধারিত সময় হচ্ছে সকাল। সকাল কি নিকটে নয়’? আল-বায়ান
আগুন্তুকরা বলল, ‘হে লূত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত বার্তাবাহক, তারা তোমার কাছে কক্ষনো পৌঁছতে পারবে না, কাজেই কিছুটা রাত বাকী থাকতে তুমি তোমার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়, তোমাদের কেউ যেন পিছনের দিকে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী (তোমাদের সঙ্গী হতে পারবে না) তারও তাই ঘটবে, অন্যদের যা ঘটবে। সকাল হল তাদের (শাস্তি আসার) নির্ধারিত সময়, সকাল কি নিকটবর্তী নয়?’ তাইসিরুল
তারা (মালাইকা) বললঃ হে লূত! আমরাতো আপনার রবের প্রেরিত বার্তাবাহক, তারা কখনও আপনার নিকট পৌঁছতে পারবেনা, অতএব আপনি রাতের কোন এক ভাগে নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে চলে যান, আপনাদের কেহ যেন পিছনের দিকে ফিরেও না চায়; কিন্তু হ্যাঁ, আপনার স্ত্রী যাবেনা, তার উপরও ঐ আপদ আসবে যা অন্যান্যদের প্রতি আসবে, তাদের (শাস্তির) অঙ্গীকার কৃত সময় হচ্ছে প্রাতঃকাল, প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়? মুজিবুর রহমান
The angels said, "O Lot, indeed we are messengers of your Lord; [therefore], they will never reach you. So set out with your family during a portion of the night and let not any among you look back - except your wife; indeed, she will be struck by that which strikes them. Indeed, their appointment is [for] the morning. Is not the morning near?" Sahih International
৮১. তারা বলল, হে লুত! নিশ্চয় আমরা আপনার রব প্রেরিত ফিরিশতা। তারা কখনই আপনার কাছে পৌছতে পারবে না।(১) কাজেই আপনি রাতের কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড়ুন(২) এবং আপনাদের মধ্যে কেউ পিছন দিকে তাকাবে না, আপনার স্ত্রী ছাড়া।(৩) তাদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি খুব কাছাকাছি নয়?
(১) লুত আলাইহিস সালাম এক সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন হায়! আমি যদি তোমাদের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী হতাম, অথবা আমার আত্মীয় স্বজন যদি এখানে থাকত যারা এই যালেমদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করতো তাহলে কত ভালো হতো। ফেরেশতাগণ লুত আলাইহিস সালামের অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে প্রকৃত রহস্য ব্যক্ত করলেন এবং বললেনঃ আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার দলই সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। আমরা মানুষ নই বরং আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা। তারা আমাদেরকে কাবু করতে পারবে না বরং আযাব নাযিল করে দুরাত্মা দুরাচারদের নিপাত সাধনের জন্যই আমরা আগমন করেছি। তারপরও লুত আলাইহিস সালাম তাদের বাধা দিতে থাকলেন। কিন্তু তারা কোন বাঁধাই মানল না।
তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বের হয়ে তাদের মুখের উপর তার ডানা দিয়ে এক ঝাপটা মারলেন। আর তাতেই তারা অন্ধ হয়ে গেল। তারা যখন ফিরছিল তারা পথ দেখতে পাচ্ছিল না। [ইবন কাসীর] এ কথাই আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর অবশ্যই তারা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে অসদুদ্দেশ্যে দাবি করল, তখন আমরা তাদের দৃষ্টি শক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং ভীতির পরিণাম। [সূরা আল-কামারঃ ৩৭]
(২) তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে লুত আলাইহিস সালামকে বললেন- আপনি কিছুটা রাত থাকতে আপনার লোকজনসহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যান এবং সবাইকে সতর্ক করে দিন যে, তাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়, তবে আপনার স্ত্রী ব্যতীত। কারণ, অন্যদের উপর যে আযাব আপতিত হবে, তাকেও সে আযাব ভোগ করতে হবে।
(৩) এর এক অর্থ হতে পারে যে, আপনার স্ত্রীকে সাথে নেবেন না। এ হিসেবে তিনি তাকে সাথে নিয়ে বের হননি। [কুরতুবী] দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে যে, তাকে পিছনে ফিরে চাইতে নিষেধ করবেন না। [কুরতুবী] আরেক অর্থ হতে পারে যে, সে আপনার হুশিয়ারী মেনে চলবে না। সুতরাং সে তাদের সাথে বের হবার পর যখন একটি পাথর পতনের শব্দ শুনে লুতের হুশিয়ারী না মেনে পিছনের দিকে তাকায় এবং বলে উঠে, হায় আমার জাতি! সে তাদের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছিল। আর তখনি একটি পাথর এসে তাকে আঘাত করে এবং সে মারা যায়। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]। এটি এক মর্মম্ভদ শিক্ষণীয় ঘটনা। এ সূরায় লোকদেরকে একথা শিক্ষা দেবার জন্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, কোন বুযর্গের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং কোন বুযর্গের সুপারিশ তোমাদের নিজেদের গোনাহের পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৮১) তারা বলল, ‘হে লূত! আমরা তো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত (ফিরিশতা), ওরা কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না। অতএব তুমি রাত্রির কোন এক ভাগে নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে (অন্যত্র) চলে যাও। তোমাদের কেউ যেন পিছনের দিকে ফিরেও না দেখে, কিন্তু তোমার স্ত্রী নয়, তার উপরেও ঐ (আযাব) আসবে, যা অন্যান্যদের উপরে আসবে। তাদের (শাস্তির) নির্ধারিত সময় হল প্রভাতকাল; প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়?’ [1]
[1] ফিরিশতাগণ যখন লূত (আঃ)-এর অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা স্বচক্ষে দেখে নিলেন, তখন বললেন, ‘হে লূত (আঃ) আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমাদের নিকট তো দূরের কথা, এখন ওরা আপনার নিকটেও পৌঁঁছতে পারবে না। আপনি কিছুটা রাত থাকতে আপনার স্ত্রী ছাড়া বাকি লোকজনসহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যান! প্রত্যুষকালেই এই গ্রামকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান