আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। আল-বায়ান
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ করো না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। তাইসিরুল
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হও। তোমরা সাহস ও ক্ষমতাহারা হয়ে যাবে যদি নিজেদের মধ্যে বিবাদ কর। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। মুজিবুর রহমান
And obey Allah and His Messenger, and do not dispute and [thus] lose courage and [then] your strength would depart; and be patient. Indeed, Allah is with the patient. Sahih International
৪৬. আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর(১) এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না(২), করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।(৩) আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর(৪); নিশ্চয় আল্লাহু ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।(৫)
(১) এ আয়াতের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য কুরআনী হেদায়াতনামার তিনটি ধারা সাব্যস্ত হয়ে যায়। তা হল দৃঢ়চিত্ততা, আল্লাহর যিকর ও আনুগত্য।
(২) অর্থাৎ তোমরা পারস্পরিক বিবাদ-বিসংবাদে লিপ্ত হয়ো না। এটি চতুর্থ হিদায়াত। [আইসারুত তাফসীর]
(৩) এখানে আরও একটি হিদায়াত দেয়া হয়েছে। যাতে দূর্বল ও শক্তিহীন হওয়ার কারণ বলে দেয়া হয়েছে, যাতে তা থেকে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যায়। বলা হয়েছে, তোমরা যদি বিবাদে লিপ্ত হও তবে তোমাদের মাঝে সাহসহীনতা বিস্তার লাভ করবে এবং তোমাদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে, তোমরা হীনবল হয়ে পড়বে। [আইসারুত তাফসীর] এখানে আনুগত্য না করার ক্ষতিকর দিকগুলোর উপর আলোকপাত করে তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি পঞ্চম হিদায়াত।
(৪) বলা হয়েছে, আর ধৈর্য ধারণ কর। এটি ষষ্ঠ হিদায়াত। [আইসারুত তাফসীর] এটা যেমন বিবাদ-বিসংবাদ থেকে রক্ষা পাবার একান্ত কার্যকর ব্যবস্থা, তেমনি নিজেদের লোভ-লালসা ও আবেগ উচ্ছাসের ধারা সংযত রাখার উপায়। তাড়াহুড়া, ঘাবড়িয়ে যাওয়া, কাতর হয়ে পড়া, লোভ ও অবাঞ্ছনীয় উত্তেজনা পরিহার কর। বিপদ ও কঠিন অবস্থা সম্মুখে আসলেও যেন পদস্খলন না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকবে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মত মানসিকতা রাখতে হবে। মনকে এ ব্যাপারে তৈরী করে নিতে হবে।
(৫) এখানে সবর অবলম্বনের এক বিরাট উপকারিতার কথা বলে এর তিক্ততা দূর করে দিয়েছেন যে, (إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ) (যারা সবর তথা ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন) এটি এমন এক মহা সম্পদ যে, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সম্পদ এর মোকাবেলায় নগণ্য। যারা এ সমস্ত অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে পারবে আল্লাহর সহায়তা ও সাহায্য কেবল তারাই লাভ করবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহর কারো সাথে থাকার অর্থ এ নয় যে, তার সাথে লেগে থাকবে। বরং এর অর্থ দুটিঃ এক. সাহায্য ও সহযোগিতা দ্বারা সাথে থাকা। দুই. জ্ঞানের মাধ্যমে সাথে থাকা। কারণ, সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে। কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নেই। [সিফাতিল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ] এখানে সবরকারীদের সাথে থাকার অর্থ সাহায্য ও সহযোগিতায় তাদের সাথে থাকা। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর ও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি ও প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। [1]
[1] তৃতীয় আদব হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। এটা একেবারে স্পষ্ট কথা যে, এই শোচনীয় অবস্থায় আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অবাধ্যাচরণে বড় ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এহেন অবস্থায় বরং প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক। তথাপি যুদ্ধের ময়দানে তাঁদের আনুগত্য করা আরো অধিকরূপে আবশ্যক হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় সামান্য অবাধ্যাচরণও আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চতুর্থ আদব হল, কোন বিষয় নিয়ে আপোসে ঝগড়া-বিবাদ ও মতবিরোধ করবে না। কারণ এরূপ করলে তোমরা হীনবল হয়ে পড়বে। আর তোমাদের শক্তি চূর্ণ হয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। পঞ্চম আদব হল যে, ধৈর্যধারণ করবে। অর্থাৎ, যত বড়ই বিপদ বা কঠিন কষ্টের সম্মুখীন হও না কেন, ধৈর্যচ্যুত হবে না। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! শত্রুদের সাথে মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না, বরং তা হতে আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাও। পরন্তু যদি শত্রুদের সাথে লড়াই শুরু হয়েই যায়, তাহলে সবর কর (অর্থাৎ, বিচলিত না হয়ে লড়াই কর)। আর জেনে রাখ, জান্নাত তরবারির ছায়ার নিচেই আছে।’’ (সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান