‘আমরা তো কেবল বলছি যে, ‘আমাদের কোন কোন উপাস্য তোমাকে অমঙ্গল দ্বারা আক্রান্ত করেছে’। সে বলল, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি অবশ্যই তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, আল-বায়ান
আমরা এ কথাই বলি যে, তোমার উপর আমাদের কোন উপাস্যের অশুভ ছায়া পড়েছে।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরাও সাক্ষী হও যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাকে তাঁর শরীক কর তার সাথে আমি পুরোপুরি সম্পর্কহীন। তাইসিরুল
আমাদের কথা এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেহ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। সে বললঃ আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থেক যে, আমি তা থেকে মুক্ত, তোমরা যে ইবাদাতে শরীক সাব্যস্ত করছ, মুজিবুর রহমান
We only say that some of our gods have possessed you with evil." He said, "Indeed, I call Allah to witness, and witness [yourselves] that I am free from whatever you associate with Allah Sahih International
৫৪. আমরা তো এটাই বলি, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আবিষ্ট করেছে(১)। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর।(২),
(১) হুদ আলাইহিস সালামের আহবানের জবাবে তার দেশবাসী মুর্খতা সুলভ উত্তর দিল যে, আপনি তো আমাদেরকে কোন মু'জিযা দেখালেন না। শুধু মুখের কথায় আমরা নিজেদের বাপ দাদার আমলের উপাস্য দেব-দেবীগুলোকে বর্জন করবো না এবং আপনার প্রতি ঈমানও আনব না। বরং সন্দেহ করছি যে আমাদের দেবতাদের নিন্দাবাদ করার কারণে আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গেছে। তাই আপনি এমন অসংলগ্ন কথা বলেছেন। অর্থাৎ আপনি কোন দেবদেবী, বা কোন মহাপুরুষের আস্তানায় গিয়ে কিছু বেয়াদবী করেছেন, যার ফল এখন আপনি ভোগ করছেন। এতে বুঝা গেল যে, তারা এক ধরনের অজানা ভয় করছিল - যা এক ধরনের শির্ক। সুবহানাল্লাহ! কিভাবে তারা এতবড় একজন বিবেকবান মানুষকে বিবেকহীন বলে অপবাদ দিলো। যদি আল্লাহ বর্ণনা না করতেন তবে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের নিঃস্বার্থ ও ভালো লোকের ব্যাপারে এ কথা বলা অত্যন্ত বেমানান।
কিন্তু হুদ আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণভাবে নিজেকে এর থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করেছেন এভাবে যে, এ ব্যাপারে আমার ভরসা আছে যে আমাকে কোন কিছু পেয়ে বসে নি। আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি আর তোমরাও সাক্ষী থেকে যে, আমি তোমাদের শরীকদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত [সা’দী] বর্তমানে অনেক মানুষ তাদের পীর বা কবরের মানত বন্ধ করলে বা তাদের কবর পুজার বিরোধিতা করলে কোন কারণে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলে যে, অমুক লোককে অমুক পীরের বদদো'আয় ধরেছে। অমুক কবরের শাপে অমুক ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে শির্ক। এটাকেই বলা হয়, ভয়ের মাধ্যমে শির্ক করা। এ ধরনের অজানা ভয়ই বর্তমানে অধিকাংশ শির্কের কারণ।
(২) অর্থাৎ তাদের কথার উত্তরে হুদ আলাইহিস সালাম নবীসুলভ নির্ভীক কন্ঠে জবাব দিলেন, তোমরা যদি আমার কথা না মান তবে শোন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি আর তোমরাও সাক্ষী থাক যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সব অলীক উপাস্যদের প্রতি আমি রুষ্ট ও বিমুখ। এখন তোমরা ও তোমাদের দেবতারা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট সাধনের এবং আমার উপর আক্রমনের চেষ্টা করে দেখ আমাকে বিন্দুমাত্র অবকাশ দিও না। এত বড় কথা আমি এজন্য বলছি যে আমি আল্লাহর তা'আলার উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখি; যিনি আমার এবং তোমাদের একমাত্র পালনকর্তা। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা সরল পথে রয়েছেন। অথাৎ তিনি তাঁর যাবতীয় ফয়সালা, তাকদীর, তাঁর যাবতীয় শরীআত ও নির্দেশ, তাঁর সমস্ত প্রতিদান প্রদান, সওয়াব দান এবং শাস্তি প্রদানে ন্যায়, ইনসাফ, প্রজ্ঞা ও প্রশংসাপূর্ণ পথেই রয়েছেন। তার কোন কাজ তাকে প্রশংসাপূর্ণ সেই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে না। [সা’দী]
সমগ্র জাতির মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে এমন নির্ভীক ঘোষণা ও তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত ধর্মীয় ধ্যান ধারণায় আঘাত হানা সত্বেও এত বড় সাহসী ও শক্তিশালী জাতির মধ্যে কেউ তার একটি কেশও স্পর্শ করতে পারল না। আসলে এটা হুদ আলাইহিস সালামের একটি মু'জিযা। এর দ্বারা একে তো তাদের এ কথার জবাব দেয়া হয়েছে যে, আপনি কোন মু'জিযা প্রদর্শন করেননি। দ্বিতীয়তঃ তারা যে বলত তাদের কোন কোন দেব-দেবী আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিয়েছে তাও বাতিল করা হল। কারণ দেব-দেবীর যদি কোন ক্ষমতা থাকত তবে এত বড় কথা বলার পর ওরা তাকে জীবিত রাখত না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) আমাদের কথা তো এই যে, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে হতে কেউ তোমাকে মন্দ দ্বারা স্পর্শ করেছে।’[1] সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাক, তোমরা যে অংশী করছ নিশ্চিতভাবে আমি তা হতে মুক্ত। [2]
[1] অর্থাৎ, তুমি যে আমাদের উপাস্যদের অপমান ও তাদের সাথে বেআদবী করছ এই কথা বলে যে, এরা কোন কিছু করতে সক্ষম নয়, মনে হচ্ছে আমাদের উপাস্যরাই তোমার এই বেআদবীর কারণে তোমার কিছু করে দিয়েছে এবং তাতে তোমার মন-মস্তিষ্ক খারাপ হয়ে গেছে। যেমন বর্তমানে নামধারী কিছু মুসলিমও এরূপ চিন্তা-ভাবনার শিকার হয়ে আছে। যখন তাদের বলা হয় যে, এই সকল মৃতব্যক্তি ও বুযুর্গদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তখন তারা বলে যে, এটা তাঁদের শানে বেআদবী এবং বড় আশঙ্কা আছে যে, তাঁরা এরূপ বেআদবদেরকে বিপদগ্রস্ত করবেন! আল্লাহর কাছে এমন গাঁজারে গল্প ও মনগড়া মিথ্যা কথা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
[2] অর্থাৎ, আমি সেই সমস্ত মূর্তি ও উপাস্য থেকে সম্পর্কহীন। আর তোমাদের যে বিশ্বাস যে, তারা আমার কিছু ক্ষতি করে দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের এ ক্ষমতাই নেই যে, তারা কারোর উপকার করে অথবা অপকার।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান