আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বুঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল। আল-বায়ান
আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর। তাইসিরুল
আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্বারা উপলব্ধি করেনা; তাদের চক্ষু রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্বারা দেখেনা। তাদের কর্ণ রয়েছে, কিন্তু তদ্বারা তারা শোনেনা। তারাই হল পশুর ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত। তারাই হল গাফিল বা উদাসীন। মুজিবুর রহমান
And We have certainly created for Hell many of the jinn and mankind. They have hearts with which they do not understand, they have eyes with which they do not see, and they have ears with which they do not hear. Those are like livestock; rather, they are more astray. It is they who are the heedless. Sahih International
১৭৯. আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি(১); তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী বিভ্রান্ত। তারাই হচ্ছে গাফেল।(২)
(১) এর অর্থ এটা নয় যে, আমি বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম এবং তাদেরকে সৃষ্টি করার সময় এ সংকল্প করেছিলাম যে, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করবো। বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বেকুফরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাদের আমলই তাদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করেছে। তাদের জাহান্নাম দেয়া আল্লাহর ইনসাফের চাহিদা। সে হিসেবে তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন যে, তারা জাহান্নামে যাবে, সুতরাং তাদেরকে যেন তিনি জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। [ফাতহুল কাদীর]
(২) আয়াতে বলা হয়েছেঃ এরা কিছুই বোঝে না, কোন কিছু দেখেও না এবং শুনেও না। অথচ বাস্তবে এরা পাগল বা উম্মাদ নয় যে, কিছুই বুঝতে পারে না। অন্ধও নয় যে, কোন কিছু দেখবে না, কিংবা বধিরও নয় যে, কোন কিছু শুনবে না। বরং প্রকৃতপক্ষে এরা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের যা বুঝা বা উপলব্ধি করা উচিত ছিল তারা তা করেনি, যা দেখা উচিত ছিল তা তারা দেখেনি, যা কিছু তাদের শুনা উচিত ছিল তা তারা শুনেনি। আর যা কিছু বুঝেছে, দেখেছে এবং শুনেছে, তা সবই ছিল সাধারণ জীবজন্তুর পর্যায়ের বুঝা, দেখা ও শুনা, যাতে গাধা-ঘোড়া, গরু-ছাগল সবই সমান।
এ জন্যই উল্লেখিত আয়াতের শেষাংশে এসব লোক সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “এরা চতুস্পদ জীব-জানোয়ারের মত।” শুধুমাত্র শরীরের বর্তমান কাঠামোর সেবায় নিয়োজিত। খাদ্য আর পেটই হলো তাদের চিন্তার সর্বোচ্চ স্তর। অতঃপর বলা হয়েছেঃ “এরা চতুস্পদ জীব-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট” তার কারণ চতুস্পদ জীব-জানোয়ার শরীআতের বিধি-নিষেধের আওতাভুক্ত নয়- তাদের জন্য কোন সাজা-শাস্তি কিংবা দান-প্রতিদান নেই। তাদের লক্ষ্য যদি শুধুমাত্র জীবন ও শরীর-কাঠামোতে সীমিত থাকে তবেই যথেষ্ট। কিন্তু মানুষকে যে স্বীয় কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। সেজন্য তাদের সুফল কিংবা শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাজেই এসব বিষয়কেই নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলে সাব্যস্ত করে বসা জীবজন্তুর চেয়েও অধিক নির্বুদ্ধিতা। তাছাড়া জীব-জানোয়ার নিজের প্রভূ ও মালিকের সেবা যথার্থই সম্পাদন করে। পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞ না-ফরমান মানুষ স্বীয় মালিক, পালনকর্তার আনুগত্যে ক্রটি করতে থাকে। সে কারণে তারা চতুস্পদ জানোয়ার অপেক্ষা বেশী নির্বোধ ও গাফেল। কাজেই বলা হয়েছে “এরাই হলো প্রকৃত গাফেল।” [দেখুন, তাবারী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭৯) আর আমি তো বহু জ্বিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি;[1] তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দর্শন করে না এবং তাদের কর্ণ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবণ করে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত![2] তারাই হল উদাসীন।
[1] এর সম্পর্ক তকদীরের সাথে। অর্থাৎ, প্রত্যেক মানুষ ও জ্বিনের ব্যাপারে আল্লাহর জানা ছিল যে, পৃথিবীতে গিয়ে তারা ভাল করবে না মন্দ করবে, সেই মত তিনি লিখে দিয়েছেন। এখানে ঐ সকল দোযখবাসীদের কথা উল্লিখিত হয়েছে, যারা আল্লাহর পূর্বজ্ঞান অনুযায়ী দোযখবাসী হওয়ারই কাজ করবে। পরবর্তীতে তাদের আরো কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে যে, যাদের মধ্যে এ সকল জিনিস এভাবে পাওয়া যাবে, যার বর্ণনা এখানে দেওয়া হয়েছে, জানতে হবে তাদের পরিণাম হবে মন্দ।
[2] অর্থাৎ, অন্তর, চোখ, কান এগুলি মহান আল্লাহ এই জন্য দান করেছেন, যাতে মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হয়ে নিজ প্রভুকে চিনতে পারে, তার নিদর্শনসমূহ লক্ষ্য করে এবং সত্যের বাণী মন দিয়ে শোনে। কিন্তু যে ব্যক্তি ঐ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা উপকার নেয় না, যেন উপকার না নেওয়ার কারণে সে পশুর মত; বরং তার থেকেও অধম। কারণ পশুরা নিজের লাভ- নোকসান কিছুটা বুঝে। উপকারী জিনিস হতে উপকার নেয় এবং ক্ষতিকারক জিনিস হতে দূরে থাকে। কিন্তু আল্লাহর হিদায়াত হতে বিমুখতা প্রকাশকারী ব্যক্তির মধ্যে এই পার্থক্য করার শক্তিই শেষ হয়ে যায় যে, কোনটি তার জন্য লাভদায়ক, আর কোনটি ক্ষতিকারক। আর সেই কারণেই পরবর্তী বাক্যে তাদেরকে গাফিল বা উদাসীন বলা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান