আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর ও শিরক) খতম হয়ে যায় আর দ্বীন পুরোপুরিভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে তারা (ন্যায় বা অন্যায়) যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। তাইসিরুল
তোমরা সদা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। আর তারা যদি ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হতে বিরত থাকে তাহলে তারা কি করেছে তা আল্লাহই দেখবেন। মুজিবুর রহমান
And fight them until there is no fitnah and [until] the religion, all of it, is for Allah. And if they cease - then indeed, Allah is Seeing of what they do. Sahih International
৩৯. আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দূর হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়(১) তারপর যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।
(১) এ আয়াতে বর্ণিত ফেৎনা ও দ্বীন শব্দ দুটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যবহার অনুযায়ী আয়াতে শব্দ দুটির একাধিক অর্থ করা হয়ে থাকেঃ
এক. ফেৎনা অর্থ কুফর ও শির্ক আর দ্বীন অর্থ ইসলাম। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও এই বিশ্লেষণই বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এই তাফসীর অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবে, মুসলিমদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে হবে যতক্ষণ না শির্ক ও কুফর নিঃশেষিত হয়ে যায়। [তাবারী; ইবন কাসীর] এক্ষেত্রে এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হবে কিয়ামত পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জিহাদ চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ না দুনিয়া থেকে শির্ক ও কুফর নিঃশেষিত না হবে বা শির্কের প্রভাব কমে না যাবে।
দুই. যা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত হয়েছে, তা হচ্ছে, ফেৎনা হচ্ছে দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদের ধারা, পক্ষান্তরে দ্বীন’ শব্দের অর্থ প্রভাব ও বিজয়। মক্কার কাফেররা সদাসর্বদা মুসলিমদের উপর এ ফেৎনা অব্যাহত রেখেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মক্কায় অবস্থান করছিলেন। প্রতি মুহুর্তে তাদের অবরোধে আবদ্ধ থেকে নানা রকম কষ্ট সহ্য করে গেছেন। তারপর যখন তারা মদীনায় হিজরত করেন, তারপরও গোটা মদীনা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের হিংসা-রোষই প্রকাশ পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রে আয়াতের ব্যাখ্যা হবে যে, মুসলিমগণকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকা কর্তব্য, যতক্ষণ না তারা অন্যায়-অত্যাচার-উৎপীড়ন থেকে মুক্তি লাভ করতে সমর্থ হন, মুসলিম আপন দ্বীন পালন করতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয় [ইবন কাসীর]
তিন. আয়াতের তৃতীয় আরেকটি অর্থ হচ্ছে, এখানে জিহাদ করার আসল উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যের নেতিবাচক দিক হচ্ছে ফেৎনা না থাকা আর ইতিবাচক দিক হচ্ছে দ্বীন সম্পূর্ণরূপে কেবল আল্লাহর জন্য হবে। কেবলমাত্র এ সর্বাত্মক উদ্দেশ্যের জন্য লড়াই করাই মুসলিমদের জন্য জায়েয বরং ফরয। তা ব্যতীত অপর কোন উদ্দেশ্যে লড়াই করা মোটেই জায়েয নহে। তাতে অংশগ্রহণও ঈমানদার লোকদের শোভা পায় না। এ মতের সমর্থন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীসে পাই, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ হে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কি? আমাদের কেউ কেউ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ করে, আবার কেউ নিজস্ব অহমিকা (চাই তা গোত্রীয় বা জাতিগত যাই হোক তা) ঠিক রাখার জন্য যুদ্ধ করে। তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীর প্রতি মাথা উঠিয়ে বললেনঃ যে আল্লাহর কালেমা (তাওহীদ/দ্বীন/কুরআন) কে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে সে মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল। [বুখারীঃ ১২৩]
কোন কোন মুফাসসির এখানে উপরোক্ত তিনটি অর্থই গ্রহণ করেছেন। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক; যতক্ষণ না ফিতনা (শিরক) দূর হয়[1] এবং আল্লাহর ধর্ম সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[2] অতঃপর তারা যদি বিরত হয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কার্যাবলীর সম্যক দ্রষ্টা।[3]
[1] ‘ফিতনা’ শিরককে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, ঐ সময় পর্যন্ত জিহাদ চালু রাখো, যতক্ষণ শিরক নিঃশেষ না হয়ে যায়।
[2] অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ববাদের পতাকা সারা পৃথিবী ব্যাপী উড্ডীন হয়।
[3] অর্থাৎ, তাদের বাহ্যিক ইসলাম গ্রহণই তোমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তাদের গোপন ব্যাপার আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও। তিনি প্রকাশ্য-গোপন সবই জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান